প্রচলিত রামায়ণ তা যে ভাষাতেই লেখা হোক না কেন, সেখানে বিভিন্নভাবে রামের প্রশস্তি বা বন্দনাগীত গাওয়া হয়েছে। সেদিক থেকে আমাদের বঙ্গদেশের কবি চন্দ্রাবতীই রামকাহিনী রচনায় স্বতন্ত্র মনীষার পরিচয় দিয়েছেন, যা যুগ যুগ ধরে পুরুষ-কবিদের হাতে লিখিত প্রচলিত রামকাহিনীর মাহাত্ম্যকে ক্ষুণ্ন করেছে। আর সে জন্যই চন্দ্রাবতীর রামায়ণটি পরিশীলিত সাহিত্য-দরবারে স্থান পায়নি। সমাজের উচ্চস্তরে নানাভাবে এ রামায়ণ-পালাটি বর্জিত হলেও নিম্নবর্গের, বিশেষত পল্লীসমাজের নারীর, ঘরোয়া রামায়ণী আচার-অনুষ্ঠানে আজও চন্দ্রাবতীর রামায়ণই গাওয়া হয়ে থাকে।
সমগ্র রামায়ণটিকে শেষ করেছেন তিনি সীতার বনবাসের সূচনার ভেতর। চন্দ্রাবতীর বলার স্টাইল এখানে একেবারে ভিন্ন। পৌরাণিক রামায়ণে সীতার অগ্নিপরীক্ষার কথা বর্ণনা আছে এবং এ পরীক্ষার মধ্য দিয়েও শেষ পর্যন্ত রামকে চরম প্রজাহিতৈষী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন পৌরাণিক রামায়ণকারেরা। কিন্তু চন্দ্রাবতী তাঁর রাম-কাহিনীতে সীতার অগ্নিপরীক্ষার বিষয়টি একেবারেই আনেননি। একজন নারী হিসেবে আরেকজন নারীর অপমানজনক ও লজ্জাজনক পরিস্থিতিকে দর্শকের সামনে নির্লজ্জভাবে দেখাতে চাননি কবি, বরং রামের প্রতি তীব্র বিদ্রূপ হেনে তাঁকে পাষণ্ড ও সন্দেহপ্রবণ স্বামীরূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন। কোনোরকম রাম-বন্দনা তিনি করেননি।