‘আদিম আতঙ্ক’ একটি শ্বাসরোধী কল্পবিজ্ঞান থ্রিলার। এটি আমেরিকান লেখক ডিন কুন্জ এর লেখা ‘ফ্যান্টমস’ উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত। বাংলা কল্পবিজ্ঞানের আগ্রহী পাঠকদের জন্যে প্রায় ঊনিশ বছর পরে কল্পবিশ্ব ফ্যান্টাসটিক প্রকাশনের সঙ্গে যৌথভাবে উপন্যাসটি পুনঃপ্রকাশের দায়িত্ব নিল। আশা করি, কল্পবিশ্ব ও ফ্যান্টাসটিক এর যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘অপার্থিব সিরিজ’ এর অন্তর্গত এই কল্পবিজ্ঞান থ্রিলারটি কল্পবিজ্ঞানের ইতিহাসের পাতায় যোগ্য সমাদর পাবে।
জন্ম: ১ ডিসেম্বর, ১৯৩২ | কলকাতায় | একটি শিক্ষক পরিবারে ছোট থেকেই অজানার দিকে দুর্নিবার আকর্ষণ | অ্যাডভেঞ্চারের টান জীবনে, চাকরিতে, ব্যবসায়, সাহিত্যে | চোদ্দবার চাকরি বদল | নামী একটি প্রতিষ্ঠানের পারচেস-ম্যানেজার পদে ইস্তফা দিয়ে পুরোপুরি চলে আসেন লেখার জগতে | গোয়েন্দাকাহিনী দিয়ে লেখালেখির শুরু | ' রচনারীতি র দিক থেকে শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় এর উত্তরসুরী ' - অভিনন্দন জানিয়েছে একটি নামী সাপ্তাহিক | সেরা বিদেশী গোয়েন্দাকাহিনীকে পরিবেশন করেন বাংলায় | বিজ্ঞান, কল্পবিজ্ঞান, অতীন্দ্রিয় জগৎ, অতিপ্রাকৃত, অনুবাদ - প্রায় সব ক্ষেত্রেই পেয়েছেন স্বীকৃতি | ভারতের প্রথম কল্পবিজ্ঞান পত্রিকা 'আশ্চর্য'র ছদ্দনামী সম্পাদক | এবং সম্পাদনা করেন 'ফ্যান্টাস্টিক' | সত্যজিত রায়ের সভাপতিত্বে প্রথম 'সায়ান্স ফিকশন সিনে ক্লাব' এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক | পত্রিকা, রেডিও, ফিল্মক্লাবের মাধুঅমে কল্পবিজ্ঞানকে আন্দোলন-আকারে সংগঠিত করেন | একাধিক পুরস্কার | কিশোর জ্ঞানবিজ্ঞান ও পরপর দু-বছর 'দক্ষিণীবার্তা'র শ্রেষ্ঠগল্প পুরস্কার | অনুবাদের ক্ষেত্রে 'সুধীন্দ্রনাথ রাহা'-পুরস্কার | ভালবাসেন: বই | গানবাজনা | দেশভ্রমণ
পাহাড়-ঘেরা এক শান্ত, সুন্দর জনপদ। হঠাৎই একদিন সেখান থেকে মিলিয়ে গেল সব জনপ্রাণী। কীভাবে ঘটল এমন অঘটন? কোথায় গেল সবাই? আর... আগেও কি এমন হয়েছে? কে, বা কী সেই আদিম আতঙ্ক? কীভাবেই বা তার সঙ্গে লড়া সম্ভব? এই হল আলোচ্য উপন্যাসের কাহিনি। কেমন লাগল সেটি?
আনপুটডাউনেবল— এই বিশেষণ যার সম্বন্ধে ব্যবহার করা যায়, তাকেই তো সত্যিকারের থ্রিলার বলে, তাই না? এই বই এক তেমনই থ্রিলার। অসম্ভব গতিময় বিবরণ, কাটা-কাটা সংলাপ, চরিত্রদের মধ্যেই ডুবে ঘটনাপ্রবাহের আন্দোলন অনুভব করা— এ-সবের মাধ্যমে লেখক এমন এক কাহিনি পরিবেশন করেছেন যা শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না। হ্যাঁ, এ-আখ্যান ডিন কুনৎজের 'ফ্যান্টমস'-এর ভাবানুবাদ ঠিকই। তবে তার মধ্যে যে মুনশিয়ানায় মেশানো হয়েছে 'আবোল তাবোল'-এর পদ্য আর একান্ত দেশজ বর্ণনা, তা শুধু অদ্রীশ বর্ধনই পারতেন।
এই গল্প আজ আমাদের কাছে আর ভয়-জাগানিয়া নয়। ওয়েব সিরিজের দৌলতে এখন আমরা ভয়াল-ভয়ংকর যে-সব আখ্যান পড়ে থাকি তা এমন 'বি-মুভি'-র চেয়ে ঢের বেশি রোমহষর্ক। তবু, অদ্রীশের শ্বাসরোধী লেখনীর টানেই এই বই পড়ে ফেলতে হয়— বিশেষত সে-বই যদি এমন সুমুদ্রিত, অলংকৃত আকারে আসে। সুযোগ পেলেই পড়ে ফেলুন।
ভারতবর্ষের এক কাল্পনিক শহর শিবালয়ের পথে রওনা দিয়েছেন বিখ্যাত চিকিৎসক মাধবী লাহা এবং তার বোন পরী। অসাধারণ সুন্দর এই শৈল শহরে তাদের বাড়ি। অথচ যতই গাড়ি এগোতে থাকে তাদের মনে হতে থাকে শহরে যেন কোনো মানুষ নেই। মনে হচ্ছে সবাই একসাথে উবে গিয়েছে। বাস্তবিকই শহরটা যেন মরে গিয়েছে। দুই বোনের জন্য কি অপেক্ষা করে আছে কোন এক আদিম আতঙ্ক ?
