A Collection of Short Stories by Shamik Ghosh. Won the prestigious Sahitya Akademi Yuva Puroskar (Indian National Academy of Letters Youth Prize) in 2017 for Bengali.
Uncertainty, anger, insanity, love, fear, fantasy – hidden deep beneath these everyday emotions is a parallel persona of our own individual selves, a complete stranger to us. Shamik Ghosh makes it his task to reveal those hidden personas. The grotesque reality of Nazi concentration camp, a young man losing grip of his reality due to the relentless bantering by his colleagues, political goons from the lowest ranks of the society, a Nukkad artist losing his livelihood to corporate media, destitute aged men and women who have lost everything in life and even those who are in the highest strata of the society – ad filmmaker or a highly successful painter, the stories vary in their settings. Yet they talk about numerous lone individuals each unique with his/ her distinct marginality. In an unalike form, where real merges with unreal, where space, time, and characters change constantly, but in a seamless easy style which mesmerizes the reader.
এইখানে মাটির রং লাল। বুঝিবা আদিম কোনো ভ্রূণ খুন হয়ে পড়ে ছিল এই মাটির ওপর। মাটিতে সেই আদিম পাপের দাগ লেগে গেছে। বন্ধ্যা এই মাটি শস্যকে দিতে পারে না রস। মানুষকে দিতে পারে না জল। কাঁকুরে এই মাটি শুধু দম বন্ধ করে দিতে পারে সামান্য চারা গাছের, দাঁত দিয়ে পিষে দিতে পারে তার সদ্য গজানো নরম শিকড়।
জীবনের প্রথম গল্প 'ঘোলা'। ২০০৩ সাল। প্রথম গল্পেই দেশ পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ। আলোচ্য বইতে গল্পটি সংকলনের বারোতম লেখা হিসেবে স্বযত্নে রক্ষিত। শরীরে কাঁচা রঙের গন্ধ, তবুও। প্রথম লেখা বলে কথা। মাথা ঝিমঝিমিয়ে ওঠে, তাও সাত খুন মাফ। বাকি তেরোটি গল্প নিয়ে আলাদা করে আলোচনা করে লোক হাসানো অনুচিত। বিজ্ঞজনেরা পাতার পর পাতা ভরিয়ে এই বইয়ের গুণাগুণ জাহির করে যাবেন, এটাই নিয়ম। এসব বই কালেভদ্রে একটাই আসে।
বইটি সাহিত্য আকাদেমি যুব পুরস্কার পায়, প্রায় সাত বছর আগে। আমি অবশ্য লেবেল দেখে কাউকে বইটি পড়তে বলবো না। পুরষ্কার চুলোয় যাক। আপনি এই বইটি পড়বেন কেবল বাংলা ভাষা ও গদ্য-সাহিত্যকে ভালোবেসে। পড়া আপনার কর্তব্য, আরকি। শমীক ঘোষের মতো একজন লেখক যে আজকের ফাস্ট-ফ্যাশনের বইবাজারে টুকটাক লেখালেখি করে থাকেন, এটাই আমাদের ভাগ্য।
