অসম্ভব সুন্দর কিছু হালাল প্রেমের গল্প । যে গল্পগুলো নতুন কিছু ভাবনার খোরাক জোগায় । তথাকথিত প্রেম- ভালোবাসা যে আল্লাহ প্রদত্ত ভালোবাসার কাছে কিছুই নয়-সেখানে যে প্রকৃত সুখ থাকেনা- তা এই বইয়ের গল্পগুলো পড়লে খুব সহজেই উপলব্ধিতে আসে । সবাই একবার হলেও বইটা পড়ুন। আশাহত হবেন না ইনশা আল্লাহ।
এই বইটির তুলনায় ওনার 'আই লাভ ইউ' বইটা বেশী ভালো লেগেছে। 'ওগো শুনছো' এর সবচেয়ে যে লেখাটা বেশী ভালো লেগেছে তা তুলে ধরলাম-
বিয়ে করো সেই মেয়েটিকে, যার জীবনের প্রথম প্রেম ছিলো বই।যে মেয়ে দামি জামা-জুতো না কিনে টাকা বাঁচিয়ে বই কিনে ঘর ভরিয়ে ফেলে। যার আলমারিতে বই রাখতে রাখতে কাপড় রাখার আর জায়গা হয় না।যার মাথায় সব সময় ঈপ্সিত বইয়ের একটি তালিকা থাকে,যে তালিকা ক্রমশই বড় হতে থাকে। যে ছোট বয়স থেকেই লাইব্রেরীর সাথে যুক্ত।বইপ্রেমীদের প্রতি অনুরক্ত। . এমন একটা মেয়ে খুঁজে বের করো,যে আসলেই পড়তেই ভালোবাসে।সাধারণ বইয়ের পাশাপাশি দ্বীনি বই পড়ার প্রতিও ব্যাপক আগ্রহ বোধ করে।তুমি তাকে দেখলেই চিনতে পারবে। তার ব্যাগে বা হাতে সবসময় একটা আধ পড়া বই থাকেই।তোমার সাথে বেড়াতে বের হলে,বইয়ের দোকান দেখলেই সে আটকে যায়,পরম মমতায় চোখ বুলায় তাকে সাজানো বইগুলোর ওপর, আর পছন্দের বইটা দেখতে পেলেই সে নিঃশব্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। তোমার হাতে চাপ দিয়ে মিনতি জানায়।একটু ঢুঁ মেরে আসার কথা বলে। তার নেকাব ঢাকা চোখ না দেখেও তুমি তার হৃদয়কাড়া চোখের ভাষা পড়ে ফেলতে পারো।
‘জোছনা ও জননীর গল্প’ অদ্ভুত এক ইতিহাসের বই। হয়তো অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। তা থাকুক। অবশ্য লেখক নিজেও বলেছেন এটা কোনো ইতিহাস বই না। তবু আমার কাছে তাই। আমি বলছি কারণ লেখক ‘হুমায়ূন আহমেদ’ উপন্যাসের কাহিনির মাঝে মাঝে ‘মুক্তিযুদ্ধের দলিলের ১৫ খন্ড’ থেকে সরাসরি তথ্য দিয়ে দিয়েছেন। আর পাঠক এই রূপক কাহিনির পাশাপাশি আসল সত্যটাও জানতে পারবে।
আমি আসলে বইটা নিয়ে রিভিউ করতে পারবো না। তাই কিছু আলোচনা করছি।
অসাধারণ কাহিনি বিন্যাস। গল্পের মাঝে মাঝে যখন তথ্য গুলোও পড়ছিলাম তখন যেন মনে হচ্ছে সবটাই গল্পেরই অংশ। কারণ স্বাক্ষীদের জবানবন্দি গুলো ছিলো চরম রোমহষর্ক। আমি শুধু ভাবি, কাহিনিটা পড়েই আমার এই অবস্থা, আর যারা ঘটনাস্থলে ছিলো তাদের না জানি তখন কি অবস্থা হচ্ছিলো। ‘পরাণ ডোম’তো বলছিলোই “আমি এসব মরা দেখে দেখে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তারপর দিন আমি আর লাশ আনতে অন্যদের সাথে যাইনি।”
বইয়ের কাহিনিটা ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের বাংলাদেশের ভয়াল মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত। এসময়ে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি খুব সতর্ক ভাবে, খুব মার্জিত ভাবে এবং খুব চমৎকার কথাশৈলী দিয়ে উপস্থাপন করেছেন লেখক।
