Jump to ratings and reviews
Rate this book

বলকানের বারুদ

Rate this book
১৯৮০র দশকে অনেক পূর্ব ইউরোপীয়রা রসিকতা করে বলত একবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপে আটটা দেশ থাকবে। আটটা কেন? এর মধ্যে একটা হল ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও বাদবাকি সাতটা হল তদানীন্তন যুগোস্লাভিয়ার অন্তর্গত সাতটা প্রদেশ। বর্তমানে যদিও ইউরোপের সব দেশ ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের অন্তর্গত নয় (এবং যুক্তরাজ্য ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবার আয়োজন করছে) সেখানে ভাগ্যের পরিহাসই বলতে হবে যে পূর্বতন যুগোস্লাভিয়া ভেঙে সাত টুকরো হয়ে তাদের পুরোনো অবস্থানে ফিরে গেছে। বাঙালী পাঠকের কাছে এই সাত টুকরো প্রায় অজানাই বলব। এই সাতটা দেশ - স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া, সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো, ম্যাসিডোনিয়া ও কসোভোর সঙ্গে আলবেনিয়া, গ্রীস ও বুলগেরিয়া ও তুরস্কের ইউরোপীয় অংশ যোগ করে নিলে হবে বলকান উপদ্বীপ। ঊনিশ শ শতকে একদিকে পরাক্রমশীল তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য, অন্যদিকে সমৃদ্ধশালী অস্ট্রো-হাঙ্গেরী সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে এই উপদ্বীপ ইউরোপের ইতিহাসে অস্থিতিশীল, দরিদ্র ও দুর্বল বলে বিবেচিত হয়েছে এবং উপেক্ষিত হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ঐ দুটো সাম্রাজ্য ভেঙে যাবার পরে সেখানে ফিরে এসেছে কিছু পুরোনো, কিছু নতুন সীমানা - এই প্রক্রিয়ার নাম দেয়া হয়েছিল বলকানাইজেশন - ভেঙে দেবার প্রক্রিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পূর্ব ইউরোপ ও বলকান অঞ্চলের কিছু দেশ এক ধরণের সমাজতান্ত্রিক এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে দিয়ে গেল, সেই প্রক্রিয়া হয়তো পুরোপুরি সফল হয় নি, তবে আধুনিক ভ্রমণকারীর জন্য সেই প্রক্রিয়া অনেক দেখার ও চিন্তার রসদ রেখে গেছে, আমার বিশ্বাস সেই রসদই সঞ্জয় দেকে উদ্বুদ্ধ করেছে পূর্ব ইউরোপকে তার যাযাবর পদচারণার অংশ করে নিতে।

সঞ্জয় দে-কে আমি কাছ থেকে চিনি, বলা যায় সে আমার প্রতিবেশী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তিতে অগ্রগণ্য একটি কোম্পানীর তরুণ এই প্রকৌশলীর মাঝে অদম্য ভ্রমণ-আকাঙ্খা। জার্মান ভাষায় একে বলে wanderlust, কথাটা ইংরেজী এমনকি বাংলাতেও কিছুটা গৃহীত হয়েছে। পৃথিবীর বুকে ঘোরার তাগিদ চিরায়ত, মনে হয় সেই ষাট-সত্তর হাজার বছর আগে সুদূর আফ্রিকা থেকে শুধুমাত্র জীবন ধারণের তাগিদে নয় এক ধরণের wanderlust এর জন্যও মানুষ বেরিয়ে পড়েছিল, ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে। কিন্তু আধুনিক যুগের বিমান, উন্নত সড়ক ও আন্তর্জাল যোগাযোগ ভ্রমণের মাধুর্য অনেকখানিই হরণ করেছে। এক কালের সঞ্জীবচন্দ্রের ঘরের কাছের পালামৌর ভ্রমণকাহিনি পড়েও যে রোমাঞ্চ হত, এখন ডারউইন-খ্যাত সুদূর গ্যালোপাগাস দ্বীপপুঞ্জ কিংবা আন্টার্কটিকার হিমবাহে পেঙ্গুইনের পদচারণার বিবরণও আমাদের মন কাড়তে ব্যর্থ হয়। বর্তমানের আন্তর্জালের সামাজিক মাধ্যম পৃথিবীকে যেমন অনেকখানি ছোট করে নিয়ে এসেছে, তেমনই তার থেকে সমস্ত রহস্যের আবরণ খুলে নিয়েছে। সেখানে অতীতের রোমাঞ্চ ম্রিয়মান, তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তির জগতে অজানা অচেনা প্রকৃতি, নতুন ভাষা আর সংস্কৃতি সবই যেন পরিত্যাজ্য।

