ভাদ্র মাসের সন্ধা। আকাশে মেঘ আছে। লালচে রঙের মেঘ। যে মেঘে বৃষ্টি হয় না, তবে দেকায় অপূর্ব। এই গাঢ় লাল, এই হালকা হলুদ, আবার চোখের নিমিষে লালের সঙ্গে খয়েরি মিশে সম্পূর্ণ অন্য রঙ। রঙের খেলা যিনি খেলছেন মনে হয় তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।’
এভাবেই সূচনা ঘটেছে হুমাযূন আহমেদের চার দশকের বর্ণময় লেখকজীবনের শেষ উপন্যাস ‘দেয়াল’- এর। ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে ‘দেয়াল’ রচনা শুরু করেছিলেন তিনি। সে-সময় উপন্যাসের পাঁচটি পর্ব ধারাবাহিকভাবে ‘অন্যদিন’-এর প্রকাশিত হয়। এরপর বেশ কিছুদিন বিরতির পর যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর ক্যানসার চিকিৎসা চলাকালে নতুন করে ‘দেয়াল’ রচনায় মনোনিবেশ করেন তিনি, যদিও শেষ পর্যন্ত উপন্যাসটির চূড়ান্ত রূপ দেয়ার সুযোগ পান নি।
সূচনা-অনুচ্ছেদে আকাশের রঙবদলের খেয়ায় যে সিদ্ধান্তহীনতার কথা বলা হচ্ছে তা বিশেষ ইঙ্গিতবহ। যে সময়কে উপজীব্য করা হয়েছে ‘দেয়াল’-এ, তা একটি সদ্যস্বাধীন জাতির ভাগ্যকাশের চরম অনিশ্চয়তার কাল। উপন্যাসের কিছু চরিত্র বাস্তব থেকে নেওয়া, নাম-ধাম সবই বাস্তব, ঘটনা-পরস্পরাও বাস্তবেরই অংশ। লেখক যেহেতু উপন্যাস লিখেছেন, তাই আছে কিছু কাল্পনিক চরিত্র। গল্প আবর্তিত হয়েছে এদের ঘিরেও।
নানা ঘটনার ঘনঘটায় ঢাকা পড়ে নি জীবনসৌন্দর্য আর জীবন-সত্যের সন্ধান। ইতিহাসের সত্য আর লেখকের সৃজনী ভাবন্য-দুইয়ে মিলে ‘দেয়াল’ পরিণত হয়েছে একটি হৃদয়গ্রাহী উপাখ্যানে।
Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi author, dramatist, screenwriter, playwright and filmmaker. He was the most famous and popular author, dramatist and filmmaker ever to grace the cultural world of Bangladesh since its independence in 1971. Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. Humayun started his journey to reach fame with the publication of his novel Nondito Noroke (In Blissful Hell) in 1972, which remains one of his most famous works. He wrote over 250 fiction and non-fiction books, all of which were bestsellers in Bangladesh, most of them were number one bestsellers of their respective years by a wide margin. In recognition to the works of Humayun, Times of India wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." Ahmed's writing style was characterized as "Magic Realism." Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century and according to him, Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every years of the 1990s and 2000s.
Early life: Humayun Ahmed was born in Mohongonj, Netrokona, but his village home is Kutubpur, Mymensingh, Bangladesh (then East Pakistan). His father, Faizur Rahman Ahmed, a police officer and writer, was killed by Pakistani military during the liberation war of Bangladesh in 1971, and his mother is Ayesha Foyez. Humayun's younger brother, Muhammed Zafar Iqbal, a university professor, is also a very popular author of mostly science fiction genre and Children's Literature. Another brother, Ahsan Habib, the editor of Unmad, a cartoon magazine, and one of the most famous Cartoonist in the country.
Education and Early Career: Ahmed went to schools in Sylhet, Comilla, Chittagong, Dinajpur and Bogra as his father lived in different places upon official assignment. Ahmed passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1965. He stood second in the merit list in Rajshahi Education Board. He passed HSC exam from Dhaka College in 1967. He studied Chemistry in Dhaka University and earned BSc (Honors) and MSc with First Class distinction.
Upon graduation Ahmed joined Bangladesh Agricultural University as a lecturer. After six months he joined Dhaka University as a faculty of the Department of Chemistry. Later he attended North Dakota State University for his PhD studies. He grew his interest in Polymer Chemistry and earned his PhD in that subject. He returned to Bangladesh and resumed his teaching career in Dhaka University. In mid 1990s he left the faculty job to devote all his time to writing, playwright and film production.
Marriages and Personal Life: In 1973, Humayun Ahmed married Gultekin. They had three daughters — Nova, Sheela, Bipasha and one son — Nuhash. In 2003 Humayun divorced Gultekin and married Meher Afroj Shaon in 2005. From the second marriage he had two sons — Nishad and Ninit.
Death: In 2011 Ahmed had been diagnosed with colorectal cancer. He died on 19 July 2012 at 11.20 PM BST at Bellevue Hospital in New York City. He was buried in Nuhash Palli, his farm house.
