Born in Chittagong, a beautiful town in bangladesh which has many stories to tell. He is an architect by profession. Loves to write dreams, some dreams no one could imagine.
অনলাইনে খুঁজলে এখন বাংলাদেশের ফোকলোর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর না। ওয়েব পোর্টালগুলো পারলে কয়েকপ্রদ রঙ চড়ায় তাতে! কিন্তু সেসব যেমন এক জায়গায় পাওয়া যায় না, তেমনি পড়েও সেই 'দাদী-নানীর মুখে গল্প শোনা'র আমেজটা পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের নানা প্রান্তের লোকগাঁথা একসাথে করার ছোট্ট উদ্যোগ নিয়েছেন রাজীব চৌধুরী, তাঁর বইয়ের প্রথম খন্ডে ১৬টা কিংবদন্তী (যার কিছু কিছু মিথ) সংকলিত হয়েছে। আসতে যাচ্ছে পরের খন্ডও। পড়ে কেমন লাগলো? বিস্তারিত জানুন এই ভিডিওতে : https://youtu.be/VddhZ1xzN6o
রূপকথা বা পৌরাণিক কাহিনী, যার চর্চা কালের প্রবাহে এখনো বিদ্যমান।। ছোট থাকতে নানির মুখে এমন অনেক গল্প শুনতাম এবং শেষে বলতো "এভাবেই এই মাজারের নামকরণ হয়েছিল" অথবা "এভাবেই এই স্থানের নাম হয়েছিল"
বাংলাদেশে এমন অনেক গল্প আছে যা আমাদের জানিয়ে দেয় ঐ স্থানের উৎপত্তি কিভাবে হলো, ঐ স্থানের নামকরণ কিভাবে হলো। এই বইয়ে ঠিক এভাবে অনেক স্থানের নামকরণ, উৎপত্তি নিয়ে বলা হয়েছে!! যেমনঃ চট্টগ্রামের বদর আউলিয়ার মাজারের গল্প, মিষ্টান্ন "বাকর-খানি" নামটি কিভাবে এলো সেটির গল্প, ভাওয়াল জমিদারবাড়ির গল্প..... এভাবে বাংলার ১৬টি পৌরাণিক কাহিনী নিয়ে এই বইটি
লেখক বেশ রিসার্চ করে এই গল্পগুলো বের করেছেন বুঝা যায়! এই ১৬টি গপ্পোর জন্য হয়তো অনেক বই ঘেঁটেছেন, অনেক পথ পাড়ি দিয়ে গল্প সংগ্রহ করেছেন!! আমি বলব এটি একটি অনন্য সংযোজন! এমন সব গল্প পড়তে আপনার ভাল লাগবে, সাথে জানবেন বাংলার মাটির অনেকগুলো পৌরাণিক কাহিনী যা কিনা কোন একটি স্থানের ধারক ও বাহক। সাথে লেখকের সুন্দর এবং সাবলীল লেখার সুনাম না করলেই নয়! শুধু যে গল্প বলে গিয়েছেন তা নয়, উনি নজর রেখেছিলেন নিজের লেখার দিকেও..... সুতরাং আমি বলবো, এমন ঐতিহাসিক পুরান কাহিনীগুলো জানতে বইটি হাতে নিতে পারেন!
বাংলার নিজস্ব মিথের সন্ধানে বইটা পড়তে বসেছিলাম। নিদারুণ হতাশ হলাম। এর চেয়ে ভালো-ভালো কিসসা মেলার মাঠে শোনা যায়। যেগুলো পড়ার মতো, সেগুলোরও ন্যূনতম নিউ হিস্টরিওগ্রাফিকাল বা সাব-অলটার্ন বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন বোধ করেননি লেখক। চালাকির দ্বারা কৃত এই কার্যটিকে কোনোভাবেই মহৎ বলা গেল না। একতারার টুং-টুং দিয়েই একে বিদায় জানালাম।
এটা আমার পড়া এই বছরের প্রথম বই এবং বলতেই হচ্ছে ভালো ভাবেই শুরু হলো এই বছরের । একদিক থেকে লেখকের প্রথম বই পড়েই তার গুণ মুগ্ধ হয়ে গেলাম, আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো, উড়ে বেড়ানো গল্প গুলোকে উনি খুবই দক্ষতার সাথে মলাট বন্দী করেছেন- খুবই পরিমিত ভাবে - কাচ্চি বিড়িয়ানিতে যদি সব কিছু ঠিকঠাক হয় এবং তেল ও পরিমাণ মত থাকে, তবে খাবার পর যে তৃপ্তি পাওয়া যায় বইটি শেষ করে সেই ধরণের তৃপ্তি পেয়েছি ! লেখক এবং প্রকাশকে ধন্যবাদ এত সুন্দর এবং প্রাঞ্জল একটি বই উপহার দেবার জন্য ।
প্রতিটি গল্পের স্বাদ আলাদা তাই এক বসায় শেষ করে ফেলা যায় ! নিজের কথা বলতে গেলে আলাদা করে বলতে হবে "বাকর-খানির প্রেম, চন্দ্রাবতীর প্রেমকথা, কমল বাওয়ালি উপাখ্যান, ইশাইনাথের" এই গল্প গুলোর কথা ! ওহ ! নামটিও আমি মনেকরি সবদিক থেকে খুব মজার - আমাদের দেশের নিজেদের মিক্সড মাইথোলজি তাই নামটাও স্বার্থক ! বইটির গায়ের মুদ্রিত মূল্য - ২৮০ টাকা হ্যাপি রিডিং ।
গুডরিডস-এ বইটা দেখার পর থেকেই হন্যে হয়ে খু্জঁছিলাম, অবশেষে পেলাম বাতিঘরে। পৌরাণিক জ্ঞান যা আছে, সবই বলতে গেলে ভারতীয়; খাঁটি দেশীয় উপকথা ও পুরাণ বিষয়ে ধারণা কিছুটা ভাসা ভাসা। তাই এক মলাটের মধ্যে এতগুলো গল্প পেয়ে যাওয়ায় বেশ লাভের আশা হল। এই বইতে সবচেয়ে ভালো লেগেছে প্রায় সমগ্র বাংলাদেশের উপস্থিতি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও জেলার কিংবদন্তী উঠে এসেছে খুব সুন্দর ভাবে। লেখককে এক্ষেত্রে বাহবা দিতেই হয়, কেননা বইটা পড়ার পর আমার মত ঘরকুনো মানুষেরও শখ হয়েছে এই এলাকাগুলো ঘুরে দেখার। বইয়ের ভাষা বেশ ঝরঝরে, পড়া গেছে দ্রুত। তবে কিছু অংশে হোঁচট খেয়েছি আর ভালো লাগাও গেছে কমে। উনিশ বছরের অভুক্ত যৌবনা চম্পাবতী ঝাঁপিয়ে পড়লো গাজীর লোমশ বুকে - রোমান্টিক সিনে এমন বর্ণনা থাকলে পড়ার আমেজ নষ্ট হতে বাধ্য। এছাড়া আবরণ ও আভরণ শব্দ দুটোর ভুল প্রয়োগ চোখে পড়েছে ৪/৫ বার, জানি না তা লেখকের ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত। তাছাড়া কিছু বানান ভুল, যার জন্য অবশ্য লেখককে দায়ী করা চলে না। প্রসংশার চাইতে সমালোচনা বোধহয় বেশি হয়ে গেল। আমি একদমই সাধারণ পাঠক, বইয়ের সাহিত্যিক মূল্য বিচার করার মত দক্ষতা এখনো আসেনি। তবে ২৮০ টাকা দামে কিনে পাঠক তো আরো ভালো কিছু আশা করতেই পারে।
