জুতোর তলা ফুটো হয়ে যাওয়া কথাটা প্রতিকী। বাংলাদেশের কোন তরুণ উদ্যোক্তা নতুন কিছু শুরু করতে গেলে এই প্রতিকী কথা আর প্রতিকী থাকেনা, বাস্তবে পরিণত হয়। 'কুমির চাষির ডায়েরি- বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিক কুমির চাষের উদ্যোক্তার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা' তেমন এক উদ্যোগের কাহিনী।
আইডিয়া পর্যায় থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন এবং বিনিয়োগ পর্যায় থেকে উৎপাদন, বিক্রি ও লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা এসব নিয়ে উদ্যোক্তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে এ বইতে।
এন্ট্রাপ্রেনারশিপ নিয়ে মৌলিক বাংলা বইয়ের অভাব মোচনে ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদের এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ 'কুমির চাষির ডায়েরি'। উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্র শিক্ষক সহ আগ্রহী পাঠকগণের জন্য এই বই এক থ্রিলার।
মুশতাক আহমেদের জন্ম চুয়াডাঙ্গায়। ১৯৮০ সালে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। ১৯৮৯ সালে চাকরিজীবন শুরু করেন চা–বাগানে। বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার সুবাদে উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের বিভিন্ন খামার ও কৃষি কার্যক্রমের সঙ্গে পরিচিতি ঘটে। দেশে ফিরে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেন। তবে ১৯৯৬ সালে সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তা হবেন। তারপরও ইন্টারনেটভিত্তিক টেলিফোন সেবা কোম্পানিতেও চাকরি করেন। ২০০১ সালে বোট ম্যানেজার হিসেবে একটি ট্যুর অপারেটিং কোম্পানিতে কাজের সুবাদে কাছ থেকে দেখেন সুন্দরবনকে। তবে তখনো মাথায় আছে ‘কিছু’ করবেন। অবশেষে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রথম কুমিরখামার শুরু করলেন। ২০১০ সালের ৪ জুন বাংলাদেশ থেকে তাঁর হাত ধরেই প্রথমবারের মতো কুমির রপ্তানি হয়।
সাহসী নির্মাতা আশফাক নিপুণ সম্প্রতি একটা পোস্ট করেছেন— "এই স্বাধীন দেশ দেখাতে পারলাম না, স্বাধীন দেশে এক কাপ চা খেতে খেতে আড্ডা দিতে পারলাম না। এই বিজয় যতটা আবু সাঈদের, মুগ্ধ বা আরো অনেক শহীদের, তেমনি এই বিজয় আপনারও। আপনি এই যুদ্ধের সেই প্রথমদিককার শহীদ যখন ভয়ে কেউ কথা বলতেও সাহস পেত না। যেখানেই আছেন জানবেন, মুক্তির এই ডামাডোলেও কেউ আপনাকে নীরবে স্মরণ করছে, এই বিজয় আপনাকে উৎসর্গ করছে। ভাল থাকবেন ওপারে মুশতাক ভাই। আর এভাবে আমাকে সাহস দিয়ে যাবেন। ভালবাসা।"
মুশতাক আহমেদ সেই সমস্ত লোকজনের মধ্যে অন্যতম যাদের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের দোহাই দিয়ে টুঁটি টিপে ধরেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এই আইন নিয়ে প্রথম থেকেই লেখক, সাংবাদিক ও প্রকাশকদের আপত্তি ছিল। তার একটাই কারণ, এই আইনের অপপ্রয়োগ করে স্বার্থান্বেষী মহল স্বার্থ লুটবে। যেখানে ধর্মানুভূতিতে আঘাত ও রাষ্ট্রবিরোধী তথা সরকার বা ব্যক্তিগত অনুভূতি ক্ষুণ্ণ হওয়া ডিজিটাল প্লাটফর্মে আপেক্ষিক মাত্র,সেখানে এই কালাকানুনের বলি হয়ে ২০২০ সালের মে মাসে লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এরাসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র্যাব। সেই মামলায় দুজন জামিনে মুক্তি পেলেও মুশতাক ও কিশোরের জামিন আবেদন ছয়বার নাকচ হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় কঠিন নির্যাতনের শিকার হয়ে পরের বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি মুশতাক আহমেদের করুণ মৃত্যু দেশবাসীকে দাঁড় করিয়ে দেয় এক কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি ,"এই দেশে কি বাকস্বাধীনতার অস্তিত্ব কি আছে আদৌ?" যুগে যুগে শিল্পীদের আক্রান্ত হবার ইতিহাস অব্যাহত ।
দেশে বাকস্বাধীনতার একাল সেকাল নিয়ে একটা আপেক্ষিক চিত্রের আবশ্যকতা এই মুহূর্তে প্রাসঙ্গিক । শিশির ভট্টাচার্য্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক কার্টুনচিত্রের পুরোধা ব্যক্তিত্ব । তার কার্টুনের নিজস্বতায়, আপসহীন ব্যাঙ্গে, খোঁচায় রাজনীতিকদের নাকাল আর পাঠকদের সচেতন করেছেন সেই এরশাদের আমল থেকে । উইট, হিউমার থেকে শুরু করে তীব্র, তীক্ষ্ণ বিদ্রূপ- এরই প্রতিরূপ শিশির ভট্টাচার্য্য । অথচ এখন পত্রিকার পাতায় তার কাজ খুঁজে পাওয়া দায় । শরীফা বুলবুলের কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে শিশির সরব হোন,“আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল(৯৬-২০০১) তখন তাদের অনেক সমালোচনা করেছি ভোরের কাগজ ও প্রথম আলোর শুরুর দিকে । আওয়ামী লীগের ওরা চট করে খুব রেগে যেতো এবং ছাত্রলীগের ছেলেদের আমি ভয়ই পেতাম, ওরা মনে করে যে আমাদের জনপ্রিয়তা শেষ হয়ে গেলো। এটা মাথায় রেখে ওরা ক্ষেপে যেতো। আর বিএনপির ওদেরকে নিয়ে আমি এমনসব কার্টুনও করেছি যেটাতে মনে করেছিলাম। কার্টুনটা প্রকাশ হওয়ার পরদিনই আমাকে ধরে হয়তো মেরে ফেলবে অথবা কিছু একটা করবে। কিন্তু দেখলাম যে কিছুই হয়নি। তখন আমি মনে করেছিলাম বিএনপি এসব সমালোচনাগুলোকে পাত্তা দিতো না।” অথচ শিল্পীর কণ্ঠরোধ করে দেয়ার এই কূটপ্রয়াস তখনও শুরু হয় নি। আর শিল্পীর সাথে ক্ষমতার এই দ্বন্দ্ব সভ্য কোনো দেশে থাকতে পারে না। