বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গী হামলা চালানোর পর সেখানকার আটজন আতঙ্কবাদী আত্মগোপন করতে এসে হাজির হয় কলকাতার এক বস্তি অঞ্চলে। পুলিশ ও জঙ্গীদের মধ্যে শুরু হয় মরণপণ লড়াই। সেই লড়াইয়ে বেশ কিছু পুলিশ কর্মীর সাথে প্রাণ যায় পাঁচ জন জঙ্গীরও। বাকি তিন আতঙ্কবাদী প্রাণ বাঁচাতে ঢুকে পরে এক মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে। সেখানে ঢুকেই তারা চিকিৎসাকেন্দ্রের ডাক্তার, রোগী ও কর্মীদের পণ-বন্দি করে ফেলে এবং কেউ বিন্দুমাত্র বেগড়বাঁই করলেই তাদের প্রাণ নিতে পিছপা হয় না। তাদের এই মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে ঢুকে আত্মগোপন করার খবর খুব দ্রুত মিডিয়ার মাধ্যমে সকলের কাছে ছড়িয়ে পড়ে, ফলস্বরূপ এই চিকিৎসাকেন্দ্রের সাথে জড়িত সকল রোগী-চিকিৎসক কর্মীদের পরিবারের সদস্যরাও এসে ভিড় জমায় নার্সিংহোমের গেটের বাইরে। পুলিশ-কম্যান্ডো চতুর্দিক দিয়ে ঘিরে ফেলে বাড়িটাকে। আতঙ্কবাদীরা পাল্টা চাল দেয়, কেউ নার্সিংহোমে ঢোকার চেষ্টা করলেই একের পর এক পণ-বন্দিদের প্রাণ নিতে তারা দ্বিধা করবে না। উদাহরণ স্বরূপ বেশ কিছু লাশ তারা গেটের বাইরে ফেলে আসে এবং তাদের কাছে মারাত্মক আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রও যে আছে তার প্রমাণ প্রদর্শন করে। চিফ মিনিস্টারের কাছে তারা দাবি রাখে আগামী এক ঘন্টার মধ্যে পুলিশ-মিলিটারি সরিয়ে না নিলে নার্সিংহোমের কেউ বাঁচবে না। এর মধ্যে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায় যখন জঙ্গিরা জেনে যায় এই নার্সিংহোমে এক উচ্চপদস্থ অফিসারের ছেলেও রয়েছে। পুলিশ-কম্যান্ডোদের হাতে সময় বড়ই কম, এদিকে পরিস্থিতিও তাদের পক্ষে নয়। কি হয় এরপর?
সায়ন্তনীর গড়িয়ায় বাস। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির শখ। কবিতা ও গদ্য দুইই চর্চার বস্তু।ক্লাস সেভেনে প্রথম প্রকাশ সংবাদ প্রতিদিনের শনিবাসরীয় পাতায়'চশমা' ছোট গল্প। তারপর প্রতিদিন, বর্তমান, সুখী গৃহকোণ, আর ছোটদের পত্রিকা সাহানা আর বাংলা দেশের পত্রিকা ভোরের কাগজে লাগাতার লিখে যাওয়া।
'তিনটে ইঁদুর অন্ধ' বইটা শুরু করেছিলাম Kolkata Bookworms বুক ক্লাব এর একটি অনবদ্য উদ্যোগে শামিল হয়ে, সেই উদ্যোগটি হল প্রত্যেক বাংলা মাসে একটি করে বাংলা বই পড়া, শুধু বাংলা বই পড়া নয়, আধুনিক বাংলা লেখক, লেখিকাদের বই পড়া, তাদের লেখনীকে জনসমক্ষে তুলে ধরা এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে তার মাধ্যমে প্রচার করা। 'তিনটে ইঁদুর অন্ধ', নামটা শুনেই খুব কৌতুহল হয়েছিল বইটা পড়ার। যখন একটু ঘেটে দেখলাম বুঝলাম বইটা আতঙ্কবাদীদের প্রেক্ষাপটে একটি সামাজিক চিত্র তুলে ধরেছে। যে চিত্র অনেক রকম প্রশ্ন জাগাবে পাঠকের মনে।