বঙদেশি লোককথার দারুণ একটি সংকলন রাজীব চৌধুরীর 'বঙ্গদেশি মাইথোলজি'। বঙ্গের নানান অঞ্চলের স্বল্পপরিচিত লৌকিক মিথগুলো দুই মলাটের ভেতরে পাওয়া দারুণ একটা ব্যাপার। কিন্তু লেখকের বর্ণনাভঙ্গী ক্লান্তিকর, কিছু কিছু অংশ পড়ে শেষ করতে পরিশ্রম করতে হয়েছে। আরও ভালো গল্পকথকের হাতে পড়লে গল্পগুলো আরেকটু জীবন্ত হয়ে উঠতো বলেই মনে করি।
আমাদের দেশে প্রচলিত অনেক কিংবদন্তী আছে। আছে অনেক উপকথা। এক ই গল্পের আবার অনেক রূপ আছে। হয়তো এক সময় সত্যি কোন ঘটনা ছিল। সেটা মানুষের মুখে মুখে হাজার বছর ধরে ঘুরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সঙ্গে মিশেছে মানুষের কিছু ধর্মীয় বিশ্বাস, কিছু কুসংস্কার। এক ই গল্পের অনেক রূপ পাওয়া যাবে খুজলে। ��ার মধ্যেই কয়েকটি এখানে গল্পের আকারে লেখা। সত্যি ইতিহাস বলে যে ধরে নেয়া যাবে না, এটাতো লেখক নিজেই বলে দিয়েছেন। কিন্তু পড়তে ভাল লেগেছে মানুষের মুখে মুখে হাজার বছর ধরে চলে আসা এসব গল্প ।
বইয়ের প্রচ্ছদ আর নাম ই যথেষ্ট ছিল আমাকে পড়তে আগ্রহী করার জন্য। কত কিংবদন্তি যে দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে আছে জানিই না! গল্পগুলো বিভিন্ন এলাকার, বিভিন্ন সময়ের। প্রত্যেকটা গল্পের শেষে মিথটি বর্তমান সময়ে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত আছে সেটিও উল্লেখ করেছেন লেখক, এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। তবে কিছু কিছু গল্পে ভাষার মান আরও কিছুটা উন্নত করা দরকার ছিল বলে মনে হয়েছে। লোককথা যেকোনো কালচারেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কালের বিবর্তনে সেগুলো হারিয়ে যাওয়া মোটেই কাম্য নয়। সেই বিবেচনায় লেখকের বঙ্গদেশের লোককথাগুলোকে একত্রিত করে প্রকাশ করার এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।
বইয়ের নাম:বঙ্গদেশী মাইথোলজি লেখক : রাজীব চৌধুরী প্রকাশনী : পেন্ডুলাম পাবলিশার্স পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৫৮ মুদ্রিত মূল্য : ২৮০
#বুক_রিভিউ_বঙ্গদেশী_মাইথোলজি রাজীব চৌধুরী এর লেখা " বঙ্গদেশী মাইথোলজি বইটি মূল্য ২৮০ টাকা, যা তুলনামূলক বেশী। তবে একটা কথা কি টাকা দিয়ে তো আর বইয়ের মূল্য করা যায় না।
মাইথোলজি শব্দ দুটি মিথ ও লজি সমন্বয়ে গঠিত। মিথ অর্থ পুরাণ, পুরাকাহিনী, অতিকথা, উপকথা, পৌরাণিকী কথা। যার মাধ্যমে কল্পনার রাজ্যেপ্রবেশ করি। মিথ কাল্পনিক বা অর্ধসত্য কিছু - যা গড়ে তোলে কোনও ভাবাদর্শের অংশবিশেষ।বঙ্গদেশি মাইথোলজি মানে হলো বাংলাদেশের লোককথা বা পৌরাণিক কাহীনি। এই কথা গুলো মূলত লোকমুখেই প্রচলিত। লেখক এই বইয়ে বাংলা বিভিন্ন অঞ্চল প্রচলিত লোককথা গুলোকে লেখক বই আকারে প্রকাশ করেছেন।এই বইয়ে লেখক বাংলাদেশের প্রচলিত ১৬ মিথ নিয়ে কথা বলেছেন। বইটিতে যে গল্প গুলো আছে তা হলো :
রূপকথা গল্প শুনতে কার না ভালো লাগে।রূপকতা গল্প শুনলে মনে হয় শৈশব এ ফিরে যেতে।মাইথোলজি এর মাধ্যমে আমরা কল্পনার রাজ্যে যেতে পারি। এই বইটি পড়ে সত্যি বলতে আমার খুব ভালো লেগেছে।বাংলা বিভিন্ন এলাকায় মানুষের প্রচলিত রূপকথা সর্ম্পকে জানতে পেরেছি। বিভিন্ন অঞ্চল এর মানুষের বিশ্বাস সর্ম্পকে জানা যায়। এক কথায় বলতে বইটি অসাধারণ।
মাইথোলজি বা পৌরণিক গল্পের কথা আসলে মোটামুটি সবারই কৌতুহল জেগে ওঠে। যেকোনো সমাজ বা সভ্যতার অন্যতম এক বড় অংশ হচ্ছে এইসব উওকথা। বঙ্গদেশ তথা বাংলাদেশের এমন সব গল্পের সংকলন এর শূন্যতা থেকেই বোধহয় লেখক রাজীব চৌধুরী লিখেছেন তার বই “বঙ্গদেশি মাইথোলজি।” বাংলাদেশের মাটিতে ছড়িয়ে থাকা সব রোমাঞ্চকর উপকথার খোজে লেখক পুরো দেশ চষে বেড়িয়ে ১৬ টি গল্প খুজে বের করে সেগুলো তুলে ধরেছেন এই বইয়ে। বদর আউলিয়ার উপখ্যান থেকে শুরু করে বাক-খানির আদিকথা হয়ে, সিলেটের জুজু, রাজা দক্ষিণরায়ের উপকথা, ভাওয়ালরাজের গল্প দিয়ে, সবার শেষে ইশাইনাথের গল্প দিয়ে শেষ এই উপাখ্যানের। প্রত্যেকটি গল্পের মাঝে বাংলাদেশের একটা স্বাদ পাওয়া যায়। ছোট আকারের এই বই এক বসায় শেষ করা যায়। কিন্তু তারপর আরো এমন উপকথা পাবার একটা চাহিদাও তৈরী হয়ে যায় সেই সাথেই।
সত্যি বলতে আমাদের দেশের প্রচলিত লোকো কাহিনী গুলো খুব সুন্দর। অবশ্য শুনতে খুব ভাল লাগলেও এগুলোর পেছনে যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে খুবই কম। কখনো কখনো মনে হয় এগুলো নিছকই গল্প। তবে যা কিছু রটে তার কিছু তো বটে। বইটি তে যে ১৬ টি লোকোকাহিনী লেখা আছে সেগুলোর প্রত্যেকটাই খুব চিত্তাকর্ষক। এর কয়েকটির ঐতিহাসিক ভিত্তি ও তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। বাকিগুলো শুধুই মিথ। কয়েকটি গল্প আমাকে ভালোভাবে নাড়া দিয়েছে ।
তবে লেখকের গল্পের আকারে লোককাহিনী গুলো তুলে আনার চেষ্টা অসাধারণ। বইয়ে উল্লেখ করা অনেক কাহিনী আগে জানা ছিল না।তাছাড়া প্রত্যেকটা গল্পের শুরুর ছবিগুলোও বেশ ভালো লেগেছে । মোটের উপর সময়টা খুব খারাপ কাটেনি। আর হ্যাঁ, এটা কিন্তু সংগ্রহে রাখার মত একটা বই নিঃসন্দেহে ।
