রহস্যময় কারণে আচমকাই সম্পূর্ণ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় একটি গ্রাম। মহামারির মতো এক রাতের মধ্যেই লাশে পরিণত হয় গ্রামের সবাই। মাথার চুল ছেঁড়ার মতো অবস্থা হয় প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থার, পত্র-পত্রিকায় ওঠে কল্পকাহিনীর তুফান। অন্যদিকে একের পর এক দুটি বীভৎস খুন হয়ে যায় শহরে। তদন্তের ভার নিয়ে মাঠে নামে রুহান। আর নেমেই বুঝতে পারে, যুক্তির উর্ধ্বে যাওয়া একটি সত্যের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে সে। আবার ঘটনাক্রমে জড়িয়ে পড়ে রহস্যময় গ্রাম নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঘটনায়ও। অথচ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি, নিজের অজান্তেই ঠিক কতটা বীভৎস এক অতীতের মুখোমুখি হতে চলেছে সে। এদিকে তার পেছনে লেগেছে ক্ষমতার লোভে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা কেউ একজন। এগুনোর পথটা যখন ক্রমশ কঠিন হয়ে এসেছে, ঠিক তখনই অদ্ভুত ভাবেই বদলে যেতে থাকে কাছের মানুষগুলোও। বিশ্বাস করার মতো কেউ তো থাকেই না, বরং খুব বিশ্বস্ত মানুষটাও যেন উল্টো ঘুরে দাঁড়ায়। ফলে নিজের জীবনই বিপন্ন হয়ে ওঠে ওর। এদিকে রাতের জমাটবদ্ধ আঁধারে ক্রমশ ডানা বিস্তৃত করছে এক অশুভ শক্তি...জন্ম দিচ্ছে মূর্তিমান বিভীষিকা'র।
এটাকে কোন ক্যাটাগরিতে ফেলব জানিনা। আসলে এবিষয়ে খুব বেশি ধারণাও নাই। ডিটেক্টিভ? থ্রিলার? ফ্যান্টাসি? নাকি অন্যকিছু? লেখক ফ্যান্টাসি+থ্রিলার হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। . কাহিনী : কোনো এক জঙ্গলের পাশেই ছোট একটি গ্রাম। হঠাৎই এক অজানা কারণে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় সেটি। শুরু হয় চুলচেরা বিশ্লেষণ। কিন্তু রহস্য যেন আরো প্রকট আকার ধারণ করে। পত্রপত্রিকায় বসে অনির্ভর কল্পকাহিনীর হাট। তারা একে কোনো অপশক্তির কাজ বলে ধারণা করে। কিন্তু আসলেই কী তাই? নাকি কারো সুনিপুণ হাতের সুক্ষ্ম চাল? এক অস্বাভাবিক খুনের ইনভেস্টিগেশনের দায়িত্ব পায় সুদক্ষ গোয়েন্দা, রুহান। সঙ্গী হয় আদিল। খুঁজতে থাকে ছোট্ট কোনো ক্লু, যা ধরে সামনে এগোবে। এদিকে কেস নিয়ে কাজ করতে করতে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে সেই মৃত্যুপুরীর রহস্যের সাথে। তবে কি সেই কেসের সাথে আছে কোনো সম্পর্ক? নাকি খুনির সুক্ষ্ম ধোকা? আস্তে আস্তে সবচেয়ে কাছের মানুষও পরিনত হয় অপরিচিত। ধোঁয়াশা এক অন্ধকার গ্রাস করে রুহান কে। যেন নিজের অস্তিত্বই বিলিন হবে। হঠাৎই খুঁজে পায় ছোট একটি চিহ্ন। যেটি বারবার তার সামনে আসে। প্রথমে যাকে আমলে নেয়নি রুহান। তবে কি এই চিহ্নই তাকে নিয়ে যায় শেষ পরিণতির দিকে? . কিছু কথা : বইয়ের বানানে বেশকিছু মিস্টেক দেখেছি। লেখক কে যতটুকু