Please Read Brand New, International Softcover Edition, Printed in black and white pages, minor self wear on the cover or pages, Sale restriction may be printed on the book, but Book name, contents, and author are exactly same as Hardcover Edition. Fast delivery through DHL/FedEx express.
Sunil Gangopadhyay (Bengali: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) was a famous Indian poet and novelist. Born in Faridpur, Bangladesh, Gangopadhyay obtained his Master's degree in Bengali from the University of Calcutta, In 1953 he started a Bengali poetry magazine Krittibas. Later he wrote for many different publications.
Ganguly created the Bengali fictional character Kakababu and wrote a series of novels on this character which became significant in Indian children's literature. He received Sahitya Academy award in 1985 for his novel Those Days (সেই সময়). Gangopadhyay used the pen names Nil Lohit, Sanatan Pathak, and Nil Upadhyay.
Works: Author of well over 200 books, Sunil was a prolific writer who has excelled in different genres but declares poetry to be his "first love". His Nikhilesh and Neera series of poems (some of which have been translated as For You, Neera and Murmur in the Woods) have been extremely popular.
As in poetry, Sunil was known for his unique style in prose. His first novel was Atmaprakash (আত্মপ্রকাশ) and it was also the first writing from a new comer in literature published in the prestigious magazine- Desh (1965).The novel had inspiration from ' On the road' by Jack Kerouac. His historical fiction Sei Somoy (translated into English by Aruna Chakravorty as Those Days) received the Indian Sahitya Academy award in 1985. Shei Somoy continues to be a best seller more than two decade after its first publication. The same is true for Prothom Alo (প্রথম আলো, also translated recently by Aruna Chakravorty as First Light), another best selling historical fiction and Purbo-Paschim (পূর্ব-পশ্চিম, translated as East-West) a raw depiction of the partition and its aftermath seen through the eyes of three generations of Bengalis in West Bengal, Bangladesh and elsewhere. He is also the winner of the Bankim Puraskar (1982), and the Ananda Puraskar (twice, in 1972 and 1989).
Sunil wrote in many other genres including travelogues, children's fiction, short stories, features, and essays. Though he wrote all types of children's fiction, one character created by him that stands out above the rest, was Kakababu, the crippled adventurer, accompanied by his Teenager nephew Santu, and his friend Jojo. Since 1974, Sunil Gangopadhyay wrote over 35 novels of this wildly popular series.
Death: Sunil Gangopadhyay died at 2:05 AM on 23 October 2012 at his South Kolkata residence, following a heart attack. He was suffering from prostate cancer for some time and went to Mumbai for treatment. Gangopadhyay's body was cremated on 25 October at Keoratola crematorium, Kolkata.
Awards & Honours: He was honored with Ananda Award (1972, 1979) and Sahitya Academy Award (1984).
গোড়াপত্তনের সময় থেকেই কলকাতা শিল্প-ঐতিহ্যের শহর। দীর্ঘসময় ধরে চলে আসছে শিল্পের চর্চা। একেক সময় একেক মাধ্যমে। সময়কাল উনিশশো বিশের পরপর। ইংরেজ শাসনের সূর্য তখন মাঝবিকেলে, ঠিক সেইসময় কলকাতায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠল থিয়েটার নামক এক কলা। থিয়েটার কোনো শিল্প হলে, শিশিরকুমার ভাদুরী হলেন এর পিকাসো। তৎকালীন কলকাতা থিয়েটারের মুকুটহীন সম্রাট। তাকে নিয়েই লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস নিঃসঙ্গ সম্রাট। জীবনিমূলক নয়, তবে বাস্তব জীবনের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ইতিহাসের সাহায্য নিয়ে দারুণ এক কল্পিত উপন্যাসের অবতারণা ঘটিয়েছেন সুনীল। দেখিয়েছেন বাংলা থিয়েটারের চিন্তাভাবনা বদলে দেয়া শিশিরকুমার ভাদুরীর উত্থান, জীবনের বিভিন্ন দিক, থিয়েটার নিয়ে লড়াই, এককভাবে থিয়েটারের দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার বনে যাওয়া। সেইসাথে আরো দেখিয়েছেন শিশিরকুমারের ব্যক্তিগত জীবন, জীবনের অন্ধকার দিক, তার দোর্দন্ড প্রতাপে শাসন ও একগুঁয়েমি। কিভাবে সময়ের সাথে সাথে সিংহও দুর্বল হয়ে পড়ে সম্রাট হয়ে পড়ে নিঃসঙ্গ, সেটা দারুণভাবে তুলে ধরেছেন সুনীল। ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসে সুনীল-ই কেন সেরা এই বইটা সেটার দারুন বিজ্ঞাপন। সেই সময়কার বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদেরও উঠিয়ে এনেছেন উপন্যাসের কাহিনীর প্রয়োজনে। সেসব বিখ্যাতদের নামও উল্লেখযোগ্য: কাজী নজরুল ইসলাম, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, সুকুমার রায়, বুদ্ধদেব বসু, এমনকি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথেও ক্রসওভার ঘটিয়েছেন শিশিরকুমারের। শেষের দিকে অবতারণা ঘটিয়েছেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি, রবি ঘোষদের, এমনকি নিজেকেও। তবে আমার সবথেকে ভালো লেগেছে সত্যজিৎ রায়ের সাথে শিশিরকুমারের অংশটা।
বাংলা সাহিত্য যাদের পছন্দ, যারা শিল্পমনা, তাদের সকলের পড়া উচিৎ এই বইটি। অন্ততপক্ষে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া, দোর্দণ্ড প্রতাপে থিয়েটার নামক স্বর্ণালীযুগের এক শিল্পকে শাসন করা সম্রাটের আখ্যান জানার জন্য হলেও 🙂
ভারতীয় থিয়েটার ইতিহাসের ভাগ্যবিড়ম্বিত বরপুত্র একগুঁয়ে অথচ নিষ্ঠার সঙ্গে বিরল প্রতিভাবান আশ্চর্য মানুষ শিশিরকুমার ভাদুড়ীর ভূতের(অতীত কিন্তু!) সাথে বর্তমানের পাঠকদের পরিচিত করার অনন্য একখানি গল্পকল্পোন্যাস।
'যারা বিপ্লব শুরু করে, তারা নিজেরা বিপ্লবের ফল ভোগ করে যেতে পারে না, তা পায় পরবর্তী প্রজন্ম...' বই শেষ করে সত্যজিৎ রায়ের কথাটা কানে খুব বাজছে।
থিয়েটার বা মঞ্চনাটক সম্পর্কে আমার জ্ঞান একেবারেই শূন্য। সাহিত্যের নাট্যধারাটার সাথেও আমার পরিচয় নেই বললেই চলে। আমি কোন নাট্যপ্রেমী হিসেবেও এই বইটি হাতে তুলে নেইনি, এমনকি আমি জানতামও না এই বইটি কাকে নিয়ে লেখা। শিশিরকুমার ভাদুড়ী কে চেনা তো আরও বহুদূরের ব্যাপার।
কিন্তু বইটি শুরু করে আমি পাতায় পাতায় হোঁচট খাচ্ছিলাম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখনীর জাদুময়তার কারণেই হোক, বা এই নিঃসঙ্গ সম্রাটের প্রতি তীব্র আকর্ষণের কারণেই হোক, নামাতে পারিনি হাত থেকে। এতো পরিমাণে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মাঝে, বাংলা থিয়েটার, সাহিত্য সংস্কৃতি, যেখানে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে শরৎচন্দ্রের দেখা পাওয়া। তাঁরা যেন আমার চোখের সামনে নবউদ্যোমে, নতুন রূপে হাজির হয়েছেন। এভাবে এতো প্রতিভাকে একসাথে জানা কখনোই হয়ে উঠেনি। আছেন সত্যজিৎ রায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এমনকি লেখক নিজে!
মুগ্ধতার মোহজাল ভেঙে এবার শিশিরকুমার ভাদুড়ীর কাছে আসি। যাকে অমৃতলাল বসু থিয়েটারের নবযুগের প্রবর্তক বলে ঘোষণা করেন। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রভক্ত, গুরুদেবের প্রতি ছিল তার বিশেষ ভক্তি। অভিনয়ে অর্জন করেছেন রবীন্দ্রনাথের প্রশংসা। তার নাটক দেখেছেন কাজী নজরুল ইসলাম সহ নানা বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। তিনি থিয়েটার নিয়ে কোনো ব্যবসা করতে চাননি। চেয়েছিলেন শিল্প সৃষ্টি করতে। তাঁর নিজের ধ্যান ধারণায় স্থির থেকে তিনি চেয়েছিলেন দর্শকের রুচির পরিবর্তন ঘটাতে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কথায়, 'তুমি দর্শক তৈরি করতে পারোনি, সেটা কি আমার দোষ? দর্শকদের অনবরত তোষামোদ করে চললে উচ্চাঙ্গের শিল্প সৃষ্টি সম্ভব নয়।'
দোষ রবীন্দ্রনাথের নয় তো বটেই তবে শিশিরকুমারেও নয়। তিনি পারেননি কারণ তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে নামানোর জন্য বস্তাপঁচা 'শিল্প' তৈরি করে 'সেন্টিমেন্ট' আদায় করে নিয়েছে। আর আমরা এখনও, আজও সেই পথেই আছি।
প্যাশনের পেছনে তিনি ছুটেছেন ঠিকই কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি সুখ পাননি। প্রথম স্ত্রী ঊষা আত্মহত্যা করে। পরবর্তীতে বহু আকাঙ্ক্ষিত শিক্ষিত প্রণয়নী পেয়েছিলেন। যে কিনা অর্জন করেছিল স্বয়ং কবিগুরুর প্রশংসা! তারও অকাল মৃত্যু নিঃসঙ্গ করে দেয় তাকে।
তবও তিনি সম্রাট। আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তিনি। পদ্মভূষণ পাওয়ার পরও ফিরিয়ে দিয়েছেন। দেশবন্ধু থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পরবর্তী বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে তিনি আবেদন জানিয়েছিলেন জাতীয় নাট্যশালার! তবুও পারেননি নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে..
নাট্যজগত আর তাদের কলাকুশলীরা যেন জীবন্ত বইয়ের প্রতিটি পাতায়। শিশিরকুমার ভাদুড়ী একজন অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর শিল্প নিজের চোখে কখনো না দেখলেও, স্বীকার করে নিতে হয় তাঁর দুর্লভ প্রতিভাকে!
