সময় ষোড়শ শতক। সম্রাট আকবরের নেতৃত্বে ভারতবর্ষে বিস্তারলাভ করছে মুঘল সাম্রাজ্য। এদিকে বাংলায় তখন ক্ষমতা দখল নিয়ে মোগল আর পাঠানদের তুমুল রেষারেষি। সময়ের সেই সন্ধিক্ষণে মহারাজ রুদ্রনারায়ণের অকাল প্রয়াণে ভুরশুট রাজ্যের সিংহাসনে বসলেন রানি ভবশঙ্করী। কিন্তু রানিকে ঘিরে তখন চলছে কুটিল ষড়যন্ত্র আর বর্হিশত্রুর আক্রমণের গোপন প্রস্তুতি। রানি কি পারবেন ষড়যন্ত্রীদের কুচক্র ভেদ করে নিজের রাজ্য ও পরিবারকে রক্ষা করতে? প্রাচীন বাংলার নিম্ন-দামোদর ভূমির এক অল্পশ্রুত রাজকাহিনিকে ভিত্তি করে এই ঐতিহাসিক আখ্যান।
জন্ম ৫ই ডিসেম্বর, ১৯৭৯ হুগলী জেলার পাউনান গ্রামে। প্রথম ছোটগল্প 'হবি' প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে 'দেশ' পত্রিকায়। ২০১৫ তে প্রথম উপন্যাস 'হানাবাড়ির জাভাস্ক্রিপ্ট' শারদীয় আনন্দমেলা। পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলার প্রকাশিত কিশোর কিশোরীদের জন্য লেখা রহস্য-এডভেঞ্চার, অদ্ভুত-মজা কিংবা ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলো জনপ্রিয় হয়েছে। গদ্যসাহিত্যের জন্য ২০১৯ সালে পেয়েছেন ' পৌলোমী সেনগুপ্ত পুরস্কার'। পেশায় ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস একটি তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থায় কর্মরত।
কাহিনি শুরু হচ্ছে এমন একটি সময়ে যখন গত হয়েছেন ভুরিশ্রেষ্ঠ প্রদেশের রাজা। শোকবিহ্বল সমস্ত দেশ। রাণী ভবশঙ্করী শিবমন্দিরে ব্রতচারিণী, দিনরাত পূজার্চনা করে কাটাচ্ছেন স্বামীর মৃত্যুশোক ভোলার জন্য।
এমন সময়ে চুপিসারে ওডিসার সর্দার ওসমান খাঁ বারোজন পাঠান সৈন্য নিয়ে শিবমন্দির থেমে রাণীমাকে অপহরণ করার ষড়যন্ত্র করে। রাণীমা ক্ষিপ্রহস্তে সেদিন নিজেকে রক্ষা করেন এবং নিজের হাতে তুলে নেন রাজ্যের ভার। রাণী ছিলেন বুদ্ধিমতি, অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী। রাণীর রাজ্যাভিষেকের পরেই একদিন তার পুত্র নৌকাবিহারে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়। পরে গুপ্তচর দেবদত্ত খবর আনেন যে আসলে রাজকুমারকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
রাণী কি পারবেন পাঠানদের হাত থেকে রাজ্যকে বাঁচাতে? কিসের ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে তাঁর একান্ত শ্রদ্ধার পাত্র রাজগুরু হরিদেব? তাহলে কি রাণীর কাছের লোকেরাও ষড়যন্ত্রের অংশীদার?
এই উপন্যাসটিকে রহস্য এবং ঐতিহাসিক উপন্যাস দুইই বলা চলে। গল্পে রাণীমার সাথে সাথে গুপ্তচর দেবদত্তের চরিত্রটির গুরুত্ব আছে। অন্যান্য রহস্য কাহিনিতে যেমন একজন গোয়েন্দা থাকে, এই উপন্যাসে এই দেবদত্তকে তেমন সত্যান্বেষীর ভুমিকায় দেখা যায়। একদিনে সন্তানের কাছে স্নেহময়ী মা, একদিকে পরাক্রমশালী যোদ্ধা আরেকদিকে প্রজাদের দুহাত দিয়ে আগলে রাখা রাণীমা- রাণী ভবশঙ্করীর কথা আমি আগে না জানলেও এই উপন্যাস পড়ে এই নারীর প্রতি আমার শ্রদ্ধা জন্মেছে।