চিনি, সামান্য আ'কার ভুল হলেই চুল ছিঁড়ে। আর এমন মিস্টেক দেখে 'হা' করারই কথা। প্রকাশনী একটু সতর্ক হলেও পারতো। আর শেষের দিকে গিয়ে কেমন যেন তাড়াহুড়ো করেছেন লেখক। তখন মনে হচ্ছিলো, ধুর!!! এত তাড়াতাড়ি হইলো ক্যা? আরেকটু রস দিতে পারতো!! যথেষ্ট স্পেস ছিল সেখানে। আর শেষে গিয়ে মনে হয় দুই বোনের নামে একটু উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে। গুলায়া ফেলেছিলাম। যদিও পরে ঠিক করেছি। আর শেষ পরিণতির সময় এমন হলে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কেমন যেন লাগে। . ভালোলাগা : বইটার প্রতি শুরু থেকেই আমার কাছে একটা আকর্ষণ ছিল। প্রিয় মানুষের বই হলে হয়ত এমনই হয়। প্যাক খুলে হাতে নিয়েই হাত বুলিয়েছি বইয়ের মলাটে। ঘ্রাণ নিয়েছি পৃষ্ঠার। পড়া শুরু করেছি তো শেষ। এর মাঝে কোনো বিরতি দেইনি। দেইনি বলতে দেয়নি। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছিল আমাকে। নিয়ে গিয়েছিল অন্য একজগতে। লেখকের সার্থকতা বুঝি এখানেই। তার জগতে নিমন্ত্রণ করে আগলে রাখা। সাথে সাবলিল লেখা, পড়ার স্বাদ আরো বাড়ায়। এর সঠিক ব্যবহার লেখক করেছেন। রুহানের সাথে রাস্তার মুড়িওয়ালার সাথে কিছু কথোপকথন আছে। তখন বুকের ভেতর মোচড় দিয়েছিল। সবার হবে কিনা জানি না। তবে মুড়িওয়ালার চোখে সেই চিকিচিক করা বালি আমার চোখেও টের পেয়েছিলাম। এই বইয়ের আরো একটা দিক এটি। গল্প থেকে দূরে নিয়ে বলবো না। বরং গল্পের রসেই সেখানে করুণ রস ঢেলেছেন লেখক। যেন পোলাও কোর্মা খাওয়ার পরে ঠাণ্ডা পনীয়। আর থ্রিলিং!!! আদিলের সাথে আমারো চোয়াল ঝুলে গিয়েছিল। যাই হোক! এক দমে শেষ করেছি বইটি। :v ওহ! হ্যাঁ! লেখক মনে হয় নিজের অজান্তেই কিংবা জেনে বুঝেই আদিলের ভেতরে নিজের ভাই পাগলা ফ্লেভার দিয়ে দিয়েছে... :v শেষ উক্তি শুনে তো তাই মনে হয়। 😍 . এই অংশের নাম নাহয় লেখকের উপর ছেড়ে দিলাম, লেখক পরিচিতি অংশের শেষে, লেখকের একটি স্বপ্ন আছে। যেন অন্তিমাতে শোকযাত্রা শেষে যেন কেউ অন্তত অশ্রুসিক্ত চোখে তিনটি শব্দ উচ্চারণ করে...' আমি তাকে চিনতাম' আমি বলি কী! সেই মুহূর্তে হয়ত আরো একজন থাকবে। সে তিনটি নয়, একটি শব্দ উচ্চারণ করবে- 'মামা' :)
রূপনগর গ্রাম। হঠাত করেই গজিয়ে ওঠা জেলেদের একটা গ্রাম। গ্রামের জনসংখ্যা ৫০। কিন্তু হঠাত এক সকালে উঠে সবাই দেখল গ্রামের সবাই মৃত। বীভৎস ভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের। এবং অবাক করা বিষয় হল সবার মৃত্যুর সময় একই। যেন এক সাথে সবাইকে কেউ হত্যা করেছে।
এবার ঘটনা স্থল ঢাকা। খুন হল এক ব্যাক্তি বীভৎস ভাবে। যেটা সবচেয়ে অবাক করে যে এই খুনের সাথে রূপনগর গ্রামের খুনের এক অদ্ভুত মিল। লাশের গায়ে একই চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। তবে কি খুনি একই ব্যাক্তি?
