Jump to ratings and reviews
Rate this book

দেশভাগ ##২

মানুষের ঘরবাড়ি

Rate this book
দেশভাগ নিয়ে ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে' সিরিজের চারটি পর্ব। প্রথম পর্ব ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে', দ্বিতীয় পর্ব ‘মানুষের ঘরবাড়ি’, তৃতীয় পর্ব ‘অলৌকিক জলযান’, চতুর্থ পর্ব ‘ঈশ্বরের বাগান'। কিংবদন্তী তুল্য উপন্যাস ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’ সম্পর্কে অগ্রজ সাহিত্যিক বিমল কর লিখেছেন, ‘অতীনের সেরা লেখা, এর মধ্যে অতীনের সত্তা ডুবে আছে, আমরা যাকে বলি ভর পাওয়া লেখা । ‘পুতুলনাচের ইতিকথার পর এতটা আর অভিভূত হইনি'—অশোক মিত্র। ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে এই সময়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস'—শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে এই সময়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস’–সমরেশ মজুমদার। সমকালের আর এক বিশিষ্ট সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ লিখেছিলেন—দুই বাংলার সাহিত্যিক ঐতিহ্যের ঐক্যে বিশ্বাসী বলে আমার জানাতে দ্বিধা নেই যে, অতীনের এই রচনা এযাবৎকালের নজিরের বাইরে। ভাবতে গর্ব অনুভব করছি যে, আমার সমকালে এই তাজা তেজস্বী খাঁটি লেখকের আবির্ভাব ঘটেছে। আজ হয়ত তিনি নিঃসঙ্গ যাত্রী। কিন্তু বিশ্বাস করি, একদা আমাদের বংশধরগণ তাঁর নিঃসঙ্গ যন্ত্ৰণা অনুভব করে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে তিরস্কার বর্ষণ করবে। ‘পথের পাঁচালীর' পর এই হচ্ছে দ্বিতীয় উপন্যাস যা বাংলা সাহিত্যের মূল সুরকে অনুসরণ করেছে।' পাঠিকা ঝর্ণা নাগ শিবপুর থেকে লিখেছিলেন—‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে' পড়ে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ঈশ্বরের সৃষ্ট সুন্দর পৃথিবী দেখে মুগ্ধ হয়ে যেমন তার সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে কৌতুক বিস্ময় জাগে এও তেমনি।' এমন অজস্র চিঠি এবং সাহিত্যঋণের কথা স্বীকার করা হয়েছে অন্য তিনটি পর্ব ‘মানুষের ঘরবাড়ি’, ‘অলৌকিক জলযান’ এবং ‘ঈশ্বরের বাগান' সম্পর্কেও। বিদগ্ধ এবং গুণী ব্যক্তিরা লিখেছেন, ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে' যদি মহৎ উপন্যাস, ‘অলৌকিক জলযান' তবে মহাকাব্য বিশেষ—আর ‘মানুষের ঘরবাড়ি সোনার কিশোর জীবনের অবিনাশী আখ্যান। শেষ পর্ব ‘ঈশ্বরের বাগান’–এতে আছে দেশভাগ জনিত উদ্বাস্তু পরিবারটির সংগ্রামী বিষয়, অভিনব চরিতমালা এবং পটভূমি সহ জীবনের রোমাঞ্চকর অভিযানের লৌকিক-অলৌকিক উপলব্ধি পুষ্টি খণ্ডিত বঙ্গের অখণ্ড বর্ণমালা।

427 pages, Hardcover

First published September 1, 2001

9 people are currently reading
215 people want to read

About the author

Atin Bandyopadhyay

80 books27 followers
Atin Bandyopadhyay (Bangla: অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়; anglicised spelling of surname: Banerjee) is a noted writer of Bengali literature. He was born in 1934 in Rainadi, Dhaka.

He spent his childhood in a joint family set-up in the then East Bengal of undivided India and studied in Sonar Gaon Panam School. After the Partition, migrated to India. He earned his undergraduate degree in commerce in 1956 and subsequently earned a teacher's training degree, all from the University of Calcutta. He took various jobs as a sailor, truck-cleaner, primary school teacher. Also became headmaster of a senior basic school. Settled permanently in Kolkata in 1963. Here also he took on various jobs like factory manager, publication advisor and lastly journalist.

The first story of the author was published in the magazine Abasar of Berhampore. He has penned many works since then, but his masterpiece is a three-part trilogy on the Partition: Nilkantha Pakhir Khonje (নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে), Aloukik Jalajan (অলৌকিক জলযান) and Ishwarer Bagan (ঈশ্বরের বাগান). Another famous writer of Bengal, Syed Mustafa Siraj has compared Nilkantha Pakhir Khonje (নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে) with Greek tragedies and also found it tuned with the core spirit with the Bangla literature like Bibhutibhushan Bandyopadhyay's Pather Panchali.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
26 (40%)
4 stars
19 (29%)
3 stars
17 (26%)
2 stars
3 (4%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 15 of 15 reviews
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
November 7, 2022
লেখক অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় এর দেশভাগ সিরিজের প্রথম বই " নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে "। বইটাতে দেশ বিভাগের আগের গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনযাত্রা, সমাজ ব্যবস্থা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, একক ও যৌথ পরিবারের সুখ দুঃখের এক অভূতপূর্ব অনুভূতির ছোঁয়া রেখে গেছে।

দেশভাগ সিরিজের দ্বিতীয় বই " মানুষের ঘরবাড়ি" প্রথম পর্বের চরিত্র গুলো আস্তে আস্তে এক অপরের থেকে ছিন্ন হয়ে গেছে এখানে এসে। যেখানে ছিন্ন মূল মানুষ গুলো আশ্রয়ের আশায় খুজে চলতেছে মানুষের ঘরবাড়ি। সোনা চরিত্রটি এখানে এসে বিলুর মাঝে ঘুমিয়ে গেছে। সব কিছু ছেড়ে আসা মানুষ গুলো পথে পথে ঘুরে, স্টেশনে রাত কাটিয়ে একটা সময় এসে নিজেদের আবিস্কার করে মানুষের ঘরবাড়ির মাঝে।
Profile Image for Omar Faruk.
263 reviews15 followers
May 19, 2023
খুব কম বই আছে, যা আমি খুব বেশি আগ্রহ নিয়ে পড়ি। তার মধ্যে এই সিরিজটা একটা। কি অসাধারণ লেখনী, পড়া শুরু করলে নিমিষেই যেন সেই দেশছাড়া পরিবারটির সাথে মিশে যাওয়া যায়। নিজেকে সেই ছোট্ট সোনা বাবুর সাথে মিলিয়ে ফেলা যায়, কি অনবদ্য এক উপন্যাস। কি যে মায়াময় এক কাহিনী।
Profile Image for Nishat Monsur.
191 reviews18 followers
February 25, 2021
তিন বছর ধরে একটা সিরিজের বই ক'টা ঢুঁড়ে বেড়ানোর কী থাকতে পারে জানি না। তবে, থাকে না এমন কিছু ব্যাপার? মানুষের মনে ঢুকে যায় কোনো কারণ ছাড়া? এই দেশভাগ সিরিজের বইগুলো অমন করে গেঁথে ছিলো। পিডিএফে অর্ধেক পড়ে দুই বছর আগে "বাকিটা হার্ডকপিতে পড়বো" বলে তুলে রাখা, এই একুশ সালে এসে বইটা কিনে তবে পড়ে শেষ করা- জানি না কী এমন আটকে রেখেছিলো।

