গল্পটা কবে বা কিভাবে শুরু হয়েছে, কেউই বলতে পারে না। কে বা কারা, কেন শুরু করেছিলো, তাও জানা নেই কারও। তবে শুরু যে হয়েছে, সেটার আলামত অনেক আগেই টের পাওয়া গেছে। এটা আসল গল্পের শুরু নয়, বরং শেষ পরিণতির শুরুর গল্প। গল্পটা ক্যাপ্টেন শহিদুলের, ইউনিট চিফ এবং তার প্রিয় ডেস্ক এজেন্ট আফসানা মীরাজের। গল্পটা দেশদ্রোহী আখ্যা পাওয়া কর্নেল সাঈদের। দক্ষিণখানে পুরোপুরি নগ্ন এবং স্মৃতিভ্রষ্ট অবস্থায় উদ্ধার হওয়া নাম না জানা যুবকেরও। গল্পটা মানুষের ক্ষমতার শিখরে পৌঁছোবার চেষ্টার--এবং গল্পটা দ্য রেবেলিয়নের। কান পেতে শুনতে চেষ্টা করুন। কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। খুব খারাপ কিছু...যেখানে আমরা সবাই এক একজন চরিত্র।
ফ্যান্টাসি, (চেষ্টাকৃত) কল্পবিজ্ঞান, আর পলিটিক্যাল থ্রিলার - এই তিনটি বস্তুর মিশ্রণে বিরিয়ানি বানাতে চেয়েছিলেন লেখক। যা হয়েছে তাকে আধসেদ্ধ ঘ্যাঁট ছাড়া কিছু বলা যাচ্ছে না। নন-লিনিয়ার স্টোরিটেলিঙের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা এখানেই যে গদ্য আর চরিত্রায়ন অত্যন্ত স্বচ্ছ না থাকলে তার কোনো মাথামুন্ডু থাকে না। এখানে সেটাই হয়েছে। কনস্পিরেসি থিওরি আর ডিসি কমিক্স মিশে একটা গতিময় অথচ অর্থহীন জিনিসের জন্ম দিয়েছে। যা হতে পারত 'ডক্টর হু'-র এপিসোড বা ম্যাথু রিলি'র কোনো কাহিনি তা যে শেষ অবধি কী হয়েছে, তা খোদায় মালুম। পোষাল না।
একজন নগ্ন যুবককে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায় রাস্তার পাশে। জ্ঞান ফেরার পর দেখা গেল ছেলেটা শুধুমাত্র স্মৃতিভ্রষ্ট না, আক্ষরিক অর্থেই তার ব্রেন সকল স্মৃতিই হারিয়ে ফেলেছে। এমনকি কথা বলা কিংবা খাবার খাওয়ার মত ইম্পর্ট্যান্ট বিষয়গুলাও। ঘটনাটা মোটেও সাধারণ নয়। পুলিশ যখন স্মৃতিভ্রষ্ট ছেলেটাকে নিজেদের হেফাজতে থানায় এনে রাখে তখন বোঝা যায় ঘটনার মাহাত্ম্য। ছেলেটার কিছু অদ্ভূত ক্ষমতা রয়েছে। এরই মাঝে NSI পরিচয় দেয়া একটি দল এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রেফারেন্স দিয়ে ছেলেটিকে থানা থেকে নিয়ে যায়। কথিত NSI ছেলেটি কে বা তার অদ্ভূত ক্ষমতার রহস্য আবিস্কার করতে গিয়ে আমেরিকার ফাঁদে পা দিয়ে ফেলে। তারপরই শুরু হয় রহস্য উদঘাটন। পরবর্তীতে ছেলেটির মাধ্যমেই জানা যায় রোমাঞ্চকর এবং একই সাথে ভয়াবহ কিছু একটা ঘটতে চলছে ঢাকার বুকে, যার পেছনে আছে গুপ্ত এক সংগঠন। কি এই সংগঠন? কারা এর পরিচালক? তাদের উদ্দেশ্যই বা কি? ছেলেটি কি তাদেরই এজেন্ট নাকি অন্য কোন এসপিওনাজ এর কেউ? কি তার