বাংলা ভাষায় লিখিত, মুদ্রিত এবং প্রকাশিত প্রথম ফ্যাসিবিরোধী বই। ১৯৩৪-এ প্রকাশিত হলেও বস্তুত এর প্রস্তুতি চলেছিল ইতালিতে লেখকের কারাবাসের সময় থেকে। একেবারে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে লিখিত ফ্যাসিবাদী তত্ত্ব আর প্রয়োগ নিয়ে গোড়া-ঘেঁষা অনুসন্ধানের এমন উজ্জল দৃষ্টান্ত বিরল।
বক্তব্যের সাথে আমি কোনো অর্থেই খুব বেশি দ্বিমত না। এটা অবশ্য কমিউনিস্ট জায়গা থেকে মুসোলিনীর খণ্ডন, আমার নিজের জানার ইচ্ছা, সেইযুগের ফ্যাসিবাদীরা কেমন ছিলো, কেমন ছিলো তারা নিজেদের চোখে। কিছু জায়গায় ফ্যাসিস্টদের কাজকর্ম তো পুরা ছাত্রলীগের আগের জন্ম। সাক্ষাতকারগুলিও ভালোই, সৌম্যেন্দ্রনাথ গিয়ে গিয়ে সাক্ষাতকার নিছেন, পুরা ইতালির দৃশ্যই তার সরেজমিনে দেখা। ঠাকুরবাড়ির ছেলে এইসবের ভেতর ঢুকে গেছিলো এটা হয়তো স্বাভাবিক, কিন্তু এই খবর যে জানতাম না এইটা একটা মস্ত বড়ো অস্বাভাবিক। সেইযুগে সোভিয়েত নিয়ে আশাভরসা এখন এসে কেমন তেলচিটে পড়ে গেছে, কিন্তু, এই খোঁচা না দেই বরং। সৌম্যঠাকুরের গদ্যও ভালো, অবনের ভাইপো বলে কথা।
আমার ভালো লাগে না, এইখানেও লাগে নাই, এই দো-আঁশলা বামপন্থী রেটরিক। পুঁজিবাদ, অমুকবাদ, তমুকবাদ, ইম্পিরিয়ালিজম, এই সেই, আরে ভাই, দখলদাররে দখলদার আর বড়লোকরে বড়লোক বললে কী হয়? ইতালির গান ছিলো বেল্লা চাও, আমাদের একটা সিনেমার গান ছিলো না, পিঁপড়ায় খাইবো বড়লোকের ধন? কোনো বাম হায়, নিলো না এই গানরে, বামরা নিলো না ওয়ারফেজের ধূসর মানচিত্ররেও। সৌম্যঠাকুরকে অবশ্য ব্যক্তি হিসাবে খুব বেশি দোষ দিতে পারি না, এই বই ১৯৩৪-এ লেখা, কিন্তু তবুও, এইসব খটোমটো শব্দের শুরু মনে হয় ইনি আর মুজফফর সাহেবরাই। কোলকাতায় তাও ধুঁকে ধুঁকে চললেও ঢাকায় এই শব্দগুলি একেবারেই হালে পানি পায় নাই, স্বাভাবিকভাবেই, আর প্রত্যন্তের কথা তো বাদই দিলাম। তবুও, বইটা খারাপ না, একটু ছোটো, অনেকটা পার্টিজান, যেমন পার্টিজান আর সবাই, ভেতরে আর বাইরে। সৌম্যঠাকুরকে এইজন্যও ধন্যবাদ যে এই বই লেখার জন্য তাকে মস্কো থেকে বলতে হয় নাই, স্বীয় উদ্যোগেই লেখা। ধন্যবাদের পাশাপাশি তাকে লাল সালামও দেয়া যায়, এই লাল সালাম ব্যাপারটা খারাপ না, অমুক-তমুক-বাদের গন্ধ নাই, আছে দিল্লীওয়ালা হিন্দু আর দুনিয়াওয়ালা মুসলমানের সালাম, আর আছে রক্তের লাল।