ম্প্রতি আম্মিরার বাবা ওদুদের মৃত্যুর পর থেকে সে কিছু অদ্ভুত ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা বাস্তব নাকি কল্পনার সমন্বয়ে সৃষ্ট, তা সে বুঝতে পারছে না। ক্রমাগত সেই সব বিদঘুটে ঘটনার মধ্যেও আম্মিরার একটু প্রশান্তির নাম হচ্ছে এসমাদ। নীল চোখের অতীব সুন্দর পুরুষটিকে আম্মিরা নিজের প্রফেসর হিসাবেই জানে। তবে তার আরও একটি পরিচয় রয়েছে। এসমাদ, যিনি কিনা সাধারণ কোনো ইনসান নন। তিনি স্বয়ং ইফ্রীত্বদের যুবরাজ ও ভবিষ্যৎ বাদশাহ, কিন্তু এটি আম্মিরার অজানা। এদিকে আম্মিরার পিতা ওদুদের জন্যই আফারীতরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। এতকিছুর মধ্যে আদৌ কি এসমাদ ও আম্মিরার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে? যেখানে একজন ইনসান এবং আরেকজন জিন! নাকি আরশি জগতের অবয়বের বিভ্রমে হারিয়ে যাবে তাদের ভালোবাসা?
বইয়ের আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ আর ফ্লপের অংশটুকু পড়ে আমার মতো কিছু পাঠক আগ্রহ বোধ করবে স্বাভাবিক। কিন্তু গুডরিডসে রিভিউ রেটিংয়ের বেহাল দশা দেখে আশ্বস্ত হলাম এই জিনিস তেমন হাইপ তৈরি করতে পারেনি। অবশ্য প্রকাশের প্রথম তিন মাসেই তিনটা মুদ্রণ অন্য কথা বলে।
সে যাকগে, নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলে বিদায় নিই। বইটির প্রথম কয়েকপৃষ্ঠা পড়তেই বুঝতে পারবেন লেখিকা চরম লেভেলের এমেচার। শব্দের আড়ষ্টতা ঠিকমতো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বর্ননা করার মতো শব্দভান্ডারও অপ্রতুল। কাহিনী বেশ জোরেসোরেই এগিয়ে চলে। তবে এইরকম ফ্যান্টাসির জন্য যেইরকম ক্যারেক্টার ডেভলপ দরকার তা একদমই নেই।আলাদা আলাদা দুনিয়ার চিত্রায়নটাও ছাপ ফেলতে পারেনি মনের উপর। একটা ব্যাপার একটু বিরক্তিকর ছিল। একই অধ্যায়ে এক দৃশ্য থেকে হুট করেই আরেকদৃশ্যে চলে যাচ্ছিল। কোনরকম সংকেত ছাড়াই। ফলে রিপিট করে পড়তে হয়েছে বারবার।
আর আপনি যদি প্রথম ২৯ অধ্যায় / ১১৯ পৃষ্ঠা পড়ে ফেলতে পারেন তবে আর পেছনে ফিরে দেখতে হবে না। ধুমসে পাতার পর পাতা নিঃশেষ করে ফেলবেন শিউর। কাহিনীর জট তো খুলতে হবে, না কি? তারপর শেষমেষ সুন্দর একটা গল্প পাবেন এটা ঠিক কিন্তু পরবর্তী বইয়ের জন্য অপেক্ষা করার মতো আরো একটা বিরক্তিকর অধ্যায় শুরু হবে।
লেখিকার সত্যি সাহস আছে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই এতো বড় একটা ভিন্নধর্মী মৌলিক ফ্যান্টাসি নিয়ে কাজ করাটা সহজ ব্যাপার না। হয়তো সামনে আরো ম্যাচিউরড কিছু পাব। ততদিনে অপেক্ষা।ঠিক এই কারণেই তিনটে তাঁরা। আর হ্যাঁ, দ্বিতীয় পর্ব সংগ্রহে থাকায় দেরি করার অপশন নাই। পড়ে ফেলব। আর যারা এখনো পড়েন নাই তারা একটু চেখে দেখতে পারেন। স্বাদটা একদম খারাপ লাগবে না।