দেশভাগ সিরিজ শুনে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলে মনে হওয়ায় এই সিরিজের প্রথম বইটি হাতে তুলেছিলাম, কারণ ঐটি পছন্দের জনরা। তবে কিনা, পড়তে গিয়ে বুঝলাম, এটা ঠিক ঐতিহাসিক উপন্যাস নয়। কারণ ইতিহাসের কচকচানি এখানে নেই বললেই চলে। আছে শুধু ঐ সময়কার নির্জলা গল্প- আর গল্প পড়তে আমার ভালোই লাগে। সিরিজ কেন বলে এই বইগুলোকে কে জানে, সম্ভবত সবগুলো গল্পই দেশভাগের সমসাময়িক বলে। তার মানে, সিকোয়েন্স না মেনেও বইগুলো পড়ে ফেলা চলে। আর পিরিয়ড ফিল্ম বলে যে ব্যাপারটা আছে সিনেমা জগতে, সেটার সমতুল কিছু সাহিত্যে আছে কিনা তা জানা নেই, থাকলে এই বইকে পিরিয়ড লিটারেচার বলা যেতে পারে।

গল্পটা সরল, খুব বেশি শাখাপ্রশাখা নেই। কিন্তু আশ্চর্য একটা সাবলীল ভঙ্গি আছে, চেনা পরিচয়ের আভাস দেয়, পড়তে আরাম লাগে তাই। তার উপর উত্তম পুরুষে লেখা- অনায়াসে গল্পে ঢুকে পড়া চলে। প্রচ্ছদ আর গল্প- দু'টিই মনকাড়া... মন কাড়া বইয়ের জন্য তাই পাঁচ তারা।
Profile Image for Masudur Tipu.
125 reviews2 followers
August 11, 2025
অতীন বাবুর দেশভাগ সিরিজের সেকেন্ড বই এই মানুষের ঘরবাড়ি! প্রথম বই নীলকন্ঠ পাখির খোজের সোনা এখানে বিলু!
দেশ ছেড়ে রাস্তায় পড়ে যায় এক পরিবার যারা এখানে সেখানে ঠোকর খায়। এমনকি নতুন দেশে নিজ আত্বীয় রাও ছুড়ে ফেলে, ঘেন্যার চোখে দেখে! একটা ছোট বাচ্চা কে মানু চাচা গ্যারেজে কাজে দেয়। বিলুর স্ট্রাগল - ঘরবাড়ি না থাকার কষ্ট পাঠক দের ভালোই পোড়াবে!
প্রথম বইয়ের মতো এই বইটা জটিল আর বহুমুখী নয়। বিলুর ছোট থেকে বড় হওয়ার আখ্যান।

গহীন অরন্যে যখন তারা নাম মাত্র মূল্যে একটা কোনো মতে ঘড় বানাতে পারে তখন কার ঘটনা পড়ার সময় মনে হয়েছে, বিভূতির আরণ্যক পড়ছি! বনের ভিতরের দুই ভাইয়ের বড় হয়ে উঠা, জংগলের ফল নিয়ে শহরে বিক্রি করা, বাবা পুরোহিত তাই তার সাথে সাথে দুই ছেলের খাওয়ার লোভে পিছনে অন্যের বাড়ি যাওয়া এগুলো অন্য রকম অনুভূতি অনুভব করাবে। পরিবারের কানেকশন পড়ার সময় পথের পাচাঁলীর কথা মনে পড়েছে শুধু!

বিলুর লজিং মাস্টারি জীবন ভালোই লেগেছে।
লক্ষী, মিমি এরাও জরিয়ে গেছে এখানেই।

এতো ভাল দিকের মাঝেও কিছু খারাপ দিক তো আছেই।
বইটা সিরিজের সেকেন্ড বই হলেও পরে লিখা হয়েছে এবং লম্বা সময় ধরে লিখেছেন তাই কিছু রিপিটেশন আছে আর কিছু প্রেমের কথা অতি মাত্রায় হয়ে গেছে যা অবশ্য কম এজের পাঠক দের বেশি ভাল লাগবে।

কিন্তু বইটি পড়তে বিরক্ত লাগবে না।
অনেকদিন সময় নিয়ে পড়েছি, মনে হয়েছে ১ মাস বনের গহীনে বিলুর বাড়িতেই আছি।

একটা মেজর জিনিস লিখা হয়নি, নবমী বুড়ি শেষে যেই ধামাকা দেন তা অনবদ্য।

লিখলে অনেক লিখা যাবে কিন্তু আজকে থামি।
ক্লাসিক লাভার দের জন্য এই মাস্টারপিস বইটি রেকোমেন্ডেড।

রেটিং ৪.৭/৫
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
June 30, 2019
দেশভাগ হয়ে গেলে নিজেদের ভিটে ছেড়ে দেশান্তরী হতে হয়েছিল বিলু আর তার পরিবারকে। বিশাল একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে গিয়েছিল নতুন দেশে গিয়ে। অতঃপর বাবা, মা, ভাইবোনের সাথে বিলুর নতুন যাত্রা।

বিলুরা ব্রাহ্মণ, বাবা নিজ দেশে জমিদারের সেরেস্তায় কাজ করতেন। কিন্তু নতুন দেশে এসে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। পৌরোহিত্য করাই স্বাভাবিক কিন্তু রিফিউজিদের যে ঢল নেমেছে তার মাঝে অনেকেই নিজেকে ব্রাহ্মণ বলে দাবি করে। সুতরাং নতুন দেশের মানুষেরা সহজে কাউকে বিশ্বাস করে না। তাই বিলুদের ভেসে যাওয়া চলে। কখনও কোন দূর সম্পর্কের আত্মিয়ের বাসায়, কখনও রেল স্টেশনে কেটে যায় তাদের কয়েকটা দিন। সে সময়ে বাবা তার চলে যায় কোথায়, কাউকে কিছু না বলে। সে সময় বিলুর ছোট ভাই পিলু এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। সবার জন্য খাবার চুরি করতেও দ্বিধা করে না।

এমন অবস্থায় অজ্ঞাতবাস থেকে ফিরে বিলুর বাবা কোথায় নিয়ে এলেন তাদের। এক বনের প্রান্তে এসে বললেন সে জমি কিনেছেন তিনি। ওখানেই হবে তাদের নতুন ঘরবাড়ি।

সে অসম্ভব সম্ভব হয়েছিল। কেবল বিলুদের জন্যই নয়। সাতচল্লিশ পরবর্তী অনেক মানুষের এই একই গতি হয়েছিল। তাদের প্রাথমিক গল্পটা অনেকটা এরকম। নিজ ভিটে, স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে হঠাৎ শেকড় ছাড়া হয়ে যাওয়া। তারপর থিতু হয়ে বসার চেষ্টা। সে চেষ্টায় সফল হয়েছিলেন বিলুর বাবা। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে হয়েছিল বিলুদের নতুন ঘরবাড়ি। এ পর্যন্ত গল্পটা কেবল বিলুর না, তার মতো অনেকেরই।

