“ওই বাক্সের ভেতর কমলা মায়ের জেড পাথরের যে মূর্তিটা আছে, ওটাই আসল। গুপ্তধনের থেকেও হাজার গুণ বেশি দামি। গুপ্তধন একবার পেতে পারেন। উড়নচণ্ডী হলে খরচ হতেও বেশি দেরি হবে না। কিন্তু মা কমলা স্বয়ং লক্ষ্মী। তার ভান্ডার কখনও শেষ হওয়ার নয়। ঠিকমতো উপাচার সাজিয়ে সঠিক নৈবেদ্য দিয়ে মায়ের পুজো করলে অসীম ধন লাভ হবে। যতবার চাইবেন ততবার পাবেন। না, মা নিজে এসে আপনার সিন্দুক ভরে দিয়ে যাবেন না। যা হবে তা হলো: আপনি যেখানে হাত দেবেন, সেখানেই সোনা ফলবে। পুজো করবেন আর আঙুল ফুলে কলাগাছ হবেন । তবে হ্যাঁ, যতদিন যাবে ভারী হবে পুজোর নৈবেদ্য।” “ভারী নৈবেদ্য আবার কী?” ফুলফল, বেলপাতা, আর কুমড়ো বলি দিয়ে পুজো দিলেও শেষ পশুবলি থেকে শুরু করে নরবলি অব্দি গড়াতে পারে।” প্রিয় পাঠক, বুঝতেই পারছেন। নরবলি অব্দি গড়িয়েছে ব্যাপারটা। কিন্তু কেন? লাভ কী? কার বলি দেওয়া হলো? দিলই বা কে? সেসবের সঙ্গে কী সম্পর্ক নিরীহ তালেবে এলেম, হজরত আলীর? জানতে হলে..? আরকি . . . পড়ে ফেলুন সাঁঝবাতি!
তৈমুর স্যারের লেখার আলাদা একটা ধরণ আছে। যারা তার নিয়মিত পাঠক সহজেই ধরতে পারবেন। বেশ বিস্তৃত একটা বর্ণনার মধ্যে দিয়ে গল্পের পরিবেশ এবং চরিত্রসমুহের ছবি পাঠকের সামনে তুলে ধরেন। এছাড়া প্রত্যেকটা গল্পে তার পড়াশোনার একটা স্পষ্ট ছাপ তো থাকেই। 'সাঁজবাতি'ও তার ব্যাতিক্রম না। চিরাচরিত স্যারের সেই স্টাইলেই হেঁটেছেন তিনি।
প্রথম দিকে খুব সাধারণ একটা গল্পের মতোই শুরু হয়েছে এটা। তারপর গুপ্তধন, অ্যাডভেঞ্চার এবং বলায় বাহুল্য ফ্লপের অংশ যদি পড়ে থাকেন তাহলে ইতোমধ্যে জানেন অকাল্ট থ্রিলার। হ্যাঁ, এজন্য গল্পটাকে নির্দিষ্ট জনরাতে ফেলার উপায় নেই।
এক বসাতেই শেষ করে ফেলতে পেরেছি। কারণ দুটো। ১. ঝরঝরে এবং দারুণ রোমাঞ্চকর লেখা। ২. রেগুলার সাইজের এই বইটার পাতা সংখ্যা ১৫৮ হলেও একটা ক্রাউন সাইজের ১৫৮ পাতার বইতে এর চেয়ে বেশি শব্দ ধরবে। অর্থাৎ পাতা প্রতি শব্দ কম। গল্প নিয়ে আমার গুরুতর অভিযোগ তেমন নেই। প্রথম অংশটা জাস্ট একটু লম্বা মনে হয়েছে। আর প্রথম দিকে, ছেলে তার মায়ের সম্পর্কে যেভাবে বর্ণনা দিচ্ছিলো এবং পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষ ভাবে দিচ্ছিলো তাতে খানিকটা অকোয়ার্ড লাগছিল বটে। কিন্তু শেষমেষ লেখকের টুইস্ট সেই অকোয়ার্ড লাগার ব্যাপারটার সমাধান করে দিয়েছেন। ফলে দারুণ একটা সময় কাটলো বইটার সাথে। অকাল্ট, থ্রিলার, অ্যাডভেঞ্চার যেটাই আপনি পছন্দ করে থাকেন না কেন এই বইটা সম্পর্কে আমার পরামর্শ, পড়ুন। আশা করি ভালো লাগবে।