তদন্তের ভার পড়ল রুহানের উপর। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে রুহান বুঝতে পারল আর ১০টা সাধারন কেসের মতন সাধারন নয় এই কেস। যুক্তি দিয়ে বিচার করলে এমন ঘটনার অস্তিত্ব থাকাই উচিত না। ধাঁধায় পড়ে গেল রুহান, কে আসলে খুনি। শেষ পর্যন্ত রুহানের নিজের জীবন নিয়েই টানাটানি পড়ে গেল।
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ নতুন লেখক হিসেবে লেখার হাত খারাপ নয়। তবে লেখার মান উন্নতি করার সুযোগ আছে।
অনেক চেষ্টা করেও বইটিকে ২ তারার বেশী দিতে পারলম না। লেখক অনেক বেশী এলোমেলো লিখেছেন। শেষে গিয়ে কিছুটা জোড়া দিতে পারলেও গল্পের মূল কাঠামো আঘাতগ্রস্থ হয়েছে। অথচ শুরুটা বেশ আশা জাগাচ্ছিল। লেখনীতে যথেষ্ঠ ছেলেমানুষী ছিল। ঘটনা আর তার পেছনের কারণ ঠিক বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। লেখক পরিচিত, কিন্তু লেখার মান পরিচিতের মানদন্ডে মাপা ঠিক নয়। আরবান ফ্যান্টাসী বাংলাদেশে নতুন জন্যই আশা ছিল অনেক। লেখক পুরোপুরি ব্যর্থ এ বিষয়ে। তারপরেও প্রথম উপন্যাস হিসেবে উৎরে যায়।
লেখকের পরবর্তী লেখা আরো গঠনমুলক আর উন্নত হবে আশা করি।
প্রতি শুক্রবার ভেবে থাকি ঘুম থেকে উঠবো দেরি করে। কিন্তু নাহ! এই দিনেই ঘুম অন্য দিন থেকে আরও আগে ভেঙে যায়। কোন কোন দিন অবশ্য কাজ থাকে। কিন্তু আজ কোন কাজই নেই সকালে। কি আর করার, অগ্যত বসে পরলাম বই নিয়ে। ভুমির "বৈশাখী মেলায় কেনা বইগুলোর মধ্যে বন্ধু Himel এর "বিভীষিকা" বইটিও ছিলো। তাই দেরি না করেই হাতে নিয়ে ফেললাম বইটি। আমি কখনোই এক বসাই বই শেষ করতে পারি না। স্লো রিডার তো অবশ্যই, তারপর আবার বইয়ের মেইন সিনে এসে বই রেখে দেওয়া পুরোনো অভ্যাস। কিন্তু এই বইয়ের বেলায় তা হয় নি। একটানে পড়ে নিলাম আরবান ফ্যান্টাসি জনরার বইটি। বন্ধু আমার যথেষ্ট থ্রিল দিয়েছে সকাল সকাল 🤗
চরের বুকে ১৬ টি জেলে পরিবারের প্রায় ৫০ জন লোকের বসতি রুপশ্রীনগর গ্রাম। এক রাতে অদ্ভূত কোন কারণে পুরো গ্রামের সব মানুষ মারা যায়। প্রতিটি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে একই সময়ে এবং বীভৎসভাবে। এর পরের ঘটনা স্থল ঢাকা। এই ঢাকার বুকেও পৈশাচিক ভাবে খুন হন এক ব্যক্তি। অবাক করা বিষয় হলো, ঢাকার বুকে ঐ ব্যক্তির খুনের সাথে মিল পাওয়া যায় রুপশ্রীনগরের মারা যাওয়া জেলে পরিবারগুলোর খুনের মাঝে। প্রত্যেকের কপালেই পাওয়া গেছে অদ্ভূত এক সিম্বল।
খুনের রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে ডিবির ইনভেস্টিগেটর রুহান। সাথে থাকে সহকারী আদিল। সূত্র খোঁজার মিশনে নেমে রুহান বুঝতে পারে এই খুনগুলো স্বাভাবিক কোন খুন নয়৷ আউট অফ দ্য বক্স চিন্তা করে এগোতে হবে৷ যুক্তির বাইরে গিয়ে ভাবতে হবে এই ভয়াল বিভীষিকার হাত থেকে দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে হলে।
কথা বলছিলাম ভূমি প্রকাশ থেকে ২০১৮ সালে প্রকাশিত হওয়া হিমেল রহমানের প্রথম মৌলিক উপন্যাসিকা 'বিভীষিকা' নিয়ে। প্লট সম্পর্কে তো আইডিয়া পেলেন, এবার বলা যাক সবমিলিয়ে কেমন ছিলো এই বই পড়ার অনুভূতি।
