Jump to ratings and reviews
Rate this book

বিশ্বাসের ভাইরাস: বিশ্বাসের বিবর্তনীয় বিশ্লেষণ

Rate this book
১ম সংস্করণের ভূমিকা


আমার এ বইটি বিশ্বাস নিয়ে। সমাজে বিশ্বাসের প্রভাব নিয়ে। বিশ্বাসের প্রভাব সবসময়ই সমাজে ছিল, আছে। বিশ্বাস ব্যাপারটাকে এমনিতে শান্ত, সুন্দর, নিরীহ আর গোবেচারা গোছের বলে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হলেও সময় এবং সুযোগ পেলে কীভাবে নখদন্ত বের করে তার রক্তলোলুপ চেহারাটা প্রকাশ করে দেয়, তা আমরা সবাই কমবেশি জানি। দেখেছি। বিশ্বাসের প্রভাবে বলীয়ান হয়ে মানুষ সেই প্রাচীন কাল থেকেই কুমারী এবং শিশু হত্যা করে দেবতাকে তুষ্ট করেছে, কখনো জীবন্ত কবর দিয়েছে, সতীদাহের নামে শত সহস্র নারীকে পুড়িয়ে মেরেছে, নাস্তিক, মুরতাদ কিংবা বিধর্মীদের হত্যা করেছে, চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে, ক্রুসেড করেছে, ধর্মযুদ্ধ করেছে, ডাইনি সাব্যস্ত করে নিরপরাধ মেয়েদের পুড়িয়ে মেরেছে, কখনো বা সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে জিহাদের নামে চলেছে রক্তের হোলি খেলা। বলতে দ্বিধা নেই, বিশ্বাস আমাদের জন্য উপকারের চেয়ে অপকারই করেছে বেশি।

তারপরেও প্রশ্ন আসে, আমাদের কি বিশ্বাসের আদৌ দরকার নেই? বিজ্ঞান, সমাজ, সভ্যতা, নৈতিকতা এই সব কি বিশ্বাস ছাড়া কি একেবারেই অচল নয়? আমরা কি বিশ্বাসের উপর নির্ভর করা ছাড়াই প্রযুক্তির উন্নয়ন করতে পারব? ভবিষ্যতের গতি প্রকৃতি বুঝতে পারব? সত্য মিথ্যা, পাপ পুণ্য যাচাই করতে পারব? এই বইটিতে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবেন কৌতূহলী পাঠকেরা।

আমি ২০১১ সালে আমার সহলেখক রায়হান আবীরের সাথে মিলে একটা বই লিখেছিলাম ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ নামে। বেরুনোর এক বছরের মধ্যেই বইটির সবগুলো কপি নিঃশেষিত হয়ে যায়। ২০১২ সালে বের হয় বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ। শেষ খবর যা জানি, সেই সংস্করণও নিঃশেষ। সেই বইয়ের একটি অধ্যায়ের নাম ছিল ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’। কেন আমি বিশ্বাসকে ভাইরাস মনে করি তার একটা ছোট আনুষঙ্গিক পর্যালোচনা ছিল সেখানে। বইটি বেরুনোর পর থেকেই পাঠকদের থেকে অভিমত পেয়েছিলাম – ধারণাটিকে বিস্তৃত করার। আমারও ইচ্ছে ছিল সেটা নিয়ে কাজ করার, কিন্তু হয়ে উঠেনি। এর মধ্যে গত বছর (২০১৩) ঘটা বেশ কিছু ঘটনা আমাকে এ বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস নামের একুশ বছরের এক যুবক যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গ্রেফতার হয়ে বিশ্বব্যাপী পত্র-পত্রিকার আলোচিত খবর হয়েছিলেন। নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ ও এফবিআই। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যক্রমে আমেরিকায় থাকার কারণে তার ঘটনাপ্রবাহ আমি খুব কাছ থেকে দেখি। নাফিস আমেরিকায় পড়তে এসে জিহাদ করাকে নিজের ‘কর্তব্য’ মনে করেছেন, আমেরিকাকে ‘দার আল-হারব’ হিসেবে দেখেছেন, এবং আমেরিকার মুসলিমদের বলেছেন ‘তালাফি’। তিনি কীভাবে বিন লাদেনকে প্রাণপ্রিয় নেতা মনে করেছেন, ইয়েমেনে নিহত আলকায়েদা নেতা আনোয়ার আল আওলাকির ভিডিও লেকচারগুলো তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে – এ সবকিছু আমাকে ব্যথিত এবং উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। নাফিসের মত বিশ্বাস-নির্ভর যুবকেরা যেন একেকটি টাইম-বোমা। বিশ্বাসের একেকটি বিধ্বংসী জৈবাস্ত্র যেন। তারা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তৈরি করতে পারে নাশকতা। জলজ্যান্ত ভাইরাস যেন এরা। আমি এ নিয়ে বাংলা ব্লগে একটি লেখা লিখি ‘একজন নাফিস এবং বিশ্বাসের ভাইরাস’ শিরোনামে। কিন্তু তখনো আমার বই লেখার চিন্তাটা মাথায় আসেনি।

সেই একই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সূচিত হয়েছিল অবিস্মরণীয় শাহবাগ আন্দোলন। কাদের মোল্লার সঠিক বিচারের দাবীতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগারদের গড়ে তোলা এ আন্দোলন কাঁপিয়ে দিয়েছিল সারা বাংলাকে, এবং কিছুটা সময়ের জন্য হলেও বিশ্বকে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সংগঠিত শাহবাগ গণআন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন। রাজীবকে শাহবাগ আন্দোলনের একেবারে শীর্ষসময়ে তার বাড়ির অদূরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাজীবের হত্যার অভিযোগে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে যখন গ্রেপ্তার করা হল, তারা নিজ মুখেই স্বীকার করল, ‘ঈমানী দায়িত্ব পালনের জন্য’ তারা রাজীবকে হত্যা করেছে। নর্থ সাউথের সামগ্রিক ঘটনা এবং রাজীবের উপর আক্রমণকে ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ হিসেবে চিহ্নিত করে আমি একটি প্রবন্ধ লিখি অনলাইন পত্রিকায় এবং মুক্তমনা ব্লগে –‘বিশ্বাসের ভাইরাস: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কি জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে?’ শিরোনামে। রাজীবকে হত্যার বিবরণ পড়লে হতবাক হতে হয়, কীভাবে তাদের মস্তিষ্ক ‘ব্রেন ওয়াশড’ হয়েছে প্যারাসাইটিক জিহাদি ধারণা দিয়ে। নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার অভিযোগে নর্থ সাউথের কামেল প্রাক্তন ছাত্র কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান কিংবা রাজীব হত্যায় জড়িত নর্থ সাউথের ছাত্রদের মুখগুলোর দিকে তাকালে আমরা বুঝতে পারি ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ কত প্রকটভাবে মস্তিষ্ককে অধিকার করে ফেলতে পারে, যার ফলে একজনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে খুন করতেও তাদের বাধেনি, বরং এটাকে তারা ‘ঈমানী দায়িত্ব’ বলে মনে করেছে।

