শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক।
তিনি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে (বর্তমানে বাংলাদেশের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন—যেখানে তাঁর জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে। ভারত বিভাজনের সময় তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসে। এই সময় রেলওয়েতে চাকুরিরত পিতার সঙ্গে তিনি অসম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শীর্ষেন্দু একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত।
তাঁর প্রথম গল্প জলতরঙ্গ শিরোনামে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে সেই একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে তাঁর প্রথম উপন্যাস ঘুণ পোকা প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাসের নাম মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘নয়নশ্যামা’ খুব একটা আলোচিত উপন্যাস নয়। এই উপন্যাসকে ভিত্তি করে ১৯৮৩ সালে নীতিশ মুখোপাধ্যায়ের বানানো সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়, প্রবীর রায়, সন্তু মুখোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক প্রমুখ অভিনীত ‘নয়ন শ্যামা’ চলচ্চিত্রটি আরও অনালোচিত, কারণ সেটি সিনেমা হলে কখনো রিলিজ হয়নি। উপন্যাসটি কোনও এক শারদীয় পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, পরে ‘রামায়ণী প্রকাশ ভবন’ এটি বই আকারে প্রকাশ করে। ওই শারদীয় পত্রিকা প্রকাশের তারিখ বা রামায়ণী সংস্করণ প্রকাশের তারিখ জানতে পারিনি। ‘অঙ্কুর পুস্তকালয়’ থেকে প্রকাশিত উপন্যাসটির যে সংস্করণটি আমি পড়েছি তাতে প্রকাশের তারিখ লেখা আছে ২০ এপ্রিল, ১৯৪১! মরি, মরি! ১৯৪১ সালে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বয়স ছিল ৬!! ‘পুস্তক বিপণি’ থেকে প্রকাশিত শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘উপন্যাস সমগ্র’র দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথম উপন্যাস ‘নয়নশ্যামা’। সেই খণ্ডের ভূমিকায় খোদ লেখক বলছেন, “নয়নশ্যামা যখন লিখি তখন আমি মধ্য তিরিশ পেরিয়ে গেছি’। সেই হিসেবে উপন্যাসটি ১৯৭০ সালের পরে লেখা। উপন্যাসে পারিপার্শ্বিকের যা বিবরণ পাওয়া যায়, টাকার মূল্যমান যা দেখানো হয়েছে তাতে কাহিনী সত্তরের দশকের বলেই মনে হয়।
উপন্যাসের নাম ‘নয়নশ্যামা’ অনেকটা ‘শিরিঁ-ফরহাদ’, ‘লায়লী-মজনু’, ‘হীর-রনঝাঁ’, ‘সইফুল মুল্ক্-বদিউজ্জামাল’ ধরনের, যদিও এখানে নয়ন আর শ্যামার নামের মাঝে কোন হাইফেন নেই। এহেন নাম দেখে পাঠক যদি ভাবেন এটাও ঐসব ঐতিহাসিক প্রেমকাহিনীর মতো কিছু তাহলে তিনি ঠকবেন। উপন্যাসে নয়ন নামে একরোখা এক প্রেমিক আছে বটে তবে উপন্যাসের আরেক চরিত্র শ্যামা মোটেও তার প্রেমে পড়েনি। নয়ন যতোটা না প্রেমিক তারচেয়ে বহু বহু গুণে বেশি ‘ইভ টিজার’ — নাছোড়বান্দা, একগুঁয়ে, নির্মম, নিষ্ঠুর এক ইভ টিজার। তার সাথে শ্যামার যেটুকু যোগাযোগ প্রচেষ্টা সেটা নয়নের ব্ল্যাকমেইলিং-এর ফল, তার ক্ষতিসাধনের চেষ্টাকে নিবৃত্ত করার জন্য শ্যামার করুণ প্রচেষ্টা। নির্ঘুম রাত কাটানো, পড়াশোনায় ড্রপআউট, একবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা, ধনী উকিলের বখাটে পুত্র নয়ন হয়তো মানসিক রোগী; কিন্তু শ্যামার জীবনে সে এক অনিঃশেষ ত্রাসের উৎস। আতঙ্কে রেখে, উত্যক্ত করে নয়ন শ্যামাকে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে খুন করে চলে।