গোড়াতেই বইটা সমন্ধে একটু বলে রাখা ভালো। বাংলাদেশ থেকে ধৃত কিছু আতঙ্কবাদী, যাদের তরুণ মস্তিষ্কের চিন্তা ভাবনাকে বিকৃত করে কাঠের পুতুলের মতন চালনা করে এমন একজন লোক, যাকে তারা 'আকা' বলে, এমন একজন ব্যক্তির প্ররোচনায় জনাদশেক উদভ্রান্ত আতঙ্কবাদী ঢুকে পড়ে কলকাতা শহরে। পুলিশের তারায় পালাতে পালাতে এই ধর্মান্ধ যুবকগুলি ঢুকে পড়ে একটি মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তারপর সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সব ডাক্তার, সেবিকা, কর্মী এবং সর্বোপরি মানসিক রোগীদের আটক করে। কিন্তু বাঁচার লড়াইয়ে তাদের শুধু রাষ্ট্রের কমান্ডারের সঙ্গে নয় আরও একটি শক্তির সঙ্গে লড়তে হবে, লড়তে হবে এক অসাধারণ মানসিক শক্তি বিশিষ্ট চিকিৎসকের সাথে। এটা সেই দুই পক্ষের মানসিক সংগ্রামের কাহিনী।
বইটা প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল একটা ভালো সিনেমা বা সিরিজের জন্য প্লট জোগাতে পারে, কারণ বইটা প্রথম থেকেই আমাকে 26/11 সিনেমাটার ভাইব দিচ্ছিল। লাস্টের দিকে কিছু ডায়লগও প্রায় একই রকম। তবে অনেক কিছুই নতুন দিয়েছে বইটা। যেমন পলাশ আর ডাক্তার আদতে বইতে চরিত্র হলেও এরা সোসাইটির একটা আয়নায়ের মতন যারা একটা কয়েনের অন্য দিকটা তুলে ধরেছে আতঙ্কবাদীগুলোর সামনে। লেখিকার লেখায় একটা ফ্লো আছে, ফ্লো টা ধরেও রাখতে পারে। মাঝে মাঝে হাসির মধ্যে দিয়ে লাইফের বেশ কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করা হয়েছে আমার প্রিয় চরিত্রের মাধ্যমে। পলাশ এই গল্পে একটি অন্যতম চরিত্র, তার মধ্যে দিয়ে যেভাবে লেখার আড়ালে বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপট ফুটে উঠেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। যেন পুরো সোসাইটি ওদের কাছে উত্তর চাইছে, কেন? তবে ডাক্তারের চরিত্র কে একটু অতিরঞ্জিত করা হয়েছে, একটু বেশি ভালো, একটু বেশি পারফেক্ট দেখানো হয়েছে। বাংলা বই পাঠকদের পড়ে দেখতে অনুরোধ করবো।
"তিনটে ইঁদুর অন্ধ/ জানলা কপাট বন্ধ/ বন্ধ করে তারা/ ছুটতে ছুটতে সারা...!" বাংলাদেশে জঙ্গি হামলায় অজস্র মানুষের প্রাণ নেওয়ার পর কলকাতায়, পার্ক সার্কাসের বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছিল আটজন সন্ত্রাসবাদী। কিন্তু পুলিশ জেনে ফেলল তাদের কথা। দারুণ সংঘর্ষে মারা গেল বহু পুলিশ, আর পাঁচজন সন্ত্রাসবাদী। তিনজন আশ্রয় নিল 'সুস্থ মন সাইক্রায়াটিস্ট সেন্টার'-এ। আর তারপর শুরু হল এক