বিশ্বাসের ভাইরাসের প্রভাবে রাজীব হত্যার মতো ভয়ঙ্কর আলামতগুলো যখন দিনের আলোর মত উদ্ভাসিত, আশা করা হচ্ছিল যে, সরকার এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন। খুঁজে দেখবেন বিশ্বাসের ভাইরাসের উদ্ভব এবং সংক্রমণের মূল উৎসগুলো। কিন্তু তা না করে আওয়ামী সরকার চড়াও হল প্রগতিশীল এবং মুক্তমনা ব্লগারদের ওপর। ২০১৩ সালের পয়লা এপ্রিল বাংলা ব্লগের চারজন স্বনামখ্যাত মুক্তমনা ব্লগারকে গ্রেফতার করল ‘সেক্যুলার’ বলে কথিত আওয়ামী সরকার। বুঝলাম হেফাজতি মওলানা আর আমার দেশ এর মত প্রোপাগান্ডা মেশিনের চাপে বিশ্বাসের ভাইরাসের ব্যাপারটা আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোতেও। কিন্তু ভাইরাসের এহেন মহামারী দেখে তো আমরা চোখ বুজে থাকতে পারি না। আমার অনলাইন বন্ধুদের সাথে মিলে ব্লগারদের মুক্ত করার আন্দোলনে সামিল হলাম। শুরু হল পত্র-পত্রিকা, ফেসবুক এবং ব্লগে লেখালিখি। শুরু করলাম ‘Worldwide Protests for Free Expression in Bangladesh’ ক্যাম্পেইন। সারা পৃথিবীর মুক্তচিন্তার সংগঠনগুলো এগিয়ে এলো আমাদের ডাকে। একটা সময় পর সরকার মুক্তি দিতে বাধ্য হল ব্লগারদের।

তখ...

232 pages, Hardcover

First published February 1, 2014

42 people are currently reading
848 people want to read

About the author

অভিজিৎ রায়

13 books196 followers
[Dr. Avijit Roy is a Bangladeshi-American blogger, published author, and prominent defender of the free thought movement in Bangladesh. He is an engineer by profession, but well-known for his writings in his self-founded site, Mukto-Mona—an Internet congregation of freethinkers, rationalists, skeptics, atheists, and humanists of mainly Bengali and South Asian descent. As an advocate of atheism, science, and metaphysical naturalism, he has published eight Bangla books, and many of his articles have been published in magazines and journals. His last two books, Obisshahser Dorshon (The Philosophy of Disbelief) and Biswasher Virus (The Virus of Faith), have been critically well-received and are popular Bengali books on science, skepticism, and rationalism. }



লেখক হবার কোন বাসনা ছিলো তা নয়। কিন্তু ছোট্ট একটা স্বপ্ন হয়তো ছিলো একটা মনের গহীনে। স্বপ্নটা পালটে দেবার। সেই পালটে দেবার স্বপ্ন থেকেই ২০০১ সালের দিকে একদিন সমমনা কয়েকজন লেখকদের নিয়ে তৈরি করে ফেললাম মুক্তমনা সাইট (www.mukto-mona.com)। এর পর থেকেই সাইটটির বিস্তৃতি বেড়েছে। এখন বাঙালি বিজ্ঞানকর্মী, যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদীদের কাছে মুক্তমনা একটি বিশ্বস্ত নাম। ২০০৭ সালে মুক্তবুদ্ধি, বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার আর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সম্যক অবদান রাখার প্রেক্ষিতে তার মুক্তমনা সাইট অর্জন করেছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক।

শখের বশে টুকিটাকি লেখা লিখছিলাম ইন্টারনেটে, ম্যাগাজিনে আর দৈনিক পত্র-পত্রিকায়। পছন্দের বিষয় প্রথম থেকেই ছিলো আধুনিক বিজ্ঞান এবং দর্শন। আমার সেসময়ের চিন্তাভাবনার গ্রন্থিত রূপ ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ (২০০৫)। এরপর একে একে অনেকগুলো বইই বের হয়েছে। তার মধ্যে, মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে (২০০৭, পুনর্মুদ্রণ ২০০৮), স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি (২০০৮), সমকামিতা: বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান (২০১০,পুনর্মুদ্রণ ২০১৩), অবিশ্বাসের দর্শন (২০১১, দ্বিতীয় প্রকাশ: ২০১২, তৃতীয় প্রকাশ: ২০১৪), বিশ্বাস ও বিজ্ঞান (২০১২), ভালবাসা কারে কয় (২০১২),এবং শূন্য থেকে মহাবিশ্ব (২০১৪: প্রকাশিতব্য)। পাঠকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে, বইগুলো পাঠকদের ভাল লেগেছে। অনেকেই বইগুলোকে ‘ব্যতিক্রমী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, কেউবা আবার আগ বাড়িয়ে বলেছেন ‘মাইল ফলক’। তা যে ফলকই হোক না কেন, আমি এই বইগুলোর প্রতি আগ্রহ দেখে একটি ব্যাপার বুঝতে পারি যে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী ও সাধারণ মানুষেরা বিজ্ঞান বিমুখ নয় মোটেই, নয় দর্শনের প্রতি অনাগ্রহীও। ভাল বই তাদের আগ্রহ তৈরি করতে পারে পুরোমাত্রায়।

পেশায় প্রকৌশলী। পড়াশুনা করেছি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট), পি.এইচ.ডি করেছি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে (এন.ইউ.এস)। বর্তমানে আমেরিকায় কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত । অবসর সময় কাটে বই পড়ে, লেখালিখি করে, গান শুনে, জীবনসঙ্গিনী বন্যার নিয়মিত বকা খেয়ে, আর নিঃসীম আঁধারে আলোকিত স্বপ্ন দেখে - ‘মানুষ জাগবে তবেই কাটবে অন্ধকারের ঘোর’...

['অবিশ্বাসের দর্শন' বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে]

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
94 (44%)
4 stars
45 (21%)
3 stars
36 (16%)
2 stars
21 (9%)
1 star
16 (7%)
Displaying 1 - 17 of 17 reviews
Profile Image for Emtiaj.
237 reviews86 followers
July 29, 2016
বইয়ের বিরাট একটা অংশ অবিশ্বাসের দর্শন বই থেকে সরাসরি তুলে দেয়া হয়েছে। বাকী অংশের মধ্যেও পুনরাবৃত্তি আছে। আমি আজকাল পুনরাবৃত্তি সহ্য করতে পারিনা। এক বিষয়ে অনেকগুলো লেখা হয়ে গেছে এই মানসিকতা থেকে বই প্রকাশ করা উচিৎ না। করলে এটার মত অগোছালো প্রডাক্টই বের হবে। বই প্রকাশের উদ্দেশ্যে লিখলে এই বিরক্তিটুকু বইয়ে থাকতো না বলে মনে করি। বইয়ে থাকা ছবিগুলোর এক/দুইটা ছাড়া বাকীগুলো অপ্রয়োজনীয়। এবং ধর্মের ভাইরাস, মানে বিজ্ঞান নিয়ে খুব কম লেখাই আছে। ল্যাংসেট ফ্লুক প্যারাসাইটের কারণে পিঁপড়ারা আত্মহত্যা করে এরকম টাইপের কিছু উদাহরণ আছে কিন্তু এগুলো কিভাবে মানুষ + ধর্মের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, বা এরকম কোন ভাইরাস আছে নাকি সে বিষয়ে তেমনভাবে কিছু নেই। যা আছে সেটা হচ্ছে দেখো পিঁপড়া ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যা করে, মানুষও ধর্মের নামে খুন/ধ্বংস করে এই ব্যাপারটার অসংখ্য উদাহরণ। কম্বিনেশনটা ঠিকমত হয়নি। শুধুমাত্র এই বিষয়টার উপরে লিখলেই ভালো হত, তাতে যদি বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যা দুশোর মত না হয়ে শ' খানেক হত তাতে এটা ফাটাফাটি হত। আর .. মিম সায়েন্স নিয়ে আমার ধারণা খুবই কম। প্রায়ই চিন্তা করি কিন্তু পড়া হয়ে উঠেনা। ওটা সম্বন্ধে জানা থাকলে এই বইটাকে আরো ভালোভাবে জাজ করা যেত। এবং অভিজিৎ রায়ের মত মানুষ ফারাবির মত একটা ছাগলকে নিয়ে দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকার বিরাট একটা অংশ ব্যয় করবে তা ভাবাই যায় না। অবিশ্বাস্য।
Profile Image for Nu Jahat Jabin.
149 reviews240 followers
October 28, 2016
বহুল আলোচিত সমালোচিত বইখানা পড়ে আহামরি কিছু লাগল না।
আমি এমনিতেই ধর্ম জিনিসটা পছন্দ করি না। কড়া নাস্তিক সেটাও না কিন্তু নিয়ম কানুন মানা জিনিসটা আমাকে দিয়ে হয় না এই কারনেই ধর্মের উপরে খুব একটা বিশ্বাস রাখা হয়ে উঠে নি।