বিগত সময়কে কলমের খোঁচায় জীবন্ত করে তুলতে সুনীলের সমকক্ষ সম্ভবত আর কেউ নেই। তার সেই সময়, প্রথম আলো, পূর্ব পশ্চিম, একা এবং কয়েকজন পড়ে যে মুগ্ধতা ছিল, "নিঃসঙ্গ সম্রাট" সেই মুগ্ধতা আরো গাঢ় করেছে। এই বইটাকে সময় ট্রিলজির আরেকটা অংশ হিসেবে খুব সহজেই পড়ে ফেলা যায়! শিশির ভাদুরীকে কেন্দ্র করে লেখা এই উপন্যাসে সমসাময়িক কে ছিলেন না! রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র, থেকে শুরু করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায় এমনকি খোদ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পর্যন্ত! এই ধরনের বই পড়তে গেলে গায়ে কেমন কাটা দেয়। এমন সব মহান মানুষদের জীবন যাপনের সাক্ষী হচ্ছি বলে মনে হয়।
একজন মুকুটহীন সম্রাট কিংবা অভিমানী এক কিংবদন্তির গল্প৷
নাট্য জগতে শিশিরকুমার ভাদুড়ি এক অসামান্য চরিত্র। পড়ন্ত জমিদার বাড়ির এই বড় ছেলেটি অসামান্য প্রতিভার অধিকারী, শুধু তাই নয় ভাবনায় চিন্তায় ছাড়িয়ে যান নিজের কালকে। বাংলা নাট্যজগতে আনতে চেয়েছিলেন আমূল পরিবর্তন। সবটুকু আর হলো কই? বোকা বাঙ্গালী বুঝলই না প্রতিভার কদর! সৃষ্টিশীল ব্যক্তি হলেই যে ব্যবসায়ীক বুদ্ধি তুখোড় হবে, তা কিন্তু না৷ এর ফলও দিয়েছেন হাতে নাতে। একহাতে যেমন টাকা এসেছে, ঠিক একইভাবে জলের মতো খরচও হয়ে গেছে সেই টাকা৷ চেয়েছিলেন তৎকালীন দর্শকের রুচি বদলে দিবেন। সে অনুযায়ী সস্তা কাঁদুনী নির্মাণ না করে চেয়েছিলেন সত্যিকারের আধুনিক কিছু নাটক করতে। হলো না, সমালোচকদের প্রশংসা পেলেও মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল তখনকার দর্শকেরা৷ দর্শকশূন্য আসন দিয়ে কি আর পেট চলে নাকি চলে ব্যবসা? এভাবেই দিনের পর দিন ব্যবসায় মার খেয়েছেন, দেনার দায়ে জর্জরিত হয়েছেন, আবারও চেয়েছেন ঘুরে দাঁড়াতে। কিছু ক্ষেত্রে সফল কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থ সম্পূর্ণভাবে। নিজের অভিনয় দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন সমালোচক, গুনী বিদগ্ধ মানুষের পাশাপাশি জনসাধারণের। আর তাইতো শরৎচন্দ্রের মতো সাহিত্যিকের সামনে দম্ভোক্তি করে বলতে পারেন, 'আমি শিশির কুমার ভাদুড়ি, রাস্তায় দাঁড়িয়ে এ বি সি ডি বললেও লোকে রাস্তায় ভিড় করে শুনবে আর তালি দিবে।' সত্যি তাই! এ ধরণের দম্ভোক্তি একমাত্র তাঁকেই মানায়। কথায় আছে, প্রচন্ড রকমের সৃষ্টিশীল মানুষদের দূর থেকে দেখাই ভালো, তাদের খুব কাছে যেতে নেই। পুড়ে খাক হয়ে যেতে হয়। যেমনটা ঘটেছে কঙ্কাবতী কিংবা ঊষার কপালে। ছন্নছাড়া একটা জীবন। আড্ডা-পড়াশোনা, থিয়েটার আর মদ্যপান-এ তিনের চক্করেই কেটেছে গোটা জীবন। অর্থ না, খ্যাতি কিংবা যশ না, সারাটা জীবন চেয়েছেন একটা জাতীয় নাট্যশালা হোক৷ সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া ভারতের সরকার গুনী মানুষটির সেই সামান্য আব্দারও রাখতে পারেনি। দিতে চেয়েছিল রাষ্ট্রীয় সম্মান 'পদ্মভূষণ' খেতাব। অভিমানে হেলায় দূরে ঠেলে দিয়েছেন সেই খেতাবও। উন্নাসিক, আত্ম অহংকারী সৃষ্টিশীল এই মানুষটাকে নিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচনা করেছেন 'নিঃসঙ্গ সম্রাট'।
বি.দ্র. যেহেতু বইয়ে নায়ক শিশিরকুমার ভাদুড়ি সেহেতু উনাকেই খুব হাইলাইট করে দেখানো হয়েছে। উনার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্টারের অহীন্দ্র চৌধুরী। অভিনয় গুণে তিনিও কম কিছু নন। অথবা বলতে হয় কপাল খারাপ, ভুল সময়ে জন্মেছিলেন। ভাদুড়ি বাবুর প্রভাবে বেশ কিছুটা চাপা পড়ে গেছে তার নাম। উনার সম্পর্কে তেমন কিছুই বলা হয়নি বইটিতে, আর যেই স্বল্প উপস্থিতি, সেখানেও কেমন ভিলেন ভিলেন ভাবে দেখানো হইসে। যেটা আমার ভালো লাগেনি। অবশ্য এই ব্যাপারটা আমার উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনাও হতে পারে 🐸
আবার, আরেকটা ব্যাপারে একটু খটকা লাগলো। বইয়ে দেখানো হয়েছে বিদেশ যাত্রায় বেশ বিপাকেই পড়েছিলেন তারা। কিন্তু মোটামুটি প্রশংসিত হন অথচ অন্যান্য তথ্যসূত্র থেকে জানা যায় বেশ সফল হয়েছিলেন। এই আর কি দুই চারটা খামতি ছাড়া সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ঝরঝরে লেখনীতে ঐতিহাসিক ফিকশন হিসেবে বেশ লেগেছে।
শিশিরকুমার ভাদুড়ীর নামটা পরিচিত, সম্ভবত সুনীলের অন্য কোন লেখাতেই পড়েছিলাম । ' নিঃসঙ্গ সম্রাট ' পড়ে মনে এই আফসোসটা আরও একটু জোরালো হলো যে নিজের ভাষা, সংস্কৃতির গুণী মানুষদের আমরা চিনি খুব সামান্যই ।
মুগ্ধ করেছে কি? নাহ্, ঠিক মুগ্ধ করতে পারে নি । সুনীলের লেখায় মুগ্ধ হয়েছি সেই সময়, প্রথম আলো, একা এবং কয়েকজন, অগ্নিপুত্র, আমিই সে - এসবের মতো বইয়ে । বই হিসেবে ' নিঃসঙ্গ সম্রাট ' কে আমি আরেকটু পরেই রাখবো ।
এর মূল কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে - বইটা যাকে বলে ঠিক "Precise" নয় । আমেরিকা ভ্রমণের অংশটা যেন টেনে বাড়ানো হয়েছে অহেতুক, সুনীলের নিজের সাথে শিশিরকুমারের দেখা হওয়ার প্রসঙ্গটা বাদ দিলেও কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হতো না, পুরী ভ্রমণের অংশটুকুও যেন বইটার মূল সুরের সাথে যায় না । শিক্ষিতা, সংস্কৃতিমনা, প্রতিভাবান কঙ্কাবতী দেবীর চরিত্রটার রূপায়ণ লেখক শুরুতে যেমন করেছেন, মাঝে গিয়ে তা আর বজায় থাকে নি । কঙ্কাবতীকে যেন অসাধরণ একটা স্থান থেকে টেনে মাটিতেই নামাতে হলো ..... কে জানে, মানুষ হয়তো একসময় মাটিতেই নেমে আসে ।
ভালো-মন্দ, দোষ-গুণে মুগ্ধ করেছেন শিশিরকুমার । এমন প্রবল ব্যক্তিত্বের উপস্থাপনা সত্যিই দুরুহ কাজ, লেখক সুনীল বলেই পেরেছেন । এ বইয়ে একই মলাটে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুনীতি কুমার, বুদ্ধদেব বসু এসব নামগুলোকে দেখে পাঠকের ভালো লাগবেই । মাঝের দিকে আমার প্রিয় একটা অংশ -
"... গানটির রচনা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এই সময় রাস্তা থেকে কে যেন ডাকল, কাজীদা, কাজীদা!