রুপবতী এক খেয়ালী তরুনী, আছে। বন্ধনহীন যুবক, আছে। বিকারগ্রস্ত বৃদ্ধ, আছে। হুমায়ুনীয় মেটাফোর যেমন- ‘কিছু বিদ্যা মানুষের ভেতরেই থাকে, যা সে জানেনা।’, আছে। বলা যেতে পারে ‘দেয়াল’ তাই হুমায়ূন আহমেদেরই উপন্যাস। যথার্থ। কেমন লেগেছে ??... ভালো নয়।
‘দেয়াল’ এর শুরুটাই বিতর্কিত ছিলো। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত উপন্যাসটির টিজারে তথ্যগত ভ্রান্তি ছিলো- মামলা পর্যন্ত গড়ায় সে ভুল। প্রিয় গল্পকার হুমায়ূনের শেষ উপন্যাস নিয়ে তাই আশা-আশঙ্কা’র দোলাচল ছিলো মনে। অবশেষে পড়া হলো।
‘দেয়াল’ রাজনৈতিক উপন্যাস। বলা ভালো, ঐতিহাসিক উপন্যাস। কিন্তু উপন্যাসের কোথায় সে ইতিহাস ?? পাঠক সুহান খুঁজেছে। পেয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম, পেয়েছে কমিক চরিত্র খন্দকার মোশতাককে, পেয়েছে কর্ণেল তাহেরকে, পেয়েছে খালেদ মোশাররফকে। এসেছেন জিয়া, শাফায়াত জামিলেরা। তবে বিক্ষিপ্ত- ছাড়া ছাড়া। জীবদ্দশার শেষ কয়েকবছর হুমায়ূনের অন্যান্য লেখার মতোই- টেনেছে ভাষার স্রোতের টানে, বাঁধনে জড়ায় নি গাঁথায়।
যে অস্থির সময়কে ধরতে চেয়েছেন লেখক, সেই সময়ের মতোই রোলারকোস্টারে চড়া যেন কাহিনীর বুনোট। এই চরিত্র আসছে, ও যাচ্ছে। কেন যাচ্ছে- বুঝি না। বেশ কিছু চরিত্রের আবির্ভাবের উপযোগ বুঝিনি, কুয়াশায় ঢাকা অনেকের পরিণতিও।
রাধানাথ বাবুর সাথে ইউজিন বোস্টারের সম্পর্কের দূরতম ঈঙ্গিত’ও লেখায় নেই। নেই খন্দকার মাকড়সা মোশতাকের ষড়যন্ত্রের জাল। আছে ঠিক তিরিশটা তথ্যসূত্রের তালিকা, যদিও স্থানে স্থানে মাসকারেনহাসের উল্লেখ/উদ্ধৃতি দিয়ে লেখক তার আশ্রয়ের মূলটা নির্দেশ করেছেন। মাসকারেনহাসের বইটিও গল্পের ছলে লেখা, যেই গল্প বলার শক্তিটা হুমায়ূনকে করেছে অতুলনীয়।
ব্যক্তি হুমায়ুন উপন্যাসে এসেছেন অনেক জায়গায়। সুতো কাটা কাটা হয়েই, বোঝা গেছে রক্ষিবাহিনীর প্রতি তার বিরাগ, বোঝা গেছে কর্ণেল তাহেরের প্রতি অনুরাগ- জিয়ার ব্যক্তি জীবনের সততার উল্লেখও আছে। তবে জিয়ার সানগ্লাসের মতো অস্পষ্ট থেকে গেছে ৭২-৭৫ এর ঢাকা বা বাংলাদেশ।
ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর মাঝে খালেদ মোশাররফকে বাস্তবের সবচেয়ে কাছাকাছি এঁকেছেন হুমায়ুন। তার কাছাকাছি পাঠক যেতে পারে। কিন্তু দুর্যোগের ছয়’ই নভেম্বর রাতে অবন্তির বাসায় তার মাছ চিবোনোটা জাদুবাস্তবতার মতোই ঠেকে।
‘দেয়াল’ নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া তাই সরল। ভালো লাগেনি, একদমই। সাধারণ পাঠকতো (“এই প্রজন্ম” শব্দদ্বয়ও- লিখতে পারেন অনেকে)) আর ইতিহাস পড়ে না, তাই দেয়ালই বা খারাপ কি- এই যুক্তিতেও সেই অপছন্দ ঢাকা যায় না।
সমাপ্তি টানবো আরেকটা কথা বলেই। ১৫ আগস্টের রাত বর্ণনায় নাপিত হরিদাসের প্রসঙ্গ এসেছে। খুবই অল্প কথায় আঁকা সোবহানবাগের এই নাপিত আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়- হুমায়ূন পারতেন- চাইলেই পারতেন। কেন পারেন নি, ‘দেয়াল’ সে প্রশ্নের দেয়ালটা চওড়া করে আরো।
গুড বাই মায়েস্ত্রো হুমায়ূন। আপনাকে মনে রাখবো। মনে রাখবো সাদা গাড়ির অসুখী যুবকে বা নিশীথিনীর রানুতে। ‘দেয়াল’ এর জন্যে নয়।
খুব অক্ষমতা এবং লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করি বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব ও পরবর্তী সময়ের ইতিহাস সম্পর্কে আমি ঠিক বেশি কিছু জানি না। শুনেছি, টুকটাক পড়েছি এখানে-ওখানে.. পত্রিকা কিংবা উপন্যাসের আয়ত ভাঁজে। ঐটুকুই। সবিস্তার পড়াশোনার ইচ্ছে আছে, সময় এবং সুযোগ তৈরী হলে।
হুমায়ূনপ্রেমের ঘোর কেটে গেছে বহু আগে। তাঁর শেষ রচিত উপন্যাস পড়লাম বেশ দেরি করেই। না পড়লেও অবশ্য ক্ষতি ছিল না। অবশ্যপাঠ্য কোন উপন্যাস এটি নয়।
অস্থির রাজনৈতিক পটভূমি নিয়ে রচিত এই অাখ্যানে এসেছেন অনেক বিখ্যাত ও কুখ্যাত ঐতিহাসিক চরিত্র। কিছু তথ্য বেশ চমকপ্রদ, কিছু আগেই জানা। কোন চরিত্রই প্রস্ফুটিত নয় সম্পূর্ণ ভাবে। অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের নাম এসেছে বেশ কয়েকবার তথ্যসুত্র হিসেবে। শ্বেতসর্প খন্দকার মুশতাককে আঁকা হয়েছে ভাঁড় হিসেবে, তাজউদ্দীন আহমেদ রয়ে গেছেন প্রায় অনুল্লেখিত-ই। লেখকের ব্যক্তি জীবনের বেশকিছু তথ্য আছে, আছে যুদ্ধবিধস্ত দেশে একটি শহীদ পরিবারের অসহায়ত্বের কথা,কর্ণেল তাহেরের সঙ্গে পারিবারিকভাবে লেখকের ঘনিষ্ঠতার কথাও। আছেন খালেদ মোশাররফ, জেনারেল মঞ্জুর,শাফায়েত জামিল এবং জিয়াউর রহমান। থাকতে পারত আরো নিপুণ কলেবরে, আরো নানা কিছু।
অপ্রয়োজনীয় এবং অতি বিরক্তিকর টিপিক্যাল রুটিনড মশলা হিসেবে আছে বিপত্নীক বৃদ্ধ, খাপখোলা তলোয়ারসম রূপবতী তরুণী, একাধিক বিকারগ্রস্থ মাঝবয়সী মহিলা, জ্বিনপরীহুজরাখানা, অলৌকিক প্রভাবযুক্ত চিরকুমার সন্তপুরুষ এবং তদসংক্রান্ত একগাদা অসংলগ্ন সংলাপগুচ্ছ।
বইয়ের ফ্ল্যাপের একাংশে লেখা ''ইতিহাসের সত্য আর লেখকের সৃজনী ভাবন্য-দুইয়ে মিলে ‘দেয়াল’ পরিণত হয়েছে একটি হৃদয়গ্রাহী উপাখ্যানে'', খ্যা খ্যা.. হাসি চেপে রাখা গেলো না।
দুঃখিত হুমায়ুন আহমেদ। আমার হৃদয় আপনি ছুঁয়ে থাকবেন একসয়ের অন্য আরো অসংখ্য রচনার কারণে, যখন আপনি অন্যপ্রকাশ-শাওন-সময় প্রকাশনীর সুতোয় নাচা একুশে বইমেলার বাজারি লেখক ছিলেন না। এই সুবিধাবাদী রাজনৈতিক উপন্যাসটি কোনক্রমেই সেগুলোর অর্ন্তভুক্ত হবার যোগ্যতা রাখেনি।
বইটা পড়েছিলাম বের হওয়ার পরপরই। কোনো বই বের হবার সাথে সাথে পড়ে ফেলাটা আমার জন্য বিরল। হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু আর বইটা নিয়ে আদালতে দৌড়াদৌড়িই এত তাড়াতাড়ি পড়ার কারণ। তখন আমি হুমায়ুন আহমেদের অন্ধভক্ত না হলেও কাছাকাছি পর্যায়ের কেউ। তাই এই অখাদ্যও খারাপ লাগেনি। '৭১ পরবর্তী নানা ব্যাপার সম্পর্কে জানার অভাব (এখনও আছে, তবে তখন আরো অনেক বেশি ছিল) এর কারণে ঐতিহাসিক ব্যাপারগুলো নিয়ে প্রশ্ন জাগেনি মনে। বইয়ের পেছনে এত এত রেফারেন্স দেখে মনে হয়েছে, উপন্যাস না, ইতিহাস পড়ছি।
এরপর কয়েক বছর গেল। ঐ ইতিহাস এখন সুবিধাবাদী ইতিহাস। তাও ভেবেছিলাম আমি ছোটো মানুষ, তাই বুঝতে পারিনি ঠিকঠাক, দোষটা লেখকের না, আমারই। তাই দিয়েছিলাম তিনতারা।
কাল ফেসবুকে জাফর ইকবাল স্যারের পেজের পোস্টের নিচে কমেন্ট দেখলাম কারো, যে কীনা দেয়ালের রেফারেন্স টেনে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, জিয়ার ক্ষমতা দখল আর আরো অসংখ্য কালো অধ্যায়কে ইনিয়েবিনিয়ে হালাল করে নিচ্ছিল। ভাবলাম, সেও বুঝি ছোটো ছিল!