সমস্যা হল আমি কড়া আস্তিক ও যেমন পছন্দ করি না কড়া নাস্তিক ও তেমন পছন্দ করি না। ২দলের মানুষই নিজেদের আইডিওলজির জন্য জান প্রান রেখে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন।
নাস্তিকতাও যে একটা বিশ্বাস এর ভাইরাস এইটা লেখক মনে হয় ভুলে গেছে।
কেউ বিশ্বাস করে স্রষ্ঠা আছে ধর্ম আছে সেটা পালন করার জন্য যা ইচ্ছা তাই করব সেটা যেমন বিপদজনক একই ভাবে ধর্ম থাকতে পারে না, এই কথা জোর গলায় বলে কাইজ্জা সৃষ্টি করাটাও সমান ভাবে বিপদজনক।

উপরেরটুকু আস্তিকতা নাস্তিকতা নিয়ে ব্যক্তিগত ধ্যান ধারনা। এইটা নিয়ে আমারে না প্যাঁচাইলেই খুশি হব এমনিতেই নিজ দায়িত্ব এ ধর্ম নিয়ে সেই লেভেলের প্যাঁচের ভিতরে আছি।

বইয়ের ব্যাপারে বলতে শুরুতেই বলে দিয়েছি আহামরি কিছু না। ঘুরে ফিরে একই কথা, ধর্ম ধুয়েছেন বিশেষত ইসলাম ধর্ম, ব্যক্তিগত ভাবে আমি হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে কথা বলা জিনিসটা পছন্দ করি না । এই জায়গাগুলো পছন্দ হয় নি।

বই টেনে রাখে এমন ও না,মানে লেখকের হাতে এত জাদু নাই যে বই পড়ে খুব ভাল লাগবে। টানা একই ধরনের কথা । ১০০পেজের বই শুধু ঘুরে ফিরে একই টাইপ কথা বলে ২০০+ পেজ করা হয়েছে । সেইটুকুও যদি গুছানো কিছু হত তাহলেও এক কথা ছিল। অসুখপাঠ্য , সমন্বয়হীন এক বই।!!

বিবর্তনীয় বিশ্লেষণ শব্দটা বইয়ের টাইটেলের সাথে লাগানো থাকলেও আহামরি কিছু আনেন নি, মানে পর্যাপ্ত ব্যাখ্য বিশ্লেষণ নাই এই ব্যাপারে । সেলফিশ জিন থেকে মিমরে টেনে এনেছেন। তাও আহামরি কিছু না।
3 reviews2 followers
January 28, 2015
বিশ্বাসের ভাইরাস: মেনে নয়, মনে নিন
লিখেছেন: দেব প্রসাদ দেবু


“নাফরমানি করিওনা, খোদার উপর তোয়াক্কেল রাখো!” লাল সালু উপন্যাসে মজিদের এই উক্তিটি মনে আছে? মর্মার্থ হচ্ছে “মেনে নাও, সুখী হবে”। কিন্তু মুক্তমনাদের সমস্যা এখানেই, এরা মেনে নিতে অভ্যস্ত নয়, মনে নিতে চায়। যুক্তির বিচারে গ্রহণযোগ্য সত্যকে মনে নেয় যুক্তিবাদীরা, অন্যদিকে উদ্ভট মিথকেও মেনে নিয়ে শান্তির কোল খোঁজে ধার্মিকরা। নিজের অজান্তেই আক্রান্ত হয় প্যারাসাইটের, ভাইরাসের। বস্তু গতিশীল আর গতি মানেই দ্বন্দ্ব, বস্তুবাদীর আচরণ হচ্ছে বস্তু- দ্বন্দ্ব -গতি আর ভাববাদীরা বস্তুতেই স্থির, দ্বন্দ্ব কিংবা গতি তাঁরা খোঁজেনও না, পানও না। কারণ ‘প্রিডিটারমাইন্ড মাইন্ডসেট’। তাদের রচিত মহাবিশ্ব একেবারেই স্থবির। তাদের বিশ্বাসের মহাকাশে সূর্য ‘পঙ্কিল জলাশয়ে’ ডোবে, কিংবা রাতের বেলা লুকিয়ে থাকে ‘খোদার আরসের’ নীচে। তাদের মতবাদে প্রথম নারীর জন্ম হয় প্রথম পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে। মানব জাতির পৃথিবীতে পদার্পণ ঘটে শয়তানের কুমন্ত্রণায় জ্ঞান-বৃক্ষের ফল আস্বাদনের ‘পাপে’ স্বর্গ-চ্যুত হয়ে। তাদের মানসপটে বিবর্তনের কোন স্থান নেই, নেই কোন পরিবর্তন কিংবা প্রগতিশীলতার ছাপ। তাদের বিশ্বাসের অচলায়তনে খেলা করে যায় কেবল প্রাচীন রূপকথা আর কূপমন্ডুকতা। যে কারণে ডারউইন, গ্যালিলিও কিংবা ব্রুনো তাঁদের কাছে ভিত কাঁপিয়ে দেয়া কতকগুলো নাম, যাঁরা ‘খোদার আরস নাড়িয়ে’ দিয়েছে যেন। আপনি জাগতিক সবকিছুকে দ্বন্দ্ব এবং গতির আওতায় বিশ্লেষণ না করলে তত্ত্বের লোহায় মরিচা পড়বেই, সৃষ্টি হবে ভাইরাসের, ঘটবে চিন্তার বৈকল্য। শুঁয়োপোকার দেহকে হোস্ট বানিয়ে ইকনিউমেন প্রজাতির প্যারাসিটোয়েড বোলতা যেমন প্রজন্ম তৈরি করে, ঠিক তেমনি আপনার মস্তিষ্কও হয়ে উঠবে ভাইরাসের আবাসস্থল। অদৃশ্য কিন্তু প্রাণসংহারী ভাইরাস। কিভাবে এটা মানব মস্তিষ্কের মতো সুপার কম্পিউটারকে গ্রাস করে, কিভাবে ছড়ায়, কিভাবে টিকে থাকে তার বিবর্তনীয় বিশ্লেষণ অনবদ্যভাবে তুলে এনেছেন এই সময়কার প্রথিতযশা বিজ্ঞান লেখক ড. অভিজিৎ রায় তাঁর ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটিতে। জাগৃতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত চমৎকার মালাটের ২১৫ পৃষ্ঠার এই বইয়ে মোট আটটি অধ্যায়। বইটি পড়ার পর তাৎক্ষনিক একটা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলাম ফেইসবুকে, সেটির সূত্র ধরেই এই বিস্তারিত পাঠ প্রতিক্রিয়া। শুরুতেই বলে রাখি বইটি পড়তে হবে মুক্তমনে, যুক্তির বিচারে, তথ্যের বিশ্লেষণের মাধ্যমে তবেই ধরতে পারবেন ভাইরাসের অস্তিত্ব। বুঝতে পারবেন কিভাবে সমাজের অস্থি মজ্জা খুবলে খাচ্ছে ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’, বাধাগ্রস্ত করছে সমাজ প্রগতির সংগ্রামকে।