রুদ্ধশ্বাস নাটক। একদিকে কম্যান্ডোদের মরিয়া চেষ্টা, যার লক্ষ্য ন্যূনতম প্রাণহানি ঘটিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রটিকে মুক্ত করা। অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদীরা, ধর্মযুদ্ধের নেশা যাদের মাথায় এমনই চড়েছে যে উন্মাদ, অসুস্থ, নারী, এমনকি শিশুকে মেরেও তারা জন্নতের খোয়াব দেখে তারা। এই রক্তাক্ত নাটকে জড়িয়ে গেছে অসহায় পেশেন্টদের অভিভাবকেরা, মিডিয়া, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আর এদের মধ্যে ফালক্রাম হয়ে আছেন ডক্টর জ্ঞানরঞ্জন ঘোষ। দেশের অগ্রগণ্য মনস্তত্ত্ববিদ, এবং এই সংকটে রোগীদের সবচেয়ে বড়ী বন্ধু এই মানুষটির লক্ষ্য: শান্ত থাকা, রোগীদের শান্ত রাখা, এবং সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার চালিয়ে বিপক্ষের হিংস্রতার দেওয়ালের ইট একটা-একটা করে খসিয়ে দেওয়া। তারপর কী হল? ডক্টর ঘোষ কি পারলেন তাঁর রোগীদের বাঁচাতে? রহস্যকাহিনি রচনায় সায়ন্তনী পূততুণ্ড যে সিদ্ধহস্ত, একথা আমরা জানি। আলোচ্য কাহিনিটি একটু অন্যরকম থ্রিলার হলেও প্রায় আনপুটডাউনেবল। তবে কিছু কিছু আবেগাতিশয্য, কোথাও-কোথাও অ্যান্টাগনিস্টদের একটু ভালো চোখে দেখানোর জন্য ইমোশনের বাড়াবাড়ি, এগুলো গল্পের শ্বাসরোধী পরিবেশকে কিছুটা লঘু করে দিয়েছে। ফলে থ্রিলারের বদলে হিন্দি সিনেমা দেখার অনুভূতিটাই প্রবলতর হয়েছে। তবে হ্যাঁ, রাজনৈতিক সংকীর্ণতা ও সেকু-মাকু দায়বদ্ধতার বশে যখন রঙ্গে ভরা বঙ্গদেশের অধিকাংশ লেখক পারলে সিরিয়া বা সুদানের অবস্থার জন্যও আর.এস.এস-কে দায়ী করেন, সেখানে এই একান্ত সমকালীন, ও যে-কোনো-মুহূর্তে ঘটতে পারে এমন একটি সম্ভাবনার দিকে ইংগিত করার জন্য লেখককে অতিরিক্ত পয়েন্ট দিতেই হচ্ছে। পড়ে ফেলুন। ভালো লাগবে বলেই আমার ধারণা।
গতকাল রাতে শুরু করে আজ দুপুরে শেষ করলাম বইটি। সায়ন্তনী পূততুন্ড ম্যামের কয়েকটি বই পড়ার পর আর কী কী বই আছে জানতে গিয়ে যখন এই বইটার নাম প্রথম শুনি, তখনই পড়ার ইনটারেস্ট জেগেছিল। কিন্তু কালপক্ষেও তখন ভাবিনি কী হতে পারে বিষয়বস্তুটা। শুধু জেনেছিলাম এটা একটি থ্রিলার, কিন্তু সেই থ্রিলারের বিষয়বস্তু কী, তার কোনো ধারণা ছিল না। পরপর কিছু সামাজিক উপন্যাস পড়ার পর মন চাইছিল এবার থ্রিলার পড়তে। ব্যাস তবে আর দেরি কীসের? চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছিল বর্তমান সময়ের আমার প্রিয় লেখিকার বই, বসে পড়লাম বইটি নিয়ে। পড়া শেষ করে সত্যিই এক অন্যরকম উপলব্ধি হলো। এবার একটু বিষয়বস্তু বলি–