হারমোনিয়াম সরিয়ে নজরুল জানলা দিয়ে উঁকি মারলেন । ডাকছেন অচিন্ত্যকুমার, তার পাশে দাড়িয়ে প্রেমেন্দ্র । .. নজরুল নীচে নেমে এসে দেখলেন অচিন্ত্য-প্রেমেন্দ্রর সঙ্গে আর একটি যুবকও দাড়িয়ে রয়েছে । এর যেমন ছোটখাটো চেহারা, তেমনই হাতে রয়েছে মেপোল নামে বেশ ছোট আকারের সিগারেট । কল্লোলের দলে যোগ দিয়েছে ঢাকা থেকে এসে, এর নাম বুদ্ধদেব বসু। "
উষা আর কঙ্কাবতী দেবীর কথা মনে থাকবে । বিষন্নতায় । এতো তীব্র আকর্ষণে কাছে এসে জড়িয়ে যাওয়ার পর শিশিরকুমারের কাছে কি কঙ্কাদেবীর এমনটাই পাওয়ার ছিলো?
শিশিরকুমারকে-ইবা কী বলা যায় আসলে? প্রচন্ড নার্সিসিস্ট, উন্নাসিক একজন? ট্রাজিক হিরো? নাকি কেবলই শিল্পপ্রেমী, নিষ্ঠুর মানুষ?
সে বিচারের ভার পাঠকের উপরই থাকুক । বিচার না করলেও ক্ষতি নেই । হয়তো সেটাই ভালো ।
বইটি পড়তে শুরু করা আর শেষ করার তারিখ দেখেই অনেকটা অনুমান করা যায় যে, বইটা পড়তে শুরু করলে আর ছাড়া যায় না! আমারও সেরকমই অবস্থা হয়েছিল - অবশ্য খুব বেশি বড় উপন্যাসও না।
সুনীল যখনই এই ধরনের উপন্যাস লেখেন তখন অনেক পড়াশোনা করেই লেখেন, যদিও তিনি বলেছেন এটা 'উপন্যাস', 'জীবনীগ্রন্থ' নয় কিন্তু পড়লেই বোঝা যায় যে নিতান্ত সংলাপ ছাড়া বেশির ভাগ জিনিসই সমসাময়িক তথ্য সম্বৃদ্ধ এবং যা কোনমতেই কাল্পনিক নয়।
ফলত লেখার গুণে শিশিরকুমার ভাদুড়ী হয়ে উঠেছেন জীবন্ত এবং বইটি হয়ে উঠেছে 'হাইলি স্পেশড'... বেশি কথা বলার কোন অর্থ হয় না কারণ যাঁরা 'সেই সময়', 'প্রথম আলো' 'পূর্ব পশ্চিম' পড়েছেন তাঁরা খুব ভাল ভাবেই সুনীলের এই ঘরানার লেখাকে জানেন...