প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অধ্যায়ে সমসাময়িক কয়েকটি ঘটনার চমৎকার বিশ্লেষণ আছে। যেমন, কাজী মোহাম্মদ রেজোয়ানুল আহসান নাফিস নামের যে তরুণটি বিস্ফোরকের মাধ্যমে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ উড়িয়ে দিতে গিয়েছিলো সেই প্রসঙ্গ। নির্মোহ দৃষ্টিতে বিষয়টিকে বিবেচনা করলে আপনার কি মনে হয় নাফিস তার স্বকীয়তা ভরা তারুণ্যের মর্যাদা রেখেছে? যতোই বলা হোক না কেন এফ বি আই- এর পাতানো ফাঁদে এই তরুণ জড়িয়ে পড়েছে, কিংবা আমেরিকাই তাকে এই পথে আসতে প্ররোচিত করেছে, তারপরেও কথা থেকে যায়। আপনাকে উৎসাহ কিংবা খোঁচা দিলেই আপনি অন্যের বাড়া ভাতে ছাই মেশাতে যাবেননা ততক্ষণ, যতক্ষণ না সেটা আপনাকে বিকৃত আনন্দ দিচ্ছে। বিকৃত আনন্দ আপনি তখনই পাবেন যখন আপনার মননের সুস্থ বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যাবে, মুক্তচিন্তা বাধাগ্রস্ত হবে। কখন সেটা ঘটবে তার বাস্তব এবং বিবর্তনীয় বিশ্লেষণ এই অধ্যায়টিতে করেছেন ড.রায়। ল্যাংসেট ফ্লুক কিংবা নেমাটোমর্�� হেয়ার ওয়ার্ম নামক প্যারাসাইটের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টিকে দুর্দান্ত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আছে সমসাময়িক বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ কিংবা প্রবন্ধের চমৎকার সমন্বয়, যা যুক্তির বিচারে দ্বন্দ্বকে বুঝতে সহায়তা করবে নির্ঘাত। ইতিহাসের আলোকে ধর্মের নৃশংসতম দিকগুলোও উঠে এসেছে সুন্দরভাবে। অথচ বিশ্বাসের ভাইরাস আক্রান্ত মনন এই একই ঘটনার ভিন্ন রূপ দেখে, বিবেচনা করে। একই ঘটনাগুলো পড়ে কিংবা জেনে জিহাদ কিংবা কত্ল-এ উজ্জীবিত হয়। নাফিস তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে ছোট্ট একটি তথ্যের উল্লেখ না করে পারছিনা। নাফিসের বাবা জনাব আহসানউল্লাহ কর্মরত ছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে, ঘটনার পরপরই তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। একই ঘটনা ঘটে ব্লগার রাসেল পারভেজের ক্ষেত্রেও। তাঁকেও মাস্টারমাইন্ড স্কুল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় যখন সরকার ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে চার ব্লগারকে গ্রেফতার করে চোরাকারবারির মতো ছবি মিডিয়ায় প্রকাশ করে ভাইরাস প্রজননের সূতিকাগার কাঠমোল্লাদের খুশি করতে এবং ভাইরাসের বদলে এন্টিভাইরাসের টুঁটি চেপে ধরতে। এই পদক্ষেপ গুলোও কোন যুক্তিবাদী আচরণের মধ্যে পড়েনা।

নাফিসের প্রাক্তন পাঠশালা বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আরো কিছু রুদ্ধ মনন ‘খোদা অর্পিত ঈমানী দায়িত্ব’ পালন করে উদীয়মান তরুণ ব্লগার রাজীব হায়দার (থাবা বাবা)-কে রাতের আঁধারে কুপিয়ে হত্যার মাধ্যমে। এবং সদম্ভে সেটি স্বীকার করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। কারণ তাদের সেটা অন্যায় মনে হয়নি, তাদের মস্তিষ্ক সেটা সমর্থন করে, কারণ বিশ্বাসের ভাইরাস ঐ মস্তিস্কগুলোর স্বকীয়তা গ্রাস করে ফেলেছে। বিষয়গুলোর বিভিন্ন বিশ্লেষণ পাবেন দ্বিতীয় অধ্যায়ে। এই অধ্যায়ের আরেকটি অভিনব দিক হচ্ছে লেখক এখানে পাঠককে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের অনেকগুলো যুক্তিবাদী সংগঠনের সাথে যত্নের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন প্রাসঙ্গিক আলোচনার মাধ্যমে। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজীবকে হত্যা করে ঈমানী দায়িত্ব পালন করে যারা তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলো, তাদের মনে এই বিকৃত ভাইরাসের সংক্রমণ কিভাবে ঘটেছিল? সেটা বুঝতে গেলে আপনাকে কবি আবু আফাক কিংবা কবি আসমা বিন্তে মারোয়ানের হত্যাকাণ্ডটা পড়তে হবে ৪৯-৫০ পৃষ্ঠায়, যা ঘটেছিলো আসলে মহানবীর নির্দেশেই। লেখকের অভিমত, রাজীব হত্যার পেছনে ধর্মের প্যারাসাইটিক ধারণাই দায়ী। এটা কেবল তথাকথিত ‘ইসলামবিদ্বেষী’দের প্রচারণা ভাবলে ভুল হবে। লেখক উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, রাজীব হত্যার পর পরই আল-কায়েদা ভাবধারার জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। সে ভিডিওতে খুব স্পষ্ট করেই বলা হয়েছিল, নবী মুহম্মদ যেভাবে কাব ইবনে আশরাফ, আসমা বিন্তে মারওয়ানের মত কবিদের হত্যা করেছিলেন ইসলামের আর নবীর বিষেদগার করার শাস্তি হিসেবে, ঠিক একইভাবে থাবা বাবাকে মেরে ফেলাও জায়েজ হয়েছে। বিশ্বাসের ভাইরাস কাজ করে এভাবেই। প্রাচীন কালের ধর্মাবতারদের বাণী এবং কাজকর্ম মাথায় ধারণ করে একটা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ কিছু ছাত্র যেভাবে রাজীব হত্যায় উজ্জীবিত হয়েছে এ থেকে বোঝা যায় ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ কতটা শক্তিশালী এবং একইসাথে কতটা প্রাণসংহারক।