রেটিংঃ ৩.৫/৫ কাহিনী সংক্ষেপঃ আম্মিরার বাবার মৃত্যুর পর থেকে সে কিছু অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হয়, যা বাস্তব নাকি কল্পনা সে ঠিক বুঝতে পারে না। এদিকে সে প্রেমে পড়ে যাচ্ছে আর ফিজিক্সের প্রফেসর নীল চোখের এক সুন্দর মানুষ এসমাদ। কিন্তু এই এসমাদ কোন মানুষ নয়, বরং ইরফীতদের যুবরাজ, যা আম্মিরার অজানা। এদিকে আম্মিরার পিতা এবং আফারীরদের মধ্যে রয়েছে এক অজানা ভয়ংকর ইতিহাস, আর মাঝখানে পড়ে আছে আম্মিরা এবং এসমাদের প্রেম। সত্যি কথা বলতে এই বইটা আমার এবারের বইমেলার সবচেয়ে প্রত্যাশিত বই ছিল। এমনিতে আমি ফ্যান্টাসির দারুন ভক্ত, আর সাথে যদি থাকে কিছু রোমান্স আর জ্বীন ভিত্তিক কাহিনী, তাইলে তো কথাই নেই। তাই বইটা কাল হাতে পাবার পরেই একটানে শেষ করে ফেললাম। সত্যি বলতে আমার প্রতিক্রিয়া মিশ্র। আর কথা না বাড়িয়ে বইটার ভাল খারাপ দুই দিক নিয়েই কথা বলব এখন। ভাল দিকঃ প্রথমেই বলে নিই বইটার প্রচ্ছদতা অসম্ভব সুন্দর, দেখলেই পড়তে ইচ্ছে করে। সেজন্য প্রচ্ছদকারকে ধন্যবাদ। এবার আসি মূল কাহিনী প্রসঙ্গে। প্লটটা অসাধারন। বইয়ের প্রথম দুই অধ্যায় ছিল বলতে গেলে পারফেক্ট ওপেনিং, যেমনটা বিদেশী বিখ্যাত ফ্যান্টাসি লেখকদের বইয়ে দেখা যায়, অনেকটাই পরিণত ধরনের লেখা, এক বিশাল ওয়ার্ল্ডবিল্ডিং এর সূচনা পাচ্ছিলাম, সাথে লেখনীও বেশ পরিনত লাগছিল। অবশ্য পরবর্তিতে সেটা আর ছিল না। আর শেষের দুই অধ্যায়ও অসাধারন, বিশেষ করে শেষটা। এখানে বলে আর স্পয়লার দিব না। তবে শেষ অধ্যায়টা পড়ার পরে মনে হতে পারে এতক্ষন যা পড়লাম তা সত্য নাকি একটা স্বপ্ন, এবং লেখিকা আভাস দিয়েছেন সিক্যুয়েলের, সেজন্য শেষটা একদম উপযুক্ত বলে মনে হয়েছে। তাই পরবর্তী খন্ডের অপেক্ষায় থাকলাম। জ্বীন ভিত্তিক সব উপকথার অসাধারন ব্যবহার করেছেন এখানে, সাথে ম্যাজিক সিস্টেমটাও অনেক আকর্ষনীয় এবং পরিনত মনে হয়েছে- যদিও এটা সফট ম্যাজিক সিস্টেম (আমি আবার হার্ড ম্যাজিক বেশি পছন্দ করি), তবুও আমাকে অভিভূত করেছে। সমালোচনাঃ এবার আসি সমালোচনায়। প্রথমেই বলে নিই আমি একটু খুঁতখুঁতে ধরনের পাঠক। লেখিকার এটা প্রথম বই, এবং লেখিকা অনেক তরুন হলেও সমালোচনা কম করব না, তবে অবশ্যই কনস্ট্রাকটিভ ক্রিটিসিজম। প্লটটা অনেক আকর্ষনীয় হলেও লেখিকা সেই সুযোগের সম্পুর্ন ব্যবহার করতে পারেন নি। বিশেষ করে ওয়ার্ল্ডবিল্ডিং। এখানে তুর্কি, বাংলাদেশ, আফারীতদের রাজ্য, জ্বীনদের রাজ্য, এবং আরশিজগত এই কয়েকটি স্থানের কথা বলা থাকলেও কোন স্থানই পুরোপুরিভাবে ধরা দেয় নি। লেখিকা খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চরিত্রদের নিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু তারা কোথায়, কেমন জায়গায় সেটা বুঝতে কস্ট হয়েছে। লেখিকা উল্লেখ না করলে বুঝতেই পারতাম না। এখানে বড় একটা ওয়ার্ল্ডবিল্ডিংএর সুযোগ ছিল, বিশেষ করে যেখানে এটা সিরিজে প্রথম বই, কিন্তু এখানে আমি খুব হতাশ হয়েছি। এবার আসি চরিত্রদের কথায়। প্রধান চরিত্র এসমাদ এবং আম্মিরা, কিন্তু দুজনের কেউই পুরোপুরিভাবে ফুটে উঠতে পারে নি। বিশেষ করে আম্মিরা- তাকে ঘিরে কাহিনী হলেও, তার ভূমিকা খুবই অল্প, এবং সে কাহিনীর বেশিরভাগ সময় প্যাসিভ ছিল, যা ভাল চরিত্র চিত্রন নয়। ফ্ল্যাপের লেখা পড়ে এসমাদের প্রেমে পড়ার জন্য তৈরি ছিলাম, কিন্তু পুরো বইটা জুড়ে তার মোটিভ বুঝতে বেশ কস্ট হয়েছে। আর কাহিনীসংক্ষেপে রোমান্সকে প্রাধান্য দেয়া হলেও রোমান্সটা জমে নি। এর থেকে জিবাদ এবং আনাহিতাকে বেশ ওয়েল ডেভেলপড চরিত্র লেগেছে। বাকি চরিত্ররা উপস্থিত থাকলেও মনে রাখার মত ছিল না। এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্য যাওয়াটা হঠাত লেগেছে- মানে সিন ট্রানজিশনটা হঠাত হওয়াতে বেশ বিরক্ত লেগেছে। বিশেষকরে একই অধ্যায়ে এক চরিত্রের দৃষ্টিকোন থেকে আরেক চরিত্রের দৃষ্টিকোনে যাবার সময় দুই প্যারার মাঝে ব্রেক চিহ্ন (যেমন স্টার বা ডট) দিলে পড়তে সুবিধা হত, নাইলে সব কেমন যেন গুলিয়ে যায়। অনেক চরিত্র কোন আভাস ছাড়াই হঠাত হাজির হয়েছে, যেটা আরো কনফিউশন লেগেছে। আর শেষে দৃশ্যের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটটা আরেকটু আগে থেকে আভাস দেয়া শুরু করলে ভাল হত, কারন শেষে হঠাত যুদ্ধের ঘোষনাটা তাই তেমন মনে প্রভাব ফেলতে পারে নি। আর মাঝখানে লম্বা ফ্ল্যাশব্যাক গল্পের ফ্লো একটু কমিয়ে দিয়েছে। লেখিকার কিছু শব্দচয়ন একটু দৃস্টিকটু লেগেছে- যেমন উত্তেজনায় শিরশির এগুলি অন্যভাবে লেখা যেত। সমম্ভত একটা বেটা রিডিং হলে ওয়ার্ল্ডবিল্ডিং এবং চরিত্রগুলি আরেকটু পোক্ত হত। শেষকথাঃ এত সমালোচনার পরেও জ্বীন ভিত্তিক মৌলিক ফ্যান্টাসি, সাথে বিশাল প্রেক্ষাপট ও চরিত্রের সমাহারে একটা ফ্যান্টাসি বই উপহার দেবার জন্য লেখিকাকে ধন্যবাদ। তবে ১৯০ পৃষ্ঠা এত বড় ওয়ার্ল্ডবিল্ডিং ও এত চরিত্রদের জন্য বড্ড কম। আরেকটু সময় এবং বর্ননার মাধ্যমে এই চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুললে ভাল হত, কারন ফ্যান্টাসির মজা অনেকটাই লেখকের বর্ননার ওপরে নির্ভরশীল, তাতে জগত এবং চরিত্রগুলি আরও জীবন্ত হয়। লেখিকার বাচলভঙ্গী সাবলীল এবং মনোযোগ ধরে রাখার মত। আশা করি সিক্যুয়েলে তিনি আরো ভাল কিছু উপহার দিবেন। অপেক্ষায় রইলাম।