চমৎকার একটা বই। আমাদের চেনাজানা জায়গাগুলোর সাথে এত দারুণ সব রূপকথা জড়িয়ে আছে, জানতে পেরে বিস্মিত এবং আনন্দিত হয়েছি। লেখক নিজে একজন থ্রিলার লেখক বলে আবহ তৈরিতেও বেশ পারঙ্গম। সবমিলিয়ে বেশ সুখপাঠ্য।
গল্প বলা এবং শোনা উভয়েই মানুষ আগ্রহী। গল্পের এই নেশা আদিমকাল থেকেই প্রচলিত। প্রত্যেকটা জনপদেরই কিছু নিজস্ব লৌকিক গল্প থাকে। হতে পারে সেখানকার স্থানের নামকরণের গল্প কিংবা বহুকাল ধরে চলে আসা কোনো কিংবদন্তির গল্প। মানুষের মুখে মুখে বর্ণিত গল্পরা যেহেতু ক্রমাগত বদলাতে থাকে সেহেতু এসব গল্পের সত্যতা নিরূপণ করতে যাওয়া বোকামি। তার চেয়ে বরং গল্পের মাঝে ডুব দিয়ে উপভোগ করাই শ্রেয়।
এই সংকলনে ১৬ টি লৌকিক গল্প স্থান পেয়েছে। চট্টগ্রামের নামকরণের গল্পে এসেছে বদর আউলিয়ার কথা। যে গল্পে দেখা যায় তার অলৌকিক চাটির গল্প থেকেই চাটগাঁ, পরবর্তীতে চট্টগ্রাম। আছে শাহ মাখদুমের নাম থেকে রাজশাহীর নামকরণের পৌরাণিক গল্প। সুন্দরবন এবং ওই অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে তিনটি গল্প স্থান পেয়েছে। একটি হচ্ছে বিখ্যাত কিংবদন্তি গাজী, কালু এবং চম্পাবতী, দেবতাতুল্য দক্ষিণরায়ের কথা এবং কমল বাওয়ালি উপাখ্যান।
রাজ পরিবারের বেশকিছু স্থান পেয়েছে সংকলনে। নবাব সিরাজদৌল্লার পুত্রের হিন্দু পরিচয়ে এক জমিদার পরিবারে বেড়ে উঠার গল্প, নবাব মুর্শিদ কুলি খার পৌষ্যপুত্র আগা বাকেরের প্রেমকাহিনী বেশ আকর্ষণীয়। এই গল্পকে আবার বরিশালের বাকেরগঞ্জ এবং বাকরখানি খাবারের নামের উৎস হিসেবেও বলা হয়েছে। ভাওয়াল রাজার মৃত্যুপথ থেকে ফিরে আসার কিংবদন্তি, বাংলার শেষ হিন্দু রাজা বল্লাল সেনকে নিয়েও আলাদা গল্প আছে। এগুলোকে ইতিহাসের বাইরে এমনিতে গল্প হিসেবে দেখলেই বরং উপভোগ্য।
বইখানা একমাস গড়াগড়ি খেয়ে এইমাত্র বইখানা শেষ করলাম। মাইথো���জি রিলেটেড বই পড়ার বেশ আগ্রহ ছিল। এই বইটা ফেইসবুক ওয়ালে অনেক দিন যাবৎ দেখছিলাম, সবার এক্সাইটমেন্ট দেখে আমিও পড়া শুরু করলাম। এই দেখি, ঘুমোনোর সময় দাদুর বলা সব কেচ্ছা-কাহিনী। চট্টগ্রামের মেয়ে হওয়ায় বদর আউলিয়া উপখ্যান সেই অনেক আগেই জানা। তার সাথে বিভিন্ন জেলা-ভিত্তিক নতুন কিছু কাহিনী জানলাম। কিন্ত ঘুরে ফিরে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত এই গল্পগুলো কম বেশি সবারই জানা, ভেবেছিলাম বইটাতে আরেকটু খুটিয়ে খুটিয়ে সব লেখা থাকবে। সেটা একটু নিরাশ করল। তবে আয়েশে পড়ার মত মোটামুটি ভালো একটা বই। আর যে কথা না বললেই নয়, সতীর্থ প্রকাশনার প্রোডাকশন বেশ লেগেছে আমার। প্রচ্ছদ ও সুন্দর আবার ভেতরের ছবিগুলোও।
মাইথোলজি, রুপকথা, উপকথা নিয়ে বরাবর-ই আমার ভীষণ আগ্রহ। আমাদের পথে-প্রান্তরে এরকম হাজারো কিংবদন্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও তাদের এক করার প্রচেষ্টা খুব কম-ই হয়েছে। পশ্চিম বাংলায় এরকম কিছু বই পড়া হয়ে থাকলেও বাংলাদেশে এধরনের গল্প সংকলন আমার চোখে পড়েনি। তাই এই বইটা গুডরিডস, বুক্সটাগ্রামে দেখে মোটামুটি উত্তেজনা নিয়েই পড়া শুরু করি। গল্পগুলো খুঁজে বের করতে লেখককে যথেষ্ট রিসার্চ করতে হয়েছে তার জন্য তাকে সাধুবাদ। তবে লেখকের ভাষা কিছু জায়গায় খাপছাড়া যেমন- একই লাইনে 'তোমাকে' ও 'তোমারে' ব্যবহার। এছাড়াও লেখনীর অপরিপক্কতা কিছু জায়গায় চোখে লাগার মত। ভালো লাগার প্রত্যাশা নিয়ে শুরু করলেও শেষ করে ঠিক উচ্ছসিত হতে পারিনি।
প্রথমত আমার সন্দেহ আছে বইয়ের নামে ব্যবহৃত মাইথলজি কোন শব্দ আছে কিনা। ইংরেজি মিথ শব্দ থেকে উদ্ভূত ধরে নিলে শব্দটা হওয়া উচিত মিথলজি। গুগল এ উচ্চারণ ও তাই বলছে। যাই হোক, বাংলাতে কিংবদন্তীর বা উপকথার মত মিষ্টি শব্দ থাকতে ইংরেজি শব্দ নিয়ে এই বিভ্রাট করার কি দরকার ছিল জানিনা। হয়ত ইংরেজি শব্দ বেশি ওজনদার আর বিক্রয়োপযোগী বলে। বইয়ের কাহিনীগুলো আগ্রহোদ্দীপক। কাহিনীর শেষে স্থানীয় এলাকার নাম, জনপ্রিয় আকর্ষণ বা লোক কাহিনীর সাথে যোগসূত্র টেনে উল্লেখ করায় উপসংহার গুলো সুখপাঠ্য হয়েছে। গল্পগুলোতে কেবল বর্ণনা না দিয়ে কথপোকথন যুক্ত করায় পড়তে একঘেয়েমি আসেনি। স্বপ্রকাশিত গ্রন্থ বলে হয়ত কিছু বানান, বাক্য গঠন জনিত ভুল পেশাদার সম্পাদকের হাতে ধরে পরে শুধরে যাবার সুযোগ পায়নি। তাতে বই পড়বার সময় আধা সেকেন্ডের জন্য হোচট খাওয়া ব্যতীত কাহিনীর গুণগত মানের উনিশ বিশ হয়নি। আরেকজনের রিভিউ শুনেই বইটি দেশ থেকে অনিয়ে নিয়ে পড়লাম। পস্তাতে হয়নি। যারা মিথলজি ভালোবাসেন তারা উপভোগ করবেন।
এবছরের বইযাত্রার শুরুটা করি ‘বঙ্গদেশি মাইথোলজি-১’ দিয়ে, মিথোলজি নিয়ে আকর্ষণ থেকে এই বই পড়া শুরু করি। মোট ১৬ টি কাহিনী সংকলিত হয়েছে এই বইতে। প্রায় সবগুলো লোককাহিনীই ভালো, পাঠক পড়ে মজা পাবে। প্রতিটি কাহিনী দ্রুততার সাথে এগিয়েছে। ‘বাকরখানি’-র খাবারের নামটি কিভাবে এলো? আমরা তো প্রীতিলতা কিংবা যাশীর রাণী লক্ষ্মীবাঈয়ের কথা জানি, তবে কমল বাওয়ালীর বীরত্বের গল্প কি আমরা জানি? আলিকদম, চাঁটগা'র নামকরণ হলো কিভাবে? রাজা বল্লাল সেন, মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর অপ্রিয় পরিণতি কথা জানার ইচ্ছা হলে পড়তে পারেন ছোটখাটো বইটি। লেখকের লেখনশৈলী দারুণ। লেখক প্রতিটি গল্পের মূল প্রেক্ষাপট অপরিবর্তিত রেখে নিজের মতো গল্পের কাহিনী সাজিয়েছে, যা চমকপ্রদ লেগেছে।