বইটির চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সংস্কৃতির বিবর্তনের ধারাটি দুর্দান্ত ব্যাখ্যা করেছেন অভিজিৎ রায়। অনেকটা জৈববিবর্তনের মতোই রেপ্লিকেশন, মিউটেশন, কম্পিটিশন, সিলেকশন, একিউমুলেশন প্রভৃতি স্তর পার হয়ে বিভিন্ন ধারনার বা বিশ্বাসের বিস্তার কিভাবে ঘটে তার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এখানে আছে। সাথে বিবর্তনের ধারায় কিভাবে এটা টিকে যায় তারও ব্যবচ্ছেদ পাবেন আগ্রহীরা। আধুনিক বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীদের চালানো গবেষণার চমকপ্রদ উদাহরণ আছে ৯২ পৃষ্ঠায়। সাথে ৯৬,৯৭ পৃষ্ঠায় বিশ্বাস ভাইরাসের অর্থনৈতিক ইফেক্টের বিশ্লেষণ আছে, যা অধ্যাপক ভিক্টর স্টেঙ্গারের নিউ এথিজম ও নিউইয়র্ক টাইমসের প্রবন্ধের আলোকে করা। ষাটাধিক ঘটনার উদাহরণ টেনে অন্ধবিশ্বাস নামক ভাইরাসগুলো কীভাবে সন্ত্রাসবাদী তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহৃত হয় তার চমৎকার ব্যাখ্যা আছে ভাইরাস আক্রান্ত মনন অংশে। রিচার্ড ডকিন্সের বিভিন্ন গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে খুবই সহজ ভাবে জিনের পুনরাবৃত্তির সাথে বিশ্বাসের পুনরাবৃত্তির সাদৃশ্যতা দেখিয়েছেন বিবর্তনীয় বিশ্লেষণে। যেমন ডিএনএ’র তথ্য অর্থাৎ রাসায়নিক নির্দেশাবলী উপযুক্ত পরিবেশে যেভাবে শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরির মাধ্যমে তার বৈশিষ্ট্যের পুনরাবৃত্তি ঘটায়, ঠিক একই প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় বিশ্বাসগুলোও ছড়িয়ে পড়ে। পঞ্চম অধ্যায়ে নৈতিকতার উৎস হিসেবে জাহির করা ধর্মের সফল ব্যবচ্ছেদ করেছেন অভিজিৎ রায়। দুর্দান্ত কিছু রেফারেন্স দিয়েছেন কোরান, মনুসংহিতা, বাইবেল প্রভৃতি “পবিত্র” ধর্ম গ্রন্থ থেকে। নৈতিকতার নামে যেগুলো সমাজে তৈরি করছে বিভাজন। যেমন সুরা আল ইমরান (৩:২৮) এর কথা ধরা যাক। আমার এক বন্ধু আছে যে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতো। সে নাকি মাদ্রাসা ক্লাসের নাইনে পড়ার সময় ঈমান খুইয়েছে পুরাপুরি, তাও আবার ধর্ম গ্রন্থ পড়ে! মিশকাত শরীফের একটা হাদিস সে প্রায়ই রেফারেন্স দিত। সেটা এরকম- “তোমরা যদি কাফির, মুশরিক (পৌত্তলিক)দের রাস্তায় দেখো, তবে রাস্তাকে এমনভাবে জুড়ে হাঁটবে যাতে তাঁরা রাস্তার একপাশ দিয়ে যেতে বাধ্য হয়।“ এই হচ্ছে নৈতিক শিক্ষা। পাকিস্তানতো এ তে আলিফ, বি তে বন্দুক নিয়েই আছে। শ্রেণী বিভক্ত সমাজে বিভাজনটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন ছিলো সেটাকে অনুশাসনের আওতায় নিয়ে আসা। ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে সেটাকে প্রথম বৈধতা দেয় মনুসংহিতা। শ্রেণী বিভাজনটা উৎপাদন প্রণালীর সাথে সম্পৃক্ত, কিন্তু এই উৎপাদন প্রণালীর স্থায়িত্বের জন্য দরকার ছিলো ধর্মীয় বৈধতা। এই বিষয়ে আগ্রহী পাঠকদের চোখ এড়াবেনা ১২০ পৃষ্ঠার চমৎকার আলোচনাটুকু। যেখানে রামায়ণ, মনুসংহিতা, মহাভারতের উদাহরণ দিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে ধর্মীয় অনুশাসন কিভাবে শ্রেণী বৈষম্যের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। শান্তির প্রতিভূ “প্রভু যিশু”র অমিয় বানী থেকেও আমরা “চরম নৈতিক শিক্ষা” পাই ১২৩ পৃষ্ঠায় –

‘আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি এই কথা মনে করো না। আমি শান্তি দিতে আসি নাই, এসেছি তলোয়ারের আইন প্রতিষ্ঠা করতে। আমি এসেছি মানুষের বিরুদ্ধে মানুষকে দাঁড় করাতে; ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে, মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে, বৌকে শাশুড়ির বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি’ (মথি, ১০: ৩৪-৩৫)।


তাহলে কি বলা যায়না যে, শোষণ-ব্যবস্থা কায়েম রাখতে, অবৈজ্ঞানিকতা, কুসংস্কার আর ভোগের উৎপাদন প্রণালী টিকিয়ে রাখতেই ধর্মের উৎপত্তি? মানবকল্যাণে নয়? ধর্ম যে নৈতিকতা শেখায় সেটা আরোপিত। মেনে নেয়া। মনে নেয়ার নয়। এখানে পাপ পুণ্য, লাভ, ক্ষতি, নরক ভীতি থেকে উৎসারিত ধর্ম ভীতি। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের একটি উক্তি এখানে না আনলেই নয়। তিনি বিজ্ঞান ও যুক্তির আলো থেকে ধর্মের ক্রমাগত পালিয়ে বেড়ানোর স্বভাবকে সমালোচনা করেছিলেন এভাবে-

“… কিন্তু আমি বুঝি যে, ধর্মীয় প্রতিনিধিদের তরফ থেকে এমন ব্যবহার শুধু যে অপদার্থতা তা নয়, উপরন্তু মারাত্মক। কারণ মতবাদ যা নিজেকে পরিষ্কার আলোর মধ্যে বাঁচাতে না পেরে কেবলই অন্ধকারে গিয়ে লুকায়, তা নিশ্চিতভাবেই মানব প্রগতির গণনাতীত ক্ষতি করে।“


আইনস্টাইন আরো বলেন-

“একজন মানুষের নৈতিক আচার ব্যবহারের ভিত্তি হওয়া উচিৎ মানুষের প্রতি সহানুভূতি, শিক্ষা এবং সামাজিক বন্ধন বা সামাজিক দায়বদ্ধতা; কোন ধর্মীয় ভিত্তির প্রয়োজন নেই। মানুষকে সংযত করার জন্য যদি তাঁকে শাস্তির ��য় দেখাতে হয়, বা মৃত্যুর পরের পুরস্কারের লোভ দেখাতে হয়, তাহলে মানুষের কাছে তা হবে চরম লজ্জার ও অপমানের”।


নৈতিক শিক্ষার ধারাপাত হিসেবে যেসব ধর্ম গ্রন্থকে “পবিত্র” বলে মাথায় তুলে রাখি, এসব গ্রন্থেই আবার আমরা পাই সতীদাহ, বর্ণভেদ সৃষ্টি, ক্রুসেড সহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ, যেগুলো ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে বা টিকিয়ে রাখতে হাজির করা হয়েছে অহরহ। ধর্ম মানতে গেলে ধর্মের এই অ���র্মের ইতিহাসকে ছেঁটে ফেলার সুযোগ নেই। ‘ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন’ -এই টাইপের ধোঁকাবাজির দিন শেষ, ‘অনেকটা বাকীর দিন শেষ, ঠকার দিন খতম’ টাইপের! অভিজিৎ রায়ের মতো সাহসী বিজ্ঞান লেখকরা এখন কবিতা, কোটেশন, কৌতুক, রেফারেন্স ইত্যাদির সফল সমন্বয় ঘটিয়ে বিজ্ঞানকে আনন্দে পাঠযোগ্য যায়গায় নিয়ে গেছেন। মানুষ এখন বিশ্লেষণের পদ্ধতি শিখছে নিয়মিত।