উপন্যাসটি নিয়ে লেখকের বক্তব্য হচ্ছে — “এখানে প্রেমটি রাহুগ্রস্থ, একপেশে এবং মোটেই সুস্বাদু নয়। তা বলে নয়নকে ভিলেন ভাবিনি কখনো, বরং ওর বেদনার সঙ্গে আমার সংক্ষুদ্ধ যৌবনের বেদনার একটা যোগ আছে”। সংক্ষুদ্ধ যৌবনে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কী করেছিলেন বা তাঁর বেদনাটা কী সেটা আমরা জানি না, তবে নয়ন চরিত্রটি কী সেটা আমাদের কাছে যথেষ্ট স্পষ্ট। নয়নের এই বখাটেপনার জন্য যদি তাকে স্রেফ একটা বখাটে হিসেবে দেখানো হতো তাহলে সেটা নিয়ে বলার কিছু ছিলো না, কিন্তু নয়নকে বখাটে হিসেবে তিরস্কারযোগ্য চরিত্র হিসেবে দেখানোর চেয়ে তার প্রতি সহানুভূতি টানার একটা প্রয়াস আছে যেটা লেখকের বক্তব্য থেকেও বোঝা যায়। নয়নকে যদি মানসিক রোগী হিসেবে দেখানো হতো তাহলেও বলার কিছু ছিল না। নয়নের সুগঠিত ও সুপরিকল্পিত চিন্তাভাবনা, কর্মদক্ষতা, কার্যকারণ বিচারের সূক্ষ্ম ক্ষমতা প্রমাণ করে সে মানসিক রোগী নয়। তার মাঝে যে উৎকেন্দ্রিকতা, জিগীষা ও জিঘাংসা আছে সেটা সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের মধ্যেও থাকতে পারে। শেষ প্রান্তে নয়নের আত্মহত্যা করার একটা সম্ভাবনার যে ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে সেটাও খুব অস্বাভাবিক কিছু না, সব নেশাগ্রস্থই এমন ভাবনায় তাড়িত হয়। উপন্যাসে নয়ন যা কিছু করেছে তা ভেবে-চিন্তে, পরিকল্পনা করেই করেছে। তার কর্মতৎপরতা শ্যামাকে কতটুকু বিপর্যস্ত করে সেটা জেনে বুঝেই করেছে। নয়ন যে নাছোড়বান্দা প্রেমিক নয় সেটা স্পষ্ট হয় শেষ প্রান্তে যখন বলা হয় — “সে বুঝতে পারে, শ্যামা নয়, কিছু নয়, একটু ঘুম ছাড়া সে আর কিছু চায় না”। বস্তুত শ্যামার প্রতি কোন শ্রদ্ধা তার মধ্যে ছিল না, থাকলে শ্যামাকে একা পেয়ে যৌন হয়রানীর চেষ্টা সে করতো না। নয়নের ধর্ষক প্রবৃত্তির উদাহরণ আরও আছে। ঐতিহাসিক প্রেমিকজুটিদের কায়দায় লেখক উপন্যাসের নাম ‘নয়নশ্যামা’ দিলেও বা ব্যক্তিগতভাবে তাকে ‘ভিলেন’ না ভাবলেও নারীর প্রতি অশ্রদ্ধাশীল, ইভ টিজার, ধর্ষক প্রবণতার নয়নকে পাঠকের পক্ষে ভিলেন ভাবাটাই সঙ্গত।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের এই অনালোচিত, অনুল্লেখযোগ্য উপন্যাস নিয়ে আলোচনা ফাঁদার চেষ্টার কারণটি হচ্ছে বাংলা শিল্প-সাহিত্যে বহুল চর্চ্চিত একটি বিষয় — ‘ইভ টিজিং’। ইংরেজি ‘eve teasing’ শব্দটির ভালো কোন বাংলা নেই। সর্বত্র এটাকে ‘ইভ টিজিং’ বলেই চালানো হচ্ছে। ‘বিরক্ত করা’, ‘উত্যক্ত করা’, ‘যৌন হয়রানী’ কোনটা দিয়েই ‘ইভ টিজিং’-কে ঠিক ঠিক বোঝানো যায় না। তাহলে কি এদেশে সাহেবদের আসার আগে এটা ছিল না? আলবত ছিল। এই দেশের লোক সাহিত্য লক্ষ করলে সেখানে এর ভুরি ভুরি উদাহরণ পাওয়া যাবে। গাছতলায় দাঁড়িয়ে থেকে পথচলতি নারীকে উত্যক্ত করা, মধ্যরাতে বাঁশি বাজিয়ে গৃহমধ্যস্থ নারীকে উত্যক্ত করা, জলাশয়ে স্নানরত নারীর পোশাক চুরি করে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা, গাছে উঠে স্নানরত নারীকে লক্ষ করা, সিক্তবসনা নারীর পথরোধ করে তাকে বিব্রত করা, নানা ছুতোনাতায় নারীর আঁচল/ওড়না ধরে টানা, নারীকে শারিরীকভাবে আঘাত করা, জনসমক্ষে নারীকে অপদস্থ করা – কী নেই আমাদের লোক সাহিত্যে! এবং প্রায়ই এগুলো আখ্যানের ‘ভিলেন’-এর কাজ নয়, ‘হিরো’র কাজ। সেই ‘হিরো’ আবার আমাদের চোখে প্রেমিক, কেউ কেউ মহান প্রেমিক।