কিন্তু ছোটো সে একা না, তার কমেন্টের সাপোর্টে অসংখ্য লাইক, কমেন্ট দেখে বুঝলাম, হুমায়ুন আহমেদ এই বই লিখে তাঁর আন্ধা সাপোর্টারদের কতটা জ্ঞানী করে গেছেন!
আপনি হিস্ট্রি লিখতে পারেন, ফিকশন লিখতে পারেন, আবার দুটোকে মিলিয়েও লিখতে পারেন। চাইলে ফিকশন বা সুবিধাবাদী হিস্ট্রি লিখে তাকে রেফারেন্সে রেফারেন্সে হিস্ট্রি বানানোর চেষ্টাও করতে পারেন, সেই অধিকার 'লেখক' হিসাবে আপনার আছে। এক তারা দাগিয়ে আপনার এই লেখার প্রতি আমার বিরক্তি প্রকাশের অধিকারও আমার আছে নিশ্চয়ই।
হুমায়ুন আহমদের আন্ধা সাপোর্টাররা, আসেন! গুণী লোককে কীভাবে সম্মান করতে হয় শিখিয়ে যান, আমাকে উনার মানের একটা বই লেখার চ্যালেঞ্জ দিয়ে যান। বেশি মন খারাপ হলে দুয়েকটা গালিও দিয়ে যান, কোনো সমস্যা নেই।
"রেজিমেন্টে ফিরে যাওয়া মানে সরাসরি কোর্ট মার্শালে হাজির হওয়া। খালেদ মোশাররফ হচ্ছে ময়মনসিংহের ছেলে। এঁদের ঘাড়ের তিনটা রগ থাকে তেড়া। এই তেড়া রগের কারণে আমাদের সে গুলি করে মারবে।"
লেখক এবং পাঠকও ময়মনসিংহের ছেলে। আমাদের ঘাড়ের তিনটা রগ তেড়া।
হুমায়ূন আহমেদের লেখা আমার সবচেয়ে প্রিয় বই "দেয়াল"।
অতীতের স্মৃতিচারণের সাথে যখন ইতিহাসও চলে আসে তখন ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ নিয়েও আলোচনা থাকে। ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ ইতিহাস স্পষ্ট করার বদলে উল্টো গোলকধাঁধাও সৃষ্টি করতে পারে। বই পড়ার সময় বেশ কিছু জায়গায় এমনটাই মনে হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের সেনাবাহিনী দিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে চেয়েছেন আবার মেজর জিয়াও বহু সেনাসদস্যদের ফাঁসি দিয়েছেন, গোপনে বিচারও করেছেন বইয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনীর অবস্থানকে ধোঁয়াশার মধ্যেই রাখা হয়েছে। কিছু সেনাসদস্যের কথা আছে কিন্তু সেখানেও অস্পষ্টতা। কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে পেরেছি। ১৯৭১ ও পরবর্তী সময় নিয়ে আরও অনেক বই পড়া লাগবে।
ইতিহাস আশ্রয়ী গল্প-উপন্যাস লেখা বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। পরোক্ষভাবে খোঁচা দিয়েছিলেন খুব সম্ভবত আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বা শওকত আলীকে। অথচ পরে এক সময় অবজ্ঞা করা পথে নিজেরও হাঁটার খায়েশ হলো। লিখলেন কয়েকটি ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস। যেগুলো একেকটা হয়েছে বড় বড় ঘোড়ার ডিম। তাঁর শেষ উপন্যাস ‘দেয়াল’ও ঘোড়ার ডিমগুলোর একটি। ভালো দিক এই যে পড়তে সময় লাগেনি, অর্থাৎ সময় বেশি নষ্ট হয়নি। আর অনেকদিন পর এক সময়ের প্রিয় লেখকের বই পড়তে বসার কারণেই হয়তো প্রথম অর্ধশত পৃষ্ঠা পর্যন্ত পাঠ আনন্দদায়ক ছিল। দুইটা তারা এই দুই কারণে।
হুমায়ূন আহমেদ কখনোই হতাশ করেন না আমাকে। দেয়াল তার শেষ উপন্যাস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ইতিহাস ও এর পরের কয়েকটি সেনা অভ্যুত্থানই এই উপন্যাসের উপজীব্য। তবে ইতিহাসের সাথে কল্পনার ভালো রকমেরই মিশ্রণ ঘটিয়েছেন লেখক। কয়েকটি কাল্পনিক চরিত্র ও দৃশ্যকল্প হাজির করেছেন। বিশেষ করে খন্দকার মোশতাককে অনেকটা কমিক রোল বানিয়েছেন। খারাপ লাগেনি ব্যাপারটা। তবে বইটা খুব একটা পক্ষপাতদুষ্ট নয়। ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর প্রায় সবাইকেই একইসাথে সমানভাবে ভালো ও খারাপ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। কোনো প্রোপাগণ্ডা বাস্তবায়নের ইচ্ছা তার ছিল বলে মনে হয় না। পঁচাত্তর পরবর্তী ইতিহাসের জন্য এটা ভালো রেফারেন্স বই না হলেও ক্রমাধারা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা আইডিয়া তো পাওয়াই যায়।