৮৫ পৃষ্ঠার 'বিভীষিকা' বইটির কোর প্লটকে কোন স্পেসিফিক জনরায় ফেলতে হলে আমি বলবো এটি একটি আরবান ফ্যান্টাসি। কোর প্লটটি ভালো হলেও লেখক পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন এটার এক্সিকিউশনে। আমি কখনোই কোন বই পড়ার ক্ষেত্রে ভুল ধরার মেন্টালিটি নিয়ে বসি না। তবে এই বইটার একদম শুরুর পৃষ্ঠার বর্ণনাই আমাকে দূর্বল বর্ণনার হিন্ট দেয়। শুরুতেই এরকম দূর্বল বর্ণনা কিভাবে লেখক/সম্পাদক মন্ডলীর চোখ এড়িয়ে প্রিন্ট হলো সেটা এক মূহূর্ত আমার ভাবনায় আসলেও তা এড়িয়ে বইটাতে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করি আমি। কিন্তু দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুতেই একটা পত্রিকার রিপোর্ট আমার মনোনিবেশ আবার নষ্ট করে। রিপোর্টটা যে ভাবে লেখা হয়েছে তা পড়ে আসলে কোনভাবেই একটা পত্রিকার রিপোর্ট মনে হচ্ছিলো না। একটা লাইনের উদাহরণ দিই। 'পরদিন সকালে সাগর থেকে এক জেলে আসে তার পরিবারকে দেখতে', মূলত সেই জেলে তার পরিবার-পরিজন সহ পুরো গ্রামকে মৃত আবিষ্কার করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই রিপোর্টে যে লোকটা প্রথম এই ঘটনার সাক্ষী হলো তার নাম আসে না। এমনকি তার অস্তিত্ব এই রিপোর্টেই শেষ। যেভাবে অ্যানোনিমাস ভাবে 'এক জেলে' লেখা হয়েছে রিপোর্টে কখনোই এভাবে লেখা থাকে না। অবশ্যই নাম উল্লেখ করা থাকে। ওদিকে কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়া একটা খবরের কাগজ কোন একটা ঘটনাকে 'ধারণা করা হচ্ছে, কোন অশুভ শক্তির প্রভাবে এমনটা হয়েছে। সত্যিই কি তাই? তাহলে কি সেই অলৌকিক শক্তি?' বলে উল্লেখ করে না। এই টাইপ রিপোর্ট লিখলেই জনমনে প্রশ্ন আসবে, ধারণাটা করেছে কে? কিসের বেসিসেই বা ধারণা করেছে?
এই ব্যাপারটা চোখে পড়তেই নড়ে চড়ে বসি আমি। বলতে দ্বিধা নেই এরপর একটু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বইটা পড়া শুরু করি আমি। আর সে এক্সপেরিয়েন্স ভীষণ খারাপ কারণ লিখনশৈলী এতটাই দূর্বল হয়েছে যে, কেউ যদি চায় প্রতি দুটো পৃষ্ঠাতেই কোন না কোন ভুল খুঁজে বের করতে পারবে। আমি কয়েকটা ড্র-ব্যাকের উদাহরণ দেই।
১. ঢাকায় খুন হওয়া প্রথম ব্যক্তি জহির সাহেব হুট করেই আদনান সাহেবের বর্ণনায় হয়ে গেলেন 'আসাদ সাহেব'। আবার কয়েক পৃষ্ঠা পরে 'জহির সাহেব'। আবার কিছুদূর পর আসাদ সাহেব। এরকম নাম বিভ্রাট পড়ার সময় বিরক্তির উদ্রেক করে। একই সাথে এটাও বোঝায় যে লেখক/এডিটর প্যানেল খুব একটা টাইম দেননি বইটার সম্পাদনার পেছনে।
২. ডিটেকটিভ রুহান যখন আদনান সাহেবের বাসায় প্রথমবারের মত যায় তখন আদনান সাহেব ও রুহানের আচরণে মনে হয় তারা পরস্পরকে চেনে, যদিও কিভাবে চেনে, আদৌ চেনে কিনা তা পুরো বইতে কোথাও বলা হয়নি।
৩. ডিটেকটিভ রুহান সাহেব রুপশ্রীনগর ক্রাইম সিনে যান কোন একটা ক্লু পাবার আশায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, একটা সাধারণ পাঠক হিসেবে আমি ভেবেছিলাম, রুহান সাহেব সর্বপ্রথম দেখা করবেন গ্রামে লাশগুলো সবার আগে যে দেখেছে তার সাথে। কিন্তু তিনি তা তো করেনই নাই, ইভেন সেই লোকটা যে এক্সিস্ট করে সেটাও তার মাথায় নাই। এইটা কিভাবে সম্ভব?
