বইটির নাম al-Muhaddithat : The Women Scholars of Islam। লেখক শাইখ আকরাম নদভী।
অনেকেই হয়তো অবাক হয়ে প্রশ্ন করে বসবেন, আরে! মহিলারা আবার ইসলামিক স্কলার হতে পারে নাকি? আসলে এখানে শুধু মহিলা স্কলার বলা হয়নি, বলা হয়েছে মুহাদ্দিসাত, অর্থাৎ মহিলা মুহাদ্দিস!
ইসলামের গত চৌদ্দশ বছরের ইতিহাসে আমরা অনেক যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম, মুহাদ্দিস, ফকিহ ইত্যাদি খুঁজে পাই। বেশীরভাগ সময়েই তাঁদের পুরুষ হিসেবেই দেখে আসছি। তাই হয়তো অনেকের এরকম চিন্তা হতে পারে যে ইসলামের জ্ঞান প্রচারের ইতিহাসে নারীদের হয়তো কোন অবদানই নেই। অথচ সত্যটা আসলেই অনেক অদ্ভুত আর সুন্দর। সেটিই ইতিহাস ঘেঁটে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন শাইখ আকরাম নদভি।
খুঁজে খুঁজে এক-দুই না, একশ-দুইশ ও না, আট হাজার নারী মুহাদ্দিস ও ফকিহ খুঁজে পেয়েছেন লেখক, যারা ���্ঞানে, ঈমানে, আখলাকে ছিলেন তুলনাতীত। যাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন খোদ আমাদের বড় বড় ইমামগন! উম্মুল মু’মিনিন আইশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে শুরু করে এই শতাব্দির শাইখা বাহিয়া আল কুতবিয়া পর্যন্ত যত বড় বড় আলিমা ছিলেন তাঁদের জীবনী চল্লিশ ভলিউম এর magnum opus মুক্কাদ্দিমাহ তে সংকলন করেছেন শাইখ আকরাম। সেই বিশাল কাজের মুখবন্ধ অথবা ভূমিকাই হল ৩১৪ পৃষ্ঠার al-Muhaddithat।
বইটি প্রধান ১০টি অধ্যায়ে স��জিয়েছেন তিনি। হাদিসের বিভিন্ন ধরন্ন, হাদিস সংকলনের নিয়ম ইত্যাদি বিভিন্ন তাত্ত্বিক আলোচনাও এনেছেন প্রয়োজন মাফিক। কি কি বিভিন্ন তরীকায় নারীরা শিক্ষিকার ভূমিকা পালন করেছেন, কীভাবে তাঁরা এই জ্ঞান অর্জন করেছেন, কারা কারা তাঁদের ছাত্র ছিলেন, তাঁদের প্রতি সালাফদের ইমামদের ধারণা কি ছিল ইত্যাদি এতো সুন্দর করে গোছানো হয়েছে বইটি পড়লে অবাক হতে হয়।
আম্মাজান আইশার (রাঃ) সম্পর্কে আমার জ্ঞান ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন স্ত্রী হিসেবে আর একজন রাবী হিসেবে। কিন্তু উম্মাহর সবচাইতে শক্তিশালি মুহাদ্দিস আর ফকিহদের একজন হিসেবে তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে আমার বলতে গেলে কোন ধারণাই ছিল না। হাদিসের জারহ আর তা’দিল এর ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ হাদিসের সত্য মিথ্যা যাচাই এর নিয়মগুলো বলতে গেলে তাঁর দৃষ্টান্ত থেকেই নেয়া হয়েছিল। কীভাবে? - সেটা বইয়ের ২৪০ তম পৃষ্ঠা পড়লেই বুঝতে পারবেন।
আজ আমরা আমাদের আশেপাশে, আমাদের দেশে কিংবা অন্য কোন দেশে কয়জন হাফেযা পাই? অথচ এক সময় ছিল যখন পুরো কুরআন মুখস্ত থাকা একজন নারীর জন্য খুব একটা বড় ব্যাপার ছিল না। ইসলামের নারীরা তখন কুরআনের সাথে সাথে এর শানে নুযুল আর তাফসীর শিক্ষা করতেন অহরহ। তাঁরা নিজেরা শিক্ষা দিতেন ইমাম মালিকের মুয়াত্তা, সুনান এর সমস্ত গ্রন্থ, মুসনাদ ইমাম আহমদ, বুখারি-মুসলিম সহ ফিকহ এর বড় বড় গ্রন্থ সমুহ আর এ সবকিছুই তাঁদের মুখস্ত ও নখদর্পনে ছিল।
কত শত ইমামের উস্তাদ যে নারী ছিলেন তার ইয়ত্তা নেই। ইমাম আহমদ, ইমাম ইবন তাইমিয়া, ইবন জাওযি, ইবন কায়্যিম, ইমাম যাহাবী, ইবন কাসির, ইবন রজব সহ আরও অনেকের উস্তাদ্গনের মধ্যে নারীরাও ছিলেন। তখনকার সাথে আজকের দুনিয়ার সাথে তুলনা করলে দেখা যায় দ্বীনের জ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদের মা-বোনদের বলতে গেলে একরকম খাশি করে রাখা হয়েছে। বেশী কে বেশী তাদের শুধু হাফেযা বানানো হয়ে বাচ্চাদের মাদ্রাসায়।
অথচ একজন মা যখন আলীমা হবেন তার সন্তানরাও আলীম হবেই। একজন স্ত্রী যখন আলীমা হবেন স্বামী আলীম হবেই। আজ আমাদের সমাজে মহিলাদের মধ্যে দ্বীনের জ্ঞান বলতে গেলে কিছুই নেই। তাই তারা মকসুদুল মোমিনিন, আমলে নাজাত, বারো চান্দের ফযিলত এসব বইগুলো ধরে পড়ে আছেন এখনো।
ইসলাম তো চৌদ্দশ বছর আগে থেকেই একুশ শতাব্দির চাইতেও মডার্ন হয়েই আছে। শুধু আমরাই দিনে দিনে পিছিয়ে পড়ছি।