গল্পের শুরু ফালগুনের আগুন ঝরা এক দুপুরে ‘ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরীর’ ঢাকায় আগমন দিয়ে। তিনি নীলগঞ্জ হাইস্কুলের আরবি শিক্ষক। ঢাকায় এসেছেন ছোট ভাইয়ের বাসায়। ছোট ভাই ‘শাহেদের’ বাসা তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি পথে পথে হাটছেন। তিনি দেখেন কিছু লোক মিছিল নিয়ে যাচ্ছে। তাদের স্লোগানের সার কথা হচ্ছে নিয়াজির পদত্যাগ।
এই গল্পের প্রতিটি চরিত্রই অসাধারণ। এখানে কোনো প্রধান চরিত্র নেই। প্রতিটি চরিত্র দিন শেষে স্বার্থক হয়েছে। যেমন ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরী গল্পের শুরুতে দেশ স্বাধীন হোক তা চাননি। কিন্তু একটা পর্যায়ে তিনি এই দেশের জন্যই শহীদ হন। তিনি নীলগঞ্জের মসজিদে নামাজ পড়াতেন। একসময় তাদের গ্রামে মিলিটারি আসে। মিলিটারির সেই দলের প্রধানও সেই মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন। এক শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়াতে ইরতাজউদ্দিন দেখেন চারজন হিন্দু বসে আছে তার মসজিদের পাশে। তারা মুসলিম হবে এবং তাদের সবাইকে একত্রে খৎনা করানো হবে। তখন ইরতাজউদ্দিন ঘোষণা করেন ‘পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজ হয় না। আমি আর নামাজ পড়াবো না’।
আবার দেখাযায় ঢাকাতে শাহেদ আর আসমানীর ছোট সংসার। তাদের এক মেয়ে রুনি। আসমানী আর শাহেদের মধ্যে খুব সামান্য কারণ নিয়েই ঝগড়া বেঁধে যেতো। ফলাফল আসমানী রুনিকে নিয়ে চলে যেতো বাবার বাড়ি। শেষবার যেদিন আসমানী রুনিকে নিয়ে বের হয় সেদিন ছিলো ২৫শে মার্চ। যেটাকে আমরা বলি কালরাত্রি। শাহেদের শুরু হলো তাদের খোঁজা। কিন্তু সে আর পায়নি তাদের। আসমানীর এক বদস্বভাব ছিলো যে ঘর থেকে বের হয়ে একেকবার একেক আত্মীয়র বাড়িতে যেতো। যাতে শাহেদ তাদের সহজে না পায়। এবারেও তাই করলো। এদিকে শাহেদ তাদের খুঁজতে খুঁতে রাত হয়। আর তখনিই দেখে ঢাকা শহরের রাস্তয় বিশাল বিশাল ট্যাংক। অগুনতি পাকিস্তানি মিলিটারি। সবাই সশস্ত্র। শাহেদ দিকবিদিকশুন্য হয়ে একবাড়িতে আশ্রয় নেয়৷ সেখান থেকে শুনতে পায় রাতের ঢাকার তান্ডবলীলা। তার পরেই লেখক চমৎকার ভাবে মুক্তিযুদ্ধের দলিলের কিছু তথ্য তুলে ধরেন। তখন সেটা মোটেই অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়নি।