গল্পের প্লট দারুণ কিন্তু লেখনশৈলী মারাত্মক কাঁচা। অনেক পরিবর্ধন দরকার। শব্দ প্রয়োগ, বাক্য গঠন আর সাবলীলতায় চর্চার প্রয়োজন। কাঠখোট্টা ভাষায় লিখলে কোন লেখাই সুখপাঠ্য হয়না। হঠাৎ হঠাৎ এক দৃশ্য থেকে আরেক দৃশ্যে লাফ দেয়াটা যথেষ্ট বিরক্তিকর। কিন্তু লেখিকা তারপরও আকর্ষণ ধরে রাখতে পেরেছেন, এটা অনেক বড় প্লাস পয়েন্ট।
জ্বিনদের মধ্যকার ইফ্রিত্বদের মহামান্য আন্দ্রেয়াজ তার মহামান্যিতা আনাহিতাকে জন্মের পর পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়। অন্যদিকে আম্মিরা তার বাবার মৃত্যুর পর অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হয়। সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে নীলচোখী প্রফেসর এসমাদের মায়ায় যে কিনা আফারীতের যুবরাজ। কাহিনীর প্রেক্ষাপটে দেখা হয় আনাহিতা আর আম্মিরার। আনাহিতা আবিষ্কার করে তাদের অতীতের সংযোগ। ভবিষ্যৎও যেন তাদের একই সূত্রে গাঁথা। এই সূত্র গেঁথেছেন স্বয়ং আন্দ্রেয়াজ। আয়না জগতের মাঝে হারিয়ে যায় আম্মিরা যার দায় একান্ত আনাহিতা। অথচ আনাহিতার দায়িত্ব ছিল আম্মিরাকে রক্ষা করার। এসমাদ আম্মিরার মিলন কি কখনো হবে?
🔹 পাঠ প্রতিক্রিয়া 🔹
প্রথমেই বলি একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আকর্ষণ ধরে রাখতে সক্ষম এ বই। কাহিনী, কাহিনীর প্রেক্ষাপট, চরিত্রায়ন সবই মুগ্ধ করেছে। জ্বিন নিয়ে এই প্রথম কোনো ফিকশন পড়লাম। ফ্যান্টাসি, থ্রিলার, রোমান্টিক, হরর সব কিছুর মিশ্রণ ঘটেছে বইয়ে। ১৯০ পৃষ্ঠার বইয়ে এতোকিছু একসঙ্গে পেয়ে বেশ উপভোগ করেছি। সবগুলো চরিত্রই কাহিনীকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে। তবে এতো অল্পসংখ্যক পৃষ্ঠায় এতোগুলো চরিত্র থাকায় কয়েকবার ব্যাক রিড করতে হয়েছে। আর বেশ কিছু বানান ভুল চোখে পড়েছে। কয়েকটা ডায়লগ পড়তে সমস্যা হয়েছে। বইয়ের ভাষা যথেষ্ট সাবলীল রাখার চেষ্টা করে হয়েছে তবুও কিছু কিছু জায়গায় সাবলীল ভাব হারিয়েছে। তবুও বেশ উপভোগ্য ছিল আফারীত।
বইয়ের শেষটা খুবই রোমাঞ্চকর। পরবর্তী বইয়ের জন্য অপেক্ষার শুরু ঘটাতে বাধ্য। আশা করি আফারীত এর পরের অংশ খুব শীঘ্রই আসবে।
সবশেষে প্রচ্ছদ নিয়ে কিছু না বললেই নয়! পুরো প্রচ্ছদের প্রতিটা ডিটেইলস কাহিনীর সাথে মিল রেখে করা। একদম দৃষ্টিনন্দন!
আমার মতে আফারীত হয়তো সেরা কোনো বই নয়। তবে ফ্যান্টাসিপ্রেমীরা অবশ্যই আফারীতকে সুখপাঠ হিসেবে আবিষ্কার করবে।
What a waste of time and money, absolute immature writing. Its like a 5 years old girl writing about her imagination. The 2 stars only in the middle there are a few pages that were readable, the rest of the book dont ask me.