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, সমালোচনার প্রতি ওয়েলকামিং মনোভাব জরুরি। ডেভিড লো গার্ডিয়ানের একজন কার্টুনিস্ট ছিলেন, চার্চিলকে স্যাটায়ার করে প্রচুর কার্টুন করতেন। সপ্তাহখানেক চার্চিলকে নিয়ে কোনো কার্টুন হয়নি। তারপর এক অনুষ্ঠানে ডেভিড লোর সঙ্গে চার্চিলের দেখা। চার্চিল তাঁর পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বললেন- 'লো, তুমি এক সপ্তাহ ধরে আমার কোনো কার্টুন করছ না। তুমি কি মনে করো এই এক সপ্তাহে আমি কোনো ভুল করিনি?' আবু আব্রাহাম লন্ডন অবজার্ভারে কার্টুন করতেন,ভারতীয় নাগরিক। পরবর্তীতে টাইমস অব ইন্ডিয়াতে যুক্ত হোন। ইন্দিরা গান্ধীর খুব ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তবে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তার বিরুদ্ধে খুবই কড়া কড়া কার্টুন এঁকেছেন। এ জন্য বন্ধুত্বে ঘাটতি হয়নি কিন্তু। ভিন্নমত হলেও ইন্টেলিজেন্সকে শ্রদ্ধা করার জায়গাটা ছিল তাদের মধ্যে। অথচ সোনার বাংলায় লিখতে গেলে জায়গা হয় গরাদের ওপারে। বিএনপির আইসিটি অ্যাক্টে সর্বোচ্চ সাজা ছিল ১০ বছর, ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ এই আইনে সর্বোচ্চ ১৪ বছর এবং ন্যূনতম ৭ বছর শাস্তির ব্যবস্থা করে এবং অপরাধগুলোকে জামিন অযোগ্য করে তুলে। অন্যায় অবিচারে মৌনতাই ক্রমশ হয়ে উঠলো পিঠ বাঁচানোর আয়ুধ। ভাগ্য খুব ভালো হলে কিশোরের মতো জামিন পেয়ে যেতে পারেন,নয়তো ধুঁকে ধুঁকে কান্না চেপে পরিণতি মানতে না পেরে মুশতাক আহমেদের মতো রাষ্ট্রযন্ত্রের শিকার হতে হবে।
“The day before something is truly a breakthrough, it's a crazy idea...”
ময়মনসিংহের ভালুকায় দেশের প্রথম কুমির চাষের খামার হবার আগে মুশতাক আহমেদের একটা ক্রেইজি আইডিয়াই ছিল,প্রজাপতি না হতে পারা একটা শুঁয়োপোকা ভ্রুণ। চাকরিজীবন শুরু করেন চা–বাগানে। বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার সুবাদে উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের বিভিন্ন খামার ও কৃষি কার্যক্রমের সঙ্গে পরিচিতি ঘটে। দেশে ফিরে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেন। তবে ১৯৯৬ সালে সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তা হবেন। তারপরও ইন্টারনেটভিত্তিক টেলিফোন সেবা কোম্পানিতেও চাকরি করেন। ২০০১ সালে বোট ম্যানেজার হিসেবে একটি ট্যুর অপারেটিং কোম্পানিতে কাজের সুবাদে কাছ থেকে দেখেন সুন্দরবনকে। তবে তখনো মাথায় আছে ‘কিছু’ করবেন। ট্যুর গাইড হিসেবে সুন্দরবনে দীর্ঘদিন থাকার পর তাকে পেয়ে বসেছিলো কুমির চাষের স্বপ্ন।‘কুমির চাষীর ডায়েরি’ পড়তে গেলে স্বপ্নবিদ্ধ মানুষটার প্রাণচাঞ্চল্য অবাক করে দেয়। খানিকটা যেন ইলন মাস্কের মতো ‘I don't give up ever’ দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে উদ্যোক্তা মুশতাক দীর্ঘ আট বছর ধরে খাটাখাটুনির পর প্রমাণ করতে পেরেছিলেন তিনি পাগল নন,বরং একজন সফল উদ্যোক্তা। এই কুমির খামার গড়ার পথ মসৃণ ছিল না৷ জুতোর সুকতলা ক্ষয়ে যাবার ঘটনা আক্ষরিক অর্থেই ঘটেছিল। কুমির চাষ শুরুর প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো ছিল— মূলধন, প্রয়োজনীয় জমি জোগাড় করা এবং সরকারের অনুমতি আদায় করা। এস.ই.ডি.এফ (সাউথ এশিয়ান এন্টারপ্রাইজ ডেভলপমেন্ট ফ্যাসিলিটিজ) মুশতাককে মূলধন জোগাড় এবং অনুমতি লাভে অনেক সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন ধরনের ব্যবসা করতে গেলে অনেক ধরনের সহায়তা প্রয়োজন। নতুন উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে মূলধন জোগাড় সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। এ দেশে একজন নতুন উদ্যোক্তাকে প্রত্যেকটা ধাপে নিরুৎসাহিত করা হয়। যে প্রস্তাব কোন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি নিয়ে গেলে সরকারী অফিস সাদরে গ্রহণ করে, একই প্রস্তাব কোন নবীন উদ্যোক্তা নিয়ে গেলে তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়।অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট একটা ছক আছে। যেকোনো প্রকল্প তারা ওই নির্দিষ্ট ছকে ফেলে যাচাই করবে। একই সাথে আর্থিক প্রতিষ্ঠান উদ্যোক্তার দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস বোঝারও চেষ্টা করে। অর্থাৎ ইউ ক্যাননট ফাইন্যান্স এ ক্রোকোডাইল ফার্ম উইথ এ চিকেন হার্ট। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আল্পস পেরিয়ে সচিবালয় ঘুরে ঘুরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সাথে যুঝতে হয়েছিলো কুমির চাষের অনুমতি জোগাড়ের জন্য। প্রায় দুবছরে ৩২ টা টেবিল ঘুরে তবেই দেখা মিলেছিল গ্রিন সিগন্যালের। এই পর্যায়ে মুশতাক আহমেদ যেহেতু অনভিজ্ঞ ছিলেন,তাকে সহজেই হাইকোর্ট দেখাতো কেউ কেউ। বহুত হুজ্জত হাঙ্গামার অ��িজ্ঞতার পর মাঠ পর্যায়ে শুরু হলো ক্ষেত্র প্রস্তুতি। কাগজে-কলমে যা সহজ লাগে,তার এম্পিরিক্যাল এক্সিকিউশন যে কত ধানে কত চাল তা বোঝানো মুশকিল। এইসব অভিজ্ঞতা পেরিয়ে ‘কুমির চাষির ডায়েরি’ হয়ে উঠেছে রীতিমতো থ্রিলার। দেশে কুমির চাষের ক্যাপ্টিভ ব্রিডিং মডেল, কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের মতো জবড়জং ব্যবস্থাপনা মুশতাক উপস্থাপন করেছেন ভীষণ সহজ করে। কুমির সম্বন্ধে ক অক্ষর গোমাংস লোকও আগ্রহী হতে বাধ্য। উদ্যোক্তাদের জন্য কুমির চাষি মুশতাক আহমেদ হয়ে উঠেছিলেন অনুপ্রেরণার পাওয়ার হাউস। কিন্তু বিধিবাম...১০৭ পৃষ্ঠার এই বই পড়বার পর মন উল্টো ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে।
রাজনীতির নিশান যখন আকাশ ঢাকে,তখন বুনো মোষের মতো তাড়া করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। স্মৃতিময়, স্বপ্নময় এই ডায়েরিতে জ্বলছে যেন দাউ দাউ চিতা। কমরেড মুশতাক, আগুনের দিন ফুরিয়েছে। আফসোস,আপনি দেখে যেতে পারলেন না...