পরিচয়? এসব জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে বাতিঘর প্রকাশনী থেকে ২০১৭ বইমেলায় প্রকাশিত 'ডানায় আগুন' নামে আরিয়ান শুভর এই মৌলিক থৃলারটি। অফলাইনে এটাই লেখকের প্রথম মৌলিক একক উপন্যাস। এবার আসি সমালোচনায়। প্রথমেই বলে নিচ্ছি বইটির কিছু সীমাবদ্ধতা। ১. লেখক শুরুতেই গল্পের অনেকগুলো টুকরোকে এক সুতোয় বাঁধার ট্রাই করেছেন। অর্থাৎ একটি ঘটনা থেকে হঠাৎ করে লাফ দিয়ে আরেক ঘটনায় চলে গেছে। ব্যাপারটা আমাকে একটু বিরক্ত করেছে। কেমন যেন ইমব্যালান্স খাপছাড়া মনে হয়েছে। ২. লেখকের লেখনী নিয়ে কখনোই প্রশ্ন ছিলো না কিন্তু এই বইতে তিনি কিছু অপরিপক্কতার প্রমাণ দিয়েছেন। লেখায় কিছু অপ্রাসংগিক ব্যাপার উঠে এসেছে। যেমনঃ অধ্যায় ২২ এ লেখকের ক্লোজ কিছু অনলাইন বন্ধুদের নাম উঠে এসেছে যেগুলো আমার কাছে বাহুল্য মনে হয়েছে। লেখার মানকে কিছু অংশে কমিয়েও দিয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। ৩. কথিত NSI (কথিত বলছি স্পয়লার এড়াতে) কে বেশ দূর্বল মনে হয়েছে আমার কাছে। ৪. লেখক বারবার 'নিডলের সূঁচ' লিখেছেন। কিন্তু আমার জানামতে নিডেল আর সূঁচ একই জিনিস। নিডলের স্থলে সিরিঞ্জ হবার কথা। মারাত্মক একটা ভুল এটা। এবার বলি লেখাটার পজিটিভ দিক নিয়ে। ১. 'ডানায় আগুন'র প্লট বেশ শক্তিশালী। এটা নিয়ে বিস্তারিত কিছু না বলে পড়ার আহবান রইলো। ২. সীমাবদ্ধতার ২নং পয়েন্ট বাদ দিলে লেখনী চমৎকার এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ৩. গতিশীল লেখা। গল্পের কাহিনীর মাঝে ঢুকে গেলে শেষ করে উঠতে হবে। আর তাছাড়া চরিত্রায়নও খুব দক্ষ বলে মনে হয়েছে। মি. অথরের প্রতি বেশ খানিকটা কৌতুহল বোধ করেছি। ৪. প্রচ্ছদ চমৎকার। ডিলান ভাইকে ধন্যবাদ। ৫. বানান ভুল চোখে না পড়ার মত।
এয়ারপোর্টের কাছে পাওয়া গেলো নগ্ন যুবককে, যে তার অতীত সব স্মৃতি ভুলে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর পুলিশ কাস্টডিতে আবিষ্কার হয় তার অদ্ভুত ক্ষমতা, ব্রেইন ওয়েভ ক্র্যাক করে চিন্তাভাবনা দেখে ফেলার ক্ষমতা। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রেফারেন্সে তাকে তুলে নিয়ে যায় আরেক গোয়েন্দা সংস্থা ইউনিটের এজেন্ট আফসানা। নাম দেওয়া হল 'সাবজেক্ট ত্রিপল এ'। ছেলেটি কে, তার পরিচয় ও ক্ষমতার রহস্য উদঘাটন করলে গিয়ে সিআইএর ফাঁদে পা দেয় তারা। অন্যদিকে কতিপয় সেনা কর্মকর্তার উদ্যেগে গড়ে ওঠে এক দুর্ধর্ষ গুপ্ত সংগঠন 'দ্যা রেবেলিয়ান'। 'কি তাদের উদ্দেশ্য?' এই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে শুরু হয় ইউনিটের অভিযান।