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দেশভাগ’ সিরিজের দ্বিতীয় বই ‘মানুষের ঘরবাড়ি’। ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’ উপন্যাসের সোনা, এখানে বিলু বা বিল্ব। দেশ ছেড়ে আসার পর কেমন করে তাদের দিন কেটেছিল, কেমন করে তাদের নতুন আবাস হলো সে গল্পই লেখক এখানে লিখেছেন। নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে যেমন বিমূর্ত ছিল, এ উপন্যাস তেমন নয়। এখানে নিরেট একটা গল্প আছে, যেখানে ধীরে ধীরে একটি পরিবার বিকশিত হয়। ছিন্নমূল থেকে নিজেদের বসত গড়ে।

সেই সঙ্গে আছে অবশ্যম্ভাবী প্রকৃতির বর্ণনা। তবে এ পড়বে সে বর্ণনা বিলুদের বাড়ি এবং তার পারিপার্শ্ব কেন্দ্রিক। বিলুর বাবার মাধ্যমে, কখনও পিলুর মাধ্যমে তা লেখায় এসেছে।

কিন্তু মূলত এ গল্প বিলুর। ইংরেজিতে ‘কামিং অফ এজ’ বলে একটা কথা আছে যার মানে, কৈশোর থেকে কারও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। এ উপন্যাসে বিলুর সেই সময়টার ���িত্র খুব সুন্দর করে ফুটে উঠেছে। ঘরবাড়ি তৈরি হওয়ার পর তার পরীক্ষা দেওয়া এবং পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ সত্ত্বেও যখন তাকে কাজে লাগানো হয় তখন বাড়ি ছেড়ে পালায় বিলু। পিতার স্বভাব বর্তেছে পুত্রে। কেবল বিলু একা না, পিলুও ঘরে থাকে না। চলে যায় এদিক সেদিক।

বিলুর বড় হয়ে ওঠা, নিজের সাথে নিজের সংঘাত, সেই সঙ্গে পরিবার পরিবেশের সাথে ঘটে যাওয়া দ্বিধা দ্বন্দ্ব এ উপন্যাসের উপজীব্য বিষয়। আর তা পরিণতি পায় যখন উপন্যাসে লক্ষ্মীর আগমন হয়। বিলুর প্রথম টিউশন পড়ে যে বাড়িতে তা মূলত কালী মন্দির। সে বাড়িতে আশ্রিতা মেয়ে লক্ষ্মী। বিধবা মেয়েটির সঙ্গে বিলুর একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে না চাইতেই। আর লক্ষ্মীর কারনেই বিলুর সঙ্গে পরিচয় ঘটে মিমির। যে মিমির আসল নাম মৃন্ময়ী। বিলুরই কলেজের সহপাঠিনী। এক পুরুষকে দুই নারী অধিকার করতে পারে না। লক্ষ্মীর বেলায় বিলুকে পাওয়া তার সম্ভব ছিল না।

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় এ উপন্যাসে দেখিয়েছেন ক্রমাগত দারিদ্যের মাঝে বেড়ে ওঠা একটি ছেলের মানসিক দ্বন্দ্ব। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের কাছ থেকে তার দূরে সরে যাওয়া। যাকে মনে মনে ভালোবাসে, তাকে কাছে টেনে নিতে না পারার দহন আর নিজে কিছু হয়ে ওঠার এক প্রচেষ্টা। কৈশোরের শুরু থেকে যৌবনের প্রারম্ভ পর্যন্ত তার সে টানাপড়েন তাকে ধীরে ধীরে একটা পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। মানুষের ঘরবাড়িতে বসে আমরাও সে যাত্রার সঙ্গী হই।

লেখক-পাঠক সর্বসম্মতিক্রমে এ উপন্যাস অতীনের সিরিজের দ্বিতীয় বই হিসেবে বিবেচিত হলেও এটি লেখা হয়েছে পড়ে। লেখকের মনে হয়েছিল একটা অংশ বাদ পড়ে গেছে। সেটি তিনি লিখেছিলেন। ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’-র মতো এ উপন্যাস বহুমুখী ও জটিল নয়। এ উপন্যাসের গল্পটা সরল। কিন্তু মানসিক জতিলতার সাথে সামাজিক অবস্থা মিলে জীবনটা সেখানে কিছুটা জটিল।

সম্ভবত লেখক এ উপন্যাসের নানা অংশ নানা সময়ে অনেকদিন ধরে লিখেছেন। তাই পুনরুক্তি আছে অনেক জায়গায়। সিরিজের অংশ হলেও এ বই স্বতন্ত্র উপন্যাস। লেখনী সহজ সরল। তবে কৈশোরের মানসিক দ্বন্দ্ব এতোটাই গোলমেলে যে মাঝে মাঝে বিলুকে ধরে মারতে মনে চাইতে পারে পাঠকের।

উপন্যাসের এক অসামান্য চরিত্র পিলু। বিলুর এ ছোট ভাইটির কোন ভালো নাম লেখক আমাদের বলেননি। কিন্তু পিলু নামেই সে প্রিয় হয়ে উঠবে সকলের। বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো ছেলেটির বড় মায়া। তাই সে কখনও একটা কুকুর ধরে আনে, কখনও হনুমানের বাচ্চা। আবার পরিত্যাক্ত জঙ্গলেই সে খুঁজে পায় এক বুরির ঠিকানা। নবমী নামে সে বুড়ি বুঝি হয়ে ওঠে ইন্দির ঠাকরুন। বিলুর মা হয়ে ওঠেন সর্বজয়া আর বিলুর বাবা হরিহর। অন্তত বিলুর বাবা চরিত্রটি কিছুটা হরিহরের মতোই। অদৃষ্টে-দেবতায় বিশ্বাসী মানুষটি কিছুটা বাউন্ডুলে স্বভাবের। অন্তত স্ত্রীর মতো তিনি বিষয়ী নন। অথচ কি মমতা দিয়েই না তৈরি করেছেন মানুষের ঘরবাড়ি। যেখানে বিলুর মতো অন্তর্মুখী ছেলের টানে ছুটে আসে রায় বাহাদুরের নাতনী মিমি। অথচ বিলু পালিয়ে বেড়ায়। পিলু খুঁজে বেড়ায় তার দাদাকে।

উত্তম পুরুষে বর্ণিত তিন খণ্ডের এ উপন্যাসের মূল চরিত্র বিলু হলেও পুরোটা জুড়ে পিলু বুঝি তার ছায়া হয়ে থাকে। আর মাঝে মাঝে সে ডেকে ওঠে, ‘দাদারে...’। সে ডাক, যে কোন পাঠকের কলজে কামড়ে ধরবে।
Profile Image for Anjum Haz.
285 reviews69 followers
February 14, 2022
নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে সিরিজ লেখার পর অতীন বাবুর মনে হলো, জীবনের আসল পর্বটা বাদ পড়ে গেছে সিরিজ থেকে। সেই পর্বটা পরবর্তীতে লিখে সিরিজের মাঝে আনা হয়। প্রথম পর্বের চরিত্ররা এ পর্বে অনুপস্থিত। সোনা এ পর্বে ঘুমিয়ে আছে বিলুর মধ্যে।