মাইথোলজি তাও আবার সেটা যদি হয় বঙ্গদেশের না পড়ে কি থাকা যায় নাকি? ১৬ টি ছোট লৌকিক গল্পের সংকলন এই বইটি। যে গল্প গুলো বছরের পর বছর ধরে আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে চলে এসেছে "কিচ্ছা" হিসাবে। ছোটবেলায় এইসব "কিচ্ছা" শুনেছি আয়োজন করে আব্বুর মুখে। পড়তে পড়তে সেই সময় গুলো মনে পরছিলো। লোকমুখে চলে আসা গল্প সাবলীলভাবে বইয়ের মলাটে আনা সহজ নয়। লেখক এই কঠিন কাজটি করতে পেরেছেন।
আকারে ছোট এই বইটার দামটা একটু "বুকে বেতা" করার মতো এছাড়া আর কোন অভিযোগ নাই।
বঙ্গদেশি মাইথোলজির প্রচ্ছদ পাবলিকেশনের দিন আমি দাদাকে বলেছিলাম এক কপি আমার জন্য...১৫৮ পৃষ্ঠার মূলত বাংলাদেশের লৌকিক গল্পের সংকলন। ১৬ টা গল্প, কোনটা ৭, কোনটা ১৭/১৮ পৃষ্ঠা... ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে ভাত খেতে খেতেই পড়ে শেষ করে ফেলা যায়। বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন রহমান আজাদ, আমার ভীষণ ভালো লেগেছে বিশেষ করে এমবুশের জন্য।
লেখার শুরুতে আছে লেখকের ব্যক্তিগত দায় স্বীকার, সত্যি মিথ্যে খুঁজে নেয়ার ভার পাঠকের।
এই লৌকিক গল্প গুলো বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। চারিদিকে বাজারী সাহিত্যে যখন মার্কেট ঠাসা, তখন এ ধরণের সংকলন একটু আশার আলো জাগায়। গল্পগুলো সহজ স্বাভাবিক, হাজার বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে ফেরা গাজী কলু চম্পাবতী, বদর আউলিয়ার উপ্যাখান, ভাওয়াল রাজার গল্প, আলী সুড়ঙ্গ আপনাকে সব কিছুর অরিজিন নিয়ে ভাবতে শেখাবে।
এই বইয়ের লেখা, বিন্যাস যেমন ই হোক এই বই অন্তত আপনাকে আরো ১০ টা বইয়ের কাছে টেনে নিয়ে যেতে বাধ্য করবে। এই বই টা পড়ার পর আমি গল্পের ভিত্তি আর সত্যতা খুঁজতে যেয়ে অসংখ্য বইয়ের সন্ধান পেয়েছি যা না পেলে জীবনে জানার একটা অংশ অন্ধকারে থেকে যেত। সে বই নিয়ে অন্য দিন লিখবো..
স্থপতি এবং সাহিত্যিক রাজীব দাদাকে ধন্যবাদ এবং শুভকামনা....দিন যেমন ই আসুক লেখা অব্যাহত থাকুক...
Very stories are close to the soil. If you are missing your home back in India or Bangladesh then order a copy of this book, go through the pages, deep down this will refresh your memory with a positive vibes when blended with excellent narrative styled storytelling.
Merged review:
Every stories are close to the soil. If you are missing your home back in India or Bangladesh then order a copy of this book, go through the pages, deep down this will refresh your memory with a positive vibes when blended with excellent narrative styled storytelling.
বই : বঙ��গ দেশি মাইথোলজি লেখক : রাজীব চৌধুরী প্রচ্ছদ : রহমান আজাদ জনরা : লৌকিক উপকথা পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২০০ (ইলাস্ট্রেটেড ভার্সন) মুদ্রিত মূল্য : ১৮০ টাকা
ফ্ল্যাপ থেকে : হিন্দু জমিদার যুগল কিশোর রায় চৌধুরীকে কেন শ্মশানে না পুড়িয়ে লুকিয়ে জানাজা পড়িয়ে কবর দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু কেন? বাংলা নারী জাগরনের পথিকৃৎ বেগম সুফিয়া কামাল তার আত্মজীবনীতে কোন রহস্যের কথা লিখেছিলেন? বরিশালের চন্দ্রদ্বীপের সাথে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু বাকরখানি খাবারের যোগসূত্র-ই বা কোথায়? কিংবা নবীগঞ্জ উপজেলায় কুড়ি টিলার কালো পাথর কেনই বা দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে? ‘ভাগিনা’ উপাধি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ঠগি সম্প্রদায়, সিলেটের আলোচিত ‘জুজু’ উপকথা, ময়মনসিংহের চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির আখ্যান, বাবা আদমের অভিশাপে রাজা বল্লাল সেনের দুর্গতি, পৌরাণিক ক্ষমতাবান বাঘ দেবতা দক্ষিণরায়ের ইতিহাস, খুলনা শহরে করিম, কমল ও সৈয়দজানের ট্রাজেডি, রাজা রামেন্দ্রনারায়ণ রায়ের জিঘাংসা বশত প্রতিশোধের গল্প, ঈশ্বর পুত্র ইশাইনাথের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার মতো জানা-অজানা নানা উপকথা ছড়িয়ে আছে এই বাংলাদেশের মাটিতে। সেই সকল উপকথা নিয়ে রচিত ‘বঙ্গদেশি মাইথোলজি’। রোমাঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অভিভূত হতে বাংলার জানা-অজানা ১৬টি উপকথা নিয়ে রাজীব চৌধুরীর লেখা ‘বঙ্গ দেশি মাইথোলজি’ উপাখ্যানে আপনাকে স্বাগত।
পাঠ প্রতিক্রিয়া : বাংলার লোকসাহিত্যর লোককথা,উপকথা যখন এই প্রজন্মের অনেকের কাছেই অজানা, তখন লেখকের বাংলার লোকসাহিত্যে নিয়ে লেখার মহৎ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসা করার মতোই!