কাহিনীর প্রধান চরিত্রর মধ্যে এক হলেন ডঃ জ্ঞানরঞ্জন ঘোষ, যিনি এক মেন্টাল নার্সিংহোম অর্থাৎ 'সুস্থ মন সাইকায়াট্রিস্ট সেন্টার'এর প্রধান কর্তা তথা কলকাতার সবচেয়ে নামকরা সাইকায়াট্রিস্ট। প্রত্যেক দিন রাত ২ টো থেকে দুপুর ৩ টে পর্যন্ত তিনি নার্সিংহোমে থেকে রোগীদের দেখাশোনা করেন। ঠিক এরকমই একদিন রাত ২ টো নাগাদ নার্সিংহোমে ঢোকার সময় আচমকা বোম ফাটার শব্দ পেলেন। সব কিছু বোঝার আগেই কে যেন তার মাথায় রাইফেল ঠেকালো। ডঃ ঘোষকে বাঁচাতে গিয়ে নার্সিংহোমের নাইটওয়াচম্যান রামবাহাদুর নিহত হয়। কিন্তু যেই না ডঃ ঘোষকে মারতে যাবে, "ঠিক তখনই হু হু শব্দে ঝড় উঠল।"
টেররিস্টদের গুরুদের সদ্য কৈশোর পেরোনো তরুণদের এমনভাবে ব্রেণওয়াশ করে যে, তখন তারা সেই তথাকথিত গুরু বা নেতার নির���দেশ পালনই অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করে। এরকমই আটজন টেররিস্ট তাদের জনৈক গুরুদের বা 'আকা' নামে পরিচিত এক ধর্মোন্মাদ ব্যক্তির প্ররোচনায় বাংলাদেশে হামলা চালানোর পর এখন ঢুকে পড়েছে পশ্চিমবাংলায়। পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে এদের পাঁচজন নিহত হয়েছে, কিন্তু বাকি তিনজন এখনও জীবিত। পুলিশের তাড়া খেয়ে তারা গভীর রাতে ঢুকে পড়েছে সেই 'সুস্থ মন' মেন্টাল নার্সিংহোমে। আর ভেতরে ঢুকেই সেখানকার মানুষদের ���ারা হস্টেজ বানিয়েছে।
টেররিস্টদের হাত থেকে সকলকে উদ্ধারের দায়িত্ব পড়েছে এন এস জি অর্থাৎ ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের ওপর। এর ডিরেক্টর হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যোতি বিকাশ সেন। তিনি এন এস জি- এর একটি কম্যান্ডার টিম তৈরী করার দায়িত্ব দেন মেজর রণদীপ রাণার ওপর। কিন্তু হস্টেজ হওয়া ঐ মেন্টাল নার্সিংহোমের ডাক্তার, নার্স আর ওয়ার্ড বয়দের বাদ দিলে বাকিরা কেউ মানসিকভাবে সুস্থ নয়। সুস্থ হলে তারা কম্যান্ডোবাহিনীর নির্দেশ বুঝতে পারতো এবং মানতোও। সাথে টেররিস্টদের ঘাঁটাতোও না। কিন্তু এখানে তারা মানসিকভাবে অসুস্থ। ফলে এই পরিস্থিতিতে কী করে তাদের উদ্ধার করবে?
এতকিছুর মধ্যে নার্সিংহোমের ভেতরে চলতে থাকে মানসিক শক্তি বিশিষ্ট চিকিৎসক ডঃ ঘোষ ও টেররিস্টদের কমান্ডারের মানসিক সংগ্রাম বা যুক্তির লড়াই। কমান্ডার চাইছে যেকোনো উপায়ে হোক সামনের এই মানুষটাকে তার যুক্তি দিয়ে হারিয়ে দিতে। সে কি পেরে উঠবে? নাকি হেরে গিয়ে আত্মসমর্পণ করবে ডঃ ঘোষের যুক্তির কাছে? অন্যদিকে ডঃ ঘোষও তাকে বুঝিয়ে দিতে চাইছে যে সে বা তারা কতটা অন্ধ, তারা শুধু অন্ধকার রাস্তায় দৌড়ে চলেছে, যে রাস্তার আদ্যোপান্ত মিথ্যে দিয়ে গড়া। এই যুক্তি তর্কের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কার জয় হবে?