মুহম্মদ আলমগীর তৈমুর হররে আমার অন্যতম প্রিয় লেখক। তার যেকোনো লেখা পড়তেই ভালো লাগে। বিশেষ করে গল্প বলার ভঙ্গির কারণে। এমনভাবে গল্পটা বলেন চোখের সামনে কাহিনী ভেসে ওঠে। সেইসাথে হিউমার তো আছেই। এই বইয়ে হিউমার তেমন নেই। গল্পের শুরুটা একটু ধীরগতির, যদিও ভালোই লেগেছে। ধীরে ধীরে কাহিনীর ভেতরে ঢুকেছেন। আগের মতই ইতিহাস, মিথ, অভিশাপের উপস্থিতি ছিল। আর শেষে গিয়ে একটা ধাক্কা। রেসিপি একই, কাহিনী আলাদা হয় উনার লেখার। জানি প্রক্রিয়াটা কেমন তবুও পড়তে ভালো লাগে কেন যেন। এবারও ভিন্নরকম কিছু হয়নি। বলে চলে একটানেই পড়েছি। হিন্দু পুরানের দশ মহাবিদ্যার দেবী, তার পূজা, লোভ, নরবলি এসব নিয়েই ছিল এবারের কাহিনী। হরর প্রেমীদের খারাপ লাগবে না। উনার কাছে আরও দুর্দান্ত কিছুর অপেক্ষায় রইলাম।
আশির দশকের শুরুর কথা। দারিদ্র্য তখনো সর্বব্যাপী দৃশ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে হযরত আলি নামের এক মাদরাসা-পড়ুয়া ছাত্র লজিং খুঁজতে কুষ্টিয়া শহরের বাইরে চলে এলো। সেখানেই তার পরিচয় তপন চৌধুরীর সঙ্গে। অত্যন্ত ধনবান এই যুবক আশির দশকের গোড়ায় চালু হওয়া সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মালিকের ভাগ্নে ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের সুন্দরবন কুরিয়ারের ম্যানেজার। তার মাধ্যমেই আর্জেট পারসেল নির্দিষ্ট ঠিকানায় প্রাপকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার চাকরিটি পায় হজরত আলি। অর্থাৎ লজিং না পেলেও হতদরিদ্র হজরত আলির জীবিকার একটা ব্যবস্থা হয়ে যায়। আশির দশকের কুষ্টিয়ার অনবদ্য ছবি এঁকেছেন লেখক। তখনকার বাংলাদেশের সমাজচিত্র যেন পাঠকের চোখের সামনে ভেসে উঠবে - এতটাই সুন্দর বর্ণনাভঙ্গি মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরের।
হজরত আলি জরুরি পারসেল নিয়ে গেল দিনাজপুরের এক গণ্ডগ্রামে। অথচ প্রাপককে পেল না এবং তাদের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থাও হয়নি হজরত আলির। তাই বাধ্য হয়েই আশ্রয়ের খোঁজে বের হয়ে দেখা পেল এক মহিষের গাড়োয়ানের সঙ্গে। সে মহিষের গাড়িতে জিনিসপত্র বোঝাই করে কোথায় যেন যাচ্ছে। এই গাড়িতেই রওনা হলো হজরত আলি। পথে যেতে যেতে গাড়োয়ানের মুখেই শুনতে তার অতীতকাহিনি। যেখানে হাজির হয়েছেন দশম মহাবিদ্যার দেবী কমলা ও রহস্যময় এক জমিদার বাড়ি এবং গাড়োয়ানের পিতা-মাতার কাহিনি। শুরু হলো আজব এক সফর...