ভাগ্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বসবেন না যেন। বইটি পড়ুন। হারিয়ে যান এক অলীক পৃথিবীর বিচূর্ণ শরীরে। যার অন্তর হতে উকি দেয় জাদুবাস্তবতার শালিখ। পোড়া শহরের কফিনে বসে, আওয়াজ করে কাঁদে। বাস্তবের আলোকে, দেখা দেয় শহর কলকাতা কি রুক্ষ ভারতবর্ষ বা বোম্বে নামক সেই ক্লান্ত হৃদপিণ্ডে। যা ধুকপুক করে। কাছে দূরে, এলভিসের সুরে। সারাটা রাত, অবিরত। এই বইয়ের পাতায় বৃষ্টি নামে বারবার। এই বৃষ্টি আগুন নেভায় কম। এই বৃষ্টি আগুন জ্বালায় বেশি।
সুমতি উনুনে আঁচ দিতে থাকেন। খানিকটা দূরে বিড়াল-মা পরিচর্যা করছে তার সদ্যোজাত সন্তানদের। বাইরে তখন নিকষ কালো একটা রাত আস্তে আস্তে ঢেকে দিচ্ছিল আকাশটাকে। শুধু সুমতির উঠোনে, তুলসীগাছের তলায় একটা প্রদীপের আলো, শীতের হাওয়ায় অল্প অল্প কাঁপছিল। আর তার একটু পেছনে দুটো নকুল দানা গোপালঠাকুরের অপেক্ষায় শীতের হিমে ভিজে মাটিতে মিশে যাচ্ছিল।
কালচে রক্ত আর জঞ্জালের স্তূপে চিহ্নিত এই শহরের গলিতেও বৃষ্টি নামে। দক্ষিণের জানলা দিয়ে একমুঠো হাওয়া হঠাৎ ঢুকে দুলিয়ে দেয় ধুলোজমা টুংটাং খেলনা। শেষ বিকেলের আলোয় ঝলসে ওঠে ওষুধের শিশির পাশে পড়ে থাকা হার। আজও শমীক ঘোষ-এর মতো কেউ গল্প লেখেন। কী, বা কোন্ ঘরানার গল্প লেখেন শমীক? রহস্য? রোমাঞ্চ? রোমান্স? অলৌকিক? ফ্যান্টাসি? সামাজিক???? (কথাটা বলার সময় মুখে হরতুকি নেওয়ার এফেক্ট আনতে হবে।) ক্ষমা করবেন, কিন্তু শমীকের লেখা চোদ্দোটি গল্প পড়ার পরেও আমি বুঝতে পারলাম না তিনি ঠিক কোন্ গোত্রের গল্প লেখেন। তবে এটুকু বলতে পারি যে এমন গল্প যদি আরও পড়তে পেতাম তাহলে, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায় বললে, ‘জীবন আরও বেশি, আরও সতেজ’ হয়ে উঠত। শমীকের গদ্যের কোনো তুলনা নেই, কারণ এমন অদৃশ্য গদ্য আমি কোথাও পাইনি। গদ্য কীভাবে অদৃশ্য হয়, তাই ভাবছেন? আসলে এই বইয়ের কোথাও লেখক নেই। আছে শুধু আশ্চর্য নির্মোহ ভঙ্গিতে, ছেঁড়া গৈরিক বসনাবৃত বাউলের ভাঙা গলায় সম্রাটের ঐশ্বর্যকে ম্লান করে দেওয়া দৌলতের মতো কিছু অনাবিল গল্প। কেমন গল্প তারা? এই সংকলনের কোন্ গল্পটি কী নিয়ে তা যদি লিখতে চেষ্টা করি, ছড়িয়ে লাট হবে। এরা আক্ষরিক অর্থেই বিন্দুতে সিন্ধু ধারণ করে আছে। তাদের মধ্যে কোনোটিতে মিশে গেছে ইতিহাসের যন্ত্রণা আর শোপিনের সুর, কোথাও বাস্তবের অসহ্য গ্লানি হারিয়ে গেছে ফ্যান্টাস্টিক মৃত্যুকামনায়, কোথাও পরাবাস্তবের মুখোশ খুলে আত্মপ্রকাশ করেছে এক