কথাটা বলেছেন একজন উদ্যোক্তা। কিন্তু কথা হলো একজন উদ্যোক্তা সাধারণত বিজনেস প্ল্যান করে থাকেন এবং ব্যাটেবলে মিলে গেলে সেটা এক্সিকিউট করেন। ব্যবসাই তো করতে চাচ্ছে, লোকে তবে পাগল বলবে কেন? আসলে স্রোতের বিপরীতে চললে লোকে তো পাগল বলবেই! মানুষ গরুর ফার্ম করে, মাছের চাষ করে কেউ বা দেয় মুরগির খামার এই অবস্থায় সম্পূর্ণ সুস্থ মাথার কেউ যদি বলে আমি কুমিরের চাষ করব.. সেক্ষেত্রে লোকে ট্যারা চোখে তাকাবেই। মানুষের আর দোষ কি বলুন?
সাধারণ জ্ঞানে একটা প্রশ্নের উত্তর আমরা প্রায়শই পড়ে থাকি। দেশের প্রথম বাণিজ্যিক কুমির চাষ শুরু হয় কোথায়? ময়মনসিংহের ভালুকায়। ব্যাস.. নম্বর পাওয়া হয়ে গেল, মাথা ঘামানোও শেষ। কিন্তু এই ময়মনসিংহের ভালুকায় যেই কুমিরের ফার্মটা শুরু করা হলো তার যাত্রাটা কতোটুকু মসৃণ ছিল? সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটা বিজনেস প্ল্যান করতে এবং সেটা ঠিকঠাকমতো এক্সিকিউট করতে কি পরিমাণ সাহস আর প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় সেটাই খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন বাণিজ্যিক কুমির চাষের অগ্রদূত মুশতাক আহমেদ। মাথায় এই চিন্তা আসবার পর শুরু হলো খোঁজ-খবর নেয়া, পড়াশোনা করা। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা দিল সেটা হলো মূলধন। আর নানান জনের নানান রকমের কথাবার্তা তো রয়েছেই। আর কুমির যেহেতু বন্যপ্রাণী, সেহেতু বন বিভাগ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন থেকে অনুমতি নেয়া, ফাইলের পিছনে দৌড়াতে থাকা.. কুমির ম্যানেজ করা.. যত্নআত্তি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি.. তবে সফল উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ প্রমাণ করেছেন, প্ল্যান যতো অদ্ভুতুড়েই হোক না কেন নাথিং ইজ ইম্পসিবল। যে কোন নতুন উদ্যোক্তাকে কিংবা যারা মনে মনে প্ল্যান আঁটছেন কিছু একটা করবার অথবা যারা কিছু করার কথা ভাবছেন না এখনও.. তাদের সবাইকে এই দুর্দান্ত বইটা অনুপ্রাণিত করবে।
সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নে প্রায়ই দেখতাম, দেশের প্রথম বাণিজ্যিক কুমির চাষের খামার স্থাপিত হয়েছিল ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায়। খামারের উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ এই খামার তৈরির রোমাঞ্চকর সব অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা বই লিখেছেন সেটাও জানতাম। অনেকদিন ধরেই পড়বো পড়বো করে অবশেষে আজ শেষ করলাম 'কুমির চাষির ডায়েরী'।
মুশতাক আহমেদ তার চমৎকার এই বইটিকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথমভাগ 'চাষির কথা-য়' উঠে এসেছে একজন উদ্যোক্তার শুরুর লড়াইয়ের কথা। এই দেশে উদ্যোক্তাদের এমনিতেই কেউ পাত্তা দিতে চায়না। সেখানে লেখক যখন কুমির চাষে অর্থায়নের জন্য এখানেওখানে ধর্না দিচ্ছিলেন,তখন তার অবস্থাটা এমনিতেই আন্দাজ করা যায়। নানান প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি সাফল্যের মুখ দেখেছিলেন। হয়েছিল নানান সব অভিজ্ঞতা। সেসব অভিজ্ঞতার কথা পড়তে বেশ লাগছিল।
দ্বিতীয় অংশ 'কুমিরের কথা-য়' কুমির সম্বন্ধে নানান ইন্টারেস্টিং তথ্য দিয়েছেন লেখক। এই অংশটা পড়ে কুমিরের ব্যাপারে যার 'ক' জ্ঞান ও নেই, সেও কুমির নিয়ে 'প্রায় অভিজ্ঞ' হয়ে উঠবে। সবগুলো তথ্য উপাত্ত গ্রহণযোগ্য হওয়ায়,এই বইটাকে রেফারেন্স বুক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
১০৭ পৃষ্টার বইটি পড়ে আমি বেশ আনন্দই পেয়েছি। তবে আরেকটু বড় হলেও পারতো। বিশেষত লেখকের আরো কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারলে মন্দ হতো না। আফসোস, সে সুযোগ আর নেই.....