চমৎকার প্লট। এসপিওনাজ, পলিটিক্যাল থ্রিলারের সাথে হালকা ধাঁচের মিলিটারি থ্রিলার। আবার 'সাবজেক্ট ত্রিপল এ' চরিত্র দিয়ে লেখক কিছুটা সাইফাই ভাব এনেছে। বিদেশে এই টাইপের প্লটে অনেক মুভি-সিরিজ-নোভেল ক্রিয়েট হলেও আমাদের দেশে সেরকম কাজ হয় নি। লেখকের লেখনী বেশ ভালো, চরিত্রায়নও বেশ। কিছু কিছু অধ্যায়ে লেখকের লেখনীতে একটু জড়তা ছিলো। প্রথম দিকে শহীদুল চরিত্রের ডাবল ডিজেস নিয়ে লেখক অনেক বেশি বলেছে মনে হল। কয়েকটা অধ্যায় অযথা ক্রিয়েট করেছে বলে আমার মনে হয়েছে। মি. অথরের ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে নি। 'সাবজেক্ট ত্রিপল এ' চরিত্রের পরিচয়টাও পুরোপুরি ক্রিয়ার করে নি।
বইয়ের শেষ করার পর "শেষ হইয়াও হইল না শেষ" টাইপের কিছু মনে হয়েছে। সিক্যুয়েল বের করার প্ল্যান ছিলো নাকি লেখকের? থাকলে এতদিনে বের হয়ে যাওয়ার কথা!
এয়ারপোর্ট রোডে জামা কাপড় ছাড়া এক ছেলে পড়ে থাকা দেখে থানায় খবর দেওয়া হয়। মানুষ ভাবে হয় সে পাগল না হয় এডিক্ট। কিন্তু থানায় আনার পর শুরু হয় অবাক হবার পালা। এ কোন স্বাভাবিক ছেলে নয়, সুপার পাওয়ার ওয়ালা এক মানুষ, অন্য সবার মন পড়তে পারে সে। শুরু হয় তাকে নিয়ে তুমুল হই চই। তবে সমস্যা একটাই নিজের সম্পর্ক কিছুই জানে না সে। এক্কেবারে সদ্যজাত ভুমিষ্ঠ শিশুর মতন অবস্থা তার। সব কিছু নিজের মতন করে নতুন করে শিখছে সে। বাংলাদেশ সিক্রেট অপারেশন্স এন্ড রিসার্চ ইউনিট, সংক্ষেপে ইউনিট, এই বিষ্ময় বালকের খোজ পায় এবং তাদের জিম্মায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে এই ছেলের (যাকে কিনা কোড নেম দেওয়া হয় ত্রিপল এ) মাধ্যমেই জানতে পারে বাংলাদেশকে ঘিরে চলছে এক ভয়ংকর এক কুচক্রান্ত।
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ দুইটা প্যারালাল কাহিনী একসাথে এগিয়েছে এই বইটিতে একটা ক্যাপ্টেন শহীদুলের দিক থেকে অন্যটা ত্রিপল এ এর দিক থেকে, ক্লাইমাক্সে গিয়ে দুইটা মিলিত হয়েছে। যদিও অনেক কিছুর জবাব এখনো পাওয়া যায়নি তবে মনে হয়েছে এটার কোন সিকুয়াল আসবে, যদিও ২০১৭ সালের বই আর আমি পড়ছি ২০২০ সালে ৩ বছরেও কোন সিকুয়াল আসেনি। গল্পটাকে অনেকটা মিলিটারি থ্রিলার আর সুপার পাওয়ার কমিকের একটা বারোভাজা মূলক এক্সপেরিমেন্ট বলা যায়। পুরোপুরি সফল না বলা গেলেও একেবারেও যে ব্যর্থ সেটাও বলব না।