বিশ্বাসের ভাইরাস বইটির ষষ্ঠ অধ্যায় নারী। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর “নারীর মূল্য” প্রবন্ধে চমৎকার ভাবে বলেছিলেন সমাজে নারীর মূল্য নির্ধারিত হয় সে কি পরিমাণ সেবাপরায়ন, স্নেহশীলা, সতী এবং দুঃখে-কষ্টে মৌনা সেটি বিবেচনায় নিয়ে অর্থাৎ তাঁকে নিয়ে পুরুষ কী পরিমাণ সুখী হবে, পুরুষের লালসাকে কতোটা তৃপ্ত করতে পারবে সেই হিসাবেই নারীর মূল্য নির্ধারণ করে সমাজ। নারীকে ধর্মীয় ভাইরাসেও এর বাইরে স্থান দেয়া হয়নি। “মুমিন’দের জন্য হুররূপী চির যৌবনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে মৃত্যু পরবর্তী কল্পিত জীবনে এবং “পাক কোরানে” ইচ্ছে মতো চাষ করার, গমন করার, যৌন বাসনা পূর্ণ করার যথেচ্ছ অধিকার দেয়া হয়েছে। ভোগ্যপণ্য ছাড়া অন্য কোনরূপে নারীর কোন স্থান নেই ধর্ম গ্রন্থে। বিষয়গুলো চমৎকারভাবে তুলে এনেছেন অভিজিৎ রায় তাঁর এই আলোচনায়। ধর্ম গ্রন্থগুলোর প্রধান চরিত্রের চরিত্রহীনতায় অনুপ্রাণিত হয়ে শফী মোল্লা তাঁর অমৃতবাণী ঝেড়েছেন অধুনা বিখ্যাত ‘তেঁতুল তত্ত্বের’ মারফত। তাঁর আরাধ্য ধর্মের পাঞ্জেরীর ২২ রমণী গমনসহ কৃষ্ণলীলার পাশাপাশি ইন্দ্রলীলারও একটা অনবদ্য বায়োগ্রাফি পাবেন এই অধ্যায়ে। কামুক এই চরিত্র গুলো পড়লে শফী সাহেবের মনে হতেই পারে “নারী হচ্ছে তেঁতুলের মতো, তাঁদের দেখলে ছেলেদের লালা ঝরে”। এখানেও চমৎকার সব তথ্যের সমন্বয় ঘটিয়েছেন লেখক। ধর্ম নামক ভাইরাস এবং এই ভাইরাসে আক্রান্তরা কোন দৃষ্টিতে নারীকে দেখে বা দেখতে প্ররোচিত হয় এবং করে তার ব্যাখ্যা এসেছে চমৎকার ভাবে।

বইটির সপ্তম অধ্যায়ে একটি জনপ্রিয় ধাঁধা নিয়ে লেখক আলোচনা করেছেন। সাধারণভাবে অনেকেই প্রশ্ন করে বসেন, ‘ধর্ম ব্যাপারটা যদি এতো ক্ষতিকারক হয় তাহলে সেটা পৃথিবীতে টিকে আছে কীভাবে?’। ধর্ম ক্ষতিকারক হলে তা বিবর্তনের নিয়মেই একসময় বাতিল হয়ে যাবার কথা ছিল না? এই অধ্যায়ে এই বহুল প্রচারিত ধাঁধাটির অন্ততঃ পাঁচটি সমাধান আমরা পাই:

১) বিবর্তন কাজ করে ব্যক্তির জিনের উপর, সমষ্টির উপরে নয়। ফলে সমষ্টির জন্য আপাত ক্ষতিকারক অনেক বৈশিষ্ট্যই বিবর্তন প্রক্রিয়ায় বাতিল না হয়ে ব্যক্তিগত সুবিধা দিতে গিয়ে টিকে থাকতে পারে।
২) প্যারাসাইটগুলো মস্তিষ্ক এবং দেহের জৈবিক প্রক্রিয়ার দখল নিয়ে নিতে পারে, যদিও তাদের উদ্ভব হয়তো একটা সময় ঘটেছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রয়োজনে।
৩) জিন কিংবা মিমের বহির্সংক্রমণ ঘটতে পারে এবং যে কোন সময় আঞ্চলিক পরিবেশের ধংসসাধন ঘটতে পারে।
৪) জিন কিংবা মিমের ভাল কিংবা মন্দ বৈশিষ্ট্য পরিস্থিতিভেদে বিলুপ্ত হতে পারে কিংবা সিকেল সেল অ্যানিমিয়ার মতো টিকে থাকতে পারে।

এবং সর্বোপরি
৫) ধর্মীয় বিশ্বাস বিলুপ্ত না হয়ে টিকে থাকে, কারণ এগুলো আসলে ভাইরাস।



অর্থাৎ, অনেকটা ভাইরাসের মতোই ‘বিপজ্জনক মিমগুলো’ দেহকোষ কিংবা মস্তিষ্কের দখল নিতে পারে, এবং পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এক হোস্ট থেকে অন্য হোস্টে। লেখক দেখিয়েছেন, একটি ভাইরাস যখন কোথাও সংক্রমণ ঘটায় তখন যেমন কখনো চিন্তা করে না একটি দেহের জৈব রাসায়নিক উপাদান কত সুষম বা সুন্দর, কিংবা কখনোই ভেবে দেখে না সে মোটা দাগে জীবদেহের, সমাজের কিংবা পরিবেশের ক্ষতি করছে না উপকার, সে কেবল ওটাকে ব্যবহার করে যেতে থাকে। মানব মনে প্রোথিত বিশ্বাসগুলোও তেমনি। যদিও ধর্ম বর্তমান এবং আগামী সভ্যতার জন্য এক ধরণের বোঝা কিংবা অভিশাপের মতো হয়ে উঠেছে, কিন্তু এর বৈশিষ্ট্য ক্ষতিকর হলেও এটা টিকে থাকতে পারে চিরায়ত বিবর্তনের নিয়ম মেনেই। লেখক এ প্রসঙ্গে, ইকনিউমেন প্রজাতির একধরনের প্যারাসিটোয়েড বোলতার সাথে দুর্দান্ত সমন্বয় ঘটিয়েছেন ধর্ম বিশ্বাসে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের মনের। আক্ষরিক অর্থেই ধর্মবিশ্বাস মানব মননকে প্যারালাইসড করে ফেলে, এককেন্দ্রিক চিন্তা থেকে বেরুবার পথগুলো রুদ্ধ করে দেয়। ফলে নিজের অজান্তেই এক একটা মৌলবাদী হয়ে উঠে এক একটা ‘সাইকো পেসেন্টে’। মৌলিক বা ভিন্ন চিন্তা তখন আর তার মাথা থেকে বেরোয়না। বুদ্ধি জড় হিসেবে থেমে থাকলে তবু মানা যেতো, কিন্তু সে তার এই প্যারালাইজড মস্তিষ্ক নিয়ে ক্রমাগত ভাবে আশপাশের অন্য মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, জোর খাটানোর চেষ্টা করে, জিহাদ কিংবা কাতল্-এ উদ্বুদ্ধ হয়, কামনা করে “শহীদি” মৃত্যু। ঠিক যেমনটা ল্যাংসেট ফ্লুক আক্রান্ত পিঁপড়ে পশু খাদ্যের সাথে গবাদি পশুর পাকস্থলীতে প্রবেশের অবিরাম চেষ্টা করে। অধ্যায়টিতে বিবর্তনীয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে কেন এবং কিভাবে ক্ষতিকর এই বিশ্বাসের ভাইরাস সমাজে টিকে আছে। শ্রেণী বিভক্ত সমাজে সমস্যার অন্ত নেই। ফলে বিশ্বাসের-ভাইরাসের সারভাইভাল সমাজ ব্যবস্থাই তাকে করে দিচ্ছে। ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো হাজারো সমস্যার চাপে মানুষ আশ্রয় খোঁজে আশপাশের পরিবেশে। যেহেতু রাষ্ট্র কাঠামো মানবিক নয়, আমাদের সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি, জীবনযাপন – অনেক কিছুই মানবতাবিবর্জিত, তাই সে আক্রান্ত হয়, আটকে পড়ে ভাইরাসের ফাঁদে। যেটা তাকে আপাত শান্তি দিচ্ছে বলে মনে করলেও মূলতঃ ব্যবহৃত হচ্ছে ভাইরাসের হোস্ট হিসেবে। এই বিষয়গুলোর চমৎকার বিবর্তনীয় বিশ্লেষণ আছে ১৬৯ পৃষ্ঠায়।