৪. ডিবি এখানে দুটো আলাদা আলাদা খুনের তদন্ত করছে এবং রিপোর্টে যেভাবে খুনের পেছনে অলৌকিক কোন এনটিটির সম্ভবনা দেখানো হয়েছে, তাতে করে পুরো ডিবি এবং দেশের হুমড়ি খেয়ে পড়ার কথা এই খুনের রহস্য উদঘাটনে। কিন্তু ডিটেকটিভ সাহেব এবং পুরো ডিবি অফিস মনে হয় আমার মতই 'প্যারা নাই, চিল' মোটোতে বিশ্বাসী। পুরো বইতে রুহান, আদিল বাদে আর কোন ডিবি কর্মকর্তাদের কোন হদিস পাওয়া যায় না।
৫. ধরেন আপনি সহকারী ইনভেস্টিগেটর আদিল। আপনাকে দায়িত্ব দেয়া হলো, কৌশলে এই কেসের একজন সন্দেহভাজনের সন্তানের সাথে তার স্কুলে দেখা করে খানিকটা তথ্য নেয়ার। বাচ্চাটি একটি মেয়ে বাচ্চা এবং পড়ে ক্লাস সিক্সে। আপনার প্রশ্নের প্যাটার্ন কি রকম হবে? 'বাবু, তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?' এরকম তাইতো? এ প্রশ্নের উত্তরে যদি বাচ্চাটি বলে, 'ওহ! এসব দিয়ে আপনার কাজ কি? ওসব তো হুদাই কথাবার্তা। আমার কাছে কি জানতে চান?' কেমন লাগবে তখন? যেমনই লাগুক, ডিবির একজন ডিটেকটিভকে দেখে ক্লাস সিক্সে পড়া একটা বাচ্চার এরকম রেস্পন্স কি বিশ্বাসযোগ্য? আমার তো বিশ্বাস হয়নি। তবে চরিত্রায়নে ক্লাসে সিক্সে পড়া তিন্নিকেও ছাড়িয়ে গেছেন আদিল সাহেব। এরকম উত্তর শোনার পরে সে প্রশ্ন করে, 'তুমি কি জহির সাহেবের লাশ দেখতে গিয়েছিলে?' মানে যেখানে সন্দেহ করা হচ্ছে কোন অলৌকিক সত্ত্বার দ্বারা জহির সাহেব খুন হয়েছেন এবং তার লাশটি যথেষ্ট বীভৎস, তখন একটা ক্লাস সিক্সে পড়া বাচ্চাকে এই প্রশ্ন করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত?