অশুভ এর পেছনে যেমন শুভ থাকে, তেমনি অন্ধকারের পরে আলো থাকে। এই কাহিনীর সবচেয়ে বড়ো দিকটিই হলো সেই আলোটাকে খুঁজে বের করা। অর্থাৎ একজন আতঙ্কবাদীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা তার সেই ভালো মানুষটাকে খুঁজে বের করা। ডঃ ঘোষের কথায়, "আসলে তুমি নিজেকে যতটা নির্মম, যতটা নিষ্ঠুর দেখাতে চাও— আদতে তা নও। এখনও তোমার মধ্যে একটা সুন্দর মানুষ বেঁচে আছে। তাকে অস্বীকার করার জন্য তুমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছ। কিন্তু আমি তাকে একঝলকের জন্য হলেও দেখতে পেয়েছি।"
এই কাহিনীর আর একটি অন্যতম বিশেষ চরিত্র হলো মানসিক রোগী পলাশ। তার এক একটা কথা যেন পেরেক ছুঁড়ে মারার মতো ছিল, যা কে কমান্ডারও উপেক্ষা করতে পারেনি। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল।
উপন্যাস পড়া শুরু করেছিলাম এক রকম মনোভাব নিয়ে, আর শেষ করলাম আরেক রকম মনোভাব নিয়ে। মানবিকতা সবার ওপরে, সেটা হারিয়ে ফেললেই সব শেষ। এই উপন্যাসও আমাদের অনেক বেশি মানবিক হতে শেখায়। সত্যি এক অসাধারণ উপন্যাস পড়লাম। সায়ন্তনী পূততুন্ড ম্যামের লেখার আমি এমনিতেই ভক্ত। সে সামাজিক উপন্যাস হোক কী থ্রিলার, একবার বই নিয়ে বসলে শেষ না করে ছাড়তে পারি না। এটিও তার ব্যাতিক্রম নয়। সর্বদাই একটা টান টান উত্তেজনা অনুভব করছিলাম পড়তে গিয়ে। ভুল ত্রুটি ধরার মতো অতো অভিজ্ঞ আমি নই, আর যেহেতু ম্যামের লেখার ভক্ত তাই সেটা আরও সম্ভব নয়।
সবশেষে এটাই বলবো যে, বইটি অবশ্যই একবার পড়ে দেখবেন পাঠকগণ, আশা করি ভালো লাগবে।
শুরু হয়েছে ধর্মযুদ্ধ! কিন্তু কাদের মধ্যে হচ্ছে সেই যুদ্ধ? বাংলাদেশে শুরু হয়েছে অপারেশন। সেখান থেকে ভারতেও এসেছে কয়েকজন "ঈশ্বরের বান্দা" মুখোশ পড়া আতঙ্কবাদী। কিন্তু জঙ্গী হামলার শিকার হওয়া থেকে সাধারণ মানুষদের বাঁচাতে পুলিশও শুরু করেছে পাল্টা অপারেশন। তাড়া খেয়ে পালাতে শুরু করে সেই ধর্মযুদ্ধের যোদ্ধারা। বেঁচে আছে মাত্র তিনজন। কিন্তু পালাবার পথ?