এই বই শুরু করার করার আগে আমি ভেবেছিলাম কোন জমিদার টাইপের বা শেষ সময়কার কোন রাজা বাদশাহ এর জীবন আশ্রিত কোন উপন্যাস হবে।
কিছুদূর পড়েই সেই ভুল ভাঙ্গে আমার। ততক্ষণে বাংলা থিয়েটার নাটকের সম্রাট শিশিরকুমার ভাদুড়ী র প্রেমে মজে যাই।
রবীন্দ্রনাথের খুব বড় অনুরাগী শিশিরকুমার যে নিজের কাজও কিছু `আউট অব বাউন্ডারি' ধরনের করতে চাইবে সে-তো জানা কথাই। আর তা চেয়েছিলেন ও। বাংলা থিয়েটারে অনেক কিছুই নতুন সংযোজন করে যাওয়া শিশিরকুমারের আফসোসের মাত্রাও কিছু কম নয়। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের মতো মহান ��েতার কাছেও নিজের স্বপ্ন তুলে ধরেছিলেন। স্বপ্ন পূরণের প্রতিশ্রুতি পেলেও শেষ অব্দি তা আর ধরা দেয়নি হাতে।
সংগঠক হিসেবে যতটা ব্যর্থ হয়েছেন অভিনেতা হিসেবে ততটাই সফল ছিলেন শিশিরকুমার। ঐ সময়কার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হাউজের কর্ণধারও এসে হুটহাট স্বীকার করে যেতেন ভাদুড়ী বাড়ির এই ছেলের অভিনয়ের জোরের কথা। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং জানিয়েছেন নিজের মুগ্ধতার কথা। রবীন্দ্রনাথ শরৎচন্দ্র বঙ্কিম যখন যার নাটক ধরেছেন মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শিশিরকুমারের অভিনয় দেখেছেন।
কিন্তু ঐ যে শিরদাঁড়াটা আলাদা সবার থেকে, এইজন্যই সবাই যেখানে `হিট' এর পিছনে ছুটে তখন শিশিরকুমার ভাদুড়ী চেয়েছিলেন দর্শকের রুচি পাল্টাতে। বাংলা নাটকের ক্লাস ফিরিয়ে আনতে।
প্রকট ব্যক্তিত্ববান এই মানুষটা কখনো নিজের কাছে হার মানতে শিখেনি। জমিদারি রক্তের গুণেই হোক বা যে কারণেই হোক এই গুণটার জন্যই শিশিরকুমার আলাদা, স্বতন্ত্র। আর সবার থেকে অন্য রকম। সবার থেকে অন্য রকম বলেই বোধহয় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরষ্কার পেয়েও তা হেলায় রিফিউজ করে দিতে পারেন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনী ভিত্তিক লেখার শুধু গল্প শুনে এসেছি। এবার মুগ্ধ হলাম। সামনে আরও পড়বো এই আশা রইলো।
"বিপ্লব হলো সৃষ্টির প্রসব বেদনা"... শিশিরকুমার ভাদুড়ীর বর্নাঢ্য নাট্যজীবনের সাথে এই বাক্যটি অতি সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে তাঁর জীবনের নানা উত্থান-পতনের আখ্যান নিয়ে রচিত "নিঃসঙ্গ সম্রাট" উপন্যাসে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আরেকটি পিরিয়ড নভেল। 'সেই সময়' ট্রিলজির বর্ধিত অংশ বললেও অত্যুক্তি হবে না। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল,শরৎচন্দ্র, বুদ্ধদেব বসু, সুনীতিকুমার, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন,সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায় পর্যন্ত এসেছেন এই উপন্যাসে। এমনকি লেখক নিজেকেও এনেছেনে শিশির বাবুর সাথে পরিচয়ের সূত্রে। জীবনী গ্রন্থ নয়, কিন্তু জীবনের চেয়েও অনেক বেশিকিছু আছে এখানে। সুনীলের সহজাত লেখনীতে সবগুলো চরিত্র জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে। .. বস্তাপঁচা, গার্বেজ কোয়ালিটির নাটকের যুগে বঙ্গভূমির নাট্যমঞ্চে সত্যিকার অর্থে শিল্পের ছোঁয়া নিয়ে এসেছিলেন শিশিরকুমার ভাদুড়ী। ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না এমন একটা চরিত্র এই শিশির বাবু। ভীষণ জেদ নিয়ে নাটক শুরু করেছিলেন। নিরীক্ষামূলক, ঐতিহাসিক, পৌরাণিক, রবীন্দ্র নাট্য সহ বহু নাটকের প্রধান চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন দেশ সহ সুদূর আমেরিকাতেও। সাথে ছিলো পদে পদে হোঁচট খাওয়া। চড়াই উৎরাই এর জীবন হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে কখনো সস্তাভাবে উপস্থাপন করেননি, যার জন্য পদ্মভূষণ পর্যন্ত ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হেলা ভরে। সত্যজিৎ তাঁকে বলেছিলেন, যারা বিপ্লব শুরু করে, তারা নিজেরা বিপ্লবের ফল ভোগ করে যেতে পারে না, তা পায় পরবর্তী প্রজন্ম... আজকে মঞ্চ নাটকের এই সমৃদ্ধ সময়ের শুরুটা হয়েছিলো শিশির বাবুর হাত ধরে। অসম্ভবের খড়ের গাদায় সম্ভাবনার সুঁই খুঁজতে খুঁজতে নিজের জীবনটাই বিলিয়ে দিলেন অকাতরে।
... সত্যি বলতে এক বসায় শেষ করেছিলাম বইটা। তবে সেই সময় ট্রিলজির মতো অতো ঠাঁস বুনটের লেখা না এটা। লেখনী একটু হাল্কা লেগেছে। কিন্তু পড়ার পর শান্তি পেয়েছি। বইয়ের পাতায় পাতায় টাইম ট্র্যাভেল করার জন্য নিঃসঙ্গ সম্রাট পারফেক্ট একটা বই। . পার্সোনাল রেটিং - ৪/৫ - 🌟🌟🌟🌟
বঙ্গদেশে থিয়েটার জগতে গিরিশচন্দ্র ঘোষের পরে যার নাম মহারথীর মত করে উচ্চারিত হয়, তিনি শিশিরকুমার ভাদুড়ী। থিয়েটার পরিচালনায় নিত্যনতুন এক্সপেরিমেন্ট আর অসাধারণ অভিনয়গুণে তিনি তাঁর সময়ে আবির্ভূত হন অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে সেই সময়ের রথী-মহারথী সাহিত্যিক ও নাট্যকারগণ শিশিরকুমারের বিশেষ গুণগ্রাহী হয়ে উঠেছিলেন।
নক্ষত্রেরও একদিন মৃত্যু হয়। জীবদ্দশাতেই যেমন খ্যাতির শীর্ষে উঠেছিলেন শিশিরকুমার, তেমনি তার পতনও হয় নিঃসঙ্গ সম্রাটের মত। এটিই হল উপন্যাসটির মূল উপজীব্য বিষয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ ঠিক রেখে নিজের কল্পনাশ্রিত সংলাপ দ্বারা "নিঃসঙ্গ সম্রাট"-কে করেছেন গতিময় ও সুখপাঠ্য।
- পিয়ের ভের্গনিয়ো-এর এই মর্মস্পর্শী উক্তি সুনীলের উপাখ্যানের কেন্দ্রীয় চরিত্র, বাংলার নাট্যজগতের অবিসংবাদিত সম্রাট শিশিরকুমার ভাদুড়ীর জীবনে এক গভীর সত্যের প্রতিধ্বনি। বংশগতভাবে জমিদার হলেও, তাঁর সাম্রাজ্যের বিস্তার ছিল অন্যত্র—নাট্যমন্দির নামক এক মঞ্চে, যা নাট্যকলানুরাগীদের জন্য আক্ষরিক অর্থেই এক উপাসনালয়স্বরূপ। আর এই মন্দিরের পরিচালক ছিলেন রঙ্গশালার নিঃসঙ্গ সম্রাট, শিশিরকুমার ভাদুড়ী।
বাংলা শিল্প-সাহিত্যের সবচেয়ে অবহেলিত ও অসমাদৃত শাখাগুলির মধ্যে নাটক ও থিয়েটার সম্ভবত শীর্ষে। সম্ভ্রান্ত ও অভিজাত সমাজ তৎকালীন থিয়েটারকে বরাবরই বাঁকা চোখে দেখত। একই সাথে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মঞ্চস্থ করার মতো রুচিঋদ্ধ বাংলা নাটক অপ্রতুল হওয়ায় বাংলার নাট্যমহলকে সবেমাত্র তখন সাবালক বলা চলে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও প্রবল আগ্রহ এবং জেদের বশে শিশির ভাদুড়ী অধ্যাপনা ত্যাগ করে থিয়েটার কোম্পানিতে যোগ দেন। নাট্যমঞ্চে তাঁর সহজাত দক্ষতা, দৃপ্তকণ্ঠ এবং নজরকাড়া অভিনয় অতি দ্রুতই বাঙালি দর্শকদের মন জয় করে নেয়। 'আলমগীর', 'রঘুবীর', 'চাণক্য' প্রভৃতি চরিত্রে তাঁর অনবদ্য একাত্মতা দর্শকদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন গড়ে তোলে।
তবে, শিশির ভাদুড়ীর আগ্রহের কেন্দ্রে কখনোই হাউজফুল থিয়েটারের করতালি আর প্রশংসা ছিল না। তাঁর শিল্পীসত্তার সঙ্গে থিয়েটারের ব্যবসায়িক মনোভাবের অন্তঃকোন্দল জীবনভর বিদ্যমান ছিল। তিনি একাধিক থিয়েটারে কাজ করেছেন, কখনো নিজের, কখনো অন্যের। জীবনের নানাবিধ চড়াই-উতরাই, থিয়েটার জগতের ক্লেদাক্ত প্রতিযোগিতা তাঁকে পরাজিত সম্রাটের ন্যায় ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক থিয়েটারে ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। কিন্তু মনের গভীরে লুকিয়ে, জাতীয় নাট্যশালা গড়তে না পারা কিংবা কেবল শিল্পসর্বস্ব নাট্যচর্চা করতে না পারার আক্ষেপ, তিনি আজীবন বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছেন। তবুও তাঁর হাত ধরেই বাংলা থিয়েটার জগতে এসেছে নানাবিধ পরিবর্তন। সেই যাত্রার অংশীদার ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে কল্লোল যুগের বহু শিল্পী, এমনকি শেষদিকে গৌরকিশোর ঘোষ ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বরাও।
এতো দূর পড়ে মনে হতে পারে, বাংলা থিয়েটারের জগতে অভাবনীয় বিপ্লব সাধন করা এই মানুষটিকে 'সম্রাট' খেতাব নিঃসন্দেহেই দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর আড্ডা মাতিয়ে রাখা মানুষটিকে 'নিঃসঙ্গ' বলাটা কতটা যৌক্তিক? এ বিষয়ে বলতে হয় তারাপদ রায়ের ভাষায়, "আমি বহু সময়ই নিঃসঙ্গ নই, কিন্তু প্রায় সব সময়ই একাকী।"
অথবা শরণাপন্ন হতে হয় কবি শামসুর রাহমানের, যাকে "নিঃসঙ্গ শেরপা" অভিধা দিয়েছিলেন হুমায়ুন ���জাদ। কবি তার কবিতায় সাবলীলভাবে বলেন, "মাঝে মাঝে ক্লান্ত লাগে, বড় অসহায়; পদযুগ ক্ষতময়, তবু পাথরের বুকে লোহা ঠুকে ঠুকে দড়ি বেয়ে উঠতেই হবে আরও বহুদূরে একা অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে। অকস্মাৎ কখন যে নামবে বিরূপ ধস, ভাবি প্রাণক্ষয়ী অবসাদে, কখনো অকালমৃত শেরপাদের মনে পড়ে যায়।"
দুজনে ভিন্ন দুই সময়রেখার নিবাসী হলেও, নিঃসঙ্গতার এক অদৃশ্য সূত্রে বাঁধা পড়ে শিশির ভাদুড়ী আর শামসুর রাহমান হয়ে যান এক। সমসাময়িক অনেক প্রতিভাবান লেখক, উদীয়মান শিল্পী, বিচক্ষণ এবং নানাবিধ বিদ্যায় পণ্ডিত মানুষের সাহচর্য সত্ত্বেও, প্রকৃতপক্ষে কজন শিশির ভাদুড়ীর আক্ষেপের শিশিরসিক্ত দুঃখভারাক্রান্ত নিঃসঙ্গ হৃদয়কে স্পর্শ করতে পেরেছে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর এভাবেই বিপ্লবের সূচনা করে যাওয়া মুকুটবিহীন নটসম্রাটও রয়ে যান তাঁর নিঃসঙ্গতার অন্তরালে।
The famous Sunil "trilogy" was the base of judging Sunil's creation for me till now. But It is so surprising that such a beautiful book was hidden from the public admiration for so long. Personally I think this book is the best of Sunil I have ever read. To characterize theater god Shishir Bhaduri and his entire life in a book containing only 180 pages , still leaving such a great impact- it's unbelievable . This book is added to my all-time-favourite list from now on.