তাই এই সময়ের দুষ্প্রয়াসী ভ্রমণকারীদের খুঁজতে হয় দূরদেশের মাঝে এক নতুন সত্ত্বা, এক নতুন দৃষ্টিকোণ। এই নতুন দৃষ্টিই গ্রহণ করেছেন সঞ্জয় দে। তাঁর পূর্বতন বই ‘রিগা থেকে সারায়েভো’তে পূর্ব ইউরোপের যে যাত্রা তিনি বর্ণনা করেছিলেন সেই যাত্রার ক্রমান্বয়তাই তিনি ধরে রেখেছেন ‘বলকানের বারুদে’। বাঙালী পথিক পূর্ব ইউরোপের পথে সহজে পা মাড়ায় না, সেখানে সঞ্জয় দে এক অদম্য তাগিদে সেই উত্তরের লাটভিয়া থেকে দক্ষিণের আলবেনিয়া পর্যন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রুমানিয়ার ড্রাকুলার দুর্গ থেকে আড্রিয়াটিক সাগরের পাশে মন্টিনেগ্রোর উচ্ছল বুদভা শহরে তিনি গিয়েছেন ফটো তোলার তাগিদে নয় বরং সেই দেশগুলোর ইতিহাস আর সংস্কৃতি জানতে, পথ-চলতি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে পূর্বে সমাজতান্ত্রিক পথ ধরে চলা এইসব দেশের রাজনীতি আর অর্থিনীতি বুঝতে। ইতিহাসের তাগিদে সঞ্জয় ছুটে গেছেন স্লোভেনিয়ার ব্লেড হ্রদের ধারে যেখানে যুগোস্লাভ নেতা টিটো বুলগেরিয়ার নেতা দিমিত্রভের সাথে চুক্তি করেছিলেন দুদেশের মধ্যে একটা ফেডেরেশন করার জন্য (স্টালিনের জন্য যে চুক্তির অকাল প্রয়াণ হয়)। গিয়েছেন আলবেনিয়ার টিরানায় একনায়ক এনভার হোজ্জা নির্মিত মাটির তলায় দেড় লক্ষ বাঙ্কারের অন্ততঃ একটিকে নিজের চোখে দেখতে, বসনিয়ায় সারায়েভোর পাহাড়ে উঠে নব্বইয়ের দশকের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্মৃতি খুঁজে বের করতে। তাঁর দুরন্ত ভাষায় ফুটে উঠেছে রোমানিয়ার প্রাক্তন আর এক একনায়ক চসেস্কুর পতনের কাহিনী। এ’সব উত্থান-পতনের ইতিহাস লিখতে গিয়ে সঞ্জয় তাঁর বইয়ের নামে ‘বারুদ’ কথাটি সংযোজন করেছেন, কিন্তু সেই সাথে হেলা করেন নি ম্যাসিডোনিয়ার অখ্রিদ হ্রদের তাম্রবর্ণকেশী কাঞ্চনাক্ষী যুবতীর সঙ্গে তাঁর কথোপকথনকে লিপিবদ্ধ করতে। এইসব লিপিতে তিনি প্রমাণ করেছেন শুধু দেখার মাঝে তাঁর কৃতিত্ব নয়, লেখনীর সহজ কিন্তু পরিণত কারুকাজে পাঠকের মনে সুদূর দেশের দৃশ্য অনায়াসে বিম্বিত করতে তিনি সুদক্ষ।