ব্যাকফ্ল্যাপে যা লেখা আছে, সেটাই সত্যি। কাহিনী কখন, কোথায়, কীভাবে শুরু হয়েছে, তা আমরা জানি না। তবে শুরু যে হয়েছে এটা জানি। শেষের পরিণতি শুরু হয়েছে মেনে নিচ্ছি, তবে শেষ কবে হবে তা জানি না। লেখক ২০১৭ সালের পর আর লেখেননি। যাই হোক, দক্ষিণখানে এক নগ্ন যুবক পাওয়া গেলো। তাকে জেরা করবার সময় পুলিশের সদস্যদের চোখ ছানাবড়া। কেন? কারণ ছেলেটা নিজের নামধাম কিছুই জানে না কিন্তু তার সামনে যে-ই আসুক, তার হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিচ্ছে। এরপর গল্পে আগমন ঘটে ইউনিট নামের এক সংস্থার। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কথা বলে নিজেদের কভার দেয়, কিন্তু আসল কাজ কী, কীভাবে করে তা সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে। তারা ছেলেটাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে গেলো। ছেলেটার নতুন নাম হলো সাবজেক্ট ট্রিপল এ। কিছুদিন পর জানা গেলো সাবজেক্ট ট্রিপল এ-কে লিভিং ইন্টারনেট হিসেবে বললেও অত্যুক্তি হয় না। আমেরিকা থেকে এক সংস্থা এসেছে তাকে বাংলাদেশের মাটি থেকে তুলে নিয়ে যাবার জন্য। পকেটে এনেছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আর লোভনীয় সব অফার। ক্যাপ্টেন শহীদুল বন্দী হয়ে আছে। তার ওপর চলছে ভয়াবহ নির্যাতন। তবে তার চরিত্রের মাঝে বেশ কিছু ধোঁয়াশা দেখা যায় শুরুতে। নানা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে সে, ভিন্ন নামে তাকে ডাকা হয় স্বপ্নগুলোতে। শহীদুল ধন্দে পড়ে যায়। নিজেকে যেন সে আর চিনতে পারছে না। এদিকে ঢাকার বুকে দানা পাকিয়ে উঠছে ষড়যন্ত্র। শেষটায় কী হবে? এবার আসি আমার কথায়।
১) ২০১৭ সালের টাইমলাইন হিসেব করলে ডানায় আগুনের প্লট বেশ ইউনিক ও শক্তিশালী। যদিও এ ধরণের প্লট নিয়ে বাইরে নানা কাজ হওয়া শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। এমনকি মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাইফাই গুলোতেও এমন চরিত্রের দেখা হরহামেশাই মেলে। তবুও বলব ডানায় আগুন সাইফাই ফ্যান্টাসি বা সুপারহিরো জনরার বেশ ভালো একটা প্লট। ২) প্রথমদিকে কাহিনী বুঝতে একটু একটু সমস্যা হলেও গল্প যখন ডানা মেলতে শুরু করে, তখন বেশ তরতরিয়ে এগিয়ে যায় গল্প। সাবজেক্ট ট্রিপল এ চরিত্রটা বেশ ইন্টারেস্টিং। ৩) বেশ কিছু ইস্টার এগ, ফিকশনাল ক্যারেক্টার, পপুলার পপ কালচারকে ট্রিবিউট দেয়া হয়েছে। ভালো লেগেছে বিষয়টা। ৪) কভারটা আহামরি তেমন কিছুও লাগল না। ৫) বাতিঘরের এজ ইউজুয়াল বানান ভুলের মাত্রা এখানে আছে ভালোই, তবে সহনীয়। ৬) চরিতত্রায়নও ভালো লেগেছে।
সমস্যা একটাই। লেখক সিরিজটা শেষ করেননি। আদৌ করবেন কিনা, জানি না...