শেষপর্যন্ত হুমায়ুন আহমেদের শেষ উপন্যাস দেয়াল পড়া হল। হুমায়ুনের একজন একনিষ্ঠ পাঠক হিসেবে যে তাঁর গত দশবছরের লেখনির ক্রমনিম্নগামি কোয়ালিটিতে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হবার পরিবর্তে বিরক্ত-আশাহতই হয়েছে বারবার, বলতে পারি বইটা খারাপ না, বেশ ভালোই... যদিও মনে হয়েছে বইটা খুব বেশি ছোট । যে সুবিশাল প্রেক্ষাপট আর বাংলাদেশের অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটা সময়কে তুলে ধরা নিয়ে লেখা সেটার জন্য মাত্র ২০০ পৃষ্ঠা আমার মতে একেবারেই অপ্রতুল । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'পূর্ব-পশ্চিম', 'সেই সময়' বা হুমায়ুনের নিজেরই 'মধ্যাহ্ন'-এর মত বড় বড় দুই খণ্ড প্রয়োজন ছিল আমার মত নতুন যুগের যারা আমাদের ইতিহাসের এই অবিশ্বাস্য গুরুত্বপূর্ণ-কিন্তু একইসাথে সবচেয়ে কম বিবৃত ও সর্বাধিক পলিটিক্যালি ম্যানিপুলেটেড ঘটনাবলী সম্পর্কে অনেকটাই অন্ধকারে (এবং আমি নিশ্চিত আমার মত আরো অসংখ্য পাঠক) তাদেরকে কমবেশি আলোকিত করে গল্পকে লেখকের নিজস্ব স্টাইলে সাবলীলভাবে এগিয়ে ঠিকমতন জমিয়ে তুলতে । কারণ ঐতিহাসিক সব ঘটনাবর্ণনার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই মনে হয়েছে যেন উইকিপিডিয়ার সারসংক্ষেপ পড়ছি। যা হোক, কী হতে পারত তা নিয়ে আক্ষেপ করে তো লাভ নেই, আমরা যে হুমায়ুনের মৃত্যুর পর অবশেষে এই বহুল আলোচিত উপন্যাসটি মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পেয়েছি এটাই অনেক । তার উপর যতই সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হোক না কেন, আমার মত নিছক একজন ম্যাঙ্গো পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে বস-লেখক তাঁর শেষ বইয়ের শেষ পর্যন্ত ঠিকই নিজের নামের মর্যাদা রাখতে পেরেছেন, মাত্র ২০০ পৃষ্ঠায় এহেন বিস্তৃত ইতিহাস চলনসইভাবে সাইজ করে পরিসমাপ্তিতে আনাও তো কম কথা না !
উপন্যাসটা শেষ করে আমার The Dark Knight ফিল্মের একটা অতিপ্রিয় লাইন মাথায় ঘুরছিল: 'You either die a hero, or live long enough to see yourself become the villain'. It is so terribly true in more ways than one in real life.
দেয়াল নিয়ে বাঙালি বহুভাবেই দ্বিমত পোষণের সাথে দ্বিধায় থাকেন ফিকশনের ফাঁকতালে কতটা সত্য আর কতটা কল্পনামিশ্রিত মধুর বাকে্য আশ্রিত তথ্য।
বিতর্কিত এই বইয়ের অতর্কিত সামনে আসা সব তথ্যের সাথে হৃদয়ঙ্গম হবার মতো পারঙ্গম এখনো এই দুর্বল পাঠিকা ঠিক হয়ে পারেনি, সুতরাং পক্ষপাতদুষ্ট না সবই সত্যঘটনাপুষ্ট সে তর্কাতর্কির তোড়ে তুবড়ি ছোটানোর তালে তালগোল পাকানো আপাতত বাদ দিয়ে শেষ করছি সারসংক্ষেপ।
মনটা অসম্ভব বিষন্ন হয়ে গেছে কর্নেল তাহেরের জন্য,বেশ খানিকটা সময় লাগবে এই সূর্যসন্তানের নিঃশেষে প্রাণ করিয়া দানের বিনিময়ে রঞ্জিত দেশের দুঃস্বপ্নের সেই দিনগুলো ভুলতে।
বছর পাঁচেক আগের পড়া আর এখনকার পড়ার মাঝে পার্থক্যটা বেশ বুঝতে পারছি। অপরিপক্ক পাঠকের 'হুমায়ুন ঘোর'কেটে গেছে। যাইহোক 'দেয়াল' ঠিক সার্থক হিস্টোরিক্যাল ফিকশন হয়ে উঠতে পারেনি যদিও হয়ে উঠার সম্ভাবনা ছিলো। লেখক তাঁর চিরায়ত ফর্মুলার বাইরে গিয়ে নতুন কিছু করতে পারতেন, সেই সুযোগ হেলায় মিস করেছেন। গল্পের কলকব্জার সাথে ইতিহাসের মাল-মসলা ভালো মতো মিশ খায়নি। তাই ' দেয়াল ' পুনর্পাঠে অর্ধপক্ক খিচুড়িসম মনে হলো আমার কাছে।
আমাদের দেশের ইতিহাসে ১৯৭২ পরবর্তী সময়টা অন্যতম ক্রান্তিলগ্ন হিসেবে পরিচিত কিন্তু সে প্রেক্ষিতে এই সময়কাল নিয়ে ব্যাপক নন-ফিকশন বই থাকলেও ফিকশন তেমন নেই। বইটার শুরুটা ছিলো দমদার। কাহিনী সময়ের সাথে এগিয়ে যাচ্ছিলো ভালোই তবে শেষে কেমন যেনো অসম্পূর্ণ একটা অনুভূতি হচ্ছিলো। আসলে এতো ব্যাপক ঘটনাবহুল একটা টাইম লাইন দুই মলাটে আবদ্ধ করাও চার্ট্টিখানি কথা না। সেরকম ব্যাপকতা পেলে পাঁচ তারকা এমনিই দিতাম।
আলোচিত জিনিসগুলোকে আমি সবসময় এড়িয়ে যাই। মানুষ যেটা নিয়ে বেশি হৈ হুল্লোড় করে তা দূর থেকেই দেখতে ভালো লাগে। আকর্ষণটা থেকে যাক, কাছে নিলেই নষ্ট হয়ে যাবে। হুমায়ূন আহমেদের শেষ উপন্যাসটাও অনেকটা সেরকম।
কালকে সন্ধ্যা ৬ টায় ধানমন্ডি থেকে পড়া শুরু করে, বাসের মধ্যে ঘন্টাখানেকের মধ্যে বই শেষ হয় যায়। ২৫০ টাকার বই, এত দ্রুত শেষ(?)। কিন্তু কথা হল বইটা কেমন ছিল?
