পরিকল্পনা প্রস্তাবনা ও সঙ্কলন – চিরন্তন মুখোপাধ্যায়
প্রচ্ছদ – প্রণবেশ মাইতি
বনফুলের ছোটোগল্পের সাজি ফুলের বনের থেকে আনা এক চয়নিকা। এ- তোড়া রূপে-সুষমায়। ঘ্রাণে-লাবণ্যে, এমনকি নিকোটিনের মধুরতায়, উপাদেয়। পুষ্পের গুচ্ছ নয়, পুষ্পরাগের মণিমালাই যেন। স্পষ্ট আর স্বচ্ছ, শাদা আর হালকা-হলুদ, আর তাদের ভেতর দিয়ে গতিশীল ও সাবলীল বনফুলের শিল্পায়াস। তাঁর এক জীবনের বীক্ষার ফল অনেক ছোটগল্প; এক-আধটি প্রখর রেখার ক্ষিপ্র টানে ধরা আছে অস্তিত্বের গভীর খশড়া। এক-একটি রচনা ফুলের মতো সুকুমার, মণির মতো সমুৎকীর্ণ এক-একটি রচনা। উপক্রম হয় তো বাস্তব দুঃস্বপ্নে, তার উপসংহারে স্বপ্নের আয়োজন হয় তো। শুরু হতে পারে শ্লেষ-কৌতুকের সরসতায়। সারা হতে পারে সকরুণ সুকোমল। ‘বাহুল্য’ তাঁর এক ছোটোগল্প-সংকলনের নাম, তাঁর ছোটোগল্প কিন্তু বাহুল্যবর্জিত। তাঁর আর-এক গল্প-সংকলনের নাম ‘বিন্দু বিসর্গ’ ; কবিতার এক বিন্দু আর নাটকীতার দুই বিন্দু বা বিসর্গ, এ- ই তাঁর ছোটোগল্পের বর্ণমালা। সব মিলিয়ে এ হচ্ছে বনফুলের পুষ্পসার, ক্রিস্টালের আধারে বন্দী, উদ্বায়ী এবং জ্বলছে। - বীতশোক ভট্টাচার্য
নদীর বুকে আলোর ঝলক, গালের উপর চূর্ণ অলক, মুচকি হাসি, ত্রস্ত পলক, হলদে পাখীর ‘টিউ’। বর্ষা-ঘন রাত্রি নিবিড়। ‘দেশ’ রাগিনির সুমিষ্ট মীড়, গঙ্গা ফড়িং, বিহঙ্গ নীড় টিকিট কেনার ‘কিউ’। জোনাকীদের নেবায় জ্বলায় রূপসীদের ছলায় কলায় প্রতিদিনের থামায় চলায় ছোট গল্প আছে। পাহাড় কভু, কখনও মেঘ, কখনও থির, কখনও বেগ, কান্না কভু, কভু আবেগ বিদ্যুতেরি নাচে এই আছে এই নেই, ধরতে গেলে বদলে যে যায় একটি মুহূর্তেই! ছোটগল্প বহুরূপী শিল্পী-স্বয়ম্বরা তাদের কাছেই মাঝে মাঝে দিয়ে ফেলেন ধরা – গৃহস্ত হন বন্য আমরা তখন মহানন্দে করি ধন্য ধন্য - বনফুল
Banaful/Banaphool (Bengali: বনফুল) (literally meaning The Wild Flower in Bengali) is the pen name of the Bengali author, playwright and poet, Balai Chand Mukhopadhyay (Bengali: বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়).
He was born in Manihari village of Purnia district (now Katihar District), Bihar on 19 July 1899. He was the son of Satyacharan Mukhopadhyay, a practicing physician at the village and Mrinalini Devi. He was admitted to the Sahebgunge Railway school in the year 1914. Mukhopādhyāy started a hand-written magazine named "Bikash" where his writings of the first few days were published. When one of his poem was published in a well- known magazine named Malancha, he was warned by the then head-master of the school as he feared that Balāi Chānd's literary work may spoil his education. So, Balāi adopted his pen name Banaful (the wild flower in Bengali) to hide his work from his tutor. He passed Matriculation examination in 1918 and completed his study at Hazaribag College. Then he was admitted in the Medical College and Hospital, Kolkata. During this time, he was married to Lilavati, who was studying I.A. at Bethune College, Calcutta. But before completing his medical education in Calcutta, he was transferred to Patna Medical College and Hospital due to an issued Government order. Here he was emoployed as a physician after completion of his medical education. Then he worked as a physician at Azimgaunge Hospital. He practiced Pathology at Bhagalpur. In 1968, he sold his house at Bhagalpur and settled at Salt Lake, Calcutta. This great writer took his last breath on 9 February 1979.
এই বই প্রমাণ করে যে, বড় সবসময় ভালো নয়..... জটিল ধারণা এবং সামাজিক সমস্যা সহজভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে... বনফুল আমাদের দেখিয়েছেন ছোটগল্প সব জটিল সমস্যার সঠিক প্রকাশ করার একটি উপায়...