বইটি তে রয়েছে ১৬ টি গল্প। ১.বদর আউলিয়া উপাখ্যান ২.গাজী কলু চম্পাবতি ৩.আলী সুড়ঙ্গ ৪.নবার সিরাজউদ্দৌলার পুত্র কথা ৫.বাকরখানির প্রেম ৬.কুড়িটুলার কালোপাথর রহস্য ৭.গানস অফ বরিশাল ৮.ভাগিনা বিভীষিকা ৯.জুজু ১০.চন্দ্রাবতীর প্রেম কথা ১২.চন্দ্রাবতীর প্রেমকথা ১১.পোড়া রাজা ১৩.কমল বাওয়ালী উপাখ্যান ১৪.নরবলি ১৫.ভাওয়াল রাজার গল্প ১৬.ইশাইনাথের গল্প
বইটি হাতে নিয়ে প্রথমেই আমার মনে যে প্রশ্নটি উঁকি দিয়েছে তা হলো বইটির নাম।বইয়ের ফ্ল্যাপে আমরা দেখতে পাই এটি বাংলা উপকথার সংকলন।কিন্তু বইটির নাম বঙ্গীয় মাইথোলজি ; ফোকলোরের একটি সতন্ত্র শাখা লোক গল্প।লোকগল্পের কয়েকটি ধাপ রয়েছে তার মধ্যে কিংবদন্তি এবং উপকথা দুটোই রয়েছে।এখন কিংবদন্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ মিথলজি। সোজা কথায় মিথলজি হচ্ছে এমন এক গল্প কাহানি যাতে শুধু দেব-দেবি এবং সমাজের বীরপুরুষদের কাহীনি বর্নিত যা প্রাকৃতিক ঘটনা সমুহের পিছনে তাদের শক্তি বর্ননা করে আর প্রাকৃতিক ঘটনা সমূহের ব্যাখ্যা দেয়। এক কথায় দেব-দেবীদের নিয়ে যে কোন কাহীনিই হচ্ছে মিথ আর এ সম্পর্কিত বিদ্যা বা পড়ালেখাকে বলে মিথলজি। আর উপকথার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ফেবল যা একটি কল্পকাহিনী বা একটি কাল্পনিক আখ্যান যার অর্থ নৈতিক পাঠ শেখানো।কল্পিত চরিত্রগুলি সাধারণত এমন প্রাণী যাঁর কথা এবং কাজগুলি মানুষের আচরণকে প্রতিবিম্বিত করে। কিন্তু গল্পগুলোর সংকলন আসলে কিসের মধ্যে পড়েছে একজন ফোকলোর স্টুডেন্ট হিসেবেও আমি উদ্ধার করতে পারলাম না।
এইবার আসি মূল কথায়, প্রথমেই আমি বলেছি বাংলার লোককথার প্রাচীন ঐতিহ্য যখন হারিয়ে যেতে বসেছে তখন এই ধরনের একটা বই,বইয়েত জগৎ এ নতুন মাত্রা যোগ করেছে।কিন্তু এই কথা দুটো ছাপিয়ে আমি যদি গল্পের গাঁথুনি বা গল্পের শিকড় সম্পর্কে আর দুটো ভালো কথা বলতে পারতাম তাহলে আমার নিজের ও অনেক ভালো লাগতো!গল্পের গাঁথুনির কথা যদি বলি তাহলে বেশ কয়েকটি গল্প পড়তে গিয়েই আমার খাপ ছাড়া মনে হয়েছে; বিশেষ করে শেষ গল্পটি অর্থাৎ ইশাইনাথের গল্পটা খুবই এলোমেলো লেগেছে এবং গল্পের মূল উপজীব্য পর্যন্ত পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়েছে! এই প্রজন্মের অনেকেরই গাজির গান,ঠগী, দক্ষিণারায় এইসব গল্প সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই।তাই মানুষ যখন কোনো একটা অজানা বিষয়ে পড়তে যায় সে সেই বিষয়টির শিকড় পর্যন্ত যেতে চায় কিন্তু ইতিহাস নির্ভর যে গল্প গুলো রয়েছে সেখানে তথ্যের দৈন্যতা সহজেই প্রকাশ পায়।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমার কেনো যেনো মনে হয়েছে উনি উইকিপিডিয়ার সাহায্য নিয়েছেন।কিন্তু গাজী কালু চম্পাবতী, শাহ মখদুম কিংবা ভাগিনা বিভিষীকা এই গল্পগুলো তথ্যবহুল ভাবে পাঠকের সামনে উপস্থিত হতে পারতো!কেননা আমরা যদি লোকসাহিত্যের লোকনাট্য কিংবা লোককাহিনী গুলো নিয়ে যদি একটু পড়াশোনা করি তাহলেই তা খুব সহজেই প্রতীয়মান হয়।কারন এই গল্পগুলো নিয়ে গবেষনার অনেক জায়গা আছে বলে আমার মনে হয়।মানে প্রতিটা গল্প পড়ার পরই মনে হয়েছে এটা সম্পর্কে যদি আরেকটু জানতে পারতাম।তবে একটা দুটো এমন বিষয়ও ছিলো যা আগে জানা ছিলো না,যেমন গানস অফ বরিশাল। বইয়ের প্রচ্ছদ নির্বাচনে লেখকের প্রশংসার দাবিদার।
সর্বোপরি যদি বলি আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া ছিলো খুবই সাদামাটা।
This entire review has been hidden because of spoilers.