প্রথমেই লেখক ধন্যবাদ পাওয়া যোগ্য, কারন সে এরকম স্পর্শকাতর একটা বিষয় নিয়ে উপন্যাস লেখার সাহস করেছে। ব্যস এতটুকুর জন্য ধন্যবাদ দিব আমি তাকে। ৭১ এর পরের ঘটনাগুলোকে নিয়ে নিজের মত করে উপন্যাসকে এগিয়ে নিয়েছে। কিন্তু দিনশেষে আমি বলব লেখক ব্যর্থ হয়েছেন অনেকাংশেই, যদিও সে উপন্যাস শেষ করতে পারেননি।
রক্ষীবাহিনীর প্রতি তার রাগ, বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধুর মত না দেখানো, কর্ণেল তাহের, জাসদ নিয়ে হালকা বাড়াবাড়ি, জিয়াকে তার কালো সানগ্লাসের মতই অস্পষ্ট রাখা, চাটুকারদের চিত্র ফুটিয়ে তোলা, আর কাছ থেকে খালেদ মোশারফ পাঠকের সামনে তুলে আনা। তারপর ছিল চালক নায়িকা, বোকা নায়ক আরো অনেককিছু।
কিন্তু দিনশেষে উপন্যাসটি অনেকটাই এলোমেলো, খাপছাড়া, লেখক অনেক কিছু বলতে গিয়েও এড়িয়ে গিয়েছেন মনে হল। তিন চাইলেই বলতে পারতেন, কিন্তু কেন বলেননি, শুধু তিনিই জানেন। রাজনৈতিক ইতিহাসের উপন্যাস হলেও, আমার মন বুলাতে পারেনি। আবার ২৫০ টাকাও জলে যায়নি। তবে হাঁ বইটি আপনাকে ইতিহাস ঘাঁটতে একটু হলেও অনুপ্রাণিত করবে।
মানুষ সবসময় সঠিক কাজটিই করতে চায়। তবে কারো কাছে যা সঠিক তা আর কারো কাছে অত্যন্ত বেঠিক। ফলস্রুতিতে মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় দেয়ালের।
উপন্যাসের সময়রেখা স্বাধীনতা যুদ্ধের একটু আগ থেকে বাংলাদেশের সপ্তম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ড পর্যন্ত।
'দেয়াল' এক বিতর্কিত উপন্যাস। হুমায়ূন আহমেদের কোন নভেল নিয়ে এদ্দুর কন্ট্রোভার্সি খুব সম্ভবত আগে হয় নি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিমার্জিত রূপে লেখকের মৃত্যু পরবর্তি সময়ে প্রকাশিত হলেও কিছু বিতর্ক রয়েই যায়।
নভেলের মূল চরিত্র অবন্তি। লেখকের অনেক উপন্যাসের মতোই অতিশয় রূপবতী, ক্ষ্যাপাটে, চপলমতি এবং প্রথাবিরোধী রূপেই অবন্তিকে পুরো আখ্যানে পাওয়া যায়। লেখক নিজেও আছেন দেয়ালে।
অবন্তিকে ঘিরে আছে নানা চরিত্র, আবার তাদের সাথে জড়িয়ে আছে আরো কিছু চরিত্র। ইতিহাসকে উপজীব্য করে লিখা 'দেয়াল' এ ঐ সকল চরিত্রসমূহ ১৯৭১ সাল থেকে শুরু করে জিয়াউর রহমানের মৃত্যু পর্যন্ত তাদের অনেকের অল্পবিস্তর আসা-যাওয়া আছে সেই সময়ের ঘটনাপ্রবাহের সাথে।
ঐতিহাসিক ফিকশন একেবারে নিরেট সত্য বলবে এটা আশা করাটা একটু বেশিই হয়ে যায়। তবে হুমায়ূন আহমেদের স্বভাবসুলভ সুখপাঠ্য ভাষার সমান্তরালে বিভিন্ন রেফারেন্সের উল্লেখ আছে বইটির শেষে।
সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের বর্ণনা পড়লে কিংবা জাতীয় চার নেতার সাথে যে মহাঅন্যায় ঘটেছিলো সেসবের বর্ণনা পড়লে যেকোন মহা আওয়ামী বিরোধীরও অন্তত কিছু মুহূর্তের জন্য মনটা বিষন্ন হয়ে উঠতে পারে।
কর্নেল তাহের এবং খালেদ মোশাররফের শেষ দিকের তীব্র বৈরিতার মাঝেও একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করাটাও পাঠকের মনে সৃষ্টি করতে পারে বিস্ময়ের।
দেয়ালের শেষ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততার প্রতিও নড দিয়েছেন লেখক।
অবন্তিকে ঘিরে একটির পর একটি ঘটনা, তার গৃহশিক্ষক শফিকের জীবনের রোলার কোস্টারের মতো উত্থান-পতন, চট্টগ্রামের হালিশহরের 'আন্ধা পীর' এর প্রাসঙ্গিক আগমন ছাড়াও আরো কিছু চরিত্র এবং গল্পের অনেক জায়গায় কমিক রিলিফ উপন্যাসটিকে অনেকের কাছেই সমাদৃত করতে পারে।
অবশ্য কেউ কেউ হতে পারেন সংক্ষুব্ধ, কারো অনুভূতিতে লাগতে পারে আঘাত। হুমায়ূন আহমেদ কাউকে যেমন দেবতার আসনে বসান নি ঠিক তেমনি যার যার যোগ্য সম্মানটুকু দেয়ার চেষ্টা করেছেন দেয়ালে।
অবশ্য উপন্যাসের বেশ কিছু বিষয় খাপছাড়া লাগতে পারে অনেকের কাছে। লাফ দিয়ে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-আশয় স্কিপ করে দেয়ালের এগিয়ে যাওয়াটা কী হুমায়ূন আহমেদের ইচ্ছাকৃত ছিলো?
মানুষ সত্যের চেয়ে রাজনৈতিক সত্যকেই অধিকতর গুরুত্ব দেয়, দিয়েছিলো, দিবে। তবে যার যার 'রাজনৈতিক সত্য' কে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নির্মানবিক কায়দায় বিদায় নিয়েছেন অনেক বীর, অনেক সূর্যসন্তান, এ জাতির। এসব বিদায় মনকে বিষাদে ভর্তি করে দেয়।
অবশ্য উপন্যাসের কিছু অংশ বেশ রাশড। দেয়ালের শেষ ক'লাইন পড়ে রীতিমতো হতাশ হয়েছি। মঞ্জুরের সকল কর্মকান্ডের দায় কীভাবে চাপিয়ে দেয়া হলো তার স্ত্রীর উপর? "প্রলয়ংকারী স্ত্রী বুদ্ধি কাজ করে থাকতে পারে" টাইপ বাক্য দিয়ে নভেলের এন্ডিং করানোটা ঠিক হুমায়ূনসুলভ নয়।
মানব ইতিহাসে প্রায় সবসময়ই নিজেদের মধ্যে দেয়াল ছিলো, আছে থাকবে। অতীতের দিকে তাকালে, পর্যালোচনা করতে পারলে বর্তমান এবং কিছুটা ভবিষ্যতও আঁচ করা যায়।
হুমায়ূন আহমেদের শেষ উপন্যাস পড়ে বুঝে উঠা যায় বর্তমান সময়েও মানুষে মানুষে অদৃশ্য এক দেয়াল বিদ্যমান, বরঞ্চ বেশ কিছুটা দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় সেই 'দেয়াল' আরো বৃহৎ হয়েছে।
বই রিভিউ
নাম : দেয়াল লেখক : হুমায়ূন আহমেদ প্রথম প্রকাশ : একুশের বইমেলা, ফেব্রুয়ারি ২০১৩ প্রকাশনায় : অন্যপ্রকাশ প্রচ্ছদ : মাসুম রহমান জনরা : ঐতিহাসিক ফিকশন রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
হুমায়ুন আহমেদের লেখা সবথেকে controversial বই কী এটা ?