নামটাতেই অভিমান জড়িয়ে আছে। মানুষের ঘরবাড়ি থাকে। আমাদের তাও নেই। দেশভাগের পর ছিন্নমূল এক পরিবারের সংগ্রাম শুরু হয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে যাত্রা। বিনা টিকিটে। আজ এখানে, তো কাল সেখানে। এক সময় তারা দুবেলা পেটপুরে খেয়েছে, গোলাভরা ধান,‌ গাই-গরু কিছুরই অভাব ছিল না। এদেশে এসে তাদের শেষ সম্বলটুকু ক্ষুধার নিমিত্তে আহারে পরিণত করতে হয়েছে। আর বাকি সম্বল‌ এটুকুই—তারা সৎ ব্রাহ্মণ।

পরিবারের বড় ছেলে বিলু। উপন্যাসের একটি বড় খন্ড বিলুর ভাস্যে বর্ণিত। বয়সন্ধিকালে আত্মসম্মানবোধ সবার মধ্যে বেশি কাজ করে। পরিবারের আর্থিক অবনতি, জলে পড়ে যাওয়া, তারা যে আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রিত, এদেশের মানুষের কাছে রিফুজি, বারো-তের বছরের বিলুর মনে তা ভীষণ পীড়া দেয়।

ঘুরেফিরে একসময় ঘরবাড়ি মেলে তাদের। দারুণ গর্বের বিষয় ছিন্নমূল পরিবারটির জন্য। থাকা খাওয়া হলে তখন বড় ছেলেটির পড়াশোনায় মন দিতে হয়। বিলুর আলাদা একটা জগত গড়ে ওঠে পরিবারের বাইরে।

বাবা সরল মানুষ- কার বাড়িতে ঠাকুর পূজা, কোথায় বামুন ভোজের জোগাড় চাই- এসব করে তার দিন যায়। মা বড্ড সাংসারিক- বাগানের বাড়তি সবজিটুকু, গরুর দুধ, হাঁস-মুরগির ডিম বেঁচে যা সামান্য আয়, তা থেকে সঞ্চয়। একসময় সবই হয়ে যায়- ঘরবাড়ি হয়, দুটো তক্তপোশ, বাইরের ঘরে একটা জলচৌকি। বড় পুত্র মাধ্যমিকে দশটা বিষয়ের নটাতে পাশ। জীবনে কে কবে সব বিষয়ে পাশ করে। নিম্নবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত হওয়ার আশাবাদী যাত্রা।

শহর ঘুরে আসে বিলু। পরিবারের আচার-আচরণে যথেষ্ট সচেতন সে। বিব্রত হয় ভাইয়ের খাই খাই স্বভাবে, বাবা-মায়ের সীমাহীন পুত্রগর্বে। কৈশোর তারুণ্যের মাঝামাঝি সময়টাই বুঝি এমন। বড্ড ছোট মনে হয় তখন পরিবারের গণ্ডিটা। যে পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা তার জন্যই বিব্রত হওয়া। ভিতরে তাদের জন্য যে গভীর টান, তা প্রকাশ করতেও কুন্ঠা।
ছিন্নমূল পিতার সন্তান—যেকোনভাবে পারি তার থেকে পরিত্রাণ চাইছি।

এভাবে বিলু বড় হয়। জীবনের একটা অচেনা পর্ব তার সামনে প্রকাশ হতে থাকে। বিলুর মাথায় ঘোরে ছোড়দি, লক্ষ্মী, পরী। ভালোই তো বেড়ে উঠছিল বিলু, তখনই জীবনের এই অদম্য পর্বে তার প্রবেশ। জানালায় তাকালে সে দেখে ছোড়দির নীল খাম, সাইকেলের ক্যারিয়ারে তাকে উঠিয়ে ছোড়দির দুরন্তপনা। অন্যমনস্ক হয়ে যায় বিলু জীবনের এই গোপন রহস্য অনুধাবন করতে।

মাথার ভীষণ যন্ত্রণা কবিতায় রূপ নিতে থাকে। জীবনানন্দের সুর সেই কবিতায়।

ভূমিকায় লেখক লিখেছেন খুব চাপ সৃষ্টি না হলে তাঁর লেখা হয় না। উপন্যাসের বিলু কি লেখক নিজেই— বন্ধুদের চাপে যে কবিতা লেখে।

সিরিজের প্রথম পর্বটা সাত-আট বছর আগে পড়া। কিছুদিন আগে দ্বিতীয়বার পড়ি। অসম্ভব ভালো লাগার বই নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে। সেই সুর এসে পৌঁছেছে মানুষের ঘরবাড়িতে। বাবার হাতে বেড়ে ওঠে বাড়ির আমগাছটা, জবা ফুলটা, মা যত্ন করে রান্না করে ফুলকপির দোলমা, পাট পাতার বড়া, গিমা শাক ভাজি, বেগুন ভাজা, চালের পায়েস—সবকিছু অতীন বাবু মায়াবী এক সুরে গেঁথেছেন। আবার সতের-আঠার বছরের এক তরুণ, তার আত্মসচেতনতা, টানাপোড়েন, পরিবারের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া—বিচ্ছেদের সুরের মতো শোনাচ্ছিল। একটু একঘেয়ে লেগেছিল শেষের একটা অধ্যায়, কিন্তু এই রাগ যে ক্লাসিক্যাল—সে মত তাতে এতোটুকু পাল্টায়নি।

অপেক্ষায় থাকলাম, তৃতীয় বই অলৌকিক জলযান এ চড়ে বসার।

29 reviews8 followers
February 20, 2022
বইঃ মানুষের ঘরবাড়ি
লেখকঃ অ���ীন বন্দ্যোপাধ্যায়

মানুষের ঘরবাড়ি উপন্যাসটি অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা দেশভাগ পরবর্তী এক উদ্বাস্তু পরিবারের দেশান্তরী জীবনযাপননের উপাখ্যান। মানুষের ঘরবাড়ি উপন্যাসটি আপনি নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে সিরিজের দ্বিতীয় খন্ড হিসেবেও পড়তে পারেন। অথবা একটি স্বতন্ত্র উপন্যাস হিসেবেও পড়তে পারেন। কারণ নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে সিরিজের দ্বিতীয় খন্ড হিসেবে বইটি লিখিত হলেও লেখক এটি লিখেছেন সিরিজের পরবর্তী দুটি খন্ড রচনার পরে। লেখকের মনে হয়েছিল কোথাও একটা ফাঁক রয়ে গেছে দেশভাগ সিরিজের। তারপর তিনি রচনা করেন মানুষের ঘরবাড়ি উপন্যাসটি।