ভয়ংকর চেহারা, কোনো গল্পে পাওয়া আর না-পাওয়ার অজস্র রঙ একাকার হয়ে ঘোলা করে দিয়েছে সবকিছু, আবার কোথাও বর্তমান প্রেমের সুর প্রতিধ্বনি খুঁজে পেয়েছে ঝরা বকুলের গন্ধমাখা অতীত ভালোবাসায়...! এদের নিয়ে আমি কীই বা লিখতে পারি? বরং লিখি, কী-কী গল্প আছে এই বইয়ে। একটি অতি সংক্ষিপ্ত ‘আমার কথা’-র পর এই সংকলনে এসেছে নীচের গল্পগুলো: - ১] দূরবিন ২] নীল পিঁপড়ে ৩] একটি অতিলৌকিক কথন অথবা নিছক কইমাছ ৪] ভিউফাইন্ডার ৫] এলভিস ও অমলাসুন্দরী ৬] ঈশ্বরের কান্না ৭] টিউলিপ ৮] লোকটা ৯] তুলসীতলা ১০] হাফ টাইমের পর ১১] ইয়ে দাগ দাগ উজালা ১২] ঘোলা ১৩] এনকাউন্টার ১৪] ক্যানভাস এই গল্পগুলো ছাড়া এই সংকলনে আর কী আছে? আছে গলার কাছে একটা দলা পাকিয়ে যাওয়ার অনুভূতি, আছে অসহনীয় ফাঁপা দিনযাপনের কষ্ট, আছে গাছতলার অন্ধকারে প্রথম জোনাকি দেখার থিরথিরানি... আছে ভালোবাসা। আছে জীবন। সম্ভব হলে বইটা পড়ুন। হয়তো আপনি আরও ভালোভাবে এই বইয়ের গল্পগুলো বিশ্লেষণ করবেন। হয়তো আপনি নির্মোহ বিশ্লেষণ করে এদের মধ্যে অজস্র ফাঁকফোকর আর প্রেডিক্টেবিলিটি খুঁজে পাবেন। আমি দুর্বল পাঠক বলে এতে শুধুই জীবন খুঁজে পেলাম। অর্পিতাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। সে না বললে আমি এই বই পড়তাম না। তাতে আমি কী হারাতাম, তা এখন জানি। বইটা পড়লে হয়তো আপনিও জানবেন।
ছোটগল্পের সংকলনের এই বইটির জন্য লেখক শমীক ঘোষ ২০১৭ সালে সাহিত্য অকাদেমি যুব পুরস্কার পেয়েছেন।
যেই বই সাহিত্য অকাদেমি যুব পুরস্কার পায় তার জন্য কি রিভিউ লেখা সাজে? হ্যাঁ সাজে। বইটা পড়ার সময় আপনাকে ভুলে যেতে হবে বইটি সাহিত্য অকাদেমি যুব পুররস্কার প্রাপ্ত, তারপর পড়তে বসুন। এটিই লেখকের প্রথম গল্প সংকলন। এই বইতে সংকলিত গল্পগুলি ২০১৩-২০১৬ সালের মধ্যে ' সুখী গৃহকোন ', ' রবি ৩৬৫ দিন ' ' অনুষ্টুপ ', ' দেশ ', ' গল্পমেলা ', ' কথা সোপান ',' কৌরব ' নামক বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। প্রসঙ্গ উল্লেখ্য ২০০৩ সালে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত লেখকের প্রথম গল্প ' ঘোলা' ও এই বইতে জায়গা করে নিয়েছে। সব মিলিয়ে চোদ্দটি গল্পকে দুই মলাটে বন্দী করেছে সোপান পাবলিশার্স। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা গল্পগুলি পড়তে পড়তে লেখাগুলোর সঙ্গে মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছিলাম। 'এটা আমারই গল্প ' এমন ভাবনা মনে আসেনি একবারও বরং মনে হয়েছে ' কই এমন করে আমি তো দেখিনি! ' বা ' এমনি করেও ভাবা যায়!'