এই অসাধারণ বইটি আমি আগে কেন পড়িনি সেটাই হচ্ছে কথা। এককথায় এই ধরনের লেখা বাংলায় পাইনি কোনোদিন। এদের জন্য বারবার চেয়ে থাকতে হয়েছে বিদেশী সাই-ফাই বই অথবা টিভি সিরিজের দিকে। এই ভয়ানক সাসপেন্স বহুদিন বাদে উপভোগ করলাম। অদ্রীশ বর্ধনের লেখনীর গুণে বাংলা ভাষাতে একই সঙ্গে সাসপেন্স ও কাব্যিকতা দুটোই প্রত্যক্ষ করলাম। ওনাকে শতকোটি প্রণাম।
আচ্ছা মনে করুন আপনি কয়েকদিনের জন্য শহরের বাইরে গেলেন এবং ফিরে এসে দেখলেন পুরো শহরটাই জনমানবশূন্য, কেমন লাগবে? ভাবতে অবাক লাগছে তো যে এটা কীভাবে সম্ভব? সাথে ভয়ও লাগছে নিশ্চয়? ঠিক এরকমই অবস্থা হয়েছিল ডাক্তার মাধবী লাহার।
বাবা-মা মারা যাওয়ার পর মাধবী তার বোন পরিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু বোনকে নিয়ে তার শহর শিবালয়ে আসার সময় একটা অদ্ভুত বিষয় তার নজরে পড়ে। গোধূলি সন্ধ্যায় গোটা শিবালয় শহরের রাস্তায় একটা লোকজনও নেই, অথচ বেশিরভাগ বাড়িতেই আলো জ্বলছে, কিন্তু চারিদিক পুরো নিস্তব্ধ। এই পরিস্থিতিতে একটা অস্বস্তি চলতে থাকে তার মনে। অস্বস্তিটা ভয়ে পরিণত হয় যখন সে তার বাড়ি পৌঁছে দেখে তার বাড়ির পরিচারিকা বাসন্তীর নিথর দেহকে মেঝেতে পড়ে থাকতে। মৃতদেহের শরীরে কোনো ক্ষতস্থান নেই, অথচ শরীরটা পুরো কুঁচকানো। কে হত্যা করলো তাকে এভাবে?
ভয় পেয়ে মাধবী ও পরি সাহায্যের জন্য পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে তাদের চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায় দারোগা সুমন্ত সেনের নিথর দেহ দেখে। তার মৃতদেহের অবস্থাও বাসন্তীরই মতো। এমতাবস্থায় মাধবী শিবালয় শহরের কেন্দ্রস্থল টিকেন্দ্রনগর থানায় খবর পাঠালে বিষয়টা খতিয়ে দেখার জন্য সেখান থেকে পুলিশ প্রধান সুরেশ সাইকিয়া আসে পুলিশবাহিনী নিয়ে। তারা কি বের করতে পারবে এই হত্যার পেছনের কারণ?
শত্রুকে শনাক্তকরণ করতে পারলে মোকাবিলা করা কিছুটা হলেও সহজ হয়। কিন্তু শত্রুকে যদি শনাক্তকরণই করা না যায় তাহলে মোকাবিলা তো দূরের কথা, সামনে যাওয়ার সাহসই থাকে না। ঠিক এরকমই পরিস্থতির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাধবী, পরি, সুরেশ সাইকিয়া সহ গোটা পুলিশ বাহিনী। এদিকে আবার শত্রুও ওঁত পেতে রয়েছে শিকারের উপর ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। রক্ষা পাবে কী করে? আর কে সেই শত্রু বা হত্যাকারী?