লেখক তার জীবনের পরোক্ষ বা প্রতক্ষ্য অভিজ্ঞতা থেকেই এই সিরিজ রচনা করেছিলেন। তাই তিনি তার বাবার চরিত্রর আদলে এই উপন্যাসে একটি বাবা চরিত্র সৃষ্টি করেন। তার এক টুকরো জমি অবলম্বন করে গড়ে উঠে অতি স্বাদের ঘরবাড়ি, মানুষের ঘরবাড়ি। এখানে সোনা হয়ে যায় বিলু অথবা বিল্ব। তার কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ, মানসিক দোলাচলের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে প্রধান উপজীব্য করে লেখা উপন্যাসটি।

গল্পে বিলুদের উদ্বাস্তু পরিবার কখনো অনাহারে কখনো অর্ধাহারে এখানে ওখানে, রেল স্টেশনে দিন কাটায়। দেশভাগের পূর্বে তার বাবা ছিলেন এক জমিদার বাড়ির সেরেস্তার। দেশভাগের দেশান্তরিত হয়ে ব্রাহ্মণ পরিবারটির উদ্বাস্তু পরিবারে পরিণত হয়। পৌরহিত্য যার পেশা ছিল, সংকটময় সময়ে এসে এদেশে এরও যেনো কোন আশা দেখতে পান না তিনি। সাতচল্লিশ পরবর্তী অগণিত রিফিউজিদের আগমন পরিস্থিতি বেশ জটিল করে তুলেছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে চায় না। বিলুর বাবা তাদের ছোট ছোট ভাইবোনদের একা মায়ের কাছে রেখে কোথায় যেনো উধাও হয়ে যান। একা একা তার মা অতিকষ্টে ছেলেমেয়ে নিয়ে দিন কাটান, আর অপেক্ষা করেন। তাদের বাবা হয়তো সপ্তাহ বা পক্ষকাল পরে কিছু খাবার কিছু টাকা হাতে নিয়ে ফেরেন। বাবা বাড়ি না থাকলে বিলুর ছোটভাই পিলুর যেনো দায়িত্ব বেড়ে যায়। সে এটা ওটা খাবারের জন্য সংগ্রহ করে মাকে সাহায্য করার চেষ্টা করে।

এভাবেই দিনকাল কাটছিল তাদের। একদিন বাবা জঙ্গলের পাশে এক টুকরো জমি আবিষ্কার করেন। জনহীন সেই বন প্রান্তেই গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন বসতি। রিফিউজিদের উদ্বাস্তু জীবনের এক জীবন্ত গল্প।

অপরিসীম দারিদ্রের মাঝে বেড়ে উঠে বিলু কৈশোর থেকে প্রথম যৌবনে পদার্পন করে এই উপন্যাসে। বিলুদের ঘরবাড়ির গতি হওয়ার পর অতিকষ্টে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। বিলু চায় পড়তে, পড়াশোনা করে বড় হয়ে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে। অন্যদিকে বাবা চান তার বড় পুত্রটি যেনো সংসারের হাল ধরে তাকে কিছুটা সাহায্য করে। তিনি কখনো বিলুকে পৌরোহিত্যে, কখনো কোন দোকানে বসাতে জোর করতেন। এতে করে বিলু বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। বাবা বুঝতে পারেন একে দিয়ে এসব হবে না। তিনি মেনে নেন। টিউশন করে বিলু পড়াশোনা চালানোর চেষ্টা করে।

বিলুর মিষ্টি কিশোর মনে মিষ্টি স্বপ্ন আর বিপরীতমুখী কঠিন জীবনযুদ্ধে বিলুর মধ্যে এক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার এক অন্তর্গত দ্বন্দ্ব তাকে দহন করতে থাকে। অন্যদিকে তার ছোট ভাইবোন পিলু মায়াও যেনো বুঝতে পারে তাদের দাদাটির জীবনে অনেক বড় হতে হবে। পিলুর নিজের পড়াশোনায় আগ্রহ না থাকলেও দাদার পড়াশোনা বন্ধের কথা উঠলে তার মন খারাপ হয়। বাজারে তরকারি, ফল এটা সেটা বিক্রি করতে নিয়ে যেতে হলে পিলুই ব্যাগটা বয়ে নেয়। সে তার দাদাটির হাতে ওসবের ব্যাগ দিতে চায় না। এতে যেনো তার দাদার অসম্মান হয়।

বিলুর কৈশোর আর যৌবনের সন্ধিক্ষণে দুই নারীর আগমন হয় তার জীবনে। দুই নারীই তাঁকে অধিকার করতে চায়। একজন বিলু যে বাড়িতে টিউশন করায় সেই কালিবাড়ির আশ্রিতা লক্ষ্মী। লক্ষ্মী অল্পবয়সের বিধবা মেয়ে। বিলুল প্রতি তার মায়া পরে যায়। বিলকুল চোখ দেখলেই বুঝতে পারে তার ভেতরটা। বিলুরও খুব আপন মনে হয় এই বিধবা আশ্রিতা মেয়েটাকে। দুজনেই বলতে গেলে কালীবাড়ির আশ্রিত। অন্যদিকে শহরের বিত্তশালী রায় বাহাদুরের নাতনি মিমি। বিলু আর সে একই কলেজে পড়ে। কিন্তু পরিচয় হয় কালীবাড়িতেই দুজনের। লক্ষ্মীর পক্ষে বিলুকে অধিকার করা কঠিন। অন্যদিকে মিমির পক্ষে বিলুকে অধিকার করা তার চেয়েও কঠিন। দুজনের সামাজিক অবস্থান, বিলুর নিজের অবস্থান নিয়ে মানসিক দ্বন্দ্ব বিষয়টাকে বেশ জটিল করে তুলে। মিমি চায় বিলু কবিতা লেখে। সে বিলুর মধ্যে দেখতে পায় একজন কবিকে। সেখানে সে বাধা পরে রায়।

কৈশোরের এই সময়টা সবার জীবনেই কখনো জটিল, কখনো খাপছাড়া, কখনো খুব স্নিগ্ধ মনে হয়। কৈশোর নিয়ে আমার পড়া সেরা উপন্যাস এটি।

বিলু চরিত্রের প্রখরতা চাপিয়ে পিলু সহজ-সরল চিরিত্রটা পাঠককে বেশি কাছে টানে। দারিদ্র্য যেনো তাকে বয়সের আগেই বড় করে দেয়। দাদার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসার প্রকাশ, প্রকৃতি, জীবন জন্তুর জন্য ভালোবাসা। মানুষের জন্যেও পিলুর ভালোবাসা কম নয়। বনে একা বাস করে নবমী বুড়ি, তাকে লোকে ডাইনী বলে জানে। যেদিকে দিনের বেলাতেই ভয়ে কেউ যায় না। সেই নবমী বুড়িকেও পিলু কতো ভালোবাসে। পিলুর 'দাদারে!' বলে মিষ্টি ডাকটা পড়তে পড়তে পাঠকের কানে বাজবে।