Everyone loves a conspiracy.” ― Dan Brown, The Da Vinci Code
- ডানায় আগুন - এয়ারপোর্টের কাছে এক অজ্ঞাত যুবককে পড়ে থাকতে দেখে তাকে থানায় নিয়ে আসে এসআই সাইফ। তাকে থানার সেলে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করে সে। কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারে যে স্মৃতি হারিয়ে ফেললেও এই ছেলের মাঝে রয়েছে অদ্ভুত এক ক্ষমতা। - সরফরাজ আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ সিক্রেট অপারেশন্স এন্ড রিসার্চ ইউনিটের চিফ। সে এবং আফসানা মিরাজ নামের এক তরুণী সেই থানা থেকে নিয়ে এই তরুনকে নিয়ে যান তাদের হেডকোয়ার্টারে। সেখানে এই তরুনের কাছ থেকে জানতে পারেন ভয়াবহ কিছু তথ্য। - এখন এই অজ্ঞাত যুবকের আসল পরিচয় কি? কিভাবে হারিয়ে গেল তার স্মৃতি? কি ভয়াবহ তথ্য জানা যায় তার কাছ থেকে? তা জানতে হলে পড়তে হবে লেখক আরিয়ান শুভ এর মিলিটারি স্পাই থ্রিলার এবং সুপারহিরো ফ্যান্টাসির মিশ্রণে লেখা উপন্যাস "ডানায় আগুন"।
"ডানায় আগুন" বইটিকে মূলত মিলিটারি স্পাই থ্রিলার এবং সুপারহিরো ফ্যান্টাসির মিশেল মনে হলো। বইটির প্লট বেশ চমৎকার লাগলো, সে হিসেবে লেখনী কিছুটা অপরিপক্ক মনে হলো, হয়তো প্রথম লেখা হিসেবেই কিছুটা খাপছাড়া লাগলো। কাহিনী প্রথমদিকে ধরতে বেগ পেতে হচ্ছিল,বইয়ের অর্ধেকের পরে অবশ্য কাহিনী গতিশীল হয়।বইটির শেষে সিক্যুয়ালের আভাসও দেয়া হয়েছে। - "ডানায় আগুন" বইতে চরিত্র ছিলো প্রচুর। এর ভিতরে অজ্ঞাত যুবকের চরিত্রটা সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লাগলো। বেশ কিছু চরিত্রের ব্যাপারে অবশ্য শেষ করার পরেও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। এই বইয়ের আরেক উল্লেখ্যযোগ্য দিক বিভিন্ন ধরনের সিক্রেট অর্গানাইজেশন এবং সুপারন্যাচারাল শক্তির বর্ণনা, বেশ চমৎকার লাগলো এ দিকগুলি। - "ডানায় আগুন" বইয়ের কারিগরি দিক মোটামুটি ভালোই , প্রচ্ছদটিও ভালো লাগলো, তবে বাঁধাই আরো ভালো করতে পারা যেত। এক কথায়, কিছু জায়গায় লেখনীর দুর্বলতা বাদে "ডানায় আগুন" বইটি মোটামুটি ভালোই লাগলো।
কনসেপ্ট এবং প্লট বেশ দারুণ। বাংলাদশে এর আগে সুপার হিরো ফ্যান্টাসি নিয়ে কাজ হয়েছে কিনা জানিনা, অন্তত আমি দেখিনি। তাই সম্ভবত এটাই বাংলাদেশের প্রথম সুপার হিরো ফ্যান্টাসি। (প্রথম না হলেও সমস্যা নাই, এটা আসলেই কোনো ব্যাপার না যে কে কোন জনরায় প্রথম লিখলো)।
শুভর লেখনী সবসময়ই ভালো। এখানেও সে তার ট্রেডমার্ক বজায় রেখেছে। তবে কিছু কিছু যায়গায় ভুলবশত একই চ্যাপ্টারে দুই তিনবার পয়েন্ট অফ ভিউ পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে। আমি অবশ্য তাকে ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগতভাবে এটা বলে ফেলেছি, এবং জানি পরবর্তীতে এই ব্যাপারটা আর থাকবে না ওর গল্পে।