Bengali theatre brought to life for those who never knew it at its hey day nor the master of them all Sisir Kumar Bhaduri. Many names known and revered by us today are characters playing their part in the history of this genre. All he wanted was a National Theatre in Calcutta!! But in the times of the British Raj this was just not possible. Nevertheless this stalwart genius did not sacrifice his principals. A wonderful read!!
এটি একটি ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস। বিখ্যাত নাট্য অভিনেতা শিশিরকুমার ভাদুরীর জীবনীর সাথে কল্পনা মিশিয়ে লেখক আমাদের সেই সময়ে নিয়ে যান যখন বাংলা মঞ্চ নাটকের স্বর্নালী যুগ ছিল। উপন্যাসে শিশির ভাদুরীর জীবনের গল্প শুনতে শুনতে সে সময়কার জীবন্ত কিংবদন্তীদের সাথেও আমাদের স্বাক্ষাত হয়। রবীন্দ্রনাথ, শ্রীকান্ত, নজরুল, দেশবন্ধু, নেতাজী কেউ বাদ দেই। এটা যেন বাংলার লেখকদেরও ইতিহাস।
'প্রথম আলো' পড়ার সুবাদে বাংলা থিয়েটারের উথাল-পাতাল সম্পর্কে কিছুটা জানাশোনা আগেই ছিল। অর্ধেন্দুশেখর, গিরিশচন্দ্র, শিশিরকুমারকে যেন চোখের সামনেই দেখেছি। বাংলা থিয়েটারের সম্রাট শিশিরকুমারকে নিয়ে এমন লেখা শুধু সুনীলের পক্ষেই সম্ভব।
It took me a while to begin this book. ‘The Lonely Monarch’ by Sunil Gangopadhyay, beautifully translated by Swapna Dutta, was supposed to be about Bengali theatre of the 1920s. I felt I would not be able to relate to it, since I knew nothing about either theatre in general or Bengali theatre in particular. Then I read the ‘translator’s note’, where she herself admits that she “knew very little about the theatre scene in Bengal and even less about the people involved in it”, and yet she was fascinated and enthralled by the book. That did it for me. And I am grateful, I read it.
‘The Lonely Monarch’ is the story of the stalwart of Bengali theatre, Sisirkumar Bhaduri, in the early twentieth century. Although the story is about a real, revered personality from the theatre world, yet this book is not a biography. As the author says, “basing it on facts, as far as possible, I’ve had to fill the available framework with my imagination.”
In ‘the Lonely Monarch’, the author creates a vivid imagery of the old-world Bengal and its theatre world. Sisirkumar Bhaduri, the scion of a declining zamindar family, was enamoured by the world of theatre. When he joined professional theatre, there had never been any actor so highly educated; considering the notoriety associated with it (all actresses came from the red light area). He strongly believed that theatre should be integral to the culture. He worked relentlessly from the beginning of his career to the end to create a culture of refined taste in theatre. He performed in and directed several outstanding plays, which got him adulation from the masses as well as critical acclaim. But he soon realized he was not cut out for working under anybody and started his own theatre company.
The story traces his rise and fall, the many highs and lows of theatre world; his dream of a national theatre to teach acting and theatre to the younger generation; his attempts to refine the taste of the general audience to more tasteful plays, to break away Bengali theatre from the shadows of English theatre and make an identity of its own; to break the stigma around theatre and make it part of the popular culture; and to produce and direct outstanding plays, and not be confined by the money spinners.
The book also chronicles his tumultuous personal life and his struggle with alcoholism. A man of such extraordinary talent was married to a simple, ordinary girl with no knowledge of poetry and art. Even his attempts to teach her finer nuances of life turned futile because of the orthodox outlook of his parents. Misunderstandings led to her suicide attempt and later her death, which kept him guilt-ridden throughout his life. Later, he found his match in Kanakabati, who was educated and an excellent actress, but he failed to bestow upon her the respect and dignity of being his wife. She died heartbroken.
He also dabbled in movies for money but his heart was not into it. Films appeared too mechanical to him. Moreover, on one hand he was an exceptional actor and director, on the other hand, he never understood the commercial aspects of running a theatre, which always led to his downfall. It disappointed him that neither the government nor the rich of Bengal patronized the Bengali theatre.
There are many references of eminent personalities of those times like Rabindranath Tagore, Saratchandra Chattopadhyay, Satyajit Ray; even the author Sunil Gangopadhyay himself appears in the narrative.
Towards the end of the book, though the country had got independence but his dream of national theatre remained unfulfilled. In his old age, the once-torch bearer of Bengali theatre passed his days in poverty and loneliness, refusing any kind of charity. He just wanted to be remembered as an actor / director of exceptional talent and outstanding caliber.
The book is quite interesting and engrossing. The narrative is fluid and what is commendable is that it never feels like a translation.
If literary fiction is your thing, go for it.
A few memorable lines from the book:
“That’s what real art does to a person. It charms as well as overwhelms.”
“All he had asked for was a national theatre where he could teach stagecraft to the new generation – the nitty gritty of acting, experimenting with new forms of drama – without having to worry about money, the kind of organization that existed in any civilized country in the world.”