এই উপন্যাসে বাবা চরিত্রটির মহত্ত্ব পাঠককে মুগ্ধ করবে। অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী বাবা অপরিসীম দারিদ্রকে কতো আপন করে নিতে পেরেছেন। জীবনকে, সত্যকে তিনি নিয়েছেন সহজে। কোন কিছুই যেনো তাকে স্পর্শ করে না। জনহীন জঙ্গলে এসে বসত গড়েছেন কতো ভালোবাসার সাথে। এ যেনো তার আরেক সাধনার কবিতা রচনা। গল্পে বাবা তার স্ত্রী সন্তানদের কখনো স্বান্তনা, কখনো উপদেশ, কখনো অনুপ্রেরণা দিতে দিতে পাঠকের কাছেও কখন যে বড় এক অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবেন পাঠক টেরও পাবেন না। সংসারে একদিকে ছন্নছাড়া বাবা থাখলে মনে হয় মাকে একটু বেশিই বিষয়ি বা কঠিন হতে হয় সন্তানদের জন্যই। বিলুর মাকেও আমরা দেখতে পাই সে রূপে।

উদ্বাস্তু জীবনযাপন, মিষ্টি স্নিগ্ধ কৈশোর, একদল তরুণের কবিতা লেখার উদ্যম, প্রেমের টানাপোড়েন সবমিলিয়ে বইটা অনন্য।

৪২৭ পৃষ্ঠার বৃহৎ কলেবরের এই উপন্যাসে কিছু কথা একাধিকবার এসেছে। টানা পড়তে গেলে পাঠকের কিছুটা বিরক্তির উদ্রেক হতে পারে। তবে আমি পড়েছি বেশ খানিকটা সময় নিয়ে। এই উপন্যাস শুরু করার মাঝে আমি আরো চার পাঁচটা বই শেষ করেছি। অল্প অল্প করে এই বই পড়েছি। মাঝখানে একবার আগ্রহ হারিয়ে ইচ্ছে করেছিলো নাহ পড়বো না। এটা রেখে দেই। তারপর গ্যাপ দিয়ে দিয়ে অল্প অল্প করে পড়লাম। এখন মনে হচ্ছে রেখে দিলে কি অসাধারণ কিছুই না আমি মিস করে যেতাম। কোথায় পেতাম কৈশোর নিয়ে এমন লেখা! পুরো একটা কৈশোর আবার পারি দিয়ে এসেছি বিলু, মুকুন্দ, মিমির সাথে। বই পড়ার স্বার্থকতা আমার কাছে এখানেই। আমি হাজারটা জীবন যাপন করি পড়ার মাধ্যমে।

আর এটা টেট্রলজির অংশ কিনা সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে লেখক নিজেই সোনা সিরিজকে কোথাও ট্রিলজি, কোথাও টেট্ট্রলজি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে উপন্যাসে সোনার জাহাজে চাকরি নেয়া নিয়ে উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটে। এখানে সোনার পরিবর্তে বিলু। আর এখানে বিলুদের উদ্বাস্তু পরিবারে ট্রেন স্টেশনে রাত কাটানো দিয়ে গল্প শুরু। কিন্তু কাহিনী ওই একই দেশত্যাগ, আর দেশত্যাগ পরবর্তী জীবন। আপনি চাইলে যেকোনোভাবে নিতে পারেন।
3 reviews7 followers
April 29, 2019
একটি উদ্বাস্তু পরিবার, ক্রমশ নিজেদের শিকড় গাড়ছে নতুন মাটিতে, একটু একটু করে সুখের মুখ দেখছে। এই ফিলগুড ব্যাপারটুকু শুধু ভালো। গল্পের প্রোটাগনিষ্ট বিলু অসহ্য। এক জেদি, অহংকারী, নিজের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা স্বার্থপর যুবক চরিত্র অতিবাস্তবতার খাতিরে মেনে নেওয়া যায়। কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না একের পর এক চরিত্রের তাকে নিয়ে উদবাহু হওয়ার প্রবণতা। অপমানিত তবু লক্ষী তার ঘর গুছিয়ে দেবে, তাড়িয়ে দিলেও ছোটভাই পিলু দাদার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে, বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতা না থাকলেও মুকুলের জামাইবাবু চাকরি খুঁজে দেবেন, বাবাঠাকুর সস্নেহ কৃপা বর্ষণ করবেন।। ক্রমাগত ���ুধু উপেক্ষা আর অপমান পেয়ে অভ্যস্ত দয়িতা মিমির গায়ে বিলু হাত ওঠালেও মিমি একাই শিহরিত হবে, " এ যে আমার কতবড় অধিকার...."। মানে , সিরিয়াসলি? এত প্রেম থাকে কোথায়!! এই প্লট নিয়েও এত মোটা বই ছাপা হয়, গুচ্ছের দাম দিয়ে আমার মত কেউ কেনে, রাত জেগে পড়ে, রিভিউ লেখে ! আশ্চর্য!

শুধুমাত্র পিলু আর লুঠেরার অতিবৃদ্ধা বৌ নবমীর সাবপ্লট টুকুর জন্য দু পয়েন্ট দিলাম।
38 reviews12 followers
April 1, 2018
কোন এক সাপ্তাহিক ছুটিতে কর্মক্ষেত্র থেকে ঢাকা বাসায় যাইনি। মশগুল ছিলাম অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের "মানুষের ঘরবাড়ি" নিয়ে। 'নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে" বইটি সেলফে দেখলেই এর পরবর্তী খন্ডগুলো পড়ার জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করতো। কেনা হচ্ছিল না। পাঠাগার নেট থেকে পেয়ে গেছি "মানুষের ঘরবাড়ি" । বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড়" অডিওর দুটো পর্ব শুনে এ বইটির পাতা নাড়তে গিয়ে পড়তে শুরু করে আর থামতে পারিনি। ১৯৪৭ সালে ভারতে যাওয়া রিফুজিদের যাপিত জীবনের কাহিনী, দারিদ্রকে মাধুর্য দেয়ার মত বাবা চরিত্রের মহত্ত্ব, বিলু চরিত্রের প্রখরতা , পিলু চরিত্রের দুরন্তনার মাঝে মানবিক গুণ ও বুদ্ধিমত্তার মিশ্রণ, মিমি চরিত্রর বৈশিষ্ট্য --- এসব টেনে নিয়েছে ৪২৭ পৃষ্ঠার বইয়ের শেষ পর্যন্ত।
Profile Image for Tanvir Rahman.
7 reviews
October 5, 2022
দেশভাগে ঘরছাড়া মানুষ বনে জঙ্গলে এসে বসত গেড়েছে। এ থেকেই শুরু মানুষের ঘরবাড়ি উপন্যাসটির, এরপর সেখান থেকে দেখা মেলে প্রকৃতির অপূর্ব বর্ণনা, বিলু-পিলুদের ছোট থেকে বড়ো হয়ে ওঠা, চঞ্চল বাবার ঘরবাড়িতে স্থিতু হওয়া।
শহরের-বয়সে ছোট ছোড়দির প্রতি বিলুর এক রকম অনুভূতি জন্মেছিল, বিলু জানতো না এই অনুভূতির নাম ভালোবাসা। দীর্ঘদিন শহুরে ছোড়দিকে সে ভুলতে পারেনি, এমনকি দ্বারের কাছে সাক্ষাৎ লক্ষ্মী ছোড়দির অনুভূতিকে কমায়নি, বড়োং বাড়িয়েছে।
উপন্যাসে আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র, লক্ষ্মী। তার পরিচয়টা শুরু হয় এভাবে-
“মন্দিরের দরজা খোলার শব্দ পাওয়া গেল। খুলে দিচ্ছে আমারই বয়সী একটি মেয়ে। ডুরে শাড়ি পরনে, মাথায় ঘোমটা। ………অমা! আমাদের নতুন মাস্টার দাঁড়িয়ে আছেন গো। আসেন আসেন, আমার সঙ্গে আসেন।“ লক্ষ্মীর ভাবটা এমন, যেন বিলু তার কতদিনের পরিচিত! এই যে এক দেখায় সমস্ত বিভেদ ভেঙে আপন করে নেয়া, ক’জন পারে?
দেবালয়ের আশ্রিতা লক্ষ্মী-বয়সে বিলুর সমান হলে কি হবে, পরপর দু’বার বৈধব্যকে বরণ করতে হয়েছে তার। নিজের মঙ্গল অমঙ্গল নিয়ে তার ভাবনা নেই, কিন্তু পাছে বিলুর অমঙ্গল হয়ে যায়, এ নিয়ে তার দুশ্চিন্তা বেশি।
“লক্ষ্মী লন্ঠন হাতে চলে এসেছে। হাতে শীতের চাদর। শুধু বলল, বাড়ি চল মাস্টার। ঠান্ডা লাগবে। এটা গায়ে দাও। ঠান্ডা লাগিয়ে জ্বর বাধালে কে দেখবে।
-কেন তুমি।
-আমি তোমার কে? কেউ না। আমার দায় পড়েছে দেখার।“