তো এই পর্যায়ে এসে আমি আসলে ভুল খোঁজা বাদ দিয়ে দেই। কারণ ততক্ষণে আমি বুঝতে পেরেছি, লেখক তো নিজের ভুলগুলো ধরতে পারেনইনি, সম্পাদকরাও এক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন (যদি কোন সম্পাদক এই প্রজেক্টে থেকে থাকে)। এছাড়াও বইতে চরিত্রায়ন, ক্লাইম্যাক্স সৃষ্টি ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই লেখকের অপরিপক্কতা প্রকাশ পেয়েছে। নতুন লেখকের বই আমি খুব আগ্রহ সহকারে পড়ি কিন্তু এই বইটি আমি যে আগ্রহ নিয়ে শুরু করেছিলাম বই অর্ধেক হবার আগেই আমার সে আগ্রহ হারিয়ে গেছে।
অনেকে বলতে পারেন, নতুন লেখক, সাপোর্ট দেয়া উচিত। তাদের বলতে চাই, অবশ্যই সাপোর্ট দেয়া উচিত। তবে সেটা কোন ল্যাকিংস থাকলে তা ধরিয়ে দিয়ে। ভুল ত্রুটি না ধরিয়ে দিয়ে তাকে আরো ভুল করার সুযোগ দেয়াটা কোনভাবেই তার সাপোর্টে আসবে না।
তো এই ছিলো, ১৬০ টাকা মুদ্রিত মূল্যের হিমেল রহমানের লেখা মৌলিক বই 'বিভীষিকা' নিয়ে আমার অনুভূতি। অনেক নেগেটিভ কিছু বললেও বইটা নিয়ে একটা পজিটিভ কথা বলতে চাই। লেখকের কল্পনাশক্তি তথা প্লট নির্বাচন ভালো ছিলো। লিখনশৈলীর উন্নতি করতে পারলে হয়তো ভবিষ্যতে একজন ভালো লেখক হিসেবে তাকে আমরা পেলেও পেতে পারি।
নতুন লেখকের নতুন বই। তাই স্বাভাবিকভাবে কম আশা নিয়ে বসেছিলাম। ভেবেছিল কিছুটা পেলে ও ৪ স্টার দিব। কিন্তু সত্যি বলতে বইটা আমাকে সব দিক থেকে হতাশ করেছে। সেটা স্টোরি হোক বা লেখনীর স্টাইল।
রুপশ্রীনগর গ্রামটি অন্য চারটি স্বাভাবিক গ্রামের মতই ছিল৷ বসতি ছিল সবমিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ ঘর জেলের। কিন্তু এক বৃষ্টির রাতে ঘটে যায় রহস্যময় দুর্যোগ। একইরাতে রহস্যজনক ভাবে সব মানুষ মরে যায়। বেচে যায় শুধু শিশুগুলো। কিন্তু, এমনি এমনি ছাড়েনি। তাদের চোখগুলো সূঁচালো কিছু দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলা হয়। সাথে পাওয়া যায় অদ্ভুত একটা সিম্বল।
এদিকে শহরে ঘটে যায় দুইটা খুন। খুনের প্যাটার্ণ একইরকম৷ শুধু তাই নয়, লাশ দুটোর শরীরে পাওয়া যায় একইরকম সিম্বল। তাহলে কি রুপশ্রীনগরের ট্রাজেডির সাথে খুন হওয়া ব্যক্তিদের কোন সম্পর্ক আছে?
তদন্তে নামে ডিবির ডিটেকটিভ রুহান ও সহকারী আদিল। কিন্তু, তদন্তে নেমে তারা বুঝতে পারে এই রহস্যের সমাধান আর খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজা একই। এদিকে, একের পর এক আঘাত হানছে ভয়াল বিভীষিকা। শেষ পর্যন্ত কি রুহানরা বিভীষিকাকে হারাতে পেরেছিলো?
এই হলো প্লট। এবার পাঠ প্রতিক্রিয়ায় আসা যাক।
প্রথমেই বলে নিই, লেখকের প্রথম মৌলিক এটি। এটা মাথায় নিয়েই বইটি পড়তে শুরু করেছি। ⚪প্রথম হিসেবে লেখকের প্লটটা ভালো ছিল। এরকম হরর বা প্যারানরমাল থিমে আগে বেশ কিছু থ্রিলার লেখা হলেও, সংখ্যায় অল্প। আর ওইরকম থিম শুরুতেই বেছে নেয়া চ্যালেঞ্জিং কাজ। লেখকের লেখনী বেশ প্র��ঞ্জল, লেখনীর কারণে আটকাতে হয় নি। প্লটটাও ভালো সাজিয়েছেন। বানান ভুল নেই বললেই চলে।
🟤এখন বলি যা হলে আরো ভালো হতো, কিন্তু হয়নি এমন কিছু বিষয় নিয়ে।
🟤উপন্যাসিকার টা মধ্যে একটা ডার্ক ওয়ার্ল্ডের কথা বলা আছে যার নাম হর্ণস সিটি। লেখক যদি সময় নিয়ে এই ওয়ার্ল্ডটা বিল্ডাপ করতো, ওখানকার বাসিন্দাদের নিয়ে কিছু ক্যারেক্টর বিল্ডাপ করত, দারুণ কিছু একটা হতে পারতো বলে আমার ধারণা।
🟤ডিমন হান্টার এজেন্সি নিয়েও তেমন কিছু নেই৷ কিন্তু এজেন্সি নিয়ে বিস্তারিত লিখলে আরো ভালো হতো। ডার্ক ওয়ার্ল্ড আর এজেন্সির সেটাপ ডিটেইলস যদি লেখকের মাথা থেকে বইয়ের পাতায় আসতো...