পরের দৃশ্যটা অন্যরকম। এক মেন্টাল নার্সিংহোম ওরফে পাগলখানা। এক গা ছমছমে পরিবেশ। রয়েছে "ভগু" অর্থাৎ ভগবানের সঙ্গে কথা বলা পলাশ, যার বুদ্ধিদীপ্ত কথা সাধারণ মানুষকেও ভাবনায় ফেলতে বাধ্য। রয়েছেন হাইকোর্টের প্রাক্তন জজ, জাস্টিস চৌধুরী যার কথায় কথায় শাস্তির হুকুম। আরো অনেক রকমের রোগী।থাকেন ডাক্তাররা এবং নার্সিংহোমের কর্তা ডঃ জ্ঞানরঞ্জন ঘোষ, এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর নার্সিংহোমে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এসে পড়ে সেই তিন আতঙ্কবাদী। গেট কিপারের প্রাণ নেওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় তাদের উপদ্রব। কব্জা করে ফেলে গোটা নার্সিংহোমকে।
পরের দৃশ্যগুলো একটা সিনেমার থেকে কম কিছু নয়। আতঙ্কবাদীদের কাবু করার জন্য শুরু হয়ে যায় সমস্তরকম পরিকল্পনা। এদিকে নার্সিংহোমেও চলতে থাকে একের পর এক ঘটনা। তারা যে সাধারণ মানুষের মতো করে ভাবতে পারেনা। কিন্তু তাদের সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে হিংস্র মারমুখী তিনজন! তার মধ্যেও তাদের অভিপ্রায়কে অবাক করা প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে থাকে পলাশ আর ডঃ ঘোষ। তাঁর প্রশ্নের বাণে আত্মবিশ্বাস হারাতে থাকে আতঙ্কবাদীদের কম্যান্ডার। তার মধ্যেকার হিংসা যেন টলে যায়। তার ভিতরে শুরু হয় যুদ্ধ। নিজেকে প্রশ্ন করতে শুরু করে সে। সে যে তার জীবনের তিক্ত সত্যগুলো দেখতে শুরু করেছে! কিন্তু এতদিন কি তবে ভুলপথে চালনা করা হয়েছে তাকে? আজ যে তার পাশে কেউ নেই! কিন্তু হারলে চলবেনা তার। কারণ বাইরে চলছে আর এক যুদ্ধ। মেজর এবং তাঁর গোটা টিমের বিপক্ষে। আর এদিকে? "তিনটে ইঁদুর অন্ধ জানলা কপাট বন্ধ বন্ধ ঘরে তারা ছুটতে ছুটতে সারা।"
'কাফের' অর্থাৎ বিধর্মীদের শাস্তি দিতে বাংলাদেশ থেকে ধর্মযুদ্ধ করতে আসা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর আতঙ্কবাদী যে শুধুমাত্র মিথ্যা কথায় চালিত হওয়া একজন সাধারণ মানুষই! তার মধ্যেও যে ছিল এক সুন্দর মানুষ। তার সামনে সত্যিটা এখন সম্পূর্ণ স্পষ্ট। এবং তার ভবিতব্যও। "সেই সুন্দর মানুষ যে শুধু মানবতার ধর্ম বোঝে। অন্য যে কোনও ধর্মৈর সে ঊর্ধ্বে!"
শুরু করি প্রচ্ছদ দিয়ে। গল্পের সঙ্গে ভীষণ মানানসই এবং সুন্দরভাবে বানানো প্রচ্ছদটি। লেখনীও খুব সুন্দর। মনে হচ্ছিল আমার চোখের সামনেই যেন ঘটনাগুলো ঘটছে। কৌতুক, নাটক, চরম উত্তেজনার ঘটনা কি না ছিল এই গল্পে! চরিত্রগুলির মধ্যে যারা উল্লেখযোগ্য তারা হল- পলাশ, ডঃ ঘোষ, শিবু, মেজর রাণা প্রভৃতি। আর যেটা না বললেই নয়; কম্যান্ডার কারণ গল্পটা যেন তাকে নিয়েই। আর তার মোক্ষ্যলাভ!