বইটা পাবলিশ হওয়ার আগেই, বইটা নিয়ে রীতিমতো এক বিতর্ক দেখা দিয়েছিল যা কোর্টকাচারি অব্দি গড়িয়েছিল। একটা আর্টিকেলে পড়েছিলাম, " বর্তমানে যে বইটা রয়েছে এটা অনেক কাটিং টু ফিটিং করার পরবর্তী ভার্সন। এর অরজিনাল কপি এখন বিলুপ্ত। কিছু মানুষ ধারণা করত, এই বইটা সরকারের পতন ঘটানোর ক্ষমতা রাখে "। হয়ত বুঝতেই পারছেন, বাইটার বিষয়বস্তু কতটা স্পর্শকাতর ছিল।
বইটিতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী সময় হতে, জিয়াউর রহমানের মৃত্যু অব্দি সময়টার দেশের অবস্থা, রাজনৈতিক উথানপতন, সামরিক শাসন ছাড়াও আরো অনেক বিষয়বস্তু লেখক তুলে ধরেছেন। শুনতে অনেকটা নন ফিকশন মনে হলেও বইটা একটি ইতিহাস আশ্রিত রাজনৈতিক উপন্যাস। এখানে ফিকশনের পাশাপাশি তৎকালীন সময়ের দেশের অবস্থা সম্পর্কেও পাঠক জানতে পারবে। এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, খালেদ মোশাররফ, খন্দকার মোশতাক, কর্ণেল তাহের, মেজর রশিদ, জিয়াউর রহমান এর মতন দেশের নামকরা সব ব্যক্তিত্বদের লেখক নিয়ে এসেছেন। বইটার কিছু প্লট আমাকে এতটা অবাক করছিল যে ইতিহাসের আসলে কতটুকুই বা জানি আমি এটা নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম। দেশে সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে আমার আরো পড়ার ইচ্ছা আছে৷ আমার পরবর্তী টার্গেট রয়েছে, " শাহাদুজ্জামানের লেখা, ক্র্যাচের কর্নেল পড়ার, যেখানে, কর্ণেল তাহের কে নিয়ে লেখা হয়েছে"। ওহ একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মিস করে গেছি, এই বইটা আমার প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের শেষ উপন্যাস ছিল। বইটা আমার কাছে অসম্ভব রকমের ভালো লেগেছে। ইতিহাস নিয়ে আগ্রহীদের আমি একশভাগ রিকমেন্ড করব বইটা।
ফ্রেঞ্চ ক্লাসে লিয়াকত স্যার জিজ্ঞেস করেছিল, দেয়াল উপন্যাস কে কে পড়েছে। বেশ কয়েকজন হাত তোলায় স্যার খুব প্রশংসা করলেন যে, ক্লাসের পড়া, ফ্রেঞ্চ শেখার পরেও ছাত্ররা বই পড়ছে, এটা বিরাট ব্যাপার। তখন মনে হল, হাত তো খুব তুললাম, পড়েছিও নিশ্চিত কিন্তু কি পড়েছি তেমন কিছুই মনে নাই, আবার পড়া উচিত। তাই আবার পড়লাম আজ।
হুমায়ুন আহমেদ কেন আরও বেশি ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখেনি সেজন্য আফসোস লাগে। এত সুন্দরভাবে গল্পের মধ্যে ইতিহাস লেখাতে আমার মত ফিকশনপ্রেমীর একটু আধটু ইতিহাস জানা হয়।
তবে সমস্যা হল, অনেক বইয়ের বেলাতেই আমার এমন হয়, কি পড়েছি মনে করতে পারি না। কিন্তু পুরাতন সব বই আবার রিভিশন দিতে বসলে নতুন বই পড়ব কখন! বড়ই দিগদারি!
আমার জন্য একমাত্র অপছন্দের দিক ছিল আনিসুজ্জামানের ভূমিকা । আমি হুমায়ূন আহমেদের অন্ধ ভক্তদের একজন। তার বইয়ের ভুমিকা দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না ।এই বই আমি ২ বার পড়েছি , আবারও পড়ব । Is it only me or other people also got goosebumps while reading about those majors and colonels ? হুমায়ূন আহমেদের লেখা যাদের ভাল লাগেনা,আমার মনে হয় তাদেরও এই বইটি পড়া উচিত ।
অবন্তী, স্পেন বসবাসরত বাঙালি বাবা আর স্প্যানিশ মা ইসাবেলার একমাত্র সন্তান। বাবা নিরুদ্দেশ, মা বিবাহবিচ্ছেদের পর স্পেনেই থাকে। সুন্দরী, রূপবতী, চপল, প্রথাবিরোধী অবন্তী থাকে তার দাদা সরফরাজ খানের সঙ্গে ঢাকায়, এটা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের কাহিনী। যুদ্ধের সময় তার দাদা তাকে নিয়ে চলে যায় গ্রামে, তাকে আশ্রয় নিতে হয় স্থানীয় মাজারে।
ঘটনাক্রমে তাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় মাজারের বড় হুজুরের একমাত্র ছেলে হাফেজ জাহাঙ্গীরের সাথে। কিন্তু অবন্তী সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসলেও, তাদের মধ্যে পুরোপুরি বিবাহবিচ্ছেদ হয় না, চলতে থাকে এক অদ্ভুত সম্পর্ক। অন্যদিকে তার রক্ষণশীল দাদা সরফরাজ খান সবসময় তাকে আগলে রাখতে চান। এজন্য তিনি তাড়িয়ে দেন অবন্তীর গৃহ শিক্ষক শফিককেও।