🟤ক্যারেক্টার বিল্ডাপের কথায় আসি৷ এখানে রুহান চরিত্রটা বিল্ডাপ হয়েছে ভালোমতো। কিন্তু নীহারিকা আর লিলি চরিত্রটার বিল্ডাপ আরো বেটার হতে পারতো। বিশেষ করে নীহারিকার ব্যাকস্টোরি খুবই সংক্ষিপ্ত।
🟤শুরুর কিছু পর মাঝামাঝি জায়গায় স্টোরি দুই টাইমলাইন ধরে এগিয়েছে। কিন্তু, বোঝার সুবিধার্থে একই চ্যাপ্টারে শুধুমাত্র একটা * ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে ছোট করে হলেও আলাদা দুই চ্যপ্টারে ভাগ করলে ভালো হতো। একই চ্যপ্টারে দুই টাইমলাইন গুলিয়ে গেছে।
⚫এবার সমালোচনায় আসি। বইয়ে কিছু ছোট ছোট প্লটহোল রয়ে গেছে৷ আমার ধারণা টুইস্ট আনতে গিয়ে শেষের দিকে বিষয়গুলো জটিল হয়ে গেছে এবং তৈরী হয়েছে বেশ কয়েকটা প্লটহোল। নিচে স্পয়লার ফ্রি করে কয়েকটা উল্লেখ করছি।
◾ রুহান যদি বুঝেই গেল সবকিছুর পেছনে কে আছে, তাহলে তাকে (এন্টাগনিস্ট) জবাবদিহির কথা কেন আসবে?
◾একজায়গায় লেখা, আদিল অপেক্ষা করছে, আরেকজায়গায় যার জন্য (এন্টাগনিস্ট) অপেক্ষা করছে তাকে দেখে পালাতে শুরু করল। এখানে উনার জন্য যদি অপেক্ষাই করে থাকে, তবে পালাবে কেন?
◾এক জায়গায় লেখা কালো জাদু দিয়ে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। আরেক জায়গায় একই চরিত্রের বয়ানে লেখা প্রথম চরিত্রটিকে ব্ল্যাক ম্যাজিক করতে কখনো দেখেনি।
আর কিছু না বলি। গুরুগম্ভীর বই পড়তে পড়তে হাপিয়ে গেলে অল্প পাতার বইটি পড়ে দেখতে পারেন৷ খারাপ লাগবে না। হ্যাপী রিডিং। 🙂
রহস্যময় কারণে আচমকাই সম্পূর্ণ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় একটি গ্রাম। মহামারির মতো এক রাতের মধ্যেই লাশে পরিণত হয় গ্রামের সবাই। মাথার চুল ছেঁড়ার মতো অবস্থা হয় প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থার, পত্র-পত্রিকায় ওঠে কল্পকাহিনীর তুফান। অন্যদিকে একের পর এক দুটি বীভৎস খুন হয়ে যায় শহরে। তদন্তের ভার নিয়ে মাঠে নামে রুহান। আর নেমেই বুঝতে পারে, যুক্তির উর্ধ্বে যাওয়া একটি সত্যের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে সে। আবার ঘটনাক্রমে জড়িয়ে পড়ে রহস্যময় গ্রাম নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঘটনায়ও। অথচ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি, নিজের অজান্তেই ঠিক কতটা বীভৎস এক অতীতের মুখোমুখি হতে চলেছে সে। এদিকে তার পেছনে লেগেছে ক্ষমতার