পাশাপাশি বইটির কিছু দুর্বলতার কথাও আমি উল্লেখ করব। বইয়ের ভূমিকায় এক জায়গায় লেখক লিখেছেন –

‘বইয়ের কথা মাথায় আসলেও সেটা যে এ বছরের মধ্যেই ঘটবে ঘুণাক্ষরেও মাথায় ছিল না। বইমেলা শুরুর দু’মাস আগে কেউ বইয়ের কাজ শুরু করে সেটা আবার শেষও করতে পারে নাকি? কিন্তু সেই অসম্ভব কাজই সম্ভব করে সবাইকে দেখিয়ে দিলেন জাগৃতি প্রকাশনীর তরুণ প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন। তিনি যেভাবে তাগাদা দিয়ে আমার কাছ থেকে লেখা আদায় করে নিলেন, বই আকারে পাঠকদের সামনে তুলে ধরলেন, সেটাও ভাইরাসের চেয়ে কম আশ্চর্যজনক ব্যাপার নয়। তিনি এতো কম সময়ের মধ্যে শুধু বইয়ের লেখা আদায়ই করেননি, মনোরম একটি প্রচ্ছদ করে মেলা শুরুর বহু আগেই ফেসবুকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তার এহেন অবদান এবং নিরন্তর চাপাচাপি ছাড়া বইটি আলোর মুখ দেখতো না, তা হলফ করেই বলা যায়’।


কম সময়ে বই প্রকাশের কিছু সমস্যা তো থাকেই। সেক্ষেত্রে বইটির দুর্বল দিক হচ্ছে মুদ্রণ প্রমাদ। প্রথমদিকের চ্যাপ্টার গুলোতে ভুল বানানের পরিমাণ বেশি, পরে কমে এসেছে। বিশেষ করে “র” এবং “ড়” এর বিভ্রান্তি বেশি ভুগিয়েছে। এছাড়াও কিছু জায়গায় বাক্যের মাঝখানে একটা শব্দ বাদ পড়ায় অর্থ পাল্টে গেছে। যেমন ৭৭ পৃষ্ঠায় একটি বাক্য “মন মানসিকতা না বনলে প্রকৃতি পাত্তা দেবে মোটেই”। এখানে পাত্তা দেবেনা মোটেই হবে। ১২৯ পৃষ্ঠায় ‘লেখক’ হবার কথা। ফন্ট কনভার্সন কিংবা প্রকাশকের দ্রুত প্রকাশ করার চেষ্টা হয়তো পিছনের কারণ। তারপরও বলতে হয় প্রকাশক বইটিকে ঝকঝকে ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন নিরন্তর।বইটি প্রকাশের তাড়াহুড়া থাকলেও বিশ্লেষণে কোন ঘাটতি নেই, নেই কোন ফাঁক ফোকর, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

আলোচনার শেষে এসে বলতে চাই আমাদের প্রিয় অভিজিৎ দা’ যেভাবে অসীম ধৈর্য নিয়ে শত শত বইয়ের চুম্বক অংশগুলো আত্মস্থ করে আমাদের “বিশ্বাসের ভাইরাস” উপ��ার দিয়েছেন, যেভাবে অনিয়মিত পাঠকের জন্য তুলে এনেছেন বিভিন্ন ব্লগের-পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলগুলো, যেভাবে পাঠককে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মুক্তমনা সংগঠনের সাথে, যেভাবে পরম মমতায় বিভিন্ন ব্লগের প্রতিভাবান লেখকদের টেনে এনেছেন প্রাসঙ্গিক আলোচনায়, বিশ্লেষণ করেছেন তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধগুলোকে, পাঠককে যেভাবে ভার্চুয়াল জগতের প্রতিবাদী ভুবনে�� সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সেটা কেবল মুক্তমনা আলোর পথযাত্রীর পক্ষেই সম্ভব। এই অসাধারণ সৃষ্টিকর্মের জন্য তাঁকে আমার টুপি খোলা অভিনন্দন।

সবশেষে, ভাইরাস থেকে মুক্তি অধ্যায়ের মতো আমিও রায়হান আবীরের “মানুষিকতা”র আলোকে বলতে চাই যেদিন নিশ্চিতভাবে সমাজের বড় অংশ বুঝতে পারবে চারপাশের সবকিছুই প্রাকৃতিক, সকল দেবতা, অপদেবতা কিংবা ঈশ্বর মানুষের সৃষ্ট পৌরাণিক চরিত্র ব্যতীত কিছুই নন, সেদিন সত্যিকারের স্বাধীনতার তীব্র আনন্দে মাতোয়ারা হবে আমাদের মন, শরীরের প্রতিটি কণা, রক্তবিন্দু, ইন্দ্রিয়। সার্থক হবে অভিজিৎ রায়ের পরিশ্রম। শেষ করতে চাই ২১৫ পৃষ্ঠার অনন্য উক্তি দিয়ে-

“ভাইরাসমুক্ত জীবনের আস্বাদন কোন সুনির্দিষ্ট গন্তব্য নয়, বরং একটি চলমান যাত্রাপথের নাম। আমরা সবাই এই ভাইরাস দিয়ে কোন না কোন ভাবে আক্রান্ত এবং আমরা নিজেদের অজান্তেই বয়ে নিয়ে যাই অসুস্থ বিশ্বাস, মতামত কিংবা ধারণা। আমাদের অনেকের মাথাই আক্রান্ত করে ফেলা হয়েছে আমাদের শিশু বয়সেই আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের পানপাত্র হাতে তুলে দিয়ে। আক্রান্ত মননকে প্রতিষেধক দিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ করে ফেলাই হবে আমাদের যাত্রাপথের লক্ষ্য। আমরা যদি বিশ্বাসের ভাইরাসের কুফলগুলো বুঝতে পারি, এ সম্বন্ধে সর্বদা সচেতন থাকতে পারি, তবেই আমরা ভাইরাস মুক্ত সমাজ প্রত্যাশা করতে পারি’।


[রিভিউটি মুক্তমনায় প্রকাশিত]
Profile Image for Henry Ratul.
64 reviews116 followers
July 2, 2019
অভিজিৎ রায়-এর বইয়ে প্রতিটা লাইনে থাকে রেফারেন্স, যে বিষয়টা আপনাকে বাধ্য করবে উনার লেখা এবং লজিকে চোখবন্ধ করে বিশ্বাস করতে। অবশ্যই, এই বিশ্বাসের বিষয়টা আর উনার লজিকের বিপরীতে এন্টি-লজিক দাঁড় করানোটাও সম্পূর্ণই আপনার ব্যক্তিগত বিষয়।

এর আগে উনার সমকামিতা: একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান বইটি পড়েও অনেক জানা-অজানাকে জেনেছিলাম, এই বইটিও কিন্তু তার বিপরীত নয়। যদি আপনি জ্ঞানপিপাসু ও মুক্তমনের অধিকারী হন, তবে অবশ্যই এই বইটি পড়বার অনুরোধ করা হল।
Profile Image for Toufiq.
23 reviews32 followers
October 5, 2015
I have been looking to get hard-copy of this book for almost a year. Finally, I read this, although online. I have heard lots of good words about it, and yes, I am very much disappointed- at Avijit, and at those who liked and recommended it.