শাহেদের বন্ধু নাইমুলকে আমার বেশি পছন্দ হয়েছে। প্রচুন্ড বই পড়ুয়া একজন মানুষ। কোনো রকম অহেতুক আলোচনা তার পছন্দ না। সে থাকে ঢাকায় এটা মেসের রুম ভাড়া করে৷ যুদ্ধের এই ভয়াবহ সময়ে বিয়ে হয় মরিয়মের সাথে। মরিয়মের বাবা পুলিশ অফিসার। প্রমোশন পেয়ে গোয়েন্দা হয়েছে৷ তার বর্তমান কাজ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর বাসায় থাকা। তার দায়িত্ব সেখান থেকে তথ্য পাচার করা। কিন্তু তা কি সম্ভব হবে? ২৫শে মার্চের পর থেকেই মরিয়মের বাবার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নাইমুল একদিন রাতে মরিয়মকে নিয়ে খেতে বসে। খাওয়ার পরে মরিয়মকে বলে ‘আমি যুদ্ধে যাবো’। মরিয়মকে কথা দিয়ে যায় যেদিন দেশ স্বাধীন হবে সেদিন সে মরিয়মের কাছে ফিরবেই। মরিয়ম জানে নাইমুল তার কথা রাখে।
***
বইটি পড়ার পর পাঠকের চোখে মুক্তিযুদ্ধের সময়টা আয়নার মতো ভেসে ভেসে উঠবে। মোটকথা বইটি পড়ে পাঠক মুক্তিযুদ্ধের সমটা উপলব্ধি করতে পারবেন। বইটি লেখতে লেখক ৯৩ টি বইয়ের সহায়তা নিয়েছেন। তার তালিকা তিনি বইয়ের শেষে যুক্ত করে দিয়েছেন।
হুমায়ূন আহমেদের লেখাতে আলাদা একটা শৈলী আছি শিল্প আছে। যা বরাবরের মতো এই বইতেও আছে। লেখকের লেখা আমার দারুণ লাগে কারণ তিনি প্রতিটি চরিত্রকে তার মতো করে ছেড়ে দেন। মানে প্রতিটি চরিত্র স্বতন্ত্র। এই গুনটা আমি অন্য লেখকদের মাঝে তেমন দেখিনি। আবার এমনটাও হতে পারে যে আমি তেমন লেখা হয়তো পড়িনি।
এই বইটা পছন্দ হবার আরেকটা কারণ হচ্ছে এখানে লেখক যুদ্ধের নৃশংসতা সযত্নে এড়িয়ে গেছেন৷ তবে ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন। আমি কিছু যুদ্ধের ��াহিনি পড়েছিলাম। সেখানে ঘটনা থেকে যুদ্ধের নৃশংসতা নিয়েই আলোচনা ছিলো বেশি।
সবশেষ কথা হচ্ছে বইটি এককথায় অসাধারণ। আমার কাছে কেউ যদি জানতে চায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভালো বই কোনটি, আমি নির্দ্বিধায় বলবো হুমায়ূন আহমেদের ‘জোছনা ও জনীনর গল্প’।
আতীক উল্লাহর "ওগো শুনছো!" বইটা শেষ করলাম। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ফ্যামিলি বিল্ডিংয়ের বিষয়াদি ভালো লেগেছে। কোথাও মনে হয়েছে লেখক একটু বাড়িয়ে লিখেছেন। এই মনে হওয়ার পেছনে যুক্তি হলো, মানুষের বাস্তব জীবনে অতিরিক্ত নাটকীয় হয়না। আবার কখনও হয়তোবা নাটককেও হার মানায়৷ তবু অতি নাটকীয় বিষয়াবলী আমার দৃষ্টিকটুই লাগে। বাদবাকি প্রতিটা গল্পে ফ্যামিলির রূপরেখা বিশেষ করে দম্পতির বন্ডিংগুলো পড়ে লোভ লেগেছে। বারবার মনে হয়েছে, "এমন জীবন আমারও হোক।"
কিন্তু এটা খুব ভালো করেই মানি, এভাবে ধর্মীয় সঠিক জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়ে পরিবার তৈরী হলে জীবনের অনেক অশান্তি কমে যাবে।
কিছু গল্প পড়ে মনের অজান্তেই চোখে জল এসেছে।
সর্বোপরি বইটা খুব খারাপ নয়। এবং বাংলাদেশের রোমান্টিক ছেলে মেয়েরা (যারা হিজাবী নূরা ফাতেহি আর ওলীআল্লাহ বিল গেটস চায়) অবশ্যই পড়তে পারে। হতে পারে অতি রোমান্টিকতা থেকে বের হয়ে ভালো কোন সিদ্ধান্ত নিতেও পারে। জীবনটাকে আরো সুন্দর ও সুখময় করে তুলতেও পারে।