নটু পটুকে পড়ানোর মাঝখানে বিলুকে কলেজে যেতে হয়। ঘরদোর পরিষ্কার, কাপড় কেঁচে দেয়া, স্নানের জলটুকু তুলে দেয়া- সবটা লক্ষ্মীই করে। আসলে বাড়ির সব কাজ লক্ষ্মীই করে, এতসবের মাঝে মাস্টারের যাতে অযত্ন না হয় সে খেয়ালও লক্ষ্মীর রাখা চাই।

দেবালয় ছেড়ে বিলুর বাড়ি দেখার সাধ লক্ষ্মীর।
-আমাদের বুঝি পছন্দ না ঠাকুর।
-এ কথা কেন?
-এই যে ছুটি হলেই বাড়ি যেতে ইচ্ছে হয়। আমাকে নিয়ে যাবে?
বিলুর ভয়, একটা সোমত্ত মেয়েকে একা বনজঙ্গলের ভেতর দিয়ে নিয়ে যেতে চাওয়া কি ভালো দেখাবে?
-চল না একদিন, বৌদি, দিদি, নটু, প্টু, তুমি, সবাই। সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে আসি।
-সবার সাথে কেন যাবো ঠাকুর? যেতে হয় তোমার সঙ্গে যাবো। যা কপালে থাকে হবে।
লক্ষ্মীর চোপাকে সবাই ভয় করে। লক্ষ্মী যখন বলেছে, যাবে, সে যাবেই, বৌদি থেকে পারমিশনটা বাগিয়ে আনে।
এমন সাক্ষাৎ রমনি পাশে পেয়েও শহুরে ছোড়দির রেশ বিলুর কাটে না। একদিন আরেক গড়নের শহুরে ছোড়দির সাথে তার পরিচয় হয়। মৃন্ময়ী। বাড়ির লোকজন তারে ডাকে মিমি। লক্ষ্মীর সাথে তার খুব ভাব। রায়চৌধুরী পরিবারের দেবালয় দর্শন-উপন্যাসের একটা টার্নিং পয়েন্ট।
মিমি জানিয়ে রাখে, অষ্টমীর রাতে মাস্টারের সাথে তার রেললাইনে হাঁটা চাই। লক্ষ্মী বোঝে, তার ঠাকুরের মাঝে একটা কিছুর পরিবর্তন এসেছে। লক্ষ্মী আবদার করে বিলুর কাছে,
-অষ্টমীর দিন আমাকে ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাবে? আমি নটু পটু তোমার সঙ্গে ঠাকুর দেখব।
-মাস্টার যাবে ত?
……
-বুঝতে পারছি তোমার ইচ্ছে নেই মাস্টার।

অষ্টমীর দিনে বিলু মন্দির প্রান্তরে ঢুকে দেখে, লক্ষ্মী বৌদির পাশে বসে গান শুনছে। যেন গান শুনছে না, মন্দিরে হত্যা দিয়েছে। চোখ দেখলেও বোঝা যায় ইহজগতে নেই কিংবা কত মগ্ন সে। লক্ষ্মীর আবদার তুচ্ছ করে বিলু মিমির স্বার্থোদ্ধারকেই সায় দিয়েছিল বটে, তবে তা যে কেবল রেললাইনে হাটা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল না, এ বলাই বাহুল্য। লক্ষ্মী কি নিজ চোখে দেখেছিলো সব?
“সহসা মিমি উঠে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখছ কে গেল!
-কে!
-দেখ না। ঐ যে জঙ্গলের মধ্যে নেমে গেল। “

লক্ষ্মী চায় নি বিলু কিংবা মৃনন্মীর পথের কাঁটা হয়ে থাকতে। আজ এজন্যই উপন্যাসের প্রথম খন্ডের সমাপ্তি হয় লক্ষ্মীর আত্মহননের মধ্য দিয়ে। কিন্তু যাদের জন্য লক্ষ্মী আত্মোৎসর্গ করলো, সেই বিলু আর মৃন্ময়ী কি কোনদিন এক হতে পেরেছিল?
“পটু ডাকছে, স্যার শিগগির আসুন। লক্ষ্মীদি বিষ খেয়েছে। ……… লক্ষ্মীর দরজা ভাঙা। ভিতরে লক্ষ্মী পুজোর শাড়ি পড়ে শুয়ে আছে। পায়ে আলতা। মাথায় সিঁদুর। চোখ দুটো আধবোজা। ঠোঁটের কোণে সেই বিষণ্ণ হাসিটুকু… “

উপন্যাসের দ্বিতীয় খন্ডে গিয়ে মনে হয়েছে, বিভিন্ন বিষয়ের পুনরাবৃত্তি। লেখক নিজেও স্বীকার করেছেন, উপন্যাসটি তিনি দীর্ঘ সময় ধরে লিখেছেন আলসেমির কারণে। আর এজন্য হয়তো একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। উপন্যাসের প্রথম খন্ড ছেড়ে যেমন ওঠা যায় না, দ্বিতীয় খন্ডে এসে যেন আর আগাতে ইচ্ছা করে না। প্রথম খন্ডে বিলুকে আমরা দেখি পড়াশোনায় আগ্রহী আর সম্ভাবনাময়, অথচ দ্বিতীয় খন্ডে বিলুকে কেমন যেন বয়সের তুলনায় অপরিণত লাগে। মিমির নাম দিয়েছে সে পরি, অথচ সে চায় না পরি কখনও তার বাড়িতে আসুক। পরির প্রশংসা শুনতে তার ভালো লাগে না, আবার কেউ পরির দূর্নাম করলেও তার সহ্য হয় না। পরি ছাত্র ইউনিয়ন করে, থিয়েটারে অভিনয় করে, এসব বিলুর ভালো লাগে না। শেষতক পরির গালে চড় মেরে কালশিটে করে দেয়, আবার নিজের কাজে লজ্জিত হয়ে বাড়িছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়!