'বংশালের বনলতা' পড়েই মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরের গুণমুগ্ধ হয়ে গেছি। তাঁর যে কোনো লেখা আমি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে পড়ি। তাঁর লেখা গল্পগুলো 'নিগূঢ়' সিরিজে স্থান পাওয়ার আগে বেশির ভাগ রহস্যপত্রিকায় বের হয়েছিল। কতবার পড়েছি সেই হিসাব রাখিনি৷ তাই মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরের লেখার 'সৎ' পর্যালোচনা করা আমার পক্ষে অসম্ভব। তাঁর লেখায় নিখুঁত ও বিস্তারিত বর্ণনা থাকে। মনে হবে যেন পাঠককে তিনি পূর্ণাঙ্গ একটা ছবি দিতে চান। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। যথেষ্ট সুন্দরভাবে তিনি বর্ণনা করেছেন।
লেখকের পড়াশোনার ব্যপ্তি সব সময় আমাকে বিস্মিত করে। 'বজ্রযোগীর প্রত্যাবর্তন: দ্য হিউম্যান কাইমেরা' বইয়ের তুলনায় এখানে পড়াশোনার ছাপ তুলনামূলক কম। তা আমাকে কিছুটা হলেও হতাশ করেছে।
সবকিছু মিলে, মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরের লেখা আপনার পছন্দ হলে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যে বইটা পড়ে ফেলতে পারবেন এবং শেষের টুইস্টে নিঃসন্দেহে অবাক হবেন।
আর হ্যাঁ, মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরের উচিত আরও মানসম্মত কোনো প্রকাশনীকে বই দেওয়া। বিবলিওফাইল ঠিকমতো বইটার সম্পাদনা করেনি। প্রচুর বানান ভুল পাঠক হিসেবে আমাকে বিরক্ত করেছে। তবে উচ্চমানের কাগজ ও সুন্দর ছবি বইটিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে তা বলতেই হয়।
বইঃ সাঁঝবাতি লেখকঃ মুহম্মদ আলমগীর তৈমূর পৃষ্ঠাঃ ১৫৮ প্রকাশনা সংস্থাঃ বিবলিওফাইল মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরের নতুন গল্পটি পড়ে যেমন এক্সপেকটেশন ছিল তেমনই একটা অভিজ্ঞতা হলো। লেখকের লেখার একটা ডিস্টিঙ্কট স্টাইল আছে, ভাল লাগার মত। তার যারা নিয়মিত পাঠক তারা এটা জানেন। লেখক বরাবরের মতো এবারও ইতিহাস, পুরাণ, অভিশাপ, ধাঁধা, রহস্য আর অতিপ্রাকৃতিক উপাদানের একটা মিক্স দিয়ে দিয়ে প্লট সাজিয়েছেন। তবে খুব বেশি হররের এলিমেন্ট ছিল না। বরং গল্পটি ছিল ধীরগতির, ধাপে ধাপে রহস্যটা পেকে উঠেছে। গল্পের ভেতর আছে ফেলে আসা সময়ের বর্ণনা, স্ট্রাগল, দেবী, জমিদার বাড়ি, আর কুটিল চরিত্রের মিশ্রণ। বর্ণনাভঙ্গি এমন বিশদ যে- যে মনে হয় চোখের সামনে সব কিছু ঘটছে—এটাই লেখকের সবচেয়ে বড় শক্তি। কিছু ইলাস্ট্রেশন আছে – পড়ার স্বাদ বাড়ায়। তবে গল্পের শেষটা যেন হঠাত নেমে আসে পাঠকের মাথার উপর, উচু দরের টুইস্ট হিসেবে একে মার্ক দেয়া যায়না। কেমন কাচা আর হাস্যকর লেগেছে। এটা বাদ ��িলে পুরো বইটা এক বসায় পড়ে ফেলার মতো। যারা হালকা হরর ভালোবাসেন, তাদের জন্য ভাল অপশন।
মোটামুটি লেগেছে। ভেতরের অলঙ্করণ পছন্দ হয়নি যদিও। তবে লেখকের আগের বই বেতাল-এর থেকে এই বই নিঃসন্দেহে অনেক ভালো। কাহিনীতে তাড়াহুড়ো একেবারেই করা হয়নি। আর লেখনী বরাবরের মতই চমৎকার।