বনফুল, অর্থাৎ বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, বাংলা ছোটগল্পের জাদুকর, যিনি অল্প কথায় বিস্তৃত জীবনরূপ রচনা করতে জানতেন। তাঁর গল্পগুলো একাধারে নির্মেদ, সংবেদনশীল ও কৌতুকপ্রবণ—কখনো তীক্ষ্ণ, কখনো মমতাময়। জীবন আর শিল্পের নিখুঁত সমন্বয়ে, তাঁর ছোটগল্পসমূহ হয়ে উঠেছে বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সংরক্ষণশালা।
চিকিৎসক পেশা তাঁর লেখার গভীরে বাস্তবতা ও মনস্তত্ত্বের এক অনবদ্য সংমিশ্রণ এনেছে। তিনি একাধারে Empiricist এবং গল্পকার—যে অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিকে ভাষায় পরিণত করতে জানেন। তাঁর গল্পে মধ্যবিত্ত, প্রান্তিক, অবহেলিত চরিত্রেরা ঘরের কোণে আলো ফেলে। ‘সমাধান’, ‘অমলা’, ‘সুলেখার ক্রন্দন’, ‘মানুষের মন’—এসব গল্পে নারী জীবনের অভিজ্ঞান, কুসংস্কার, যৌতুক প্রথা, রূপ-সুন্দর্য মানসিকতা ও পারিবারিক জটিলতার নিখুঁত বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর গল্পে “Single Impression” কৌশল—একটি মুহূর্তেই একটি জীবনের সারাংশ—নান্দনিকভাবে চিত্রিত।
ভাষা তাঁর আরেক শক্তি। সংক্ষিপ্ত, হ্রস্ব বাক্য, চলিত ও সাধু ভাষার সচেতন সংমিশ্রণ, ইংরেজি শব্দ ও তির্যক ব্যঙ্গ—সব মিলিয়ে বনফুল হয়ে উঠেছেন ভাষার আলকেমিস্ট। তাঁর চরিত্রেরা হেঁটে আসে আমাদের ঘরে—পিতামাতা, কন্যা, সহোদর, গৃহবধূ, গরিব পাত্র বা অপ্রত্যাশিত প্রেমিকের চেহারায়।
তাঁর জীবনবোধ প্রগতিশীল—তাঁর সাহিত্য সংস্কারবিরোধী ও মানবিকতা-কেন্দ্রিক। অতএব বনফুলের গল্প কেবল সময়ের দলিল নয়, তারা এখনো বর্তমানের আয়না।
এই সাহিত্য আমাদের বলে—জীবন এক বিশাল নাটক, কিন্তু সব গল্পই উচ্চকিত নয়। কিছু গল্প নিঃশব্দ, অথচ অমোঘ। বনফুল সেই নিঃশব্দ গল্পের সম্রাট।
এই বই আমাদের সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। পড়ুন ও পড়ান।
বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পের পথিকৃৎ বললেই মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের কথা। তার পরবর্তী সময়ের বহু লেখক তার লেখনভঙ্গী অনুসরণ বা অনুকরণ করেন। কিন্তু কবিতায় সুধীন্দ্রনাথ যেমন ছিলেন আলাদা তেমনি ছোটগল্পে বনফুল। তার ছোটগল্পের বৈচিত্রে ও ব্যাপকতা ছড়িয়ে গিয়েছে বহু প্রজন্মের মননে।
বনফুলের ছোটগল্পের সাজি ফুলের বনের থেকে আনা এক চয়নিকা। এ-তোড়া রূপে-সুষমায়, ঘ্রাণে-লাবণ্য, এমনকি নিকোটিনের মাধুরতায়, উপাদেয়। পুষ্পের গুচ্ছ নয় পুস্পরাগের মনিমালাই যেন। স্পষ্ট আর স্বচ্ছ, সাদা আর হালকা-হলুদ, আর তাদের ভেতর দিয়ে গতিশীল ও সাবলীল বনফুলের শিল্পায়াস। তাঁর এক জীবনের বিক্ষার ফল অনেক ছোটগল্প; এক-একটি প্রখর লেখার ক্ষিপ্র টানে ধরা আছে অস্তিত্বের গভীর খসড়া। এক-একটি রচনা ফুলের মত সুকুমার, মণির মতন সমুৎকীর্ণ। উপক্রম হয় তো বাস্তব দুঃস্বপ্নে , তার উপসংহারে স্বপ্নের আয়োজন হয়। শুরু হতে পারে শ্লেষ-কৌতুকের সরসতায়, সারা হতে পারে সকরুণ সুকোমল। সব মিলিয়ে এই বই দুটি বনফুলের পুস্পসার, ক্রিস্টালের আধারে বন্দি, উদ্বায়ী এবং জ্বলছে।
এই বইয়ের সবগুলো গল্প পড়া না হলেও কয়েকটা গল্প পড়েছি। সবচে ভালো লেগেছে সমাধান গল্পটি। বুচি সবসময় আমার মনে রয়ে যাবে। এছাড়া পড়েছি অজান্তে, বিধাতা, আত্ম-পর, অমলা, বিদ্যাসাগর,অক্ষমের আত্ম-কথা, মানুষ, পাঠকের মৃত্যু- আরো ৫ থেকে ৬টা পড়া হয়েছে। প্রতিটি গল্পকে লেখক অনন্য করেছেন তার লেখার জাদুতে। আর গল্পের মাঝে তুলে এনেছেন সমাজের কিছু বাস্তব চিত্রকে।