গত সপ্তাহে রবিবার বিকালে আমি আমাকে বইটি উপহার দিই। আমার এক বন্ধু বলেছিল বইটা আমার ভালো লাগবে না। গল্পগুলো পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল যেন রাজপথের পাশে যে সরু গলিটা আছে যার নোনা দেওয়ালে অজস্র ইতিহাস আঁকা তেমন কোথাও চলে এসেছি। এমন একটা ঘোর যা কাটতেই চায় না। অফিসে গিয়ে ছটফট করতে থাকি, কখন বাড়ি ফিরে আবার পড়ব, সঙ্গে সঙ্গে আফসোস হতে থাকে পড়লেই শেষ হয়ে যাবে যে...।
ছোটবেলায় ' দূরবিন ' নি��়ে খেলেছেন? যদি কোনদিন দূরবিন চোখে দিয়ে পৌঁছে যান ইতিহাসের পাতায় কেমন লাগবে? কিছু দৃশ্য যেমন একা করে দেয় তেমন কিছু গল্প শব্দ কেড়ে নেয় কিছুক্ষণের জন্য, ' দূরবিন ' সেই ধারার লেখা। ' নীল পিঁপড়ে ' হাতে নিয়ে যা চাওয়া যায় তাই সত্যি হয়। গল্পের অমিতেশ আর সুদক্ষিণা কি চাইতে চেয়েছিল? গল্প শেষ হয়ে যায় কেবল যন্ত্রণাটা বাজতে থাকে মাথার ভেতর। এমনি করে পায়ে পায়ে এগোয় গল্পগুলি। যা দেখতে পাওয়া যায় অথচ যা আমরা দেখতে চাইনা, আমাদের অজান্তে লেখক অদ্ভুত ভাবে পরিবেশন করে চলেন আমাদের। 'ঈশ্বরের কান্না', ' ভিউফাইন্ডার ' আমার ব্যক্তিগত ভাবে বেশ লেগেছে। 'টিউলিপ' গল্পটি বসন্তের বিকেলের শেষ আলো নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ঘরময় । একটা অনুভূতির গল্প ঠৌঁটের কোন ছুঁয়ে থাকে অনেকক্ষণ। ' দেশ ' পত্রিকায় ' লোকটা ' পড়া ছিল আগেই, আরো একবার মনে পড়ে গেল, আরো একবার পড়ে ফেললাম, হিউম্যান সাইকোলজির অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশন আছে গল্পে। প্রতিটা গল্প ভিন্ন স্বাদ এবং আঙ্গিক নিয়ে ধরা পড়েছে লেখকের কলমে। মানুষের চরিত্র তার মনের অন্তরমহলে লেখক যেন সহজেই ঘুরে ফিরে এসেছেন ' তুলসীতলা' তারই গল্প বলে। গল্পে রাজনৈতিক সমাজের গন্ধ থাকলেও তা মানবিক স্পর্শকে কখনই ছাপিয়ে ওঠেনি। প্রতিটা বর্ণনা পড়তে পড়তে ভালোলাগা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। বইয়ের শেষ গল্প ' ক্যানভাস ', শিল্পী খুঁজে বেড়ান নারী শরীর একটা নগ্ন নারী শরীর। নরম আলো পিছলে পরে শরীরের রেখায়, তারপর লেখক এঁকে চলেন অন্য আরেক ছবি। ক্যানভাস পেরিয়ে অন্য ক্যনভাসের ছবি উঠে আসে গল্পে। সংকলনটির মধ্যমনি হয়ে আছে ' এলভিস ও অমলাসুন্দরী ' দুটো স্রোত মিলে যাওয়ার গল্প বলে দেয় এটি। শেষ হয়ে যাওয়ার পরও রেশটুকু থেকে যায়। ইচ্ছে করে আবার পড়ি আবারও...
পুরস্কার প্রাপ্ত বলে নয় শব্দ কিভাবে রন্ধে রন্ধে মিশে যায় তা অনুভবের জন্য বইটি পড়াই যায়।
প্রথমবার সম্পূর্ণ পড়তে পারিনি। মধ্যে নানা কাণ্ডে বিব্রত থেকেছি, পড়া হয়নি। ক'দিন হল পড়া শেষ করেছি। এমন অসামান্য লেখা না পড়ার অপরাধ খানিক হলেও কমলো আমার। শ্রদ্ধা এমন কলমের অধিকারীকে।