টানটান এক রুদ্ধশ্বাস কাহিনী পড়লাম। শুধু পড়লাম না, গোগ্রাসে গলাধঃকরণ করলাম বললে ভালো হবে। গত বছর থেকে এখনও অবধি কিছু কল্পবিজ্ঞান বই পড়লাম। সত্যি বলতে বিষয়টা বড্ড টানছে এবার। কাহিনীর বুনন এতো সুন্দর যে মন্ত্রমুগ্ধের মতো টেনে নিয়ে গেল শেষ পাতায়। তবে পড়ার সময় যখন ঘটনাগুলোকে কল্পনা করছিলাম, ভয় না লাগলেও কিছুটা যে শিউরে উঠছিলাম তা অস্বীকার করবো না।
বইয়ের সম্পর্কে যখন কিছুই জানতাম না, তখন শুধু প্রচ্ছদ দেখেই বইটা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাই কাহিনী ভালো লাগার সাথে ভালো লাগার আর একটা বিষয় হলো বইয়ের প্রচ্ছদ এবং ভেতরের অলংকরণ। তবে যদিও আমার মনে হয় অলংকরণ আর একটু বেশি থাকলে আরও ভালো হতো।
সর্বশেষে এটাই বলবো, বইটা খুব ভালো লেগেছে। কল্পবিজ্ঞান প্রেমী যারা এখনও বইটা পড়েননি একবার পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি ভালো লাগবে। পাঠে থাকুন।
এটা কি ছিল...যে বইয়ের রেটিংস 4+ সেটা কিভাবে এত অখাদ্য সস্তা টোটাল একটা গারবেজ হতে পারে? আর শেষটাতো একটা ইপিক। অবশ্য চাচ্ছিলামও শেষ যে কখন হবে! তারপর হঠাৎ শেষ। যাকগে জীবনের মূল্যবান সময় কিছুটা গেছে ঠিকই কিন্তুু একটা অভিজ্ঞতা হলো যে গুডরিডস এর রেটিংসের উপরে সবসময় ভরসা করা যায় না। একটা ভালো চেষ্টা কিন্তুু সমবেদনা ছাড়া লেখকের জন্য আর কিছু নেই দেওয়ার। Please dont waste your time, skip it...
এই বইটা আমার খুব প্রিয় বই। আমাদের মিশনে খেলার সময় টা ফাঁকি দিয়ে বেড এর নিচে লুকিয়ে পড়েছি । প্রচ্ছদ টা অনেকটা অন্যরকম ছিল। ক্লাস এইটে পড়া এক কিশোরের কাছে এটার রীতিমতো গিল্টি প্লেজার। এক কথায় ক্লাসিক।
কালকে হঠাৎ কি জানি মনে করে বইটা আবার পড়ে ফেললাম। এর আগে আমি এখনকার লেখকদের তন্ত্র ভিত্তিক বই গিলে ফেলেছি একের পর এক কিন্তু তন্ত্র ভিত্তিক বইয়ের পড়া বাস্তবতা আর থ্রিলারের উপাদান যে কল্পবিজ্ঞানের ঘরানার কাছে কতটা নগণ্য তা এই বইটা বারবার প্রমাণ করে দেয়।
আজকালকার তন্ত্রের গল্প বলতে যদি বোঝেন দেব দেবীর কোপ আর সেখান থেকে বাঁচার জন্য কিছু ছন্নছাড়া মন্ত্রের আরাধনা তাহলে এখানেও সেই আদিম দেবতা পাবেন কিন্তু বাঁচার উপায় বিজ্ঞান।
যেদিন সানডে সাসপেন্স এ সমস্ত কল্পবিজ্ঞান গুলো তুলে ধরা হবে, হয়তো সেদিন বুঝতে পারবেন। পড়তে পড়তে দেখবেন চোখের সামনে নেটফ্লিক্স এর সিরিয়াল এর মত ভেসে উঠেছে।
এক কথায় বলতে হলে....দারুণ বই। Marvel-এ যেমন তার থেকে অনেক গুণে ভালো এবং খুব সুন্দর যুক্তি দিয়ে বোঝানো। কোথাও মনে হবে না যে একঘেয়ে লাগছে। আর বেশি কিচ্ছু লিখব না তাহলে হয়তো গল্পের অনেক কিছুই বলে ফেলবো যেটা আমি চাই না।
#Book_Review বই - আদিম আতঙ্ক লেখক - অদ্রীশ বর্ধন প্রকাশক - কল্পবিশ্ব যেখানে আদিম আতঙ্ক লেখার কুড়ি বছর পেড়িয়ে গেছে, আর মূল উপন্যাস ডিন কুনটজ এর "ফ্যান্টমস" এর ২৯ বছর। আধুনিক গতিময় জীবনে যেখানে হরর আর থ্রিলার এর সংজ্ঞা বদলাচ্ছে। এত এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে, সেখানে নতুন করে আর এই উপন্যাসের কিছু দেবার নেই । তবে সময়ের থেকে লেখাটি অনেক এগিয়ে। অদ্রীশ বর্ধনের কলমের জোরেই গল্পটি পড়তে ইচ্ছে করে। এটি আসলে সংক্ষিপ্ত ভারতীয়করণ করা উপন্যাস, পড়লে মনে হয়না বিদেশের ছায়ামাত্র আছে। তবে আদিম আতঙ্ক কে জানতে চাইলে, অবশ্যিই পড়া যেতে পাড়ে। রেটিং - ⭐⭐⭐/5