Reasons why I stopped at about 35% and did not like it:

1. Unoriginal (Scrapbook): Avijit merely copy-pasted references, quotes, logics, and everything else from other sources. I could not find a single original 'thing' in this book.

2. Unorganized (Avijit does play dice): Same exaples comes over and over again,a nd with no sequence. The word-count exceeded my patience.

3. Irrational: I would qoute from this book to prove my point now. It is like, "Anything you say can and will be held against you."

"কাজেই শক্তিশালী মেটাফর এবং তুলনার একটা আলাদা গুরুত্ব আছে, বিশেষত সেটা যদি বাস্তবতাকে এত লাগসই ভাবে তুলে ধরতে পারে। কার্ল মার্কস এক সময় ধর্মকে অপিয়ামের সাথে তুলনা করেছিলেন। ধর্মের সম্মোহনী শক্তি বোঝাতেই এটা করেছিলেন তিনি। এখন কেউ যদি এর সমালোচনায় লেখে, অপিয়াম হচ্ছে এলকালয়িড গ্রুপের একটা ড্রাগ – যে গ্রুপে আছে মরফিন এবং কোডিন। ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে এগুলো মস্তিস্কের স্নায়ুকে বিকল করতে পারে। কিন্তু ধর্মকে কি ল্যাবে পরীক্ষা করে এরকম কিছু পাওয়া গেছে? অপিয়ামের রাসায়নিক উপাদান বাস্তবে পাওয়া গেছে, ধর্মের ক্ষেত্রে কি সেরকম কিছু পাওয়া গেছে? এ ধরনের প্রশ্ন কেউ শুরু করলে পুরো ব্যাপারটা হাস্যকর লেভেলে চলে যাবে। সেটাই গেছে। ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ কথিত ধার্মিক ব্যক্তির মস্তিষ্কে থাকা সেই ভাইরাসের এধরণের কোন প্রমাণাদি কি আছে?’ আমার কাছে এ অনেকটা সেরকমের হাস্যকর প্রশ্ন। মার্ক্স যেমন ধর্মকে অপিয়ামের মতো সম্মোহনী শক্তিধারী মনে করেন, আমি মনে করি ধর্ম অনেকটাই ভাইরাসের মতো সংক্রামক। কেন ধর্ম ভাইরাসের মতো সঙ্ক্রামক মুহাম্মদ গোলাম সরোয়ার তাঁর লেখায় [অভিজিৎ রায়ের “বিশ্বাসের ভাইরাস” নিয়ে একটি অপ্রাসঙ্গিক – অবৈজ্ঞানিক সমালোচনার পাঠ প্রতিক্রিয়া] ইতোমধ্যেই খুব ভাল ভাবে দেখিয়েছেন। আমিও আমার বইয়ে এবং প্রবন্ধে মেমেটিক্সের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা এবং অজস্র উদাহরণ হাজির করেছি। আমার মনে হয় নিজেকে ডিফেন্ড করার জন্য এটুকুই আপাতত যথেষ্ট।"

The statement, Opium is like a religion as Kal Marx has stated it, and thus needs no further justification is just meritless, at least in a book that approaches scientifically; or, at least, claims to do so! If one compares religion with a drug, even though as a metaphor; one must provide sufficient reasoning behind this, like physiological effect, contagion, curing, etc.

I am ending with lesson-learned from this book, "Do not judge a book by its cover."
Profile Image for Sadia Zaman.
6 reviews3 followers
October 18, 2015
Though the book was thought provoking, but to me it lacked in originality. The contents were mostly collection of various sources. Besides that, I found several times reading the same thing again and again. But overall, not bad.
Profile Image for Shafayet Muttaky Durjoy.
12 reviews8 followers
July 10, 2020
ইনফরমেটিভ লেখা। পড়া শেষ করে খুবই ভাল্লাগসে।
Profile Image for S. M. Hasan.
161 reviews
Read
September 13, 2020
ওকে, ধন্যবাদ। নিজের মন মত ইতিহাসে ব্যাখ্যা, বিশেষ করে কুরঅান শরীফের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
আর একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি করার মানেটা বুঝতে পারলাম না।
Profile Image for Swadesh Maverick.
37 reviews4 followers
August 29, 2019
দারুণ সুখপাঠ্য একটি বই৷ ধর্মের অসাড়তা তুলে ধরতে গিয়ে লেখক এখানে মানুষের মনোসামাজিক অবস্থা, বিশ্বাসপ্রবণতার উৎপত্তি ও কারণ এবং ধর্মের সাথে এদের সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। তিনি আরও দেখিয়েছেন, আপাতদৃষ্টিতে ধর্মবিশ্বাস অতি মামুলি একটি বিষয় হলেও বিশেষ সময়ে বিশেষ স্থানে ধর্ম পরিণত হতে পারে ভয়াবহ সর্বগ্রাসী এক চেতনায়, যার প্রমাণ মেলে ক্রুসেডের যুদ্ধ, সতীদাহ প্রথা, ক্যাথলিক-প্রোটেস্টান্ট যুদ্ধ, আর্যদের ভারত আক্রমণ কিংবা ইসলাম ধর্মের সূচনায় মুসলিমদের আগ্রাসী আচরণের দিকে তাকালে। অতি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখক ধর্মের অসাড়তা ও অপ্রয়োজনীয়তা যৌক্তিকভাবে তুলে ধরেছেন। আমার ভালো লেগেছে সবমিলিয়ে।
Profile Image for Joy OKIMURO.
46 reviews6 followers
April 28, 2017
সমাজে অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, অসহিষ্ণুতা, নাস্তিকতা ও উগ্রতা ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে এধরনের তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্ক বই চমৎকার ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এক চিমটি বিজ্ঞানের সাথে দুই চা চামচ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (Sci-fi) এবং এক গ্লাস ইসলাম-বিদ্বেষ মিশিয়ে জোরসে একটা ঝাকুনি দিলেই প্রস্তুত হয় একেকটা বিজ্ঞানধর্মী গ্রন্থ!!
Profile Image for Shuk Pakhi.
502 reviews286 followers
November 8, 2015
লেখক দেখিয়েছেন ধর্ম কিভাবে মানুষ এবং সমাজের ক্ষতি করছে। সমাজ ব্যবস্থা হওয়া উচিত বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে, ধর্ম না থাকলেও সমাজ চমৎকারভাবে চলতে পারে বরং ধর্ম সমাজকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে...এসব বিষয় নিয়েই তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, উদাহরন দিয়েছেন বইটাতে।
1 review
Want to read
November 1, 2015
অনেকদিন ধরেই খুব আগ্রহ নিয়ে বইটি খুজছিলাম।
Profile Image for নাঈম রিজভী.
2 reviews4 followers
November 26, 2015
অগোছালো। আগের বইগুলোর হিসেবে তেমন নতুন কোন তথ্যের সংযোজন ঘটেনি। একই উদাহরণ (ক্ষেত্রবিশেষে একই টেক্সট) বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। বই হিসেবে তেমন সুখপাঠ্য হয় নি।
1 review
April 4, 2018
অযৌক্তিক যুক্তি দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে
Profile Image for Joyenium Joy.
1 review2 followers
Currently reading
March 17, 2018
awesome
This entire review has been hidden because of spoilers.
Displaying 1 - 17 of 17 reviews

Join the discussion

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.