জমিদার হরনাথের পরদাদা জমিদার শম্ভুনাথ ছিলেন নীলকুঠির গোমস্তা। সেখান থেকেই হঠাৎ তাঁর ভাগ্য খুলে গিয়েছিলো। বিস্তর টাকাপয়সা আর ধনসম্পদের মালিক বনে গিয়েছিলেন তিনি। তারপর একটা সময় যে নীলকুঠিতে চাকরি করতেন, সেটাই কিনে নিয়েছিলেন শম্ভুনাথ। তাঁর সেই জমিদারবাড়ির ভগ্নাবশেষেই দুটো ঘর নিয়ে থাকা শুরু করলেন স্কুল শিক্ষক বেচারাম বাইন ও তার স্ত্রী লীলা। বর্তমান জমিদার হরনাথের বদান্যতায়ই সেটা সম্ভব হলো।
স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক বেচারাম ও তাঁর স্ত্রী লীলা একদিন একটা অদ্ভুত ব্যাপার আবিস্কার করলেন। আর সেটাই তাঁদেরকে পৌঁছে দিলো এক অনিন্দ্যসুন্দর দেবীপ্রতিমার কাছে। জেড পাথর দিয়ে বানানো এগারো ইঞ্চির এই মূর্তিটা দশমহাবিদ্যার এক বিদ্যা দেবী কমলার। তিনি যক্ষলক্ষ্মী হিসেবেও পরিচিত অনেকের কাছে। সঠিক নিয়ম ও উপাচার সহযোগে দেবী কমলার পূজা করলে তিনি দেন অফুরন্ত অর্থ ও সম্পদ।
শুরুতে দেবী কমলা ফুল, ফল, বেলপাতা সহযোগে পূজা নিলেও ধীরে ধীরে কুমড়ো বলি, পশু বলি ও শেষতক নরবলি পর্যন্ত দিতে হয় তাঁর অর্ঘ্য হিসেবে! পুরো ব্যাপারটার সাথে বেচারাম ও তাঁর স্ত্রী লীলার সাথে জুটে গেলো স্বয়ং জমিদার হরনাথ নিজেও। ধন-সম্পদের বন্যায় ভেসে যেতে লাগলেন যেন এই মানুষগুলো। কিন্তু একটা সময় সবই ভঙ্গুর হয়ে পড়তে লাগলো। কেন? দেবী কমলা কি তবে রুষ্ট হয়েছেন?
আশির দশকের গোড়ার দিকে যখন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের উত্থান হচ্ছে, ঠিক সেই সময় সেখানে ডেলিভারিম্যান হিসেবে চাকরি নিলো মাদ্রাসার তালেবুল এলেম হযরত আলি। একটা চিঠি পৌঁছে দিতে তাকে যেতে হলো উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুরের এক প্রত্যন্ত এলাকায়। জেড পাথরের দেবী কমলার মূর্তির সাথে ডেলিভারিম্যান হযরত আলিরই কি সম্পর্ক? জানতে হলে পড়তে হবে অনুসন্ধিৎসা, লোভ আর এর পরিণতির এই আখ্যান 'সাঁঝবাতি'।
বাংলা হরর সাহিত্যে মুহম্মদ আলমগীর তৈমূর অতি পরিচিত একটা নাম। তাঁর লেখা হাকিনী, বংশালের বনলতা, ভুদুয়া জমজম সহ বেশ অনেকগুলো গল্প শুধু এপার বাংলায়ই না, ওপার বাংলাতেও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরের লেখার সাথে আমার পরিচয় সেবা'র রহস্যপত্রিকার মাধ্যমে। অনেকদিন বাদে তাঁর কোন বই পড়লাম।
মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরের কাহিনিগুলোর মধ্যে একটা আলাদা রকম স্বতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায়। তিনি শুধু ভয়ের গল্প বলার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন না। বরং যে সময়ের গল্প বলছেন সেই সময়টাও পাঠকের সামনে মুনশিয়ানার সাথে তুলে ধরেন। সেই সাথে তাঁর কাহিনিতে হরর এলিমেন্টের পাশাপাশি থাকে প্রচুর ইনফরমেশন। অনেক সময় হরর এলিমেন্টের চেয়েও কিছুটা