বাংলা সাহিত্যে সর্বাধিক আলোচিত ‘প্রেমের উপন্যাস’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’। এই উপন্যাসে অনেক কিছু পাওয়া গেলেও ‘নায়ক’ দেবদাসের ‘নায়িকা’ পার্বতীর প্রতি প্রেমপূর্ণ উক্তি, প্রিয় সম্ভাষণ, সোহাগ, বিশেষ যত্ন ইত্যাদি প্রেমের প্রকাশমূলক কিছু পাওয়া যায় না। পার্বতীর জন্য দেবদাসের কোন ত্যাগের কথাও জানা যায় না। বরং উপন্যাসের শুরু থেকে দেবদাসকে দেখা যায় ক্রমাগতভাবে পার্বতীতে হাত, বেত, ছিপ, বাক্য দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করে যেতে। দেবদাস আঘাত করে বিবাহলগ্না পার্বতীর কপালও কেটে দিয়েছে। দেবদাস পার্বতীকে গ্রহন করার সাহস দেখায়নি, তার জন্য অসবর্ণ বিবাহ করেনি, পরিবার ও তথাকথিত সমাজের বিপক্ষে দাঁড়ায়নি। দেবদাস পার্বতীকে একজন কৃতদাসীর চেয়ে বেশি কিছু ভাবেনি। তাই পার্বতীর অন্যত্র বিবাহ হয়ে গেলে দেবদাস সেটাকে নিজের পরাজয় হিসাবে দেখে। পার্বতীকে হারানোর শোকে নয়, নিজের পরাজয়ের শোকে দেবদাস নিজেকে মদ্যপান ও বেশ্যাগমনে ডোবায়। নারীকে ক্রমাগত শারিরীক-মানসিক আঘাত করা দেবদাস আমাদের কাছে মহান প্রেমিক। তার এই প্রকার আচরণ নিন্দার্হ এমনটা বলা দূরে থাক, আমরা তা ভাবিও না; বরং এমন আচরণকেই প্রেম বলে চালানোর চেষ্টা আমাদের থাকে।
সাহিত্যে এই চর্চ্চা যে কেবল ‘আগের আমলে’ হতো এমনটা নয়। আধুনিক কবিতাতেও উচ্চারিত হয় — “জানি, পুরুষের কাছে দস্যুতাই প্রত্যাশা করেছো”। পুরুষ কবি নিজের ভাবনাকে নারীর ভাবনা বলে চালাতে চাইলে এমন পংক্তি মিলবে। পুরুষের ভাবনাকে নারীর ভাবনা হিসাবে চালানোর ভালো উদাহরণ খোদ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘দ্বিচারিণী’-তে পাওয়া যাবে। সেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘সুন্দরী’ মধুরিমা ভাবে, “বললে লোকে বিশ্বাস করবে না, মাঝে মাঝে আমার ইচ্ছে দু-তিনজন সোলজার এসে আমাকে রেপ করুক”। মধুরিমার ‘অসুন্দরী’ বান্ধবী গঙ্গার ভাষ্য আরও ভয়াবহ — “গঙ্গা অবশ্য দুঃখ করে বলল, আর আমি যা কুচ্ছিত দেখতে, কেউ আমাকে রেপও করবে না”। ধর্ষণ কতোটা বীভৎস ও ভয়াবহ ব্যাপার সেটা জ্ঞানসম্পন্ন প্রত্যেকটা নারী জানেন। ধর্ষণের ট্রমা যে একজন ধর্ষিতাকে সারা জীবন পদে পদে তাড়িত করে সেটাও নারীরা জানেন। তাই কোন নারীর পক্ষে ‘সোলজার দিয়ে গ্যাং রেপড্’ হবার স্বপ্ন দেখা সম্ভব না, অথবা নিজে ‘ধর্ষণযোগ্যা’ না অমনটা ভেবে দুঃখ করার কথা না। এমন ভাবনা কোন কোন পুরুষের ভাবনাসঞ্জাত। সাহিত্যে এমন ভাবনার প্রকাশের ফলে কোন কোন পুরুষ পাঠক এমন ভাবতে পারে যে, নারীদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো ধর্ষিতা হতে আগ্রহী। অমন কোন পুরুষ পাঠক ধর্ষণে উদ্বুদ্ধ হলে তাকে প্রেষণা দেবার দায় কি ঐসব সাহিত্যিকদের ওপরেও বর্তায় না?