লোভে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা কেউ একজন। এগুনোর পথটা যখন ক্রমশ কঠিন হয়ে এসেছে, ঠিক তখনই অদ্ভুত ভাবেই বদলে যেতে থাকে কাছের মানুষগুলোও। বিশ্বাস করার মতো কেউ তো থাকেই না, বরং খুব বিশ্বস্ত মানুষটাও যেন উল্টো ঘুরে দাঁড়ায়। ফলে নিজের জীবনই বিপন্ন হয়ে ওঠে ওর। এদিকে রাতের জমাটবদ্ধ আঁধারে ক্রমশ ডানা বিস্তৃত করছে এক অশুভ শক্তি...জন্ম দিচ্ছে মূর্তিমান বিভীষিকা'র।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ফ্যান্টাসি জন্রা নিয়ে মোটামুটি সবার ই ধারণা আছে, লেখক সেখানে নিজের মত করে পাবলিক মিথ গুলাকে একটা রুপ দেয় তার কল্পনার জগৎ থেকে৷ যার পুরোটাই কাল্পনিক। বিভীষিকা ও এমন একটি বই। গল্প টা শেষে উপলব্ধি হলো লেখক সুন্দর একটা প্লট তার মাথার মধ্যে সাজিয়েছেন, সুন্দর ভাষা প্রয়োগ আর বিস্তারিত বিরক্তিহীন বর্ণনার কারণে বেশ ভালো ই লাগছিলো পড়তে ৷ ফ্যান্টাসি হলেও অভিযোগের বেশ ক'টি জায়গা আছে আমার মতে। গল্পটা একটা পর্যায়ে খাপছাড়া লেগেছে, এলোমেলো হয়ে গেছিলো। যেভাবে এগোচ্ছিলেন সেটা খেই হারিয়ে ফেলেছিলো। কাহিনী টা অনেক কমপ্লিকেটেড করে ফেলেছিলেন সারপ্রাইজ এলিমেন্ট এর প্রকাশ করতে গিয়ে। জট পাকিয়ে যাচ্ছিলো। শেষের দিকে আয়ত্তে নিয়ে এসেছিলেন খানিকটা৷ স্টোরিটেলিং টা এভারেজ ছিল, গল্পের একদম সর্বশেষ সিন টা না রাখলেও পারতেন। এসব ছাড়া লেখকের ক্যারেক্টার বিল্ডিং, বাক্যগঠন বেশ সুন্দর ছিল। সাসপেন্স ও রাখার চেষ্টা করেছেন পর্যাপ্ত। কিছু সংলাপ এ ছিল খুব সুন্দর দর্শন। কয়েকটা লাইন অনেক পছন্দ হয়েছে। বই এর মধ্যে বেশ কিছু বানান ভুল, এক শব্দের পরপর দুইবার উপস্থিতি ছিল। লেখক পরিচিতি, উৎসর্গের পার্ট টা ইন্টারেস্টিং লেগেছে অনেক। প্রচ্ছদ টা ও সুন্দর।
পছন্দের সংলাপঃ যে শক্তি বলি দিয়ে পেতে হয়, সে শক্তি নিজেকেই শেষে বলি চেয়ে বসে।
ভালোই লিখেছেন লেখক তবে অনেক ছোট লিখা হয়ে গিয়েছে। যেমন প্লট তাতে আরও বেশি লিখা আশা করেছিলাম। যেমন - ইহিতার অপশক্তির বিষয়বস্তুগুলো আরও বিস্তারিত জানতে পারলে ভালো হত। সাথে লিলির সিক্রেট এজেন্সীর গঠন, কর্মকাণ্ড, কর্মপন্থা, জহির, আরমান সাহেবের পূর্ব পরিচয়, রুহানের মা, নীহা কিভাবে সিক্রেট এজেন্সীতে জয়েন করেছিল, ইহিতা কেন তাদেরকে বেছে নিল বলির জন্য, হর্নস সিটির আরও কিছু বিবরণ, লিলির ইতিহাস ইত্যাদি আরও বিস্তৃত পরিসরে...
চরিত্রগুলোর গভীরে যেতে পারলে পাঠক আরও খুশি হত বলেই মনে হয়।