বইটা আসলে কোনো উদ্যোগ নেবার জন্য বা ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝার জন্য পড়িনি। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগে উনার জার্নিটা, উনার ফেস করা প্রতিবন্ধকতাগুলো, উনার নতুন নতুন অভিজ্ঞতাগুলো জানার জন্য পড়েছিলাম। বলা যায় কৌতূহল থেকে।
ব্যবসা করার মন মানসিকতা থাকলে, ইনভেস্টমেন্ট যোগাড় করতে পারলে ব্যবসা কতভাবেই করা যায়। কৃষি সেক্টরে হলে গরুর খামার করা যায়, মাছের খামার করা যায়, চিংড়ি, কাঁকড়া, স্ট্রবেরি, মাশরুম, ক্যাপসিকাম, কত কিছু আছে; করতে চাইলেই সফল হওয়া যায়। কিন্তু এতকিছু থাকতে কুমির কেন? কে কিনবে, কার জন্য? বইয়ের নাম দেখেই মনে হয়েছিল ব্যাপারটায় শুধু পড়ার জন্য হলেও মজার কিছু থাকবে।
বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবেশ উদ্যোক্তা-বান্ধব নয়, স্বাভাবিকভাবেই অনেক প্রতিকূলতার সামনে পড়তে হয়েছে। তিনি সেগুলো অতিক্রম করেছেন। তিনি সেগুলো শুরু থেকে আলোচনা করে বলেছেন। আর বলেছেন কুমির পালন সংক্রান্ত অনেক তথ্যও। খোলাখুলিভাবেই উনার উদ্ভাবন ও সিক্রেট তুলে ধরেছেন।
কুমির চাষ করার মতো ব্যতিক্রমী একটি প্রয়াস, অন্তত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তো অবশ্যই ব্যতিক্রমী, তাও আবার শখের বশে নয় ব্যবসা হিসেবে- এ রকম কোনোকিছু অবশ্যই স্পেশাল। এ রকম কিছু নিয়ে বই লেখা হলে আগ্রহী পাঠকের অবশ্যই পড়ে দেখা উচিত।
আমি বলা যায় এক বসাতেই পড়ে শেষ করে ফেলেছি পুরো বই। সুখপাঠ্য। ভিন্ন স্বাদের বই পড়তে আগ্রহী হলে এটা পড়া যায়।
বাংলাদেশে কোন উদ্যোক্তার সফল উদ্যোগের কথা এত সুন্দরভাবে গোছানো আকারে এই প্রথম দেখলাম। এর আগে যা পড়েছিলাম বেশিরভাগই ঘুরে ফিরে মোটিভেশনাল বই মনে হয়েছে। এই বইটা কাওকে মোটিভেট করার জন্য অযথা বাণী দিয়ে ভরা না। কুমির চাষের উদ্যোক্তার নিজের লেখা বইটা। নিজের উদ্যোগ নিয়ে লেখকের ফেইসবুক পোস্টের সংকলন, সাথে বিভিন্ন তথ্যচিত্র, পত্রিকার কাটিং এগুলো নিয়ে বইটা। ফেইসবুক পোস্ট মানে এখনকার মোটিভেশনাল স্পিকারদের, ইনফ্লুয়েন্সারদের পোস্ট এর মত ভাববেন না কেউ। আড্ডা দিতে গিয়ে ২০০২ সালে প্রথমবারের মত কুমির এর খামার এর কথা উঠা থেকে শুরু করে ২০১০ এ প্রথমবারের মত রপ্তানি - এর মাঝের সময়ের প্রতিটা ধাপ, প্রতিবন্ধকতা, আশেপাশের থেকে আইন কানুন মেনেও সঠিক সময়ে সঠিক জিনিসটা আদায় করে নেয়া, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাহায্য, ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া, সমালোচকদের কথায় হতাশ না হয়ে বরং সেটাকে কাজে লাগানো সব কিছুরই উদাহরণ আছে বইটাতে। কুমির সম্পর্কে আর বাংলাদেশে এটার চাষ সম্পর্কে অনেক কিছুই আছে। কারো যদি উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা থাকে সেটা কুমির হওয়া লাগবে এমন না, আম���র মনে হয় বাংলা ভাষায় অন্যান্য সফল উদ্যোক্তার সাফল্যের বিবরণ দেয়া মোটিভেশনাল বই এর চেয়ে এটা হাজারগুণে ভালো - যদি সে আসলেই কিছু করতে চায়।
তারপর কি হল? মুশতাক আহমেদ বেঁচে থাকলে ডায়েরির বাকি পাতাগুলো সম্পর্কে জানতে চা���তাম।
চাষাভুষার দেশের মানুষ আমরা। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে ধান চাষি, গম চাষি, মাছ চাষিসহ নানা ধরণের ফসল ফলানো চাষিদের আমরা দেখেছি। গল্পও শুনেছি। কিন্তু বাংলাদেশে কুমির চাষি? আমি দেখিনি। শুনিনিও এর আগে। তাই প্রথম যখন নাম শুনি বইটির নাম তখন ভেবেছিলাম বইটি মনে হয় কোন স্যাটায়ারধর্মী বই। কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখি, সেই কত বছর আগে বাংলাদেশেই এক হার নামা মানা মানুষ বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ শুরু করেন।
বইয়ের প্রচ্ছদেই বলা আছে কুমির চাষের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। আসলেই তাই। নানা কাহিনী করে বিদেশ থেকে কুমিরের বাচ্চা দেশে নিয়ে এসে বড় করা, বাচ্চা ফুটানো, সে এক মহাকীর্তি। সেই কীর্তিকলাপের গল্পই চমৎকারভাবে সাবলীল ভাষায় লিখেছেন মুশতাক আহমেদ।
কুমিরের পেটে নাকি মানুষ মেলে। কুমির মানুষ খেয়ে ফেলে। কিন্তু সেই কুমিরচাষী মুশতাক আহমেদ মরে গেলেন জেলের মধ্যে। কুমীররূপী অপশক্তি গিলে খেলো কার্টুনিস্ট মুশতাককে। আহ! মানতে কষ্ট হয়!