মেদহীন লেখনী। কোথাও সুনীল সাহিত্যিক সেজে ভাষার কারিকুরি দেখান নি। এই উপন্যাসে তা মানাতোও না। কারন, শিশিরকুমার যে সত্যি সত্যি নায়ক ছিলেন! তাকে প্রভাতের মতো ফুটিয়ে তোলাটাই যথেষ্ট ছিল। শব্দের অহেতুক বাগাড়ম্বর তাতে ব্যাঘাত ঘটাতো মনে করি।
সুনীল লেখক হিসেবে কতো শক্তিধর, তা এই উপন্যাসের চরিত্র চিত্রনে ছত্রে ছত্রে প্রমাণিত। ইতিহাসাশ্রয়ী উপন্যাসের চমক থাকে মূল চরিত্রের পাশাপাশি আরো কিছু প্রাত:স্মরণীয়দের আনাগোনায়। শরৎচন্দ্র, হেমেন্দ্রকুমার, রবীন্দ্রনাথ, সুকুমার রায়, কাজী নজরুল ইসলাম, বুদ্ধদেব বসু, শম্ভু মিত্র, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ থেকে শুরু করে পুদভকিন , সত্যজিৎ রায়, এমনকি লেখক স্বয়ং এই উপন্যাসে চরিত্র হিসেবে আছেন। যারা এখনো পড়েন নি, তাদের জন্য এদের নামগুলোই লোভ দেখানোর জন্য যথেষ্ট।
শিশিরকুমার ছাত্রাবস্থা থেকেই ছিলেন নায়ক। ভদ্রঘরের ছেলে হয়েও তাঁর স্বপ্ন ছিল থিয়েটারের রাজা হবেন। তিনি জানতেনও যে তার তুলনা তিনি নিজেই। কিন্তু, শিল্পী মানুষটি যতোই প্রশংসিত হন, নাচ আর বেলেল্লাপনা দেখতে আসা নব্য বাবুসমাজ তাঁর জন্য তৈরী ছিল না। রবীন্দ্রনাথের কৃপাভাজন হয়েও যতোবারই রূচিসম্মত নাটকের আশ্রয় নিয়েছেন, ততোবার নি:স্ব হয়েছেন। হারিয়েছেন স্টেজ। দল ভেঙে গেছে। অপমানিত হয়েছেন। জেদী মানুষটি বারবার নিজেকে গড়েছেন, কিন্তু, টাকাপয়সার কাছে হেরে গেছেন। মনে এক নিদারুন পরিতাপ ছিল প্রথমা স্ত্রীকে অবহেলায় হারিয়েছেন বলে। কঙ্কাবতীকেও তাঁর মনের ধাতুতে তৈরী হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রীর সম্মান দিতে পারেন নি। তাকে হারিয়ে ও শেষবয়সে প্রত্যাখান করে নি:সঙ্গ ও দরিদ্র জীবন স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন। কিছু��েই পদ্মভূষণের মতো সম্মান, বিশ্বভারতীর চাকরি, সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব ও আরো নানা সম্মাননা তাঁকে তাঁর জেদের সিংহাসন থেকে সরাতে পারে নি। তিনি ভুলতে পারেন নি যে পরাধীন ও স্বাধীন কোন বাংলাতেই জাতীয় নাট্যশালা হলো না। এই ব্যাথা নিয়ে চারিদিকে বইয়ের সমু্দ্রে দিনযাপন করতে থাকেন নি:সঙ্গ সম্রাট তাঁর স্বর্ণযুগের স্মৃতি নিয়ে।
সুনীলের বাংলা সাহিত্য ও আর্টের অন্যান্য শাখার ইতিহাসের প্রতি অনুরাগকে আমি আশীর্বাদ মনে করি। তিনি না চেনালে শিশিরকুমারকে আমি অন্তত চিনতাম না। ভাগ্যিস, তিনি গদ্যে মাতিয়েছিলেন ও প্রচুর বাঙালী পাঠক তাঁর কারনেই প্রথম ইতিহাসাশ্রয়ী উপন্যাসের রসাস্বাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। ‘সেই সময়’ বা ‘প্রথম আলো’ এর তুলনা হয় না। কিন্তু, পাশাপাশি, ‘রাণু ও ভানু’ এবং ‘নি:সঙ্গ সম্রাট’ এর মতো উপন্যাসও আজীবন তাঁকে মনে ঠাই দিয়ে রাখবে। আসলেই তিনি ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Having read Shei Shomoi(Those Days), Prothom Alo (First Light) and Purba Paschim, I was eagerly looking forward to reading The Lonely Monarch. I was really disappointed by it. I am actually wondering whether I ought to have read it in Bengali instead of this translated version.
The quality of translation is very rigid and dry and fails to capture the emotions, drama and the vivid passion of Bengali theatre and its personalities. In fact at times I was wondering whether I was reading a Wikipedia article or a Sunil Gangopadhyay novel. The pace was jerky and one never actually gets to know the man Sisir Bhadhuri which is really sad.
Unlike Shei Shomoy or Prothom Al0 (I read both in English), where I found myself as a reader swept up in the lives, loves and adventures of the protagonists and also discovered so much about the history of Bengal and Bengalis, The Lonely Monarch never really rose to the same level, when it had so much of potential.
Overall, a disappointment for me, but that does not in any way diminish my regard and respect for the genius of Sunil Gangopadhyay, and I feel that it is fortunate that at least he is one Bengali writer whose works have reached a wider audience thanks to the translators.
This book gives a glimpse into an important era of Indian theatre, rarely known to people who may have mostly heard and seen a lot about only the history of movies. But this history is not boring at all; infact it is a nice story of the protagonist Sisirkumar Bhaduri covering his rise and fall as an acclaimed actor and director, his ideals and beliefs, and the vision he had for Indian theatre free from unwanted British influence. Infact, this book was the first of its kind I read and I thoroughly enjoyed reading it. The language is simple and clear in English (the original work is in Bengali). Reading it may rekindle our love and attention to the world of theatre, may even prompt some to go watch more stage performances and appreciate the art (True in my case!).
When I read this book in English, I feel at every page how much nicer it would have been in original Bengali; and how the translator has failed to do justice. Still, a recommended read, to understand the literary and theatrical culture of Bengal (in 1920s), the negligence towards it, and the failure of its development; which is pretty much the state of affairs for all literature, theatre, and art after 100 years.