নিগূঢ় বোধ সমৃদ্ধ কথাসাহিত্যিক কাজী সাইফুল ইসলামের শিল্প চর্চার পরিমণ্ডলে গল্প, উপন্যাস, কবিতাই প্রধান উপজীব্য হয়ে ধরা দিয়েছে। কেবল এ তিন শাখাতেই বিচরণ করে স্থবির হন নি তাঁর সাহিত্য পিয়াসি মন- মনের আবেদন পূরণে প্রবন্ধ এবং গবেষণাধর্মী কাজে নিমজ্জিত হয়েছেন তিনি আর চলমান বাংলা সাহিত্যে রেখেছেন উল্লেখযোগ্য অবদান। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশ ভাগের সময়কাল সহ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বেশ নিখাদ ভাবেই চিত্রায়িত হয়েছে তাঁর উপন্যাসে। লেখনীর ভেতরে গল্পের চাদর মুড়িয়ে বাঙালী জাতির ইতিহাস বিধৃত করার যে শৈল্পিকতা তিনি উন্মোচিত করেছেন, তা চিরায়ত ধারা থেকে বেশ খানিকটা আলাদা বলেই বিবেচিত। কাজী সাইফুল ইসলাম বিশ্বাস করেন- "সাহিত্য কেবলমাত্র বিনোদনের উৎসই নয়- সাহিত্য এমন এক মহামানব যার আলোয় ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে জীবন ও সভ্যতা।"
কাজী নজরুল ইসলামের গোটা জীবন ছিলো মহাসমুদ্রের মত। দুঃখ, কষ্ট সাথে মাঝে মাঝে প্রাপ্ত সুখের জীবন সবটুকু তুলে আনা কোনো এক লেখকের সারাজীবনের কঠোর সাধনা ছাড়া সম্ভব হবে না। এই বইটিতে শুধু নারীদের সাথে কবির সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। তার প্রেমিকা, স্ত্রী বা যারা গান শিখেছে তারাই প্রাধান্য পেয়েছে।
মামা আলী আকবরের কারণেই পরিচয় হয়েছিলো নার্গিসের সাথে। আকবরের বাসায় থাকা অবস্থায় নার্গিসের সাথে প্রেম হয় কবির৷ প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গেলে লেখক বেঁকে বসে৷ কারণ শর্ত ছিলো দৌলতপুরেই থাকতে হবে কবিকে। কিন্তু সম্মানের কথা চিন্তা করে বিয়ে করলেও বাসর রাতেই দৌলতপুর ছেড়ে চলে আসে কবি। এরপর আর দেখা হয়নি নার্গিসের সাথে।
দোলনের সাথেও দেখা হয়েছিলো আকবরের কারণেই। যাকে কবি নাম দিয়েছিলো প্রমীলা। সেই প্রমীলার সাথেই কেটেছিলো লেখকের বাকি জীবন। দুঃখের সময়ে এই মেয়েটিই কবির পাশে ছিলো।
কাজী মোতাহার হোসেনের মাধ্যমে পরিচয় হয় ফজিলাতুন্নেছার সাথে৷ কবির ভালো ভক্ত ছিলো মেয়েটি৷ তার বাসায় গিয়ে হাত দেখে আসে কবি। সময়ের সাথে কবি তার প্রেমে পড়লেও ফজিলাতুন্নেছা কবি বিবাহিত বলে বিষয়টি এড়িয়ে যায়৷ চিঠিতে যোগাযোগ হলেও পরবর্তীতে ফজিলাতুন্নেছা তাও বন্ধ করে দেয়৷ স্কলারশিপ নিয়ে দেশ ছাড়ার আগে শেষ দেখা হয় তাদের। সেদিন দুজনই কেঁদেছিল দুজনের দিকে চেয়ে।
তাছাড়া রানু,ফিরোজাদের গান শিখিয়েছিলো কবি কাজি নজরুল ইসলাম৷ কবির মার সাথে কবির ছিলো অভিমান। এমন অভিমান যে চুড়ুলিয়া থেকে দেখা করতে আসলেও মায়ের সাথে জেলে থাকার সময়ে দেখা করেননি কবি।
মোটের উপর ভালো ছিলো। বানান ভুল ছিলো বেশ কিছু৷ দাম ঐতিহ্যের একটু বেশিই৷ এইতো পড়তে পারেন চাইলে।
নজরুল বাংলা সাহিত্যের এমন এক নক্ষত্র যাকে নিয়ে লিখতে প্রচন্ড সাহসিকতার দরকার হয়। এমনই দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছেন লেখক। এটি সম্ভব হয়েছে লেখকের চর্চা ও কবির প্রতি ভালোবাসার ফলে। খুব বেশি রঙ মিশানো নয় আবার একদম ছেড়ে দিয়ে লেখাও নয়, পরিমিতবোধ থেকে নজরুলকে উপস্থাপন করেছেন এই বইটিতে। কবির প্রেম বিরহ বেদনা থেকে সৃষ্ট গান-কবিতা গুলো বিশ্লেষণ করে নজরুলকে খুঁজেছেন লেখক। (ভূমিকার সাথে বইয়ের সামঞ্জস্যতা বজায় রেখেছেন)
দারুণ একটা বই। নজরুলের প্রেম-বিরহ ফুটে উঠেছে এ বইটাতে। লেখকের কথায় কবিকে তিনি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, পড়লে মনে হবে, এ স্বয়ং নজরুলই যেন নিজেকে খুলে খুলে ব্যাখ্যা করছে।