এদেশে উদ্যোক্তা কিংবা স্বাধীন চিন্তা না, আমরা যারা তাল মিলিয়ে চলতে জানি তারাই ঠিক আছি। বাকিরা সব গোল্লায় যাক। -------------------------------------
ফেসবুক ইউটুব সেলিব্রেটিরা যেমন নিজেদের স্ট্যাটাস ভিডিওর একটা তালগোল পাকিয়ে আজকাল বই বের করছেন বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে এ বইটাও তেমনি। মানে, এ বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায় গুলোও লেখকের ফেসবুকে পূর্বে প্রকাশিত স্ট্যাটাস, খবরের কাগজের ইন্টারভিউ, টিভি সংবাদে প্রচারিত সাক্ষাৎকার এর কিছুটা বর্ধিতরূপ। কিন্তু এটা অখাদ্য নয়। লেখা গুলো সুন্দরকরে সাজানো, লেখনী আগ্রহ উদ্দীপক আর বইয়ের মূল আকর্ষণ এর বিষয়বস্তু।
উদ্যোক্তা হবার জন্য না, কারো যদি এ বিষয়ক এক্সপেরিয়েন্সটাও জানার ইচ্ছা হয়, বাংলা বই সম্ভারে অফার করার মত কোন বই নেই তেমন, যা আছে সেগুলোতে গৎবাঁধা থিওরেটিকাল কথা বার্তা, ওই উদ্যোক্তার গুণাবলী মুখস্থ করানো বই। কিন্তু সেদিক থেকে এ বই এক ব্যাতিক্রম। ব্যবসায়ীরা সাধারণত তাদের গোপন কথা বার্তা শেয়ার করতে চাননা, কিন্তু লেখক তার অনেক ট্রেড সিক্রেটস শেয়ার করেছেন। লেখকের অভিজ্ঞতা ছোট বইটির অর্ধেকের ও কম অংশে, বাকি অংশে আছে কুমির সম্পর্কিত কিছু সাধারণ তথ্যাবলী, চাষ করার নিয়মকানুন আর বাংলাদেশের প্রথম কুমিরের খামার নিয়ে বের হওয়া নিউজ কাটিং আর গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস। বাংলাদেশে নতুন কোন উদ্যোগ নেয়া যে কি কঠিন হতে পারে তা বইয়ের প্রায় প্রত্যেক অধ্যায়েই পাঠক টের পাবেন, কিন্তু তারপরেও সফলতা এসেছে এবং আসছে। এ ধরণের একটি বইয়ে পাঠকের আশা থাকে লক্ষ্য নির্ধারণ, বাস্তবায়ন কিভাবে করতে হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা, যিনি করেছেন তার অভিজ্ঞতা গুলো নিয়ে নিজের জানা কে সমৃদ্ধ করা। ছোট পরিসরে বইটিতে তার সবটুকুই পাওয়া যাবে। তাই নিজের জনরায় এই বইটাও সফল।
দেশে আজকাল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য মুখে মুখে অনেককে উদ্বুদ্ধকারী বাণী দিতে দেখতে পাই, অলিতে গলিতে বিবিএ স্কুল হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও আমাদের দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য হচ্ছেনা। এর পেছনে নীতি নির্ধারণী সমস্যা কিছু আছে, কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় জাতিগত ভাবেই আমরা মানসিক ভাবে খুব রিস্ক এগ্রেসিভ না। আমাদের বোহেমিয়ান জীবন পছন্দ না, আমরা চাই বিসিএস অথবা ব্যাংকের পরীক্ষায় পাশ করা একটা নিশ্চিন্ত জীবন, যেখানে একবার ঢুকতে পারলে সারা জীবনের জন্য নিশ্চিন্ত। অপরদিকে লেখককে দেখি ট্যুর কোম্পানীর চাকুরী নিয়ে কখনো সুন্দরবন চলে যাচ্ছেন, আবার পত্রিকার লেখা পড়ে সেই চাকরী ছেড়ে দিয়ে আইটির ব্যবসায় নামছেন। দেশের বেশিরভাগ লোকের মনে যেদিন এমন সাহস থাকবে সেদিন আর স্কুলে বসে উদ্যোক্তা হবার জন্যে উদ্যোক্তার গুণাবলী মুখস্থ করার প্রয়োজন পড়বেনা।
রাস্তায় নামলে কিছু কিছু মানুষ দেখবেন, এরা গভীর মনোযোগে এক্সক্যাভেটরের মাটি কাটা দেখতেছে। এদের মাঝে একদম সবারই যে কাজ নাই, তা কিন্তু না। কোনো একটা কাজে হয়তো বের হয়েছে, কিন্তু রাস্তায় এক্সক্যাভেটরের মাটি কাটা দেখে দৈববলে যেন আটকে গেছে, যেন এখানে ‘বাত ই কুচ অর হ্যায়’। আমি নিজেও সে দলে পড়ি কিনা, সেই বিব্রতকর প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বইয়ের গ্রুপে কেন এই প্যাঁচাল পারতেছি সেইটা বলি।
এই যে পোস্টে থাকা ছবির বইটা, এই বইটা পড়ার আগে নিজেকে এমন ‘এক্সক্যাভেটরের মাটি কাটা দেখা আজাইরা মানুষ’ই মনে হইতেছিল। মানে আমি কেন একজন উদ্যোক্তার বই পড়বো? বিজনেস নিয়ে থিওরিটিক্যাল কচকচানি তো আমার পছন্দ না। পছন্দ না, শিব খেরার ‘তুমিও পারবে’ টাইপের মোটিভেশনাল বই পড়া। তাইলে কেন এই বই হাতে নিবো? তাও আবার কুমির চাষের মতো এতো ‘গুরুত্বপূর্ণ(!)’ একটা বিষয়ে লেখা বই? কিন্তু, ঐ যে, কী সেই আকর্ষণ সেটা বুঝাইতে না পারা কথা-‘বাত ই কুচ অর হ্যায়’র কেস এইটা। তবে এ বই পড়ার পরে আমি বুঝছি কেসটা কী। সেইটা নাহয় পরে বলি, আপাতত বইটা কেমন লাগল সেইটা বইলা যাই।