আমার এক প্রিয় লেখক, ইংরেজ ব্রুস চ্যাটউইন, ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, শিল্প সমালোচক, ভ্রমণকারী ও ভ্রমণকাহিনীকার। তাঁর একটি প্রবন্ধ ও গল্প সংগ্রহের নাম হল Anatomy of Restlessness যাকে বাংলায় হয়তো ‘চঞ্চলতার শরীরবিদ্যা’ বলা সম্ভব। চ্যাটউইন লিখেছেন, ‘মানুষের প্রকৃত ঘর কোনো বাড়ি নয় বরং রাস্তা, এবং জীবন হল এমন একটি যাত্রা যা কিনা পায়ে হাঁটতে হয়’। সঞ্জয় দের সঙ্গে যখন আমরা বুখারেস্ট, বেলগ্রেদ, টিরানা, প্রিস্টিনা, সারায়েভোর পথে পথে হাঁটি, আমাদের মনের মাঝে মূর্ত হয়ে ওঠে পাথুরে দুর্গ, বড় গীর্জা, অটোমান মসজিদ, আধুনিক সরাইখানা। একক পথিক হয়ে তিনি সম্পর্ক স্থাপন করতে চান পৃথিবীর অজানা অচেনা জায়গার সাথে, সেই সম্পর্কের মূল্য যাঁরা একা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন তাঁরা খুব ভাল বোঝেন কারণ তখন তাঁরা আর পর্যটক থাকেন না, হয়ে ওঠেন সেই অজ্ঞাত ভূমিরই এক অংশ - ব্রুস চ্যাটউইনের একটি উক্তির ভাষায় তাঁরা বলেন - আমি এক দুষ্প্রয়াসী অভিযাত্রী, আমি পৃথিবীর সব দেশ আর সব মানুষ দেখতে চাই।

একা ভ্রমণের মধ্য দিয়ে অজানা অঞ্চলের সাথে এক ধরণের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠ...

198 pages, Hardcover

Published February 2, 2017

2 people are currently reading
27 people want to read

About the author

Sanjoy Dey

9 books35 followers

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
3 (30%)
4 stars
7 (70%)
3 stars
0 (0%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 2 of 2 reviews
Profile Image for Chowdhury Arpit.
188 reviews5 followers
June 21, 2022
বলকান অঞ্চলকে বলা হয় ইউরোপের বারুদঘর। এর কারণ ইউরোপের যত ঝুটঝামেলা সব এই বলকান অঞ্চল থেকেই শুরু হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কথা। সারায়েভোতে গ্যাব্রিয়েলো প্রিন্সিপের গুলিতে অস্ট্রিয়ান যুবরাজের মৃত্যু, তারপর সারাবিশ্বে কিরকম তুলকালাম হয়েছিলো তা আশা করি কারো অজানা নেই!

বলকান অঞ্চল কিন্তু খুব বেশি বড় নয়। উত্তর-পূর্বে রোমানিয়া, উত্তর পশ্চিমে স্লোভেনিয়া, এরপর যথাক্রমে দক্ষিণে পরপর ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মন্টেনিগ্রো, কসোভো তার পাশে মেসিডোনিয়া - এদের ঘেরার মাঝে দক্ষিণে আড্রিয়াটিক সাগর ঘেঁষে আলবেনিয়া ও সর্বশেষ একদম দক্ষিণে গ্রীস।
দেশ অনেকগুলো হলেও অধিকাংশের সাইজ ভালোমত বাংলাদেশের সমানও নয়। রোমানিয়া ও গ্রীস ছাড়া বাকিগুলো ক্ষুদ্রকায়। অথচ এই ছোট দেশগুলোর মাঝেই এত জাতিভেদ, এত রেষারেষি যে টুকরো থেকে টুকরোতর হয়েও তাদের শান্তি নেই!

সার্ব, ক্রোয়েট, স্লাভ, বসনিয়ান, আলবেনিয়ান, মেসিডোনিয়ান, রোমানিয়ান, গ্রীক, তুর্ক, কসাক ইত্যাদি নানা জাতির সংমিশ্রণ যেমন বলকানকে বৈচিত্র্য দিয়েছে তেমনি বানিয়েছে পাঁচমিশালি জগাখিচুরি।

পর্যটক সঞ্জয় দে তাঁর "বলকানের বারুদ" নামের চমৎকার বইটিতে এই জাতিগুলোর বর্তমান ও অতীত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। কমেডি থেকে হিস্টোরি, দর্শন থেকে রোমান্টিসিজম সবই পাবেন দুই মলাটে।