বিলুর ছোট ভাই পিলুকে নিয়ে বলতে হলে বলতে হয়, দুরন্তপনায় জুরি মেলা ভার এই পিলুই শেষ পর্যন্ত বাড়িঘর এবং সংসারের সবচেয়ে দায়িত্ববান ব্যক্তিত্ব। পিলুকে নিয়ে আজকে বলতে ইচ্ছে করছে না, শুধু এটুকু বলতে যাই, বিলু অনেক ভাগ্য করে এসেছিলো বলেই পিলুর মতো ভাই পেয়েছে। পিলুর মুখের “…দাদারে” ডাকটুকু পুরো উপন্যাসের সবচেয়ে আবেগঘন আহবান।



(পুনশ্চঃ লিখবো না লিখবো না করেও শেষতক ভাবলাম, হৃদয়ের হাহাকারটুকু খাতার পাতায় লিখা থাক। ভুলত্রুটি মার্জনীয়)
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Asif Khan Ullash.
143 reviews8 followers
November 13, 2023
উপন্যাসটা ভালো। বেশ ভালো। এমনিতে পড়লে এটাকে খারাপ লাগার খুব বেশি সুযোগ নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে লেখক / প্রকাশক এখানে উপন্যাসটিকে পড়তে বলছেন দেশভাগ সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব হিসেবে, মানে সময়ের হিসেবে এটির ঘটনাবস্থান “নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে” বইটির পরে। ফলে, পাঠক সোনা ও তার পরিবারের কাহিনীর কন্টিনিউয়েশন সেই একই রকম ঘোরলাগা গদ্যের মধ্যে খুঁজে পেতে চায় এবং ধরা খায়। এই বইয়ের ভাষা “নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে” বইয়ের থেকে অনেক আলাদা, কাহিনীও সেইরকম বহুমাত্রিক নয়। নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে যেখানে ছিল একটি সময়, জায়গাকে ধরে রাখার অনবদ্য উপাখ্যান; “মানুষের ঘরবাড়ি” সেখানে একটি চরিত্রের বেড়ে ওঠার, একটি পরিবারের পায়ের তলায় শক্ত মাটি খুঁজে পাবার গল্প।

নীলকন্ঠ পাখির খোঁজের আবেশ থেকে বের হয়ে এসে বইটি পড়লে পাঠক কোনভাবেই আশাহত হবে না। বিলু বা বিল্ব চরিত্রের বেড়ে ওঠা, মূলত তারুণ্য থেকে যৌবনে পদার্পনের সময়টুকুকে লেখক উত্তমপুরুষে বর্ণনা করেছেন। বিলুর মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ, তার টানপোড়ন, স্ববিরোধিতা ফুটে উঠেছে সাবলীল ভাষায়। উদ্বাস্তু এক পরিবারের টিকে থাকার সংগ্রাম, সেই পরিবারের স্বভিমানী বড় ছেলের বাবার পেশা নিয়ে লজ্জ্বা কিন্তু খোদ বাবাটিকে নিয়ে গর্ব, নিজেদের ‘গরীব’, ‘উদ্বাস্তু’ পরিচয় ঢেকে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা এসব লক্ষ্য করে পাঠকের বিলুর ওপর মেজাজ খারাপ হতে বাধ্য। তবে, সেটাও বেশীক্ষণ স্থায়ী হয় না; কারণ, লেখক আমাদের দেখিয়ে দেন বিলুর ভেতরে কী চলছে, কেন সে এমন আচরণ করছে, তার অনুশোচনা-গিল্ট, পাঠককে বিলুর প্রতি নির্দয় হতে দেয়না। আপনা থেকেই তার আচরণের পক্ষে জাস্টিফিকেশন তৈরী হয়ে যায়।

তবে, বিলুর চরিত্রের চেয়ে আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে ছোট ভাই পিলু ও বাবার চরিত্র দুটো। বইটি পড়লে পিলুর উপর মায়া না এসে পারে না। অভিমানী বড় ভাইয়ের সম্মানের প্রতি সদা সতর্ক পিলু, বন-বাদার থেকে হনুমান, কুকুর, ছাগল ধরে নিয়ে আসা পিলু। পিলু বড্ড স্পনটেনিয়াস, লাইফফুল তাকে ভালো না লাগার কোন কারণই নেই উল্টো তার কারণে বিলুর উপর পাঠকের একটা ক্ষোভ জন্ম নেয় যে কেন বিলু তার ছোটভাইয়ের সাথে এমন করছে।

উপন্যাসটি তিনটি খন্ডে বিভক্ত, যার মধ্যে প্রথম খন্ডটিই আমার সবচে ভালো লেগেছে। বাকি দুইটি পর্ব ভালো রকমের মেলোড্রামাটিক। বিশেষ করে, বড়লোকের আদরের দুলালী নায়িকা, গরীব নায়কের হাতে মার খেয়ে বলছে, “ এ যে তোমার কত বড় অধিকার, তুমি তা জান না ।” -এই জিনিস হজম করা কঠিন। মেলোড্রামাটিক পোর্শনগুলো বাদে এই উপন্যাসটি বেশ সুন্দর একটি, ‘কামিং অফ এজ’ ড্রামা। অব্যশই নীলকন্ঠ পাখির খোঁজের মত মাস্টারপিস নয়; পড়লে ভালো, না পড়লে ক্ষতি নেই এমন বই আরকী!
Profile Image for Elruin Elmsroot.
249 reviews1 follower
July 6, 2024
A really heart touching novel setting in the aftermath of the Bengal divide in indian subcontinent.

It follows a family of immigrants coming to a new country. Their struggle to survive. Their sufferings, hopes, and dreams.

Building a new home and growing up in a country which treats them as lowly refugees.

Their childrens adolescence and adulthoods, finding love and genuine human connections, and their sensing the difference between aristocrats and the poor.

One of the most emotional novels i have ever read. If you find yourself relating to anything the novel portrays, you wouldn’t be able to hold back your tears at all.

I would have rated it 5 star. But, the author lost his flow in the after-climax part.

Also, the ending is too brief.

After finishing it, my heart longed for a vivid and a long ending, where all the questions raised in the novel is answered completely, and the author should have rounded up all the questions raised at the end.

My only regret is that, the ending is wayyyyy tooooo brief, that's why i'm deducting 1 point.

After reading it, i felt like: i was eating food, then left half-way through with a half-filled stomach.
Profile Image for Gain Manik.
335 reviews4 followers
July 6, 2024
অসাধারণ উপন্যাস। স্বদেশ চ্যুত মানুষের বিদেশে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। এর থেকে আর ভাল করে লেখা যায় না
Profile Image for Manas Layek.
5 reviews
June 14, 2016
A fantastic and mesmerizing tale from the era of partition. The challenge before an uprooted family and their survival in a new land. In spite of hardship and poverty the morality, pride and love didn't disappear.
Displaying 1 - 15 of 15 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.