মুশতাক আহমেদের এই বইটাকে একটা ডায়েরি বললে ভুল হবে না। আজ থেকে ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে বাংলাদেশে বসে তিনি যেটা করতে চাইছিলেন এবং কইরাও ফেলছিলেন সেঈটাকে স্বপ্ন বলে দেগে দেবে অনেক ইনফ্লুয়েন্সাররা। কিন্তু আমি এইটাকে একদম এক শব্দে বলবো ‘পাগলামি’। মানে ২০০৪ সালে প্রায় প্রযুক্তিবিবর্জিত একটা দেশে বইসা ৩৬-৩৭ বছরের একটা মানুষ কেন চাকরী বাকরি ছাইড়া দিয়া ‘পালিব আমি কুমির, থাকিব আমি সুখে’ টাইপ চিন্তাভাবনা করবো? কিন্তু মুশতাক করছিলেন। আর সেই রুদ্ধশ্বাস অভিযানের গল্প আর অভিজ্ঞতা একত্র করার ফলাফল, এ বই।
কুমির আবার চাষ করে কেমনে? তা কেনেই বা কারা? আবার নাকি বাংলাদেশে কুমির চাষ? শোনার পর যেমন অস্বাভাবিক লাগে, লেখকও ঠিক সেই প্রতিক্রিয়াগুলোর মুখোমুখি হইছেন। এইখানে পাঠক কিছু বোঝার আগেই বইয়ে ঢুকে যায়৷ ভূমিকা ফুকিমার বালাই না রেখে মুশতাক সাহেব ডাইরেক অ্যাকশানে গেছেন।। আর এর প্রতিটা পৃষ্ঠায় আছে সংকট, ব্যর্থতা, বিদ্রুপের বিষ। বইয়ের প্রথম ২০ পৃষ্ঠার মাঝেই এত প্রতিবন্ধকতার কথা পড়লাম যে, আমার নিজেরই অস্থির লাগতেছিল। মানুষ বলে না, অমুকের পিছে ঘুরতে ঘুরতে জুতার তলা ক্ষয় হয়ে গেছে। এই উদ্যোগের পেছনে লিটারালি তার জুতার তলা ক্ষয় হইছে। আর সেই ক্ষয় হওয়া জুতা তিনি দেখানোর জন্য রাইখাও দিছেন।
আমি হইলে প্ল্যান ফ্ল্যান রাইখা নাকে খত দিয়া অন্য রাস্তা মাপতাম। কিন্তু যে মুশতাককে আমি 'পাগল' ভাবছিলাম আসলে সে পাগল না, সে 'দুঃসাহসিক'। “কুমির বাঁচবে না”, “ডিম পাড়বে না”, "পাড়লেও সে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটবে না"—এসব অনুৎসাহকে পেছনে ফালায়ে তিনি গড়ছেন দেশের প্রথম রপ্তানিযোগ্য কুমির খামার। এ বইয়ে উইঠা আসছে মুশতাক সাহেবের ব্যতিক্রম চিন্তা আর অবিশ্বাস্য জেদের কথা।
কীভাবে তার মাথায় এ আজব আইডিয়া এলো, কীভাবে শূন্য জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা নিয়ে একটু একটু করে আগায়ে গেলেন, কীভাবে কঠিন রপ্তানির কাজটা করলেন এবং খামার স্থাপনের মাত্র ৫-৬ বছরের ভেতরে কীভাবে কীভাবে রপ্তানিও কইরা ফেললেন সব লেখা আছে (মাত্র ৫-৬ বললাম কারণ কুমির চাষে নামার পরে রপ্তানি করার ক্ষেত্রে এই সময়টা পুরো বিশ্বেই অনেক কম সময়)।
বইটার নাম শুনলে মনে হয়, এইটা যেন উদ্যোক্তা হবার আগে মানুষ হবার প্রস্তুতির গল্প। লেখার ভাষা সহজ, হিউমারওয়ালা আর সত্যি বলতে গেলে, জীবন্ত। কোথাও কোথাও মনে হইছে, তিনি আমাদের সঙ্গে এক কাপ চা খাইতে খাইতে তার অভিজ্ঞতা শোনাইতেছেন। এতটাই ঘনিষ্ঠ আর অন্তরঙ্গ! মানে এইখানে মুশতাক সাহিত্যের লেখক হয়তো হয়ে উঠতে পারেন নাই কিন্তু তিনি হইছেন আড্ডার মধ্যমনি কিছু গল্পবাজ লোক থাকে না? ঐরকম। অস্থির ব্যাপার!
বইটার মূল পৃষ্ঠা সংখ্যা ১০৮ তবে মুশতাকের জার্নির গল্প ৭৪ পৃষ্ঠা। এরপরে বিভিন্ন সময়ে পেপারের তার খামার বিষয়ক খবরের কাটিং, বিভিন্ন মানুষ তার খামারে আইসা স্মৃতিকথা লেইখা গেছে সেই নোটগুলার ছবি দিয়া ঠাসা।
সব মিলায়ে ‘কুমির চাষির ডায়েরি’ নিছক একটা বই না, এইটা হলো বাংলাদেশি এই যোদ্ধার নির্ভীক যুদ্ধের দলিল। স্রেফ উদ্যোক্তা হবার জন্য এইটা পড়ার দরকার নাই। এইটা সকল মানুষের পড়ার মতো একটা বই। পাঠকের কনফিডেন্স বুস্ট আপ করবে যে এইটা আমি মোটামুটি শিওর।
তবে শেষটায় কিছু দুঃখজনক কথা বার্তা বইলা যাই।
এই বইটা প্রকাশ পাইছে ২০১৮ সালে। কিন্তু মুশতাকের বইতে ২০১০ এর ঐ রপ্তানির পরে তেমন কোনো তথ্য নাই। অ্যাদ্দিনে তো এই খামার ফুইলা ফাইপা উইঠা বিশাল একটা মাইলস্টোন হবার কথা। কিন্তু ২০১৮ সালে লেখা বইতে ঐ সময়ের খামারের কথা বার্তা লেখা নাই ক্যান? এর উত্তর হইলো, বাস্তবে এইটা ঘটে নাই। আর আমি এখন যেইটা বলবো সেইটা বইতেও নাই। তবে ইন্টারেস্টেড ফিল করায় এবং তারে নিয়া টুকটাক কথা কানে আসায়, ২০১০ এর পরে কী হইলো সেইটা না জাইনা পারলাম না।
২০১২ সালে এইটার দিকে নজর পড়ে কুখ্যাত ঋণখেলাপী পিকে হালদারের। আস্তে আস্তে খামারটির সিংহভাগ মালিকানা কিনে নেয় পিকে হালদার আর সেটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নেয় সে। চোখের সামনে তিল তিল করে গড়ে তোলা খামারটাকে ধ্বংস হতে দেখেন মুশতাক। আফসোস করে ফেসবুকে বিভিন্ন সময় খামার নিয়ে অনেক হতাশা প্রকাশ করেন। আর তারপরই চলে আসে ২০২০ সালের করোনা। আর করোনার সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হন এই মানুষটা। তার অপরাধ(!) কী সেটা নেট ঘাটাঘাটি করে জেনে নিয়েন। সরকারের এহেন ঘৃণ্য কাজ নিয়ে বলতেও লজ্জা লাগে৷ জুলকারনাইন সায়ের, তাসনিম খলিল, কার্টুনিস্ট কিশোরসহ আরো অনেকেই এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা খেয়েছেন। তারা সবাই ২০২৪ এর ফ্যাসিস্ট পতনে শুকরিয়া আদায় করতে পারলেও, পারেননি মুশতাক আহমেদ। ২০২১ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন এই স্বপ্নদ্রষ্টা মুশতাক আহমেদ ওরফে 'কুমির ভাই'।