বইটিতে মোট দশটি ছোট ভ্রমণকাহিনী আছে। সবগুলো পরস্পর থেকে আলাদা, একেকটা একেক রসের।

শুরুটা হয় রোমানিয়ার কার্পেথিয়ান পর্বতমালার অন্তর্ভুক্ত ব্রান দূর্গ ঘিরে যেটাকে কেন্দ্র করে ব্রাম স্ট্রোকারের বিখ্যাত ড্রাকুলা চরিত্র টি সৃষ্ট হয়েছে। গারা দা নরদ স্টেশনে লেখকের ভোগান্তি, যাত্রীদের "বাঙালিসুলভ" আচরণ, ভিভিয়ানা নামের এক চটপটে গ্রীক তরুণীর সাথে মোলাকাত এবং ব্রিটিশ দুর্ভাগা রাজকন্যা মেরির কাহিনী ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে কাহিনী এগিয়ে গেছে।

এরপর আসেন রোমানিয়ার কুখ্যাত স্বৈরশাসক চসেস্কু ও তাঁর খেয়ালি কীর্তি কাসা পোপোরলুই - বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রশাসনিক ভবন। চসেস্কুর নানা কীর্তি, তাঁর পতন, মৃত্যু ইত্যাদি ধাপে ধাপে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।

সঞ্জয় দে এরপর পাড়ি জমান স্লোভেনিয়ার ব্লেড হ্রদে। যেখানে যুগোশ্লাভিয়ার টিটো ও বুলগেরিয়ার দিমিত্রভ স্বাক্ষর করেছিলেন এক ঐতিহাসিক চুক্তি। পাশাপাশি যাত্রী দের সাথে লেখকের কথোপকথনে ফুটে ওঠে বর্তমান ইরান, তিউনিসিয়া ইত্যাদির অস্থির রাজনীতির কথা।

"বৃষ্টিস্নাগ জাগরেব দিন" ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেব নিয়ে লেখা। লেখকের ইতিহাসের গভীর জ্ঞান ফুটে উঠেছে এ লেখাটিতেও। বিশেষ করে নাৎসী শাসনে পাভেলিচের উত্থান, উস্তাশার আবির্ভাব, গণহারে অর্থোডক্স সার্ব ও ইহুদি নিধন, বিশপ স্তেফিনাফের আসল চেহারা ইত্যাদি এসেছে লেখাটিতে। ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা, ধনী গরিব ভেদাভেদ এর বিষয়টা লেখক তুলে এনেছেন ইনেস নামের এক হোটেল ম্যানেজারের জবানবন্দি তে।

যুগোস্লাভিয়ার ইতিহাস জানার জন্য পরবর্তী লেখাটি অবশ্যপাঠ্য৷ সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড - তার কাফানা নামের আড্ডাখানা, রাকিয়া নামের বিখ্যাত ড্রিংকস, জেলেনি ভেনাক, সাভা নদী, সার্বদের ইতিহাস, তাদের সংগীত ও পার্টিপ্রীতি ইত্যাদি পড়লে মুগ্ধ হতে হয়।
তবে আমার নজর কেড়েছে দুটি জিনিস -
এক - যুগোস্লাভ আমলের জাস্তাভা গাড়ি ও রেডিওর গল্প দিয়ে তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর দুর্বল অর্থনীতি দেখিয়েছেন লেখক।
দুই - সাথে বারুদ ঘর ও ১৯৫৩ সালে নির্মিত এক ভূগর্ভস্থ বাংকারের পেছনের ইতিহাস টেনে লেখক দেখিয়েছেন স্টালিন ও টিটোর মধ্যকার তৎকালীন রহস্যময় সম্পর্ককে।

মেসিডোনিয়া মানেই মাদার তেরেসা, মেসিডোনিয়া মানেই মহাবীর আলেক্সান্ডার। আবার এই গর্বিত মেসিডোনিয়ার বুকেই আছে অখ্রিদ চুক্তির ক্ষত। কিভাবে আলবেনিয়ানদের কবলে পড়ে মেসিডোনিয়া ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তার ফিরিস্তি দিয়েছেন লেখক তাঁর ষষ্ঠ লেখাতে। এ লেখাতে কসোভোর ইতিহাসও আছে। কারো চোখে স্বাধীন দেশ, কারো চোখে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এই কসোভোকে লেখক দেখেছেন অন্য চোখে। তার অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রুগভা, তার ক্যাপসিকাম প্রীতি, তার আজীবনের সংঘাত, কেএলএ ও আমেরিকার কূটচাল, সার্ব অর্থোডক্সদের হতাশা - সব ভ্রমণকাহিনী ছাপিয়ে অন্য সুরে কানে আসে পাঠকদের।