শফিক, একজন অন্যরকম যুবক। দরিদ্র, তবে তার মানুষের প্রতি কাজ করে অন্যরকম মায়া। পশুর প্রতিও করে, এজন্য তার সাথে জুড়ে যায় বিশাল আকৃতির এক কুকুর, যার নাম সে দেয় কালাপাহাড়। মাঝে মাঝে সে ছোটখাটো কিছু কাজ করে দেয় 'আদর্শলিপি' নামে এক প্রেসের মালিক রাধানাথ বাবুকে। সেই রাধানাথ বাবুর কাছে হাত দেখাতে আসে সেনাবাহিনীর মেজর ফারুক। যে ভিতরে করে রেখেছে এক ভয়ংকর দুরভিসন্ধি যা দেশের ইতিহাসকে বদলে দেবে।
এ গল্প যুদ্ধপরবর্তী ঘোর লাগা সময়েরও। যেখানে পাওয়া যাবে স্বাধীনতার পরের আওয়ামী লীগ আর রক্ষীবাহিনীর লোকেদের কর্তৃক সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচারের দিকগুলো। আসতে থাকবে বঙ্গবন্ধু, খালেদ মোশাররফ, জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, কর্ণেল তাহেরের মতো ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কুশীলবেরাও। সেইসাথে থাকবে সেই সময় নিয়ে লেখকের স্মৃতিকথা। এইসব নিয়েই গড়ে উঠেছে হুমায়ুন আহমেদের 'দেয়াল' উপন্যাসটি।
'দেয়াল' হুমায়ুন আহমেদের সর্বশেষ প্রকাশিত বই। স্বাধীনতা পরবর্তী জটিল সময় নিয়ে লেখা এই বইটি বেশ বিতর্কিতও বটে, যা গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। বইটা কিছুটা ননলিনিয়ার ধারার রচিত। একটা অংশে আছে সেই সময়কে নিয়ে রচিত অবন্তী আর শফিকের কাল্পনিক কাহিনী। যা কিনা গতানুগতিক হুমায়ুন আহমেদের আট দশটা গল্পের মতো।
অন্য অংশে আমরা হুমায়ুন আহমেদের জবানিতে যুদ্ধপরবর্তী অবস্থা নিয়ে তার ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ দেখতে পাই। এছাড়া ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকেও কিছু অংশে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার ঘটনাগুলোকে দেখানো হয়েছে গল্পের ছলেও । হুমায়ুন আহমেদের লেখনী বরাবরই একদম ধরে রাখার মতো। তাই এতো ব্যস্ততার মাঝেও একদিনেই পড়ে শেষ করতে পেরেছি বইটা। তাছাড়া গল্পে হুমায়ুন আহমেদ তার স্বভাবসুলভ ধরণে এক অন্যরকম ঘোর আর মায়াজাল সৃষ্টি করে রাখতে পেরেছেন।
কিন্তু সম্পূর্ণ উপন্যাসটাই কেমন জানি খাপছাড়া। ইতিহাস, গল্প, ব্যক্তিগত স্মৃতিকথার সংমিশ্রণটা তেমন ভালো হয় নি। সেইসাথে কিছু ঐতিহাসিক চরিত্রকে নিজের স্টাইলে গঠন করায় ভালোও হয়েছে (যেমন খালেদ মোশাররফের ক্ষেত্রে) কিছু চরিত্রের উপস্থাপন খুব বিদঘুটে হয়ে গিয়েছে (খন্দকার মোশতাক)। আর সেইসাথে বইয়ের মূল ফিকশনাল গল্পটাও হুমায়ুন আহমেদের বই হিসেবে দূর্বল লেগেছে। আর ঐতিহাসিক অংশটাও তেমন সুবিধার না।
আর বইটা শেষও হয়ে গেল মনে হয় হুট করে। সাধারণত হুমায়ুন আহমেদের বইগুলোর সমাপ্তি 'শেষ হয়েও হইলো না শেষ' টাইপের হয়, তবে এটাকে একটু বেশীই অসম্পূর্ণ মনে হচ্ছে। হয়তো লেখক পুরোটা লিখে যেতে পারেন নি। যাইহোক, বইটা পড়ে খুব একটা তৃপ্তি পেলাম না। হুমায়ুন আহমেদের প্রাঞ্জল গদ্যে দ্রুত পড়ে যাওয়া যায়, এই যা।
'দেয়াল' কে আসলে আলাদা করে রিভিউ বা রেটিং দেয়ার কিছু নেই। হুমায়ূন আহমেদ নন ফিকশনের সাথে খানিকটা ফিকশন মিশিয়ে এটা উপস্থাপনা করেছেন বলে মনে হয়েছে। আর যুদ্ধ পরবর্তী অস্থির বাংলাদেশের বর্ণনা হুমায়ূন আহমেদ বেশ ভালো ভাবে দেবেন আশা করলেও বইটি আমার কেন যেন খাপছাড়া মনে হয়েছে। মনে হয়েছে, এখান থেকে একটু ওখান থেকে একটু তথ্য জোড়া দিয়ে জোড়াতালি একটা কিছুতে দাঁড়িয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস বলতে ঐ ১৯৭১ সাল পর্যন্তই। এরপর? ‘৭১ এর পরে স্বাধীন বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মোটকথা সার্বিক বাংলাদেশের অবস্থা কীরকম ছিল তা অনেকেরই অজানা। মূলত সেসময়কার দেশের যে করুণ পরিস্থিতি, সেটাই হুমায়ূন আহমেদ তুলে ধরেছেন; ইতিহাস আশ্রিত ঘটনা এবং কাল্পনিক কিছু চরিত্রে। হিমু, মিসির আলি বা শুভ্র সিরিজের জন্য লেখক অধিক জনপ্রিয় হলেও; ‘দেয়াল’ এর মতো বইগুলোর জন্যই তিনি আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
রাজনীতি সম্পর্কে আমার জ্ঞান 'নাই' বললেই চলে। তবু কিছু ইতিহাস পড়তে রাজনীতি বুঝতে হয়না। বাংলাদেশের রাজনীতির কিছু কালো অধ্যায় নিয়ে প্রিয় লেখকের সর্বশেষ উপন্যাস 'দেয়াল'। লেখকের সর্বশেষ পড়া বইগুলির মধ্যে এটা বেশ উপভোগ্য ছিল। কারণ, উপন্যাসের গল্পটা আমার কাছে একদম ই নতুন। নতুন গল্প সেই সাথে হুমায়ূন আহমেদের লেখনীর স্বাদ। দুইয়ে মিলে অসাধারণ!