উদ্যোক্তা যারা হতে চায় তাদের জন্য অবশ্যই এই বই পড়া উচিৎ।বইয়ে খামারের শুরু থেকে কুমির রপ্তানি পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করেছেন।খুবই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।মুশতাক সাহেব এখন এই দুনিয়ায় নাই,কিন্তু তার এই কীর্তি যুগ যুগ থাকবে।আমরা কখনই জীবিত অবস্থায় মানুষের কদর করি না। আল্লাহ মুস্তাক সাহেবকে জান্নাতবাসী করুক এই দোয়া করি।
বাংলাদেশে এই সময়ে এসেও কেউ কুমিরের খামার করতে চাইলে লোকে তাকে পাগলই বলবে। এই কাজটা লেখক করেছিলেন প্রায় দুই দশক আগে৷ তাই বহু প্রতিকুলতা যে পার হতে হয়েছে তা মোটামুটি অনুমেয়। আশপাশের কটাক্ষের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন জটিলতা স্মরণ করিয়ে দেয় যে এই দেশ উদ্যোক্তাদের জন্য কতোটা বিরূপ। প্রতিটি ধাপেই তাকে প্রচুর ঝক্কি-ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তবে মিডিয়া থেকে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছিলেন তিনি। একে তো ব্যাতিক্রমী কাজ, লোকজনের এই নিয়ে কৌতূহল প্রবল। আবার লেখকের নিজের নেটওয়ার্কিংও কাজে দিয়েছে বেশ৷
বইটা আকারে খুবই ছোট৷ এর মধ্যেই লেখক তার যাত্রার প্রতিটি ধাপের গল্প বলেছেন। সেসবের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের চিরাচরিত মানসিকতাগুলো উঠে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই কুমির নিয়ে বেশকিছু তথ্যও আছে। আমার সবচেয়ে অবাক লেগেছে কুমিরের ডিম নিয়ে একটা তথ্য। কুমিরের বাচ্চাটা কোন লিঙ্গের হবে তা নাকি নির্ভর করে কতো তাপমাত্রায় রাখা হবে তার উপর৷ সাধারণত ৩০-৩২ সেলসিয়াসে রাখলে পুরুষ কুমির জন্ম নেয়, অন্যথায় জন্ম নেয় মেয়ে!
Mushtaq Ahmed, author, died while imprisoned for allegedly violating the Digital Security Act by posting criticism on social media that hurt the government’s sentiment. I ordered his book one week after his death, driven by the helplessness of not having a viable means of protesting against the injustice faced by the author. The book takes the reader through his entrepreneurial journey of constructing the first commercial crocodile farm in Bangladesh, detailing the chronicles that eventually led to the first crocodile export. The author’s life is an inspiration, and even in his death may there be empowerment.
The off-screen struggles behind establishing a commercial crocodile farm in Bangladesh are elaborated on in this short book. There are genuine guts in the author's (who was also the founder of that farm) nature I must say.
পিডিএফ ঘাটতে ঘাটতে এটা চোখে পড়লো। কুমির চাষ নিয়ে আগ্রহের থেকে বেশি তাদের কাজের ব্যাপ্তি নিয়ে জানার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সে ব্যাপারে তেমন কিছু পেলাম না। এখানে শুধু শুরুটা কীভাবে হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই আলোচনা রয়েছে। এই দেশে কেউ এমন একটা কাজ সাহস করে শুরু করেছিল, ব্যাপারটা ভালো।
বাংলাদেশে কোন উদ্যোক্তার সফল উদ্যোগের কথা এত সুন্দরভাবে গোছানো আকারে এই প্রথম দেখলাম। এর আগে যা পড়েছিলাম বেশিরভাগই ঘুরে ফিরে মোটিভেশনাল বই মনে হয়েছে। এই বইটা কাওকে মোটিভেট করার জন্য অযথা বাণী দিয়ে ভরা না। কুমির চাষের উদ্যোক্তার নিজের লেখা বইটা। নিজের উদ্যোগ নিয়ে লেখকের ফেইসবুক পোস্টের সংকলন, সাথে বিভিন্ন তথ্যচিত্র, পত্রিকার কাটিং এগুলো নিয়ে বইটা। ফেইসবুক পোস্ট মানে এখনকার মোটিভেশনাল স্পিকারদের, ইনফ্লুয়েন্সারদের পোস্ট এর মত ভাববেন না কেউ। আড্ডা দিতে গিয়ে ২০০২ সালে প্রথমবারের মত কুমির এর খামার এর কথা উঠা থেকে শুরু করে ২০১০ এ প্রথমবারের মত রপ্তানি - এর মাঝের সময়ের প্রতিটা ধাপ, প্রতিবন্ধকতা, আশেপাশের থেকে আইন কানুন মেনেও সঠিক সময়ে সঠিক জিনিসটা আদায় করে নেয়া, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাহায্য, ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া, সমালোচকদের কথায় হতাশ না হয়ে বরং সেটাকে কাজে লাগানো সব কিছুরই উদাহরণ আছে বইটাতে। কুমির সম্পর্কে আর বাংলাদেশে এটার চাষ সম্পর্কে অনেক কিছুই আছে। কারো যদি উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা থাকে সেটা কুমির হওয়া লাগবে এমন না, আমার মনে হয় বাংলা ভাষায় অন্যান্য সফল উদ্যোক্তার সাফল্যের বিবরণ দেয়া মোটিভেশনাল বই এর চেয়ে এটা হাজারগুণে ভালো - যদি সে আসলেই কিছু করতে চায়।