গল্প থেকে এটাই বুঝতে পারি মানুষের জীবনের দুটি দিক। একটা সত্য আর একটা মিথ্যা। মিথ্যা দিয়ে মানুষকে অন্ধ করে রাখতে চায় একদল। আর সত্যিটা বেছে নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের।
"তিনটি ইঁদুর অন্ধ জানলা কপাট বন্ধ বন্ধ ঘরে তারা ছুটে ছুটে সারা "
সায়ন্তনী দির লেখা এটা আমার পড়া দ্বিতীয় উপন্যাস উপন্যাস , এর আগে জিঙ্গল বেল পড়েছিলাম অদ্ভুতরকম সুন্দর লেগেছিল । তাই বইমেলা থেকে এটা সংগ্রহ করি । উপন্যাস টির মূল ভিত্তি বর্তমান কালের মৌলবাদী তথা ধর্মান্ধ বনাম সাধারণ মানুষ এর সংগ্রাম । উপন্যাস শুরু হয় কতক গুলি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশ এর লড়াই এর দৃশ্য এ। এদের মধ্যে সদ্য কিশোর পেরোনো 3 টে ছেলে পালিয়ে যায় , এবং বাকি রা সেখানেই মারা যায়। এর পর এরা আশ্রয় নেয় এক মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এ, যেখানে তারা ডাক্তার সহ ৬০ জন রোগী কে hostages বানিয়ে প্রশাসন এর উপর চাপ সৃষ্টি করে সেখান থেকে পালানোর ছক কষে। অন্য দিকে মেজর রানা এর নেতৃত্বে এন এস জির টীম operation শুরু করে । এর পাশাপাশি চলতে থাকে এক মনোবিদ( ড: জ্ঞানরঞ্জন ঘোষ) সঙ্গে ধর্মান্ধ জঙ্গী ছেলে গুলোর যুক্তি বাদের লড়াই । আর কিছু বলবো না স্পয়লার হয়ে যাবে । কারা শেষ পযন্ত সফল হয় সেটাই দেখার। এই উপন্যাস এ আমার সব থেকে প্রিয় যে প্রিয় চরিত্র টি হলো পলাশ যে নিজে একজন মানসিক রোগী হয��ে সমানে লড়ে গেছে তার অজান্তেই। সংলাপ গুলো এখন কার দিনে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক যেভাবে কোন ধর্মান্ধ মৌলবাদী ব্যক্তি সমাজের মানুষের সমানে মগজ ধোলাই করে যাচ্ছে এবং তার সঙ্গে চলছে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার যেভাবে বেড়ে চলেছে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে। তাই মনে করি এই ধরনের প্লট নির্বাচন ই সবথেকে বড় পজিটিভ পয়েন্ট উপন্যাসটির তার সঙ্গে লেখিকার লেখনী তো রয়েছে । তবে কি সবকিছুই ইতিবাচক ছিল না আমার একটা ব্যাপার ই নেতিবাচক মনে হয়েছে অনেক সময় লেখিকা জঙ্গিদের একটু বেশি ইমোশনাল দিক থেকে দেখাতে চেয়েছেন, যেটা আমার প্রাসঙ্গিক লাগেনি।
তিনটে ইঁদুর অন্ধ ধরন: ব্যতিক্রমী সাইকো থ্রিলার প্রকাশনী: মিত্র ও ঘোষ মুদ্রিত মূল্য: ২০০/- _______________________________ An eye for an eye, A tooth for a tooth, A life...... for a life...... বইটি পড়ার পর এ সংকল্পসূত্র টা কেন জানি মাথায় এল, মাথায় এল এমন একটা চিন্তা.... আচ্ছা কি হয় যদি জীবনের বদলে ঠিক জীবন না নেয়া হয়? গুলির প্রতি উত্তর কি শুধুই গুলি? অন্যকিছু হতে পারে না? গুলি নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। কিন্তু তার চেয়ে ভয়াবহ কি আর কিছু নেই?? আছে। এ উপন্যাস তার পরিচয় দিয়েছে। একদিকে মারণাস্ত্র, অন্যদিকে মানবিকতা, এক দিকে গর্জনশীল অস্ত্র যুদ্ধ অন্যদিকে বুদ্ধিদীপ্ত স্নায়ুশক্তির নিঃশব্দ লড়াই। অস্ত্রের ঘায়ে আঘাতের প্রতি উত্তর যদি আসে একরাশ অমিত প্রেষণাময়, প্রেমপূর্ণ বাণীর বর্ষণ হয়ে? ধর্মযুদ্ধের নামে কতিপয় যুবক নির্বিচারে মনুষ্য নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। পুলিশের তাড়া খেয়ে তারা আশ্রয় নিল এক মেন্টাল নার্সিং হোমে, মানসিক রোগী গুলোকে জিম্মি করে, নিজেরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পালাতে বদ্ধপরিকর ছিল। ফলে অবৈধ অস্ত্র শাসনের নির্যাসে রোগীরাও সিক্ত হয়। কিন্তু তারপর? নার্সিংহোমে ছিল প্রখর স্নায়ু শক্তির অধিকারী, মানবতার পূজারী একজন মনোচিকিৎসক ও। একদিকে তিনি, অন্য দিকে আতঙ্কবাদী, একদিকে প্রজ্ঞা, উদারতা আর ভালবাসা অন্যদিকে প্রাণঘাতী অস্ত্রের দম্ভ। কে জিতে গেল? কেই বা হেরে সুখ পেল? কার অন্ধত্ব ঘুচলো? ভালবাসার আলো কি সত্যিই সহিংসতার দাম্ভিক অন্ধত্ব ঘোচানোর শক্তি রাখে?