লেখকের সপ্তম লেখা অখ্রিদ হ্রদ ও শহর নিয়ে। মেসিডোনিয়া। এ কাহিনীর মূল আকর্ষণ হলো সারাহ। এক খন্ডকালীন টিকের বিক্রেতা। লেখকের রোমান্টিক দিকটার পরিচয় পাই আমরা সারাহর ওপর তাঁর হালকাপাতলা ক্রাশ দেখে।

আলবেনিয়ার একনায়ক এনভার হোজ্জা। শত্রুর ভয়ে যে সারা দেশজুড়ে খু্ঁড়েছিলো দেড় লক্ষেরও বেশি বাংকার, নিকেশ করেছিলো এক লক্ষেরও বেশি মানুষকে- কাছের লোক মেহমুদ সেহু থেকে মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার জসিফ জাগালি কেউই বাঁচেনি তাঁর রোষ থেকে। এই হিংস্র স্বৈরশাসকের দেখা পাওয়া যাবে লেখকের আলবেনিয়া ভ্রমণের সময়।

অতঃপর মন্টিনেগ্রোর গোলকধাঁধা শহর বুদভায় আগমন লেখকের। আড্রিয়াটিকের পাড়ে। তবে লেখক সেখানেই থেমে থাকেননি। পেরাস্ত শহরে ট্যুর দিয়ে দেখে এসেছেন প্রস্তর দ্বীপের দেবী মাতা মেরীকে। সেই সাথে রাশিয়ান সহযাত্রী দের সাথে কাটানো চমৎকার মুহুর্ত গুলো তো বোনাসই৷ টিটোর মৃত্যু আর মিলোর হাত ধরে মন্টেনেগ্রোর স্বাধীনতা - এ দুটো লেখা দিয়ে লেখক তাঁর ইতিহাস চর্চার ধারাটা বজায় রেখেছেন এখানেও।

লেখক ইতি টেনেছেন তাঁর "সারায়েভোর মাইনফিল্ড" লেখাটি দিয়ে। এবার গন্তব্য বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো। আর সারায়েভো মানেই সার্ব বসনিয়ান রক্তপাতের ইতিহাস। রিপাবলিক অব সার্পস্কা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা মোট তিন টুকরো হয়ে আছে দেশটা। কারো সাথে নেই কারো মিল। বাংলাদেশের চেয়েও গুড়ো একটা দেশ জাতীয়তার ইগোতে আজ খণ্ডবিখণ্ড। সেব্রেনিৎস্কা গণহত্যা, ভুতুড়ে পরিত্যক্ত অলিম্পিক স্টেডিয়াম, ত্রেবেভিচ ও ইগনান পাহাড়ে মাইনফিল্ড, রাদোভান কারাদভিচ, ইমানভ ও জেনারেল ম্যাকেঞ্জি সহ অসংখ্য যুদ্ধাপরাধীর কীর্তি এসেছে এই লেখাটিতে - এক স্থানীয় বসনিয়ান এর বক্তব্যে। বক্তব্য নয় যেনো হাহাকার।
.
তবে লেখক মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখিয়েছেন এক ছোট্ট ঘটনার মাধ্যমে। সারায়েভো দখল করা জার্মান নাজিদের হাত থেকে সেফারডিক ইহুদিদের বাঁচিয়েছিলেন কিছু বসনিয়ান মুসলিম, বিনিময়ে বসনিয়ান যুদ্ধের সময় এই ইহুদিরাই তাঁদের বন্ধুদের বাঁচিয়েছিলেন ইসরাইলি সরকারের সহায়তায়। একেই বলে ধর্ম বর্ণ জাতির উর্দ্ধে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব।

সব মিলিয়ে বইটিকে ৫/৫ দেয়া ছাড়া গতি নেই।
প্রকাশনী - পাললিক সৌরভ। মুদ্রিত মূল্য ৩৫০/-।
১৯২ পৃষ্ঠার চমৎকার বাঁধানো লালচে কভারের বইটা ভ্রমণকাহিনী হিসাবে এককথায় সুখপাঠ্য। সাথে ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ফাঁকে ফাঁকে ইতিহাস তো আছেই। ঘরে বসে বলকানকে জানতে হলে তাই বইটার বিকল্প নেই।
Displaying 1 - 2 of 2 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.