বাংলাদেশের উদ্যোক্তামহলে বই পড়া ও লেখার বিষয়ে বেশ ঘাটতি আছে। তাই এই বইয়ের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে আগাতে হলে কেমন মনোভাব পোষণ করতে হয়।
আমি উদ্যোক্তা নই, হবারও ইচ্ছেবিশেষ নেই - এই বইটা পড়েছি স্রেফ কুমির চাষের মত বিরল ভাবনা কোন মানুষের ভাবনায় কিভাবে আসে, এবং কিভাবে সে ভাবনাকে বাস্তবে পরিণত করে, সেটা জানার আকাঙখায়। আমার উৎসাহের যোগ্য সমাদর পেয়েছি বইটি পড়ে।
চমৎকার বই। প্রথমাংশে গল্পে গল্পে লেখকের নিজের অভিজ্ঞতা, আর দ্বিতীয়াংশে বিবিধ পেপার কাটিং, নানান জাতের কুমির এবং কুমির-খামারের বর্ণনা। অগাধ রেফারেন্স আছে বইয়ের শেষে, যা থেকে প্রকৃতিপ্রেমিক এবং উদ্যোক্তা - উভয় মহলই বেশ সুবিধা লাভ করবেন। সেই সঙ্গে লেখক মুশতাক আহমেদের প্রতিষ্ঠান 'রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড' নিয়ে সকল টিভি কভারেজ বা ডকুমেন্টারির একটা তালিকা এবং ইউটিউব লিংক দেয়া আছে দ্বিতীয়াংশে।
বইটা বাংলাদেশে নতুন উদ্যোগ কুমির চাষ নিয়ে। লেখকের আগে এদেশে কেউ কুমির চাষ করেননি। বানিজ্যিক ভিত্তিতে তিনি প্রথম কুমির চাষ করে। রপ্তানি করেন। ঝরঝরে গদ্য, যা বলতে চান সরাসরি বলে দিয়েছেন। এক্সট্রা কোন বাক্য নেই।
এই লেখককে খুন করে ফেলা হইছে। মুখে কথা বলার পরিণতি বাংলাদেশে এই আমলে এমনই। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে আপনাকে গুম, খুন, নীপিড়নের স্বীকার হতে হবে।
এই বইপড়ার মাধ্যমে লেখক হত্যার প্রতিবাদ জানাই।
লেখককে হত্যা করা যায়, লেখাকে মুখ চিপে ধরা যায়। মানুষের চিন্তাকে প্রকাশ করা বন্ধ করা যায়। এসব যারা করে তারে স্বৈরাচার বলে। একদিন এসবের বিচার হবে।
খুব ভালো লেগেছে। আমি কুমির পছন্দ করিনা, হিংস্র প্রাণী। তবে গ্রামে গিয়ে একটি খামার করা, সেখানে পেয়ারা সহ অনেক ফলের গাছ লাগানো - এসব খুব উপভোগ করেছি।
লেখক যে প্রকৃতিপ্রেমী তাতে কোন সন্দেহ নেই, এবং সন্ন্যাসীদের মত কঠোর জীবন যাপনে পিছিয়ে যান নি। শীতের মধ্যে দরোজা ছাড়া খোলা ঘরে ঘুমিয়েছেন, মাঝ রাতে সে ঘরে শেয়াল ঢুকেছে, তিনি ভয় না পেয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থেকেছেন।
তাঁর অকাল মৃত্যুতে দুঃখিত।
তবে এত প্রাণী থাকতে এই হিংস্র এবং ভয়ঙ্কর-দর্শন প্রাণীটির সান্নিধ্য তিনি কেন চাইলেন, তা বোধগম্য হল না।
লেখক নিহত হবার পর বইটা হঠাৎ একটি অনলাইন সাইটে পোস্ট করে, দু এক পাতা পড়বার জন্য নামিয়েছিলাম, শেষ করেই উঠতে হল। সেটা হতে পারে বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যময়তা এবং লেখকের বলবার দক্ষতা। লেখক তার কুমির চাষের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন। থ্রিলার থ্রিলার ফিল হচ্ছিল পড়বার সময়।
বাংলায় আত্মজীবনীমূলক লেখা খুব কম পড়েছি। সেদিক থেকে এই বইটি এক অন্যরকম অনুভূতি দিয়েছে। এছাড়াও আরেকটি কারণ আছে, যা এই বইকে স্পেশাল করে তুলেছে। সেটা হচ্ছে, যার জীবনী পড়ছি, তাকে আমি হালকা পাতলা চিনি। যদিও সেটা ব্যক্তিগত পরিচয় নয়, এক্স-ক্যাডেট হিসেবে পরিচয়।
কুমির চাষির ডায়েরি মুশতাক ভাইয়ের কুমির প্রজনন খামার তৈরি এবং একে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে ঘটে যাওয়া নানা কাহিনী নিয়ে রচিত একটি বই। বাংলাদেশের মতো একটি জটিল আমলাতন্ত্রের দেশে কুমিরের মতো বিরল প্রাণী চাষ করার যে বুদ্ধি উনার মাথায় আসলো, সেটা অনেকের নিকট পাগলামি ছাড়া আর কিছুই লাগেনি। তিনি নিজেও হয়তো পাগল, নাহলে শত বাধা আসার পরেও এর পেছনে আঠার মতো লেগে ছিলেন। এই লেগে থাকা থেকে রচিত হলো ইতিহাস। বইটি আকারে খুবই ছোট। এক বসায় পড়ে ফেলা যায়। বই পড়তে পড়তে কখন যে নাসের, নাতুর সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে, সেটা টের পাইনি।
বাংলাদেশ খুব সম্ভাবনার দেশ। এদেশের আবহাওয়া, মৃত্তিকা, পানি সবকিছু এত গুণসম্পন্ন, অথচ আমরা সেটাকে অবহেলায় ফেলে রেখেছি। ইচ্ছে করলেই এখানে অভিনব কিছু ব্যবসা শুরু করা যায়। আমাদের দেশে মেধাবীর সংখ্যাও কম নয়। শুধু সঠিক দিক নির্দেশনার অভাব এবং হতাশা থেকে আমরা এসব উদ্যোগ নিতে ভয় পাই। এই ভীতুদেরকে সাহস জোগাতে এই বই বেশ বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।