Bimal Kar (Bengali: বিমল কর) was an eminent Bengali writer and novelist. He received 1975 Sahitya Akademi Award in Bengali, by Sahitya Akademi, India's National Academy of Letters, for his novel Asamay.
বিমল কর-এর জন্ম ৩ আশ্বিন ১৩২৮। ইংরেজি ১৯২১। শৈশব কেটেছে নানা জায়গায়। জব্বলপুর, হাজারিবাগ, গোমো, ধানবাদ, আসানসোল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। কর্মজীবন: ১৯৪২ সালে এ. আর. পি-তে ও ১৯৪৩ সালে আসানসোলে মিউনিশান প্রোডাকশন ডিপোয়। ১৯৪৪-এ রেলওয়ের চাকরি নিয়ে কাশী। মণিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘পরাগ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক, পরে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ পত্রিকা ও ‘সত্যযুগ’-এর সাব-এডিটর। এ-সবই ১৯৪৬ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে। ১৯৫৪-১৯৮২ সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮২-১৯৮৪ ‘শিলাদিত্য’ মাসিক পত্রিকার সম্পাদক। বহু পুরস্কার। আনন্দ পুরস্কার ১৯৬৭ এবং ১৯৯২। অকাদেমি পুরস্কার ১৯৭৫। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার ১৯৮১। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহদাস পুরস্কার ১৯৮২। ‘ছোটগল্প—নতুন রীতি’ আন্দোলনের প্রবক্তা।
আমি জীবনী প্রায় পড়ি না বললেই চলে। প্রিয় লেখকদের কিছুকিছু আত্মরচনামূলক লেখাই মূলত পড়েছি, আর সেদিক থেকে বিমল করের দুই খণ্ডের উড়ো খই আমার খুব অল্প কিছু প্রিয় আত্মজীবনীমূলক রচনাগুলোর একটা। বইটা পড়েছি অনেক অনেক বছর আগে, যখন স্কুলের উপরের দিকের ক্লাসে পড়তাম আর হাতের কাছে যা পেতাম বাছবিচার না করেই গোগ্রাসে পড়ে শেষ করে ফেলতাম নিমিষে (বয়সের সাথে সাথে বই পড়ার চেয়ে বই যাচাইবাছাই করে সময়নষ্ট করার প্রবণতাটা বেড়েছে অনেক বেশি)।
আব্বা-আম্মার বইয়ের শেলফে একদিন অলসভাবে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে উড়ো খই-এর ১ম খন্ড পেয়ে যাই, বিমল কর-কে তখন শুধু চিনি বছরপ্রতি আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকীতে পড়া গোয়েন্দা কিকিরা'র কাহিনীগুলোর লেখক হিসেবে, ব্যস আর কি লাগে, কি বই কেমন বই তার থোড়াই পরোয়া করে একবসায় পড়ে ফেললাম বইটা! যদিও সেসময় আমি বলতে গেলে শুধু রহস্যরোমাঞ্চ ঘরনার সব গল্প-উপন্যাস পড়তাম আর এটা একেবারেই অন্য লাইনের বই, কিন্তু একদম মন্ত্রমুগ্ধের মত বইটা পড়ে শেষ করেছিলাম... এবং বইটা শেষ করে একটা নিখাঁদ তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম।
এত বছর পরে বইয়ের সারাবস্তুর অনেককিছুই ভুলে গেছি, তবে বিমল করের সহজ সরল ভাষায় ব্যক্ত করা তাঁর জীবনের আপাতঃসাধারণ ঘটনাবলী কী অসাধারণ শৈল্পিক ভাবে তুলে ধরা হয়েছিল তা এখনো পরিষ্কার মনে আছে। এর আগে পড়া তাঁর কিকিরা রহস্যকাহিনীগুলো আমার বেশ মজা লাগত, গোয়েন্দাগিরির সাথে ম্যাজিকের বিভিন্ন অভিনব কলকাঠি মিশিয়ে একধরনের ভিন্নতা ছিল সেসবে, তবে 'উড়ো খই' পড়ার পরই আমি পুরোদস্তুর বিমল করের ভক্ত হয়ে গেছিলাম। তিনি যে আসলে কত শক্তিশালী লেখক সেটা মনে হয় তখনই প্রথম টের পাই। আমার মত জীবনী/আত্মজীবনীবিমুখ পাঠককে যদি বইটা এতটা মুগ্ধ করতে পারে, আশা করি অন্য পাঠকদের কাছেও ভাল লাগবে।