বঙ্গবন্ধু হত্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচে জঘন্য এবং কাপুরুষতার পরিচয় বহন করে। একটা জাতি কতটা অসুস্থ হতে পারে তার উজ্জ্বল প্রমাণ স্বাধীন তার স্থপতি খুন হওয়া। বঙ্গবন্ধু, জিয়া সহ দেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক হত্যা কাণ্ডের ঘটনাকে উপজীব্য করে হুমায়ূন আহমেদের এই রচনা।
ইতিহাস খুউব সামান্য জানি। তাই এই বই নিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্ক থাকলেও আমার জন্য সেটা সমস্যা ছিল না। পড়ুয়া নাগরিক তো বটেই, দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেও ইতিহাসের এইসব অধ্যায় জানা থাকা অতীত জরুরী।
"মানুষ সবসময় সঠিক কাজটিই করতে চায়। তবে কারো কাছে যা সঠিক তা কারো কাছে বেঠিক। ফলশ্রুতিতে মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় দেয়ালের।"
প্রথমেই লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা এরকম স্পর্শকাতর একটা বিষয় নিয়ে উপন্যাস লেখার সাহস দেখানোর জন্য। যদিও বেশ কিছু ঘটনা বেশ ঘোলাটে ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিছু জায়গায় তথ্যের কমতি অনুভব করা যায়। এটা খুব সম্ভবত লেখকের উপন্যাসটা সম্পূর্ণভাবে শেষ করতে না পেরে যাওয়ার কারনে।
আমরা অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলতে শুধু ১৯৭১ এর যুদ্ধকেই বুঝি। কিন্তু ১৯৭১ এর পরে স্বাধীন বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা কিরকম হয়েছিল তা আমাদের অনেকেরই অজানা। অথচ আমাদের ইতিহাসের এই অংশটাই সবচেয়ে বেশি ধোঁয়াশাপূর্ণ কেননা সময় ও ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাবলীলভাবে পরিবর্তিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী এক যুগের ইতিহাসও। 'দেয়াল' উপন্যাসের সবচেয়ে বড় মাহাত্ম্য এই যে, চিত্তাকর্ষক কাহিনী দ্বারা আকর্ষিত করার পাশাপাশি ইতিহাসের এই অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশটির সত্য অনুসন্ধানে এটি পাঠকদের মনে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
আমি এক নিমিষেই শেষ করেছি বইটি। বইটি পড়ার পর নিজেদের অতীত ইতিহাস নতুন করে পড়ে দেখতে ইচ্ছে করতেছে। সবচেয়ে টুইস্টিং লেগেছে হুমায়ূনের চরিত্র নিয়ে খেলার বিষয়টি। কিছু কিছু চরিত্রকে হুমায়ূন আহমেদ মহিমান্বিত করেছেন, আবার কিছু চরিত্র তার সহানুভূতিবঞ্চিত হয়েছে। খালেদ মোশাররফ বা কর্ণেল তাহের এখানে যতটা মহিমান্বিত হয়েছেন, বাকশাল গঠন ও রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারে গৃহহীন হওয়ার বেদনার ফলস্বরূপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ততটা মহিমান্বিত হননি। লেখক নিজেও যেহেতু এই সময়ের একটি অংশ, কাজেই ঐ সময়ে লেখকের নিজের ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনাও এ উপন্যাসে বিবৃত হয়েছে। লেখক বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনার এ অংশটি লেখার সময় অ্যান্থনী মাসকারেনহাসের বাংলাদেশ: আ লিগ্যাসি অব ব্লাড গ্রন্থটি দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড থেকে খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতাগ্রহণ, খালেদ মোশাররফের ব্যর্থ অভ্যুত্থান, কারাগারে চার নেতার করুণ মৃত্যু, কর্নেল তাহেরের সিপাহী-জনতার বিপ্লব, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতাগ্রহণ এবং কর্নেল তাহেরের করুণ মৃত্যু- পর্যায়ক্রমে এ উপন্যাসে স্থান পেয়েছে। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে উপন্যাসটির সমাপ্তি ঘটেছে।
উপন্যাসটা শেষ করে আমার একটা অতিপ্রিয় লাইন মাথায় ঘুরতেছিলো, When you play the game of thrones, you win or you die
ইতিহাস নিয়ে সেনসিটিভ এবং হুমায়ুন হেটার না হলে পড়ে দেখতে পারেন।
হুমায়ুন আহমেদ এর শেষ উপন্যাস দেয়াল। অসংখ্য ঐতিহাসিক চরিত্রে ঠাসা এই উপন্যাস রচিত হয়েছে যুদ্ধপরবর্তী সময়টিকে ঘিরে। বইটির প্রথম আখ্যানে অবন্তী আর শফিকের কাহিনী।শফিক আহমেদ নামের যুবকটি অবন্তীর গৃহশিক্ষক।অবন্তী একজন চঞ্চল, হেয়ালি মেয়ে।অবন্তীর বাবা নিরুদ্দেশ আর মা একজন স্প্যানিশ।তার দাদা সরফরাজ খানের উপর তার দায়িত্ব অর্পিত।অবন্তী অসম্ভব সুন্দর ও মায়াবতী হওয়ায় দাদা তার ব্যাপারে একটু বেশিই রক্ষনশীল।ঘটনাক্রমে অবন্তীর একজন পীরের ছেলের সাথে তার বিনা মতে বিয়ে হয়। *হুমায়ুন আহমেদ 'লীলাবতী' লিখেছেন অবন্তীর রুপ চোখে রেখে। অন্যদিকে দ্বিতীয় আখ্যানে রয়েছে রাজনীতির ভয়ঙ্কর রূপ।হত্যাকান্ড,ষড়যন্ত্র,ক্ষমতা লালসা,সততা,দেশপ্রেম। মেজর ফারুকের বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনা অনু্যায়ী বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা,খন্দকার মোশতাক ক্ষমতা গ্রহন,কারাগারে চার নেতা হত্যা,সিপাহী বিপ্লব,জিয়াউর রহমানের মুক্তিলাভ ও ক্ষমতাগ্রহন,মোশাররফ হত্যা,তাহেরের ফাসি এবং শেষে জিয়া হত্যাকাণ্ড। কিন্তু ক্ষমতার লোভে আসক্ত মানুষরা পরস্পরের শত্রু হয়ে নিজেরাই নিজেদের নিশ্চিহ্ন করেছে। ___ 'Everybody is paid back by his own coin'.
শুরুটা স্বভাবসুলভ হুমায়ূনি ঢঙে, যেটা অতোটা ভালো লাগেনি। চরিত্রের কথোপকথনে সংঘাত এবং রসবোধে হুমায়ূনের পরিচয় মেলে। তবে আমার ভালো লাগা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যোগ হবার পর। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় নিয়ে লেখা এই বইটি ইতিহাসগত দিক থেকে নির্ভুল ধরে নেওয়া যায়। লেখকও যথেষ্ঠ নিরপেক্ষ মনোভাবে লিখে গেছেন। তবে শেষদিকে বেশ তাড়াহুড়া টের পাওয়া যায়। ভেবেছিলাম পটভূমি আরও বেশ খানিকটা সময় ধরে এগোবে। তা না হওয়ায় তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে মনে হলো। এককথায় স্বভাবসিদ্ধ হুমায়ূনের সঙ্গে একই মোড়কে রাজনৈতিক উত্থান-পতনের উপন্যাস এটি।
হুমায়ুন আহমেদের লেখা যে কয়টি ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়েছি, সেগুলোর মধ্যে এটাতেই সবচেয়ে বেশি ইতিহাস রয়েছে বলা যায়। অন্যান্য উপন্যাসগুলোতে লেখক ইতিহাসের চেয়ে গল্পের দিকে বেশি জোড় দিলেও এখানে যেন ঠিক উল্টোটা মনে হয়েছে। অবশ্য হু���ায়ুন আহমেদের আর দশটা বইয়ের মত এই বইটিও পড়তে ভালই লেগেছে। ৭১ পরবর্তী ঘটনাবলী সম্বন্ধে তেমন কিছু জানতাম না। এখান থেকে সেই সময়টা সম্বন্ধে কিছুটা হলেও জানতে পারলাম। সবমিলিয়ে ভালই লেগেছে বইটা :)