সাহিত্য-সঙ্গীত-নাটক-চলচ্চিত্র-শিল্প জীবনের প্রতিচ্ছবি। তাই আমাদের বাস্তব জীবনে ইভ টিজিং-এর মতো জঘন্য বিষয় বিদ্যমান বলে আমাদের সৃষ্টিশীল কর্মে তার উপস্থিতি থাকতে পারে। সৃষ্টিশীল কর্মে ইভ টিজিং-এর এই উপস্থিতি ভুল বা অনুচিত কিছু নয়। আপত্তিকর হচ্ছে এসব মাধ্যমে ইভ টিজিংকে খাটো করে বা গ্রাহ্য বলে বা পুরুষের অধিকার হিসাবে বা অনিন্দনীয় হিসাবে দেখানো।
এককালে ক্ষুধার্ত হিংস্র পশুর খাঁচায় জীবন্ত বন্দীকে ছেড়ে দেবার যে রীতি ছিল সেই কালে ঐ রীতির মহিমা গেয়ে বা সমর্থন করে কোন সঙ্গীত-নাটক রচিত হওয়াটা অসম্ভব কিছু না। আমরা নিজেদেরকে ঐ আমলের মানুষদের চেয়ে অনেক বেশি মানবিক, যৌক্তিক, সভ্য ও সংস্কৃতিবান বলে দাবী করি; তাহলে আমাদের সৃজনশীল কর্ম কেন ঐ আমলের মানুষের কোন কোন কাজের মতো অসভ্য, অমানবিক হবে!
এক দুর্দান্ত অদ্ভুত এবং মোহনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী নয়ন। সে শ্যামাকে পাওয়ার জন্য নানা কর্মকাণ্ড করে কিংবা শ্যামাকে নয় নিজেকে যাচাই করতেই এসব করা। নিজের পড়া কোন চরিত্রের মতো হতে চাও? কখনো জিজ্ঞেস করলো নিশ্চয়ই নয়নের কথা লিস্টিতে থাকবে।
নয়ন এবং শ্যামা, এই দুই নরনারী উপন্যাসের নামকরণের উৎস। কিন্তু এটি প্রেমের উপন্যাস নয়, এমনকি ভালোবাসারও নয়। পুরোটা পড়ে মনে হয়, নয়নের সম্ভবত ভালোবাসার ক্ষমতা নেই। কিন্তু শ্যামার প্রতি তার উগ্র আকর্ষণ আছে, যার ফলে সে বিভিন্ন পাগলামি করে। শ্যামা অবশ্য সেসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, তবে কখনোসখনো একটু মায়াজালেও আচ্ছন্ন হয় বুঝি।
কিন্তু নয়ন শ্যামাকে কেন এত চায়? ভালোবেসে, নাকি নিছকই যৌনাকাঙ্ক্ষার তাড়নায়? পাঠককে এই ধন্ধে আবিষ্ট রেখে উপন্যাস গড়িয়ে চলে। নয়নের যৌন আকর্ষণের উগ্রতা পাঠককে হয়তো মাঝে মাঝে বিরক্ত করে। কিন্তু এই বিরক্তির ভেতরেও নয়নের বোহেমিয়ান আচরণ পাঠককে আকৃষ্ট করে। হয়তো পাঠক চায়, ওদের মিলন হোক, বিয়েটাও হোক, আবার পরমুহূর্তেই ভাবে, প্রশ্নই ওঠে না। এই দ্বিধার শেষ আছে, নাকি নেই?