বিমল করের শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের গল্প স্থান পেয়েছে এতে। যদিও এই বইকে উনি আত্মজীবনী বলতে নারাজ, আখ্যায়িত করেছেন স্মৃতিকথা হিসেবে। সে যাই হোক, তার জীবনের এসব গল্প পাঠ্য হিসেবে বেশ আনন্দদায়ক। নানান কারণে ক্রমাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেছেন তিনি। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষের পাশাপাশি পেয়েছেন বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা। বইতে আত্মকথনের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে সমসাময়িক গল্প। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলন, দাঙ্গা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা। যুদ্ধের শুরুতে জাপানের বোমার ভয়ে কলকাতা ফাকা হয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ভয় মিলিয়ে আবার কলকাতা আবার ভরে উঠার ঘটনাটা অন্যরকম লাগল। এই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো তিনি বর্ণনা করেছেন আমজনতার চোখে, তাদেরই ভাবনায়।
বিমল করের সাহিত্যিক জীবনের গল্প এতে নেই। তবে তার উত্থানের যে গল্প আছে তা বেশ চমৎকার। আদতে তিনশো পাতার হলেও ছোট অক্ষরে লিখা এই বই শেষ করতে কিছুটা সময় লেগে গেল। পুরো সময়েই গল্প উপভোগ্য ছিলো বলে ব্যাপারটা গায়ে লাগেনি।
বিমল করের লেখা আগে সেভাবে পড়া হয়নি কখনো। কিকিরা গুলি পড়েছিলাম কিন্ত সামাজিক উপন্যাস পড়া হয়নি ওনার। সেরম বলতে গেলে সামাজিক উপন্যাস আমি কিই বা পড়ি। কিন্ত স্মৃতিকথার ওপরে আমার বিশেষ টান, আর সেই টানের কথা জানতে পেরে আমাদের শ্রীরামপুর আনন্দ-র অরিন্দম-দা একদিন আমার হাতে তুলে দিলেন এই বই, আর তাগাদা দিতে থাকলেন পড়ে ফেলার জন্য। তা বেশ কিছুদিন ধরে পড়ার কাল রাত্রে শেষ করলাম পড়া। আর পাঠ অনুভব লিখতে গিয়ে প্রথমেই বলতে হয় যে এটি একটি অনন্য স্মৃতিচারণা। নিজের জীবন ও তার সাথে জড়িত লোকজন, বন্ধুবান্ধব ও ঘটনার এক লম্বা ও আশ্চর্যময় ফিরিস্তি। পড়তে কখনই যা একঘেয়ে লাগে না। আর এ তো শুধুই ওনার জীবনের গল্প নয়, এই বই পাতায় পাতায় হয়ে ওঠে আসানসোল, ধানবাদ, কুলটি, হাজারিবাগ প্রভৃতি এলাকার কাহিনী। সঙ্গে ৪০ এর দশকের কোলকাতা ও থাকে নিজের কথা নিয়ে। যাঁরা এ বই পড়েছেন নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন, আর যারা পড়েননি কিন্ত স্মৃতিচারণ পড়তে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই বই এক রত্ন।
শুরুটা সুন্দর, শেষটা ততো মন কাড়ে নি, বিমল করের লেখা আগে পড়েছি বলে মনে হয় না, হয়তো শারদীয়া আনন্দমেলাতে কিকিরা পড়ে থাকতে পারি, মনে নেই কেমন লেখা ছিল, বিহার বা বর্তমান ঝাড়খন্ডে, আসানসোলে কাটানো শৈশব কৈশোর এর বর্ণনা মনোমুগ্ধকর, পুরোনো বাংলা ভুতের বা এ্যাডভেঞ্চার গল্পে পড়া নানা জায়গা যেমন ঝরিয়া, গেমো, হাজারীবাগ এসব জায়গার কথা পড়তে ভালোই লাগলো, ত্রিশ আর চল্লিশের দশকের কলকাতার বর্ণনাও মন কেড়েছে, সবমিলিয়ে হারানো সময়ের যৌথ পরিবার, সে সময়ের জীবনযাত্রা মন্দ লাগে নি।