ডিজিটাল যুগে এনালগপ্রেমী অধম আমি। মাঝেমধ্যে মনে হয় জন্মটা কিছু সময়ে পূর্বে ঘটলে মন্দ হতো না। সেকেলে জীবন ধারার গতি তুলনামূলক মন্থর হলেও এর মোহ মায়া বরাবরই আমার নিকট আরাধ্য। সেই সুবাদে পৌরাণিকতা বা মাইথোলজির প্রতি একটা টান আছে। ব্যক্তিগতভাবে মাইথোলজি হলো বাস্তবতা এবং গল্পকথার একটি পরিমিত সংমিশ্রণের ফসল। এর যেমন ঐতিহাসিক কোনো দলিল নেই তেমনি একে অগ্রাহ্য করে ফেলে দেবারও জো নেই। কারন এই ঘটনা বা রটনা যাই বলুন না কেন স্থান-কাল -পাত্র ভেদে লোকমুখে এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে তা এখন একেকটি অঞ্চলের নেপথ্য পরিচায়ক। সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত রাজীব চৌধুরী ভাই এর লেখা বঙ্গ দেশী মাইথোলজি বইটিতে স্থান পেয়েছে এমনই ১৬ টি লোককথা যেগুলোতে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নানা স্থান, নানা কৃষ্টি ও নানান ঐতিহ্যের কথা। লেখকের লেখনীর গুনে যেকোনো বয়েসী পাঠকের কাছেই তা বেশ সহজবোধ্য এবং সুখপাঠ্য। একদিকে যেমন বর্ণনার আধিক্য নেই অপরদিকে গল্পের অন্তিম অংশে তিনি উন্মোচন করেছেন বাস্তবিক অস্তিত্বের অংশটুকু। সাধারণত মাইথোলজির একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর লিখিত কোনো নথি না থাকলে তা সময়ের সাথে পরিবর্তীত হয়। আমি জানি না বাংলার মাইথোলজি নিয়ে এমন কোনো সংকলন আছে কি না তবে লেখক যথেষ্ট পড়াশোনা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফলটুকুই বইটিতে লিপিবদ্ধ করেছেন তা অনস্বীকার্য। কেননা কিছু গল্প নিয়ে আমার পূর্ব ধারণা ছিলো এবং আমার ধারণার সাথে সেগুলো অনেকটাই মিলেছে। আরেকটি বিষয় না বললেই নয় যারা দাদা-দাদী বা অগ্রজ হতে গল্প শোনেন অথবা লোককথা পূর্বেও পড়েছেন তারা এই বই এ তেমন কিছু গল্পও পেয়ে যেতে পারেন। হয়ত এতে স্থান ও চরিত্রের কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে যা অত্যন্ত স্বাভাবিক কিন্তু আমার মনে হয়েছে লেখক যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন এই বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ সঠিক পন্থায় লিপিবদ্ধ করার। ঠিক এই কারনেই আমার ভালো লেগেছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পুত্র কথা, গানস অব বরিশাল, রাজাধিরাজ দক্ষিণরায়, নরবলি ও ভাওয়াল রাজার গল্প। অন্যদিকে মনে হয়েছে ভাগিনা বিভীষিকা ও চন্দ্রাবতীর প্রেমকথায় আরেকটু বিস্তারিত লেখনি উপস্থাপিত হলে দারুন হতো। আর বাকি গল্পগুলো তো আমার একেবারেই অজানা। সেগুলো আমার নিকট "গ্রীষ্মে শীতল জলে অবগাহনসম"। তবে বাংলা মাইথোলজি শুধু এই ১৬ গল্পে সীমাবদ্ধ নয়। এখনো অনেক জানা এবং অজানা গল্প ছড়িয়ে আছে আমাদের আশে���াশে। আশার কথা লেখক এই বই এর দ্বিতীয় খন্ড আনার ব্যপারে আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করবো দ্বিতীয় সংকলন প্রথমটির চেয়ে আরো পরিবর্ধিত, পরিমার্জিত সংস্করন হিসেবে প্রকাশিত হবে শীঘ্রই।
তবে ৩ টি বিষয়ে একটু আলাদাভাবে আলোকপাত করতে চাই।
১. ধর্মগ্রন্থ ব্যতীত কোনো বই'ই ভুলের উর্ধ্বের নয়। এই বইয়ে কিছু বানান ভুল রয়েছে। আশা রাখি পরবর্তীতে তা সংশোধিত হয়ে সংস্করিত হবে।
২. মাইথোলজি বই যে কয়টা পড়েছি সেগুলোতে ছবির আধিক্য লক্ষ্যণীয়। বঙ্গ দেশী মাইথোলজিতে দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ ও গল্পের শুরুতে দেয়া ছবির পাশাপাশি আরো কিছু ছবি সংযুক্ত করতে অনুরোধ জানাচ্ছি। তাছাড়া এলাকা ও স্থানভিত্তিক যে ঘটনাগুলো রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে স্থানগুলোর ছবিও যুক্ত করা যেতে পারে৷ এতে দেশ ও দেশের বাইরের বাংলা ভাষাভাষী সকলে এই বই এর সাথে নিজেদেরকে আরও বেশি কানেক্ট করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
৩. বাংলার বিভিন্ন মাইথোলজিক্যাল গল্পগুলো সংগ্রহ এবং তা লিপিবদ্ধ করা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যপার। তবুও যদি সম্ভব হয় তাহলে বিভিন্ন খন্ডে প্রকাশের পরিবর্তের এক খন্ডে বইটি প্রকাশের অনুরোধ রইলো। কেননা ক্ষুধায় পেট ভরে না খেলে ক্ষুধা মেটে না। আমাদের ক্ষুধার্ত রেখে কি লাভ বলুন!
আমি মনে করি যারা ভিন্ন ধরনের বই এর স্বাদ নিতে চান তাদের কাছে এই বইটি চমৎকার অপশান। পাশাপাশি উপহার হিসেবেও এই বইটি অনন্য। কিশোর থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ প্রত্যেকেই আশা করি এই বই এর সাথে নিজের একাত্মতা প্রকাশ করবেন।
ধন্যবাদ রাজীব চৌধুরী ভাইকে পাশাপাশি ধন্যবাদ সতীর্থ প্রকাশনা কে!