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলায় অজস্র মানুষের প্রাণ নেওয়ার পর কলকাতায়, পার্ক সার্কাসের বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছিল আটজন সন্ত্রাসবাদী। কিন্তু পুলিশ জেনে ফেলল তাদের কথা। দারুণ সংঘর্ষে মারা গেল বহু পুলিশ, আর পাঁচজন সন্ত্রাসবাদী। তিনজন আশ্রয় নিল 'সুস্থ মন সাইক্রায়াটিস্ট সেন্টার'-এ। আর তারপর শুরু হল এক রুদ্ধশ্বাস নাটক। নার্সিংহোমে ছিল প্রখর স্নায়ু শক্তির অধিকারী, মানবতার পূজারী একজন মনোচিকিৎসক ও। একদিকে তিনি, অন্য দিকে আতঙ্কবাদী, একদিকে প্রজ্ঞা, উদারতা আর ভালবাসা অন্যদিকে প্রাণঘাতী অস্ত্রের দম্ভ। কে জিতে গেল? কেই বা হেরে সুখ পেল?
একদিকে মারণাস্ত্র, অন্যদিকে মানবিকতা, এক দিকে গর্জনশীল অস্ত্র যুদ্ধ অন্যদিকে বুদ্ধিদীপ্ত স্নায়ুশক্তির নিঃশব্দ লড়াই।
ঝকঝকে শুরু, স্মার্ট উপস্থাপন, প্লটবিল্ডিং, সায়ন্তনীর পরিচিত ছন্দে সায়ন্তনী কাহিনি এগিয়ে নিয়ে চলেন। কিন্তু মাঝে মধ্যে ছন্দ এবং গতি ব্যহত হয় অতিকথন আসায় এবং একঘেয়ে লাগে। লেখিকার প্রিয় চরিত্রকে নায়ক হিসেবে তুলে ধরতে অতিরিক্ত এফর্ট, অধিরাজের মতই এই উপন্যাসেও চোখে পড়ে। আলোচ্য উপন্যাসে ডাক্তার ঘোষ।
যদিও শেষে কাহিনি ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম লেখিকা। মোটের উপর ভালো উপন্যাস।
বন্ধুর বাড়ি তে গিয়ে bookshelf এ বইটি দেখি গতকাল। নামটা দেখেই interest জেগেছিল। এইসব kindle আর ebook এর মধ্যে বাংলা বই পড়া হয় না অনেক দিন। তাই বইটার অদ্য প্রান্ত কিছু না জেনেই তুলে নিয়েছিলাম। শুধু প্রশ্ন করেছিলাম ভালো ? বলেছিল খুব ভালো ।
সত্যি ই তাই । বইটা যখন খুলি নামটা দেখে ভেবেছিলাম যে psycological thriller হবে। বেশ plot twist থাকবে এইসব। সেই বিভ্রান্তি কিছুটা পড়ার পরেই দূর হয়ে যায়। বুঝে যাই রিলিজিয়াস ব্যাপার নিয়ে লেখা বইটা। যা সত্যি বলতে একদমই আমার চিরাচরিত পছন্দের বাইরে। তবুও পড়া থামাতে পারিনি । লেখনী সুন্দর হলে সব বই যে সুন্দর হতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই বইটি ।
কালেকশন এ রাখার মতো । আশাকরি college street e পাবো। অন্য লেখা পড়ার জন্যও আগ্রহী রইলাম ।