বেশি। যেমন এই বইতে তিনি দশমহাবিদ্যার অন্যতম বিদ্যা দেবী কমলার পূজার ব্যাপারে যে তথ্যগুলো দিয়েছেন তা বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। সেই সাথে কাশীরাম দাসের মহাভারতের পাশাপাশি যে পরাগলী মহাভারত নামে মহাভারতের আরেকটা ভার্শন আছে, সেটাও আমি প্রথম জেনেছি এই বইটা পড়তে গিয়ে। এই সবগুলো এলিমেন্ট ব্লেন্ড করার পর লেখকের কাহিনিটা হয়ে উঠেছে চমকপ্রদ আর উপভোগ্য। 'সাঁঝবাতি' পড়তে গিয়ে বোর হতে হয়নি এসব কারণে।
'সাঁঝবাতি' বইটার কাহিনি খুবই গতিশীল। এক বসায় পড়ে ফেলার মতো একটা বই। তবে কাহিনির শেষটা আমাকে আশানুরূপ সন্তুষ্ট করতে পারেনি। আরেকটু অন্যরকম সমাপ্তি আশা করেছিলাম বোধহয় আমি। যাই হোক, কাহিনির ফাঁকে ফাঁকে কিছু ইলাস্ট্রেশন সংযুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো ভালোই লেগেছে আমার কাছে। বইটার প্রোডাকশন ও কাগজের মান টপ-নচ। ভালো লেগেছে প্রচ্ছদটাও।
শীঘ্রই মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরের নতুন উপন্যাস 'নজ্জুমি কিতাব' প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। সেটা হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। আগ্রহীরা চাইলে পড়ে দেখতে পারেন 'সাঁঝবাতি'। আশা করি ভালো লাগবে।
তার লেখায় প্রচুর শাখা-প্রশাখা থাকে। ডাল পালা থাকে। কাহিনি থেকে জন্ম নেয় উপকাহিনি, উপকাহিনি থেকে জন্মায় উপ-উপ কাহিনি। সেখান থেকে আরো ডালপালা গজায়। থাকে ইতিহাসের প্রচুর রেফারেন্স, অজস্র তথ্য-উপাত্ত। এই তথ্য-উপাত্তের ভিড়ে খেই হারিয়ে ফেলাটা বিচিত্র নয়। আমি নিজেও ‘হিউম্যান কাইমেরা’ পড়তে গিয়ে কয়েকবার খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। পাতা ওল্টে দেখে নিতে হয়েছিল বারবার।
সাঁঝবাতি এরকম শাখাপ্রশাখা বিশিষ্ট কাহিনি নয়। এখানে ইতিহাসের ঝনঝনানি নেই। সাঁঝবাতির গল্প বরং সরলরৈখিক। ইনফ্যাক্ট, ফ্ল্যাপে যে কাহিনি দেয়া আছে মোটাদাগে ওটাই বইয়ের কাহিনি। আলমগীর তৈমুরের গদ্যভাষা অসম্ভব স্বাদু। আয়েশ করে পড়া যায়। একবার পড়া শুরু করলে রেখে ওঠা কঠিন।
সাঁঝবাতি তার সেরা কাজের মধ্যে পড়বে না হয়তো। তবে এক বসায় পড়ে ফেলার জন্য আদর্শ এ বই।
টিপিক্যাল আলমগীর তৈমুরীয় লেখা। নতুনত্ব নেই বললেই চলে। শেষটাও উনার অন্যসব গল্পকেই মনে করিয়ে দেয়। তবু বেশ আরাম করে পড়ে ফেলা যায় লেখকের চমৎকার গদ্যের কারণে।
মস্তি এসে গেছে ভাই!! কাহিনীর জন্য যতটা না এনজয় করবেন, গদ্যশৈলী বর্ণনার জন্য তত বেশি এনজয় করবেন। নিদারুণ ঝরঝরে লেখা। শুধুমাত্র লেখার মাধ্যমে কিভাবে পাঠককে মজা দিতে হয় তাতে তৈমুর স্যারের মাস্টারি আছে।
এক বসাতে পড়ার মতই বই- দৈর্ঘ্য কমই বলা যায়। ভালোই লেগেছে, মন্দ না। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এই গল্পটা এভাবে কেন বলতে হলো? গ��্পের স্ট্রাকচারটার কারণে হয়তো আবেদন কমে গেছে। ৩.৫ দিলাম।