"এটার কোন গল্পই বিশ্বাস করবেন না। আবার অবিশ্বাস করে ছুঁড়েও ফেলবেন না।"- লোকগল্প বাস্তবিকই কিরাম জানি রহস্যঘেরা, তাই না? না যায় পুরোপুরি হেসে উড়িয়ে দেয়া, না যায় অমোঘ সত্য বলে মানা। লোকগল্পের এটাই জাদু! আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার বদৌলতে ভাওয়াল রাজা-র নামটা বেশ চেনা; কেন? কেন আবার? হোম লোন নিতে গিয়ে ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখেন, জমির মালিকানার লিস্টে ভাওয়াল রাজার নাম থাকা মানেই ভেজাল! তো এই ভাওয়াল রাজার জমিতে কেন আইনি প্যাঁচগোচ এ প্রশ্ন মাথায় আসলেও উত্তর খোঁজার সুযোগ হয়নি। কাজেই পুরাণ পড়তে গিয়ে যখন দেখলাম, আরে! ভাওয়ালা রাজার গপ্পো দেখি!-তখন পুরোই “রথ দেখলাম, কলাও বেচলাম”-মার্কা একটা আনন্দের অনুভূতি হলো। আসলে লোকগল্প পড়ার মজাটাই এখানে- আনন্দ পাওয়া যায় আবার মজার মজার খবরও জানা যায়। রাজীব চৌধুরীকে তাই ধন্যবাদ দিতেই হয় বাংলার লোকগাঁথাকে নিজের লেখনীর বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেয়ার জন্যে। “বঙ্গদেশি মাইথোলজি” বইটিতে গল্প আছে মোট ষোলটি। প্রথম গল্পটিই নজর কেড়ে নেয় যখন দেখি গল্পটি আমার প্রিয় শহরের। আমার জন্ম, শৈশব-কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম কিংবা চাটগাঁ,পাথরঘাটা,চেরাগী পাহাড়-জায়গাগুলোর নাম আমার খুব চেনা, নামগুলোর পেছনের গল্প হয়তো আমি ছোটকালে শুনেছিও যেই স্মৃতি কালের স্রোতে আজ ম্লান। “বদর আউলিয়া উপাখ্যান” পড়ার সময় তাই যেন বারবার ফিরে যাচ্ছিলাম আমার প্রিয় শহরে। বইতে আছে পীর শাহের মাজার, আলী সুড়ঙ্গ আর কুড়িটিলার গল্প। “কমল বাওয়ালি উপাখ্যান” পড়ে পরিচয় হবে এক বিপ্লবীর সাথে যার নাম ইতিহাস হয়তো ভুলে গিয়েছে। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পুত্রের গল্প যেমন জানবেন তেমন জানবেন বাংলার শেষ হিন্দু রাজার গল্পও। কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া, অমিমাংসিত এক রহস্যের খোঁজ মিলবে “গানস অফ বরিশাল”-গল্পে। জুজু কিংবা ভাগিনার মতো এখনও বাস্তব এমন আতঙ্কের গল্পও রয়েছে বইটিতে। বাকরখানি খেয়েছেন? ওর পেছনে যে একটা হৃদয়বিদারক গল্প আছে তা কি জানতেন? জানবেন “বাকর-খানির প্রেম” গল্পটি পড়লে।
আমার সবচেয়ে কম পছন্দ হয়েছে বইটির দশ নাম্বার গল্প “চন্দ্রাবতীর প্রেমকথা” গল্পটি। সুযোগসন্ধানী এক মানুষের জন্য কবি চন্দ্রাবতীর স্নেহাভাব আমার হজম হয়নি। “ইশাইনাথের গল্প” নামের বইয়ের শেষ গল্পটি খুব সামান্যই প্রভাব ফেলতে পেরেছে আমার পাঠক মানসপটে। ওদিকে “গাজী,কালু ও চম্পাবতী” নামের দ্বিতীয় গল্পটি আর “রাজাধিরাজ দক্ষিণরায়” নামের চৌদ্দ নাম্বার গল্পটি পড়ে মাথায় গিট্টুর মতো লেগে গিয়েছিল। কারণ দুই গল্পেই রাজা দক্ষিণ রায়ের দেখা পাবেন কিন্তু দুইটিতে রাজার ঝলক দুইরকম। আমার মনে হয়েছে এই দুইটিকে এক করে একটা গল্প হলে পাঠক হিসেবে পড়তে আর উপভোগ করতে সুবিধে হতো। এই চারটে বাদে প্রতিটা গল্পই আমি বেশ উপভোগ করেছি।
বঙ্গদেশি মাইথোলজি পড়ে ভালো লাগার আরেকটি মোক্ষম কারণ হচ্ছে বইটির প্রোডাকশন। ক্রাউন সাইজের বইটি ধরে পড়তে খুব আরাম। ওদিকে বাঁধাইও চমৎকার; মজবুত কিন্তু আবার বই খোলাই যাচ্ছে না-এমন নয়। বানানের ভুলচুক চোখে পড়েনি বললেই চলে। সতীর্থ প্রকাশনী একটা বাহবা পেতেই পারে। গাজী,কালু ও চম্পাবতী গল্পটি মাথায় গিঁট লাগিয়ে দিলেও এই গল্পকে উপজীব্য করে রহমান আজাদ-এর করা প্রচ্ছদটি চমৎকার লেগেছে। আমার শুধু একটি জিনিসই একটু খুঁতখুঁত লেগেছে – যেসব বাস্তব জায়গার গল্প বইটিতে উঠে এসেছে সেগুলোর ছবি, এমনকি সাদাকালো হলেও যোগ করা হলে বোধ করি বইটি পড়ার আনন্দ কিছু হলেও বাড়তো। তা স্বত্ত্বেও বইটা অনেক উপভোগ করেছি।
লেখক বইয়ের ভূমিকায় ঠিকই বলেছেন যে এই গল্পগুলো হয়তো আমাদের একেবারে অচেনাও নয়; একই গল্প একটু ভিন্ন মালমশলা মেশানো অবস্থায় আমরা অন্য কোথাও শুনেছি। তাতে বইটি পড়ার আনন্দ একটুও কমেনি। বাংলার এমন রহস্যময় লোকগল্পের স্বাদ নিতে দেরি না করে খুলে বসুন “বঙ্গদেশি মাইথোলজি”।
প্রাচীন মিশর কিংবা গ্রীক সভ্যতা নিয়ে আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। কিংবা মায়ান সভ্যতা আর ইনকাদের ব্যাপারেও আমাদের প্রবল আগ্রহ রয়ে গেছে সব সময়েই। এই এতো দেশের এতো রূপকথা কিংবা মিথোলজি যাইই বলুন না কেনো, তা জানতে গিয়ে জানা হয়ে উঠেনি নিজ দেশেরই বিভিন্ন মিথোলজিক্যাল গল্প সম্পর্কে। আর সেইসব লোকগাথা সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই সতীর্থ প্রকাশনী হতে নতুন করে বাজারে আসা "বঙ্গদেশী মাইথোলজী" বইটি নিয়ে নিলাম।
#পর্যালোচনাঃ একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে এই ছোটো পরিসরের বইটা শেষ করলাম। আমার নিজের দেশেরই এতো এতো অদ্ভুত লোককাহিনী আছে তা জানাই ছিলো না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে লেখক রাজীব চৌধুরীর অসাধারণ লেখনী।