পুরো বইতেই একটা এপিক ধরণের ফিলিংস ছিলো। বেশ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছে পড়তে গিয়ে।
আর সত্যি বলতে, বেলেমি ব্লেককে বেশ কিউট লেগেছে। বইয়ের শেষ পেইজের এপিলগটাও বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। আর ইয়ে...বইতে আমার নামের ক্যারেকটার আর তার কথাগুলো পড়ে অনেকক্ষণ হেসেছিলাম।
পরের বইয়ের জন্য শুভকামনা রইলো। আমি জানি পরেরটা আরো ভালো এবং আরো এপিক কিছু হবে।
বই: ডানায় আগুন লেখক: আরিয়ান শুভ মূল্য: ২৫০৳ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৫৩ প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১৭ প্রকাশক: বাতিঘর প্রকাশনী . কাহিনি: এই উপন্যাসের কাহিনি এত বড় আর স্পর্শকাতর যে ভয় হচ্ছে কিছু লেখতে গেলে স্পয়লার হয়ে যায় কিনা! তারপরও অল্প কথায় চেষ্টা করছি... দ্য রেবেলিয়ন নামের এক সংগঠন বাংলাদেশকে ঢেলে সাজাতে চাইছে। ক্যু ঘটিয়ে বর্তমান সরকার ও সিস্টেমকে গুঁড়িয়ে দেয়ার প্ল্যান তাদের। কিন্তু তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় “ওআরজি” নামের এক বেসরকারি সংগঠন আর বাংলাদেশ সরকারের এক গোপন প্রতিষ্ঠান “ইউনিট”। ট্রিপল এ, আফসানা মীরাজ, ক্যাপ্টেন শহীদুল, কর্নেল সাঈদ, কর্নেল শামস, মিস্টার অথরসহ অনেকগুলো চরিত্র জড়িয়ে আছে কাহিনির সাথে। সবাই নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে নায়ক। তাহলে ভিলেন কে? . রিভিউ: প্লটটা খুব সাধারণ। এরকম প্লটের উপন্যাস বিদেশি থ্রিলারে দেখা যায় হরহামেশাই। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুষ্প্রাপ্য। কাহিনি উপস্থাপনাভঙ্গিতে এসে লেখক খেল দেখিয়েছেন। খুব দক্ষ হাতে জাল বিছিয়ে ঠিক ততটুকু দক্ষ হাতে উপন্যাসের জাল গুটিয়ে এনেছেন। অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন ঝরঝরে লেখনীকে। মাঝখান থেকে মাথার ব্যায়াম করিয়েছেন পাঠকদের। এই উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো চরিত্রগুলো। একেকজন এক এক রকম। বিশেষ করে ক্যাপ্টেন শহীদুলের চরিত্রটা খুবই কনফিউজিং ছিল। পাঠককে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট। অন্যদিকে ট্রিপল-এর চরিত্রটাও গুরুত্বপূর্ণ, অদ্ভুত ও ধোঁয়াশাময়। মিস্টার অথর-ও কম যান না। যদিও তিনি এই উপন্যাসে স্বশরীরে উপস্থিত নন! “ডানায় আগুন”-এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক সংলাপ। দারুণ বাস্তবসম্মত সংলাপ আর দর্শনের উপস্থাপন পাঠকদেরকে ভাবাতে বাধ্য করবে। ��িলিটারি কন্সপিরেসি থ্রিলারের সাথে দু’চামচ ঘন ফ্যান্টাসির মিশেল হলো “ডানায় আগুন”। . সমালোচনা: লেখকের প্রথম বই হিসেবে লেখনী প্রশংসাযোগ্য হলেও কোথাও কোথাও সুর কেটে গেছে আঞ্চলিকতার কারণে। যেমন: “গাল পাড়া” শব্দটি। শব্দটা এত বারবার এসেছে যে একপর্যায়ে নিজেই “গাল পেড়ে” উঠেছিলাম। বর্ণনার ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় পুনরাবৃত্তি হয়েছে দুই-এক জায়গায়। বানান বিভ্রাট আছে। তবে একদম নগন্য।
সাইফাই-ফ্যান্টাসি থ্রিলার লেখার বেশ ভালো রকমের চেষ্টা করছেন লেখক। কন্সপিরেসি নিয়া যেই কাজটা করছেন, তা বেশ দূর্বল মনে হইছে। তাছাড়া পুরো বই জুড়ে যেইসব নীতিকথা, কিছু জিনিসের ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হইছে, এইগুলা সব সস্তা ধরনের। মনে হইছে, চাইলেই এইগুলা স্কিপ কইরা যাওয়া যায়।
লেখক সম্ভবত এইটার ডোলজি বা ট্রিলজির আশ্বাস দিছেন। তারপরেও এই পর্বেই মূল চরিত্র সহ কিছু চরিত্রের অরিজিন স্টোরি নিয়া আরেকটু কাজ করতে পারতেন।
সর্বোপরি 'ডানায় আগুন'রে এভারেজ একটা সাইফাই-ফ্যান্টাসি থ্রিলার মনে হইছে। কয়েকবার পড়া বন্ধ করে দিতে গিয়েও পারি নাই। ফ্লো'টাতে গা ভাসাইছিলাম। শেষে আইস্যা খারাপ লাগে নাই। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকবো।
এ বইটা আমার জোশ লেগেছে। এতদিন কেন পড়া হলো না তা ভাবছি 😒 সে ২০১৭ সালের লেখা। অধিকাংশ থ্রিলার বই পড়তে গেলে আমার যে সমস্যাটা হয়, শুরুতে বই খুবই স্লো পড়ি। কারণ অত ইন্টারেস্টিং লাগে না। এ বইটা শুরু থেকেই ইন্টারেস্টিং ছিল।
This entire review has been hidden because of spoilers.
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই গল্প নতুন তাতে সন্দেহ নেই। লেখক নিঃসন্দেহে প্রচুর খেটেছেন কাহিনির জাল ছড়িয়ে দিতে। শেষের দিকে অবশ্য খেই হারিয়ে ফেললো বলে মনে হয়েছিল। লেখক সতর্কবাণী দিয়েছেন যেন খাতা-কলম নিয়ে ভুল না ধরি। স্রেফ বিনোদন হিসেবেই নিলাম, তারপরেও শার্লক আরিয়ান...? সিরিয়াসলি? বিনোদনই বটে! কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে ডায়ালগ ডেলিভারি অনুবাদ বলে মনে হচ্ছিল। "এখন তুমি যেতে পারো কাজল।" বাঙলা ভাষার কথ্যরূপে এভাবে ড্রাইভারকে নির্দেশ দেয়া চোখে বাজে বাংলাভাষী হিসেবেই। এসব ছোট খাটো কারণ ছাড়া পিউর বিনোদনে ভরা "ডানায় আগুন".
প্লট দারুণ। লেখনীও খুব ভাল। তবুও কেমন যেন একটু খাপছাড়া লেগেছিল। আর কাহিনী খুব গতিময়। ওভারঅল ভাল লেগেছে। আর দ্বিতীয় পার্টের জন্য অপেক্ষা। অনেক কিছুই ক্লিয়ার হতে বাকি। :)