সর্বমোট ১৬টা লোকগাথা দিয়ে সাজানো হয়েছে ক্রাউন সাইজের ১৯৮ পৃষ্টার এই বইটি। এবং আমি এর প্রতিটা গল্পই উপভোগ করেছি বেশ ভালো ভাবে। আমাদের দেশের কিছু এলাকার বিভিন্ন জায়গা কিংবা স্থাপনার নাম কিভাবে এসেছে তা গল্পের আকারে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। বদর আউলিয়া উপাখ্যান, নবাব সিরাজুদ্দৌলার পূত্র কথা, কুড়িটিলার কালোপাথর রহস্য, গানস অফ বরিশাল এবং পোড়া রাজা এই ৫টি গল্প পড়ে যেমন চমকিত হয়েছি তেমনি আরো রহস্যের জালে ডুবে গেছি। আসলেই কি এই ধরণের ঘটনা জড়িয়ে আছে এই চেনা পরিচিত জায়গা এবং স্থাপনা গুলোর নামের সাথে!! অপরদিকে ভাগিনা বিভীষিকা আর জুজু গল্প দুটি পড়ে এক ধরণের আতংক অনুভব করেছি। আসলেই কি এই বাংলায় এখনো ঠগী সম্প্রদায়ের লোকেরা "ভাগিনা" নাম ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে 😞? আর সিলেটের চা বাগানের জুজুর ভয়েরই বা অস্তিত্ব কতোখানি? মিথোলজি বা পুরানের গল্পে লজিক হয় না, এগুলা অল্প বিস্তর সত্যির উপরে অনেকখানি রসকষ মিশ্রিত গল্প হয় সাধারণত। তবুও লেখকের কাছে এই ২ গল্পের সত্যতার ব্যাপারে জানার আগ্রহ রেখে গেলাম। কারন সাবধানের মার নেই। কারোই এই রকম "ভাগিনা" দের খপ্পরে পড়া মোটেও কাম্য নয়।
উল্লেখিত গল্পগুলোর বাইরেও বাকী গল্পগুলোও অসম্ভব সুন্দর। বাকরখানীর গল্পটা ভালো হলেও, সেটার সাথে আদৌ ঢাকার বিখ্যাত খাবার বাকরখানীর সম্পর্ক কতোটা তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে যায়। আর "ইশাইনাথের গল্প" আদৌ আমাদের লৌকিক গল্প হিসাবে বলা যায় কি না সেটাও একটা প্রশ্ন। তবে দিনশেষে এই পুরো সংকলনটা এই দেশের সকল পাঠকের পড়া উচিত বলে আমি মনে করি।
#প্রোডাকশনঃ সতীর্থ প্রকাশনার প্রোডাকশন খুবই চমৎকার। এই পিচ্চি ক্রাউন ���াইজের বইগুলোও বেশ যত্ন নিয়ে উনারা প্রোডাকশন করেছেন। বইয়ের প্রচ্ছদ সুন্দর৷, তবে সতীর্থের অন্যান্য বইয়ের প্রচ্ছদের তুলনায় কিছুটা সাদামাটা মনে হতে পারে। কোনো বানান ভুল চোখেই পড়েনি। আর সাথে দেয়া বুকমার্কগুলো তো স্রেফ ভালোবাসা 🥰।
#রেটিংঃ ০৯/১০ ( এই ধরণের লৌকিক গল্পের ভক্ত আমি এমনিতেই, তার উপর নিজ দেশের বিভিন্ন জায়গা/স্থাপত্যের নামের সাথে জড়িয়ে থাকা গল্পগুলোকে লেখক আপন মহিমায় বড্ড সুন্দর করে সাজিয়েছেন)
#পরিশিষ্টঃ ছোটোবেলায় আমরা ঈশপের গল্প পড়েছিলাম। তখন সেই বাচ্চা মননে সেই অবাস্তব গল্পগুলোকেও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হতো!! আসলেই কি এমন হতে পারে, টাইপ একটা চিন্তা মাথায় কাজ করতো। অনেক বছর পর এতোবড় হয়েও সেই একই অনুভূতি হচ্ছে এই বইয়ের গল্পগুলো পড়ে। সবাই একবার পড়ে দেখুন৷ ভালো লাগবে আশা করি। হ্যাপি রিডিং।
"মিথোলজি" শব্দটা শুনলেই কেন যেন আমরা ভাবতে বসি এখন বুঝি মিশরীয়, গ্রিক কিংবা ভিন্ন কোনো জাতির পুরাকাহিনী পড়ব।কিন্তু বাংলাদেশের নিজের ও বেশ দারুণ সব পুরাকাহিনী আছে তার দিকে এবারে একটু নজর দেয়া যাক! এমন অনেক গল্প থাকে আমাদের আশেপাশে যা বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলাচলে থাকে। অর্থাৎ, এসব গল্প যে কাউকে বিশ্বাস করতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই, কিন্তু বিশ্বাস করলেও বিশেষ ক্ষতি নেই। কোনো অঞ্চল বা জাতিকে কেন্দ্রকে করে নানান সময়ে নানান গল্প প্রচলিত থাকে। এসকল লৌকিক গল্প আমাদের নিয়ে যায় তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষাপটে।
রাজীব চৌধুরীর লেখা "বঙ্গদেশী মাইথোলজি" বইটিতে লেখক দুই মলাটের ভেতরে আবদ্ধ করেছেন ১৬ খানা লোক কাহিনীকে। এই গল্পগুলো পড়বার সময় মনে হতেই পারে, আপনাকে শোনানো হচ্ছে বাংলার কোনো রূপকথা! প্রত্যেকটা গল্পের শেষে স্থানীয় এলাকার নাম, জনপ্রিয় আকর্ষণ কিংবা সেই গল্পের লোক কাহিনীর সাথে যোগসূত্র জুড়ে দেওয়ায় এই গল্পসংকলন আরো সুখ্যপাঠ্য হয়েছে।
এই গল্পসংকলন এ আছে যে সকল লোককাহিনী তা হলোঃ ১.বদর আউলিয়া উপাখ্যান ২. গাজী, কালু ও চম্পাবতী ৩.আলী সুড়ঙ্গ ৪.নবাব সিজাজউদ্দৌলার পুত্র কথা ৫.বাকর-খানির প্রেম ৬.কুড়িটিলার কালোপাথর রহস্য ৭.গানস ওফ বরিশাল ৮.ভাগিনা বিভীষিকা ৯.জুজু ১০.চন্দ্রাবতীর প্রেমকথা ১১.পোড়া রাজা ১২.রাজাধিরাজ দক্ষিণরায় ১৩.কমল বাওয়ালি ও উপাখ্যান ১৪.নরবলি ১৫.ভাওয়াল রাজার গল্প ১৬.ইশাইনাথের গল্প
এই বইটা পড়ার সময় প্রত্যেকটা কাহিনী থেকেই নানান নতুন গল্পাকারে জানা হলো। এখানে যেমন আগা বাকের আর খানি বেগমের প্রেমের উপ্যাখ্যান আছে, আছে ইশাইনাথের ক্রুশবিদ্ধ হবার পরেও ফিরে আসার গল্প, রাজা দক্ষিণরায় ত্রাণকর্তা হিসেবে উদ্ধারের গল্প আছে আছে ভাগিনাদের নির্মম ঐতিহ্য ধরে রাখবার গল্প। আমি খুব যে মিথোলজি পড়ায় আগ্রহী মানুষ, তা না। সেই আমিই কিনা বুঁদ হয়ে এক গল্পের পরে আরেক গল্প পড়বার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। তাই যারা, মিথোলজি ভালোবাসেন তারা এই বইখানা পড়ে দেখতেই পারেন।লেখক নিজেই বলেছেন,"এটা কোনো ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থও নয়। এটা নিছক ই কিছু প্রচলিত ও অপ্রচলিত মিথের সংকলন যা এই বাংলার লোকায়ত ও চিরায়ত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট।"
পুরো বইটার প্রোডাকশন এর কথা যদি বলতে হয় তা এক কথায় অসাধারণ! পেপারব্যাক আর ক্রাউন সাইজের বই হওয়াতে ভ্রমণের সময়ে স্বাচ্ছন্দ্যে এই বই সঙ্গী হতে পারে। বইটির প্রচ্ছদ ও বেশ সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। বানান তেমন ভুল নেই, যা দু'একটা আছে আশা করি তা পরবর্তী সংস্করণে ঠিক করে নেওয়া হবে। শীঘ্রই প্রকাশ হবে এই বইয়ের দ্বিতীয় খন্ড। আশা করছি, সেটিও এটার